পূর্ব বিহারের ( এখন ঝাড়খণ্ড) যে ছোট্ট শহরটায় আমরা থাকতাম, সেখানে ছোটদের জন্য কোনও কমিউনিটি লাইব্রেরি ছিল নাসাহেবগঞ্জে বড়োদের লাইব্রেরি ছিল রেলওয়ে ইনস্টিটিউটেবাঙালিদের একটা ক্লাব ছিলরবার্টসন ক্লাবওখানেও হয়তো একটা লাইব্রেরি ছিলকিন্তু ছোটদের লাইব্রেরি বলতে স্কুল লাইব্রেরিসেন্ট জেভিয়ার্সের আর রেলওয়ে স্কুলেরকিন্তু সেখানে বাংলা বই থাকত বলে মনে পড়ছে না।  

আমরা একটা পুরনো সাহেবি বাংলো বাড়িতে থাকতামরেলের বড়ো শহর ছিল সাহেবগঞ্জশহরের অনেকটা জুড়ে এ ধরনের সাহেবি আমলের কোয়ার্টারআমাকে ছোট থেকে বই, বিশেষ করে বাংলা বই পড়ার নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলেন আমার মাবাবা ছিলেন ব্যস্ত ডাক্তারসারাদিন বাড়িতে খুব একটা থাকতেন নামায়ের সঙ্গে আমার সময় কাটত বই পড়া, গান শোনা নিয়েমধ্যবিত্ত বাঙালির সেই সময় (সত্তর দশকের কথা বলছি) আর কিছু না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে কিছু বই থাকতআমাদেরও ছিলবাবামা, কলকাতার আত্মীয়স্বজন অনেক বই উপহার দিতেনজন্মদিনের উপহারে বই দিতেন সাহেবগঞ্জের নিমন্ত্রিতরামনে হয় একটা দোকানেই বাংলা বই পাওয়া যেতনবদার দোকানেকারো জন্মদিনে নবদার দোকানে উপহার কিনতে গেলে নবদা বলে দিতেন কে কী বই কিনেছে, যাতে এক বই না থাকে উপহারের তালিকায়।         

এভাবে অনেক বই জমে গেছিল আমারমনে হয়েছিল শুধু নিজে না পড়ে, অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিই না কেন আমার বই? আমার বয়সী ছোটদের সঙ্গে, যাদের বাংলা বই পড়ার সুযোগ ততটা নেই, তাদের সঙ্গে? ছোট্ট শহরে, প্রবাসী বাঙালিদের ছোটদের জন্য প্রথম লাইব্রেরি শুরু করার কথা বললাম বাবামাকেওঁরা এক কথায় রাজিআমার বাবামা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসতেনখুব একটা সাবধানী বা হিসেবি ছিলেন নাআমাকে বলেনতুমি তোমার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলো, আমরা আছি

আমার কাছের কয়েকজন বন্ধুকে বললামবেশ উৎসাহ দেখাল ওরাকিন্তু দুচারজনকে নিয়ে তো লাইব্রেরি হবে নাআর একটু ছড়াতে হলো ব্যাপারটাছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উঠতে লাগল নানারকমবই বাড়ি নিয়ে আসা যাবে কি না? ক’দিন রাখা যাবে? এসবমা, আমি আর আমার কজন বন্ধু মিলে কাজটা নিয়ে এগোতে থাকলামআমাদের বাংলোয় একটা ঘর ঠিক হলযেটা লাইব্রেরি হবেবাবা নাম দিলেন লাইব্রেরিরছেলেবেলাপ্রতি রবিবার আমার বন্ধু নুরুল, আমার মা আর আমি সব বইতে ক্যালেন্ডারের নম্বর কেটে লাগাতে শুরু করলামআর একটা খাতায় সেই নম্বর মিলিয়ে একটা লিস্ট করার কাজ চলতে থাকলক্যাটালগের মতো

The history of Library
বসে পড়ার ব্যাপারটাকে যে রিডিং রুম বলা হয়, তখনও জানা ছিল না

অনেকে উৎসাহ দেখালেও, বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে কেউ এগোতে চাইল নাকিন্তু এরাই আবার লাইব্রেরি কী ভাবে চলবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে লাইব্রেরি খোলার দিন ক্রমেই পিছিয়ে দিতে থাকলবইয়ের সম্ভার আমার শ’তিনেক বইবাবা বললেনবাড়ি নিয়ে যাক না বইকিন্তু আমার মনে হচ্ছিল বই বাড়ি থেকে বেরলে, ফেরত আসবে কি? আমি বললামআগে লাইব্রেরিতে বসে পড়ার ব্যাপারটা চালু হোক, তারপর পরের দিকটা ভাবা যাবেবসে পড়ার ব্যাপারটাকে যে রিডিং রুম বলা হয়, আমার তখনও জানা ছিল নাবাঙালিদের প্রশ্ন যত থাকে, প্রশ্নের উত্তর তত থাকে নাউত্তর খোঁজার তাগিদও যে খুব একটা থাকে, তা নয়সেই প্রবাসী বাঙালিদের ছোটদের দলও এর ব্যতিক্রম হতে পারল না। ‘ছেলেবেলা প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া আর হল নাএখনো আমার সেই বইগুলোতে ক্যালেন্ডারের নম্বর আঠা দিয়ে আটকানো আছেপ্রায় চল্লিশ বছর পরেওএক প্রচেষ্টার শুরু, বা মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে

*******

নরেন্দ্রপুর সিনিয়র স্কুলের লাইব্রেরির সঙ্গে রেফারেন্স রুম ছিল একটি সোনার খনিলাইব্রেরি থেকে বই হোস্টেলে নিয়ে আসা যেতকিন্তু তার চেয়েও বড়ো আকর্ষণ ছিল রেফারেন্স রুমআমাদের রিডিং রুমবাংলা সাহিত্যের প্রায় সমস্ত রচনাবলি, নামীদামি বইয়ের বিরাট সম্ভারতবে এসব বই হোস্টেলে নিয়ে আসা যেত নাওখানে বসে পড়তে হতক্লাস সেভেনের কিশোরমনে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা যেন ঝড় তুললএকের পর এক ওঁর লেখা পড়তে থাকলামআদর্শ হিন্দু হোটেলের সরল জীবনবোধ থেকে শুরু করে প্রবেশ করলাম পথের পাঁচালী, আরণ্যক, অপরাজিত-র গভীরতায়বিকেল চারটে হলেই লাইব্রেরিয়ান নিত্যদা তাড়া লাগাতে শুরু করতেনঝুলোঝুলি করে কোনওরকমে সওয়া চারটে পর্যন্ত টিঁকে থাকা যেততারপর সোজা নরেন্দ্রপুরের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে। 

সিনিয়র স্কুলের পাশেই বিরাট সেন্ট্রাল লাইব্রেরিবিরাট রিডিং রুমওখানে গিয়ে সেই খণ্ড খুঁজে বের করে আবার পড়া চালুপাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকত সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতারপর বেরতেই হতোআমার সঙ্গে থাকত আমার পড়ার সঙ্গী, আমার বন্ধু অলোক মিত্র আর অভীক দাশলাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে আর খেলতে যাওয়ার সময় থাকত নাহোস্টেলে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নরেন্দ্রপুরের সুন্দর রাস্তা ধরে ঘুরে বেড়াতামকে কী পড়েছি, তাই নিয়ে নানা আলোচনা চলতঅলোক ছিল গভীর রবীন্দ্রভক্তবিতর্ক হত বিভূতিভূষণরবীন্দ্রনাথের উপন্যাস নিয়েঅনেক স্বপ্নের জালও বোনা হতোপথের দাবী, পথের পাঁচালী, গোরা নিয়ে। 

Central Library -- Reading Room
নরেন্দ্রপুরে সেন্ট্রাল লাইবেরির রিডিং রুম

নরেন্দ্রপুরে বিকেলের খেলা বাধ্যতামূলক ছিলকিন্তু আমাদের কেউ কোনওদিন বলেননিকেন রে তোরা বিকেলে খেলতে যাস না? শরদদা ছিলেন খেলাধুলোর দায়িত্বেবেশ কড়া মানুষসকালের পিটিতে একআধ মিনিট দেরি হলেই কড়া ব্যবস্থা নিতেনবছরখানেক আগে শরদদাকে জিজ্ঞেস করিশরদদা, আপনি জানতেন আমরা বিকেলে ফুটবল খেলতে যেতাম না? উনি বললেনসবই জানতামকিন্তু কিছু বলিনি কেন কোনওদিন? আসলে টিচারদের বুঝতে হয় কাদের কোনদিকটা ডেভেলপ করতে হবেতোরা সকালে পিটি করতিসবিকেলে জলকাদা মেখে ফুটবল খেললে যে তোদের শরীরচর্চা বিরাট কিছু এগোবে না, সেটা বুঝতামতোদের পড়তে ভালো লাগত, টিচার হয়ে মনে হত ওটাই তোদের করতে দেওয়া দরকার

সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে একজন লাইব্রেরিয়ান ছিলেন খুব লম্বাওঁর হাতে ক্যাটালগ থেকে বইয়ের নাম, নম্বর, স্লিপে লিখে দিতে হতউনি হাতে স্লিপটা নিয়েই একটা গুল্লি পাকিয়ে সামনে রাখা একটা বিনে ফেলে দিতেনআর বলতেননেই, বই নেইওঁর হাত গলে কোনওদিন কোনও বই হোস্টেলে নিয়ে আসতে পারিনিরিডিং রুমের বই ছিল ভরসাটিনটিন আর অ্যাসটেরিক্সের সব বই ছিলএকে একে সব বই পড়া হয়ে গেছিল। একটা বড়ো তালাবন্ধ কাচের বুককেস ছিল বিরাট রিডিং রুমের সামনের দিকেতার ভেতর ছিল এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার পুরো সেটআমার খুব ইচ্ছে ছিল ব্রিটানিকা নেড়েচেড়ে দেখারযতটা পারি, পড়ারসেই লাইব্রেরিয়ান মশাইকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম যদি একটু খুলে দেন আলমারিটা, একটু ব্রিটানিকা পড়তামউনি জিজ্ঞেস করেনকেন, কী পড়বে ব্রিটানিকা থেকে? আমি বলিনা, মানে একটু দেখতামঅনেক কিছুই তো পড়ার ইচ্ছে আছেউনি বলেনআগে বাকি সব পড়ে শেষ করো, তারপর ব্রিটানিকা পড়তে এসোওঁকে আর জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে হয়নি ব্যাপারে কোনওদিনতবে আমি তীব্রভাবে যা চাই, তা কোনওভাবে পেয়েই যাইএটা আমার জীবনে অনেকবার দেখেছি

Central Library, Ramakrishna Mission Narendrapur
নরেন্দ্রপুর মিশনের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি

আমাদের ১১১২ ক্লাস কলেজের সঙ্গে ছিলকলেজের লাইব্রেরি ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধব্রিটানিকা ওখানে তালাবন্ধ থাকত নাআমার বহুদিনের স্বপ্নপূরণ হয় ব্রিটানিকা হাতে নিতে পেরেএকটা ডায়েরি নিয়ে যেতাম লাইব্রেরিতেব্রিটানিকা থেকে অনেক তথ্য নোট করে রাখতাম ডায়রিতেকুইজের কাজে লাগতআরো অনেককিছু জানার খিদে বাড়িয়ে দিত এই মহার্ঘ্য এনসাইক্লোপিডিয়ামনে হত যদি কখনো সংগ্রহ করতে পারি এই জ্ঞানভাণ্ডারএকদিন এই ইচ্ছেও পূর্ণ হয়ব্রিটানিকা সংগ্রহ করতে পারি, তবে বই নয়, সিডি। ২০১২ সালে ব্রিটানিকা ছাপানো বন্ধ হয়ে যায়সিডিও মনে হয় না আর বেরয়এখন পুরোটাই অনলাইনজ্ঞানপিপাসু পাঠককে আর কোনও খামখেয়ালি লাইব্রেরিয়ানের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হয় না এখন আরতবে ল্যাপটপের স্ক্রিন ভেদ করে চামড়ার বাঁধাইতে মোড়া পুরনো বইয়ের ছোঁয়া, গন্ধ, অধরা থেকে যায় নতুন যুগের পাঠকের কাছে

******

বিলেতে আসা অবধি ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে যাওয়ার ইচ্ছেকত ইতিহাসের সাক্ষী এই লাইব্রেরিকত লেখক, কত প্রথিতযশা গবেষকের কাজের জায়গা এই লাইব্রেরিএকটু থিতু হয়ে বসে সদস্য হই ব্রিটিশ লাইব্রেরিরখুব সহজ ব্যাপারএকটা ফটোআইডেন্টিটি ডকুমেন্ট, ঠিকানা দেওয়া আর একটা ডকুমেন্ট থাকলেই হয়ে যায়। রিডার পাস খুলে দেয় এক বিচিত্র জগতের দরজাআমার কাছে সব চেয়ে আকর্ষণীয় ছিল ‘ইন্ডিয়া অফিস রেকর্ডস’ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম দিন থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের যাবতীয় নথি সযত্নে রাখা আছে এখানেঅনলাইনে আগে রিডিং রুমের স্লট বুক করতে হয়আর অনলাইন ক্যাটালগ থেকে বুক করতে হয়, কী নথি দেখতে চানসময়মতো পৌঁছে লাইব্রেরিয়ানের কাছে গেলেই একটি কার্ডবোর্ডের বাক্সে আপনার প্রয়োজনীয় নথি আপনার হাতে তুলে দেওয়া হবেফোনে নথির ছবি তোলা যায়একসঙ্গে ১০টা পর্যন্ত নথি দেখতে পারেন১০টা দেখা হয়ে গেলে আবার নতুন নথি বুক করা যায়। 

British Telephone Booth
টেলিফোন বুথে ছোট্ট লাইব্রেরি

আমি ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে দেখেছি আমার ছোটবেলার শহর সাহেবগঞ্জ যেই সাঁওতাল পরগনা জেলায় ছিল, তার ১৭৭২ সালের কথাপেয়েছি ১৮৩৬ সালে শ্রীরামপুরের আশপাশের আবগারির হিসেব, গান্ধীজিকে লেখা নেতাজির দীর্ঘ টেলিগ্রাম, লর্ড লিনলিথগাওয়ের হাতে লেখা তির্যক মন্তব্য, ১৯৪৩এর বাংলার দুর্ভিক্ষ নিয়েভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস বুঝতে গেলে এইইন্ডিয়া অফিস রেকর্ডস’ দেখা খুব দরকারঐতিহাসিক তাঁর বইতে তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা তুলে ধরেনইতিহাস নিয়ে উৎসাহীর নিজস্ব ধারণা গড়ে তুলতে এসব নথির ভূমিকা অতুলনীয়

******

বছর পঁচিশ আগে, বিলেতে যখন প্রথম আসি, তখনও লাল রঙের টেলিফোন বুথ ছিল দেশ জুড়েছোট বুথে একটা ধামসা বাক্সের মতো ফোনপয়সা ফেলে ফোন করতে হতএই শতাব্দীর প্রথমদিক থেকে মোবাইল ফোন সবার হাতে দেখা যেতে থাকেপাবলিক টেলিফোনের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসেফোন বুথের মাথায় থাকত ব্রিটিশ ক্রাউনের এনগ্রেভিংসোনালি রঙেরআর ‘E II R’ লেখামানে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আমলে তৈরি এই বুথপ্রয়োজনীয়তা ফুরোলেও অযত্নে ভেঙে পড়তে দেওয়া হয়নি এই বুথগুলোগ্রামে গ্রামে এই বুথগুলোর ভেতর গড়ে উঠেছে মিনি লাইব্রেরিমানুষ তাঁদের বাড়তি বই দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন এই স্বল্পপরিসরযে কেউ এসে একটি বই তুলে পড়তে পারেপাশের কোনও বেঞ্চে বসেবা কাছের কোনও পাবে বসেরোদঝরা দিনে, গায়ে রোদ মেখে, বিয়ার খেতে খেতেবই বাড়িও নিয়ে যাওয়া যায়ফেরত দিয়ে গেলেই হলওই বইটি বা ওই বইয়ের বদলে অন্য কোনও বই

রানি এলিজাবেথের শাসনের ৭০ বছর পূরণের উৎসব শেষ হল জুনের তারিখবিরাট জাঁকজমকের মধ্যে দিয়েউৎসবের দিন পেরিয়ে রানির নাম বহন করে যাবে এই টেলিফোন বুথ লাইব্রেরিগুলোআধুনিকতার আক্রমণে পিছু না হটে, পুরনোনতুনের সহাবস্থানের প্রতীক হয়ে থেকে যাবে বইপ্রেমী মানুষের জন্য এই অনন্য লাইব্রেরি

 

*নরেন্দ্রপুরের ছবি: শ্রী শরদ মিরানী
*
টেলিফোন লাইব্রেরির ছবি: লেখক
*ব্রিটিশ লাইব্রেরির ছবি: Pinterest

পাঞ্চজন্য ঘটক Pancho Ghatak

দু দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনে প্রবাসী পাঞ্চজন্য পেশায় সাইকিয়াট্রিস্ট। অবসর সময়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসেন।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *