আমার এক বান্ধবীর দু’ই ছেলেমেয়ে। যমজ। মেয়ে ছেলের থেকে ১২ সেকেন্ডের বড়। ছোট থেকেই দেখতাম ওদের বেজায় ভাব। একজন কাঁদলে আর এক জনও কাঁদত। আমার বান্ধবীর নাজেহাল অবস্থার গল্প নয় আর এক দিন বলব। যাই হোক, সারাক্ষণ মনে হত বাচ্চা দুটো যেন নিজেদের মধ্যে গুজগুজ ফুসফুস করছে। সে ভারী মজার দৃশ্য! সবে বসতে শিখেছে, সেই সময় থেকেই ওদের যেন কত গল্প। আমরা ভাবতাম সবই বাচ্চাদের ‘ব্যাবলিং’ অর্থাৎ আধো আধো কথা। পরে জেনেছিলাম আমরা যাকে হাবিজাবি কথা ভাবতাম, তার আসলে আলাদা মানে আছে। আর একমাত্র যমজ বাচ্চারাই সেই ভাষা বুঝতে এবং বলতে পারে। এই ভাষার নাম ক্রিপ্টোফেসিয়া। বাচ্চারা যত বড় হয়, ততই এই ভাষার ব্যবহার কমতে শুরু করে। অন্য ভাষা শেখার ফলে ক্রিপ্টোফেসিয়া ওরা ভুলে যায়। পুরো ব্যাপারটাই কিন্তু ভারী অদ্ভুত এবং মজার।

যমজ গর্ভাবস্থা নিয়ে এরকম কিন্তু অনেক অদ্ভুত তথ্য আছে, যা আমরা মোটে জানি না। আজকে সে রকমই কিছু তথ্য আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব।

যমজ সন্তানের মা-রা বেশিদিন বাঁচেন-বিশ্বাস নাই করতে পারেন, কিন্তু এর একেবারে পাকা প্রমাণ আছে। ‘ইউনিভার্সিটি অব উটাহ’-র গবেষকরা, ১৮০০-১৯৭০ পর্যন্ত সমস্ত রেকর্ড ঘেঁটে দেখেছেন, যে সব মায়েদের যমজ সন্তান আছে, তাঁরা যাঁদের যমজ সন্তান নেই, তাঁদের চেয়ে বেশিদিন বাঁচেন।

যমজ সন্তানের জন্ম সময়-বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, যমজ সন্তানরা প্রেগনেন্সির ৩৭ সপ্তাহেই জন্ম গ্রহণ করে।

বেবি এ এবং বেবি বি-যমজ বাচ্চাদের গর্ভাবস্থায় নামকরণ করা হয়। সার্ভিক্স অর্থাৎ জরায়ুর নীচের দিকে যে বাচ্চা থাকে, তাকে বলা হয় বেবি এ ও অন্য জনকে বেবি বি।

যমজ বাচ্চাদের ডেলিভারি প্রক্রিয়া আলাদা হতে পারে-বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, বেবি এ-র নর্মাল অর্থাৎ স্বাভাবিক ডেলিভারি করা হয়। বেবি বি-র ডেলিভারির ক্ষেত্রে অবশ্য সি-সেকশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে দু’বার জরায়ুর সংকোচনের ফলে বেবি বি-র  অস্বস্তি হতে পারে। তাই জন্য ডাক্তাররা বেবি বি-কে সি-সেকশন করে পেট থেকে বার করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।

● ভ্যানিশিং টুইন সিনড্রম– একজন বাচ্চা আর একজনকে খেয়ে ফেলছে। শুনে কোনও ভৌতিক সিনেমার দৃশ্য মনে হলেও টুইন প্রেগনেন্সিতে এমন হতে পারে। দেখা গেছে ১০-১৫ % প্রেগনেন্সিতে গর্ভে জোড়া বাচ্চা থাকে। কিন্তু গর্ভাবস্থার শুরুর দিকেই একটি বাচ্চা উধাও হয়ে যায়। একেই ডাক্তারি পরিভাষায় ভ্যানিশিং টুইন সিন্ড্রম বলে। সহজভাবে বললে একজন আর একজনকে খেয়ে ফেলতে পারে। কীভাবে? তার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

পারিবারিক ইতিহাস ও যমজ সন্তান-সাধারণত পরিবারে যমজ সন্তানের ইতিহাস থাকলে, পরবর্তী প্রজন্মের যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

● যমজ সন্তানের বাবা আলাদা হতে পারে-এরকম ঘটনা কম ঘটলেও মেডিক্যালি সম্ভব। কোনও মহিলার যদি মাসে একটির বদলে দুটো ডিম্বাণু নিঃসরণ হয়, এবং দুজন আলাদা পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা মহিলা গর্ভবতী হন, সেক্ষেত্রে সন্তানরা যমজ হলেও, তাদের বাবা আলাদা হতে পারে।


●যমজ গর্ভাবস্থায় বেশি যত্ন প্রয়োজন-গর্ভে জোড়া সন্তান থাকলে রক্তাল্পতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। সেই সঙ্গে দিনে অন্তত ২৭৭ ক্যালরি খাওয়া দরকার। অতিরিক্ত ভিটামিন এবং মিনারেলও নিতে হতে পারে হবু মাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *