ফ্যান্টাসি মোর পড়িল খসে,
বেকারত্বের প্রবল রোষে।
সাধ হয় তো সাধ্যি নাই,
পিৎজা ভাবিয়া পরোটা খাই,
মিটাইতে স্বাদ ইউটিউবে তাই
দেখিতেছি চিকেনের ঝাল,
ঘরে আমার মেনু হে আজিকে
ডিমভাজা-ভাত-মুসুরির ডাল!

আমরা যাহারা মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত ঘরের কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীগণ, আমরা অনেক সময়ই সামর্থ্যের বাহিরে আসিয়া, প্রবল আত্মবিশ্বাসে বুক ফুলাইয়া, বিপুলাকার ও ভারী একখানি স্বপ্ন কাঁধে ঝুলাইয়া কলিকাতার মতো শহরাঞ্চলে আসিয়া জুটি; অতঃপর,যাহা কিছু ঘটিয়া থাকে,ইহা তাহারই এক ক্ষুদ্র নিদর্শন, ঝাঁকিদর্শন মাত্র।

প্রাথমিক পর্বে পুঁজি যৎসামান্য হইবার কারণে ঠাঁই হয় একখানি সাদামাটা মেসবাড়ি। জিনিসপত্র বলিতে সঙ্গে লোটা-কম্বল, বই-খাতা সংবলিত চাকা লাগানো ব্যাগ, কেহ আবার আনে টিনের বাক্স; আমার বান্ধবী যেমনটি আনিয়াছিল। উহাতে ঝুলিত মস্ত একটি তালা, মূষিক প্রবেশের বিন্দুমাত্র উপায় নাই! যাহারা বাড়িতে পাশবালিশ ব্যতীত কোনওদিন ঘুমাইতে পারে নাই, তাহারা কেহ কেহ আবার বহুকষ্টে সেই পাশবালিশখানাও বহন করিত!

যাহাই হউক, দিনকতক কাটিতে না কাটিতেই নুন-হলুদ-মশলার কৌটো, বিস্কুটের ঠোঙা, সাবান, তৈল ও তৈজসপত্র ইত্যাদি লইয়া গাদাগাদি করিয়া একখানি সংসার শুরু হয়। পুনরায় তাহাতে জমা হইতে থাকে আরও একাধিক দ্রব্যাদি। কাপড় কাচিবার নিমিত্ত বালতি, সবজি রাখিবার তরে কেনা হয় ঝুড়ি। ইহা ব্যতীত প্রয়োজনীয় কিছু প্রসাধন সামগ্রী, যাহা না কিনিলেই নয়।

এইদিকে বাড়ি ছাড়িয়া আসিয়া মন হু-হু করিয়া কাঁদিয়া উঠিল। এই নূতন সংসার গুছাইবার পরিবর্তে অগোছালো করিতে লাগিলাম বেশি। মায়ের কথা মনে পড়িল খুউব। পড়াশোনা করিয়া, কাপড় কাচিয়া, বাসন মাজিয়া, ভাত রাঁধিয়া অতঃপর বিধ্বস্ত হইয়া পড়িলে পরক্ষণেই গঙ্গার সান্নিধ্যে আসিয়া হাওয়া খাইয়া মুড হইত চাঙ্গা! ক্রমশ বই-খাতা, কাগজ-কলম, ভাত-ডাল, সাবান-তেল-নুন-মশলায় ভরা সংসার ম-ম করিতে লাগিল!

কলিকাতার পথ-ঘাট পরিচিত হইল, এই প্রান্ত হইতে ওই প্রান্ত ছুটিয়া বেড়াইতে লাগিলাম। চায়ের দোকান হইয়া উঠিল আড্ডা মারিবার ঠেক। বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা বাড়িতে লাগিল। স্কন্ধের দুই পাশ হইতে ফট-ফট করিয়া গজাইল দুইখানি ডানা। এবং ক্রমে শুরু হইল উড়ান!

কত কী যে সাধ জাগিল মনে-
সাধ জাগিল উড়িয়া বেড়াই, ঘুরিয়া বেড়াই
জীবন কাটাই ছন্দে,
রমরমা এক সন্ধ্যা কাটাই
চিকেন-পিজ়ার গন্ধে।
তোমার হাতে হাত রাখিয়া
সময় কাটাই প্রিয়,
প্রতি বছর জন্মদিনে ডার্ক চকোলেট দিও!

কিন্তু হায়!

Untidy room
গোছানো সংসার ক্রমে অগোছালো হইতে লাগল

এইখানেও বাধ সাধিল পুঁজি। চোখ রাঙাইয়া জানান দিল- তুমি স্বপ্ন দেখিছ বৃথা! মুড়ি খাইতে খাইতে লঙ্কায় একখানি কামড় বসাইতেই ঝাল লাগিল ঠোঁটে, চোখ গেল খুলিয়া! বুঝিলাম, এ স্বপ্ন বৃথাই দেখিতেছিলাম! অগত্যা মুড়ি শেষ করিয়া চাহিয়া দেখি; ভাতের হাঁড়ি টগবগিয়া ফুটিতেছে, এইবার ডিম ভাজিয়া নিলেই ডিনার রেডি।

রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন আর্ট বিভাগে স্নাতকোত্তর পাঠরতা লাবনী পছন্দ করেন কার্টুন, ক্যারিকেচার, পোর্ট্রেট ও ইলাস্ট্রেশন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ শেষ করে লাবনী ইলাস্ট্রেশনকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *