Bikash Bhattacharya
বিকাশ ভট্টাচার্য। ছবি সৌজন্য – jnaf.com

আজকের দিনে, অর্থাৎ ২১ জুন, ১৯৪০ সালে উত্তর কলকাতায় জন্ম নিয়েছিলেন শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য। শৈশবেই পিতৃহারা বিকাশ অসম্ভব লড়াই করে বড় হয়েছিলেন। তাই তাঁর ছবির মধ্যেও আজীবন অন্ত্যজ জীবন ও দারিদ্রের প্রতিকৃতি। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত অধ্যাপনা করেছেন আর্ট কলেজে। তাঁর ছবি সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছিল। তাঁর ‘পুতুল’ ও ‘দুর্গা’ সিরিজের ছবিগুলি তাঁকে নাম, যশ, প্রতিপত্তির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। তবু আমৃত্যু তিনি কলকাতায় বসেই শিল্পচর্চা করে গিয়েছেন। আদ্যন্ত বাঙালিয়ানায় মুড়ে রেখেছেন নিজেকে। ২০০০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলচ্ছক্তি হারান। ছবি আঁকার ক্ষমতাও। ২০০৩ সালে ললিতকলা পুরস্কারে ভূষিত হন। আজ তাঁর জন্মদিনে আর এক বিশ্রুত শিল্পী সুশোভন অধিকারীর শ্রদ্ধার্ঘ্য। 

ষাটের দশকের আশেপাশে বাংলার শিল্পকলায় যে নতুন জোয়ার এসেছিল, সেই প্রবহমান তরঙ্গমালার একটি নাম বিকাশ ভট্টাচার্য। আধুনিক ছবির ভুবনকে নব উদ্যোগে সাধারণের সামনে মেলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অন্যতম কাণ্ডারী। আজকের শিল্প-বাজার যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, তাকে ইতিবাচক অর্থে ধরেই বলব— এর নেপথ্যেও বিকাশের ছবির মূল্য কিছু কম নয়। ছবির জনপ্রিয়তার নিরিখেও তিনি তালিকার সামনের দিকে।

আশ্চর্য এক অমোঘ আকর্ষণ আছে বিকাশের ছবিতে, তাঁর চিত্রপটের সামনে খানিকক্ষণ নিঃশব্দে দাঁড়াতে হয়। কী সেই সম্মোহন যা দর্শককে অমন স্তব্ধ করে রাখে? সে কি বিষয় ভাবনা, ছবির ভিতরের গল্প? নাকি আঙ্গিকের ইন্দ্রজালে জড়ানো ছবি নির্মাণের আশ্চর্য দক্ষতা? কোন কৌশলে বিকাশ ভট্টাচার্যের ছবি আমাদের এমন সম্মোহিত করে রাখে— এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া খুব সহজ নয়। আমাদের মনে হয়, তাঁর শিল্পী জীবনের গভীরে নিহিত আছে এর উত্তর।

বিকাশ জন্মেছিলেন উত্তর কলকাতা অর্থাৎ আদি কলকাতায়। সেই পুরনো কলকাতা যা কিনা, উনিশ শতকে সারা দেশ জুড়ে নবযুগের মশাল জ্বালিয়েছিল। তবে এত বছর বাদে বিকাশের চোখে সেই কলকাতা দেখা দিয়েছে অন্য চেহারায়। সেই শহর তখন ঐতিহ্য আর অবক্ষয়ের টানাপোড়েনে দীর্ণ থেকে দীর্ণতর হয়ে চলেছে। প্রতিনিয়ত খসে পড়ছে বিত্ত বৈভবে আবৃত বনেদিয়ানার পলেস্তারা। এই বিধ্বস্ত কলকাতা প্রতি মুহূর্তে বিকাশের মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি, তাঁর ব্যক্তি জীবনের টানাপোড়েনও খুব একটা কম ছিল না। সে খানিকটা মামুলি বায়স্কোপের মতো হলেও, সত্যি।

Bikash Bhattacharya
সাবেক গৌরীদান প্রথার প্রতিফলন বিকাশের ছবিতে। ছবি সৌজন্য – googleartsandculture.com

ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে ছিলেন। তারপর শৈশব কৈশোর ও যৌবনের শুরুর কিছুটা কেটেছে মামার বাড়িতে। কিন্তু সেই সব দারিদ্রে ঘেরা দিনগুলির কথা ফলাও করে কখনও বলতে চাননি। তাঁর ছবির মতো, পেনসিলের দ্রুত ঋজু আঁচড়ে একটানে শেষ করতে চেয়েছেন সেই গল্প। তাঁর নিজের কথায় “আরও অনেক ভাগ্যবিড়ম্বিত পিতৃহীনের মতো সেই একঘেয়ে কাহিনী।’ কিন্তু নিরন্তর অসহায়তার মধ্যেও শিশুকাল থেকে মনের গভীরে তিনি লালন করে চলেছেন এক আলোকিত স্বপ্ন। অবশেষে যা তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে কলা শিল্পের সিংহ দুয়ারে। আজ অনেকটা পিছনে ফিরে তাকিয়ে মনে হয়,তাঁর মধ্যে লুকিয়ে আছে এক সংবেদী নাগরিক সত্তা। অনুভবী শিল্পীর এই নাগরিক সত্তাটি গড়ে উঠেছে কলকাতার সমাজ, সংস্কৃতি ও তার পরম্পরাকে আশ্রয় করে, তাকে ভালোবেসে। তাই আজকের অবক্ষয়ের অধ্যায় তাঁকে ব্যাথিত করছে সমান ভাবে। সেই বেদনা তাঁর অজস্র ক্যানভাসে উপচে উঠছে অকৃপন ভাবে, তাঁর ছবি হয়ে উঠেছে আত্মবিক্ষনের আধার।

আজীবন তিনি মনে প্রানে ছিলেন এক আদ্যন্ত বাঙালি। তাঁর ছবিগুলিও নিবিড় বাঙালিয়ানায় অভিষিক্ত। শিল্পীর চিত্রপটে বার বার ফিরে এসেছে উত্তর কলকাতার জীর্ণ অট্টালিকা, সময়ের আঘাতে খসে যাওয়া বিবর্ণ প্রাচীর, একদা অভিজাত পরিবারের অসহায় উত্তরপুরুষের মলিন অবয়ব। সেখানেই থেমে যাওয়া নয়, বিকাশের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ঘুরে বেড়িয়েছে শহরের ঘিঞ্জি বসতিপূর্ণ এলাকার নানা অলিগলিতেও। আর সবটুকু চিত্রিত হয়েছে শিল্পীর পরম মগ্নতায়, নিবিড় মমতার সঙ্গে। নগরের উজ্জ্বল অতীতের সঙ্গে ছবিতে মিশেছে বর্তমানের তীক্ষ্ণ বাস্তবের উপেক্ষিত সময়পট।

Bikash Bhattacharya
শিল্পরসিকরা বলেন, বিকাশের এই পুতুল সিরিজ আদতে নকশাল আমলের অস্থির সময়ের এক রূপক। ছবি সৌজন্য – facebook.com

তবে বিকাশ ভট্টাচার্যের ছবিকে কি ঐতিহ্যবোধের সঙ্গে নৈতিকতার অবক্ষয় জড়ানো একপ্রকার চিত্রিত প্রতিবেদন হিসেবে ভাবতে হবে?ইতিহাসের প্রেক্ষিতে রচিত এ একরকমের পিকটোরিয়াল ডকুমেন্টেশন? না। তা কখনওই নয়। বিকাশের ছবি হাজির হয় চিত্রকলার নিজস্ব দাবি নিয়ে। বিষয় পেরিয়ে সে প্রতিষ্ঠিত হয় আধুনিক কলা শিল্পের পাকা বেদিতে। তাই তথাকথিত শিল্পরসিক থেকে সাধারণ দর্শক উভয়েই তাঁর ছবিকে সাদরে গ্রহণ করতে পারে। আর সেটাই বোধকরি তাঁর সাফ্যলের অন্যতম চাবিকাঠি। তবে সে কথায় একটু পরে আসছি। তার আগে বিকাশের শিল্পমনের অন্দর মহলে বাঙালিয়ানার সজল সরস সত্তাটির দিকে চোখ ফেরানো যাক।

বাঙালিয়ানার একটা অন্যতম পর্ব আমাদের দুর্গাপুজো। তবে আজকের কলকাতায় আয়োজিত পুজোর কথা বলছি না। সেকালের সাবেকি পুজোর প্রসঙ্গে উদ্বেলিত বাঙালি সত্তার কথা বলতে চাইছি। এই পুজোকে ঘিরে বিকাশ কত বিচিত্র অনুষঙ্গের ছবি এঁকেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। এখানেও কাজ করছে শিল্পীর তীক্ষ্ণ অনুসন্ধানী দৃষ্টি। মন দিয়ে লক্ষ্য করেছেন, কী ভাবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব ক্রমে বিবর্তিত হয়েছে, ফেলে এসেছে তার আলোকিত ঐতিহ্যের আসনটি! আজও এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বাংলার সমাজ, ধর্মচেতনা,সংস্কৃতি, সৌন্দর্যবোধ, ভাবাবেগ, সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে ওঠে। তবে আজ বাইরের দেখনদারি বেশি। এমন কি বাঙালির পোশাকের বিবর্তনেও দুর্গাপুজোর অবদান কিছু কম নয়। তার সবটুকুই শিল্পীর চোখে ধরা পড়েছে।

Bikash Bhattachrya
বিজয়া দশমীর সিঁদুরখেলা বিকাশের ক্যানভাসে। ছবি সৌজন্য – pinterest

বিকাশের ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে দুর্গাপুজোর কিছু আনন্দবিধুর মুহূর্ত। বিজয়া দশমীর অপরাহ্ণে দেবীকে বিদায় দেবার আগে, তাঁকে বরণ করে নেবার বেদনাঘন ছবি বিকাশের পটে কী আসাধারণ চিত্ররূপ ধারণ করে, তা বলার নয়। এমন এক ছবির কথা মনে পড়ে। সমস্ত ক্যানভাস জুড়ে এক বিষণ্ণ আলোর স্নিগ্ধতা। সামনের দিকে কালো সিল্য়ুয়েটের মতো একাধিক নারীমূর্তি। তাঁরা একে অপরকে দেবীর প্রসাদী সিঁদুর লাগিয়ে দিচ্ছেন। সেখানেই সামনে দাঁড়ানো লাল-পেড়ে সাদা শাড়ির অবগুণ্ঠনে আবৃত নারীর কপালে ত্রিনয়ন। তাঁকেও কেউ সিঁদুর দিচ্ছেন। দেবী যেন নেমে এসেছেন জনতার দরবারে, সমাজের সমস্ত নারীর মধ্যে!

এই হল বিকাশ ভট্টাচার্যের ছবির বৈশিষ্ট, যা বিষয়কে ছাপিয়ে দর্শকের মনের গভীরে প্রবেশ করে। চোখের দেখা আর মনের দেখা যেখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে ওঠে। ছবি পৌঁছে যায় বাস্তবের জগত পেরিয়ে পরাবাস্তবের গহনে, কী এক চেতন অবচেতনের মাঝখানে। খেয়াল করলে দেখি, দেবীপ্রতিমা নিয়ে বিকাশের মনের মধ্যে সর্বদা একটা অবসেশন কাজ করে চলে। নানান ভঙ্গিতে বিচিত্র প্রেক্ষাপটে ফিরে আসে দেবীপ্রতিমার ইমেজ। শিল্পী নিজেই বলেছেন—

‘এমন কিছু ব্যাপার থাকে যা কারও কারও জীবনের রূপরেখাকে আছন্ন করে রাখে। যেমন আমার জীবনে দুর্গার ভূমিকা। ছেলেবেলা থেকে তার সঙ্গে আমার নিবিড় পরিচয়। রথের দিন থেকে শুরু করে বিজয়া পর্যন্ত ওকে নানাভাবে নানারূপে দেখেছি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ওকে নিশ্চিন্দিপুরের হরিহরের কন্যা হিসাবে গড়েছেন। সত্যজিৎ রায় তাকেই পথের পাঁচালিতে নিয়ে এলেন। আমরা দেখলাম ‘চেনা লোককে অচেনা গাম্ভীর্যে’ যা দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় রূঢ়তা থেকে বাঁচতে চাইল একান্ত ভাবে আপন জীবনরসে। এ বিশ্বাস নিয়েই আমাকে বাঁচতে হচ্ছে, হবে। “দুর্গা” সেদিন হেরে গেলেও আদতে সে কখন হার মানেনি, হার মানবে না। সে দুর্গা কখনও মা, কখনও ভগ্নী, কখনও বধূ, কখনও কন্যা। আবার কখনও বা শুধু “সে”।

উপরের এই টুকরোটি ১৯৯৬ সালের ১৯ অক্টোবর মহাসপ্তমীর দিন “দেশ” পত্রিকায় প্রকাশিত বিকাশ ভট্টাচার্যের “ পুজোর কলকাতা” থেকে নেওয়া হয়েছে। এই নিবিড় আত্মকথন আমাদের জানিয়ে দেয় তাঁর চিত্রীসত্তার অন্দরমহলে প্রতিনিয়ত দেখা না দেখার কোন আদানপ্রদান চলছে। লেখাটির শেষে বিষাদের সুরে এ কথাও বলেছেন— “আমার এক এক সময় গভীর আক্ষেপ হয়, এখনকার ছেলেমেয়েরা কাশ ফুল, শিউলি চেনে না। অথচ টিউলিপ, পিটুনিয়া, চেরি সম্পর্কে তারা লম্বা বক্তৃতা দিয়ে দেবে। জানি প্রকৃতির সম্পদ সর্বকালের সর্বদেশের, এর কোনও সীমানা নেই। তবু নিজস্ব মাটি বলে একটা কথা আছে। নিজের দেশ নামক একটা তীব্র আবেগ আমাদের ভরিয়ে রাখে। শরতের শিউলি অথবা কাশ ফুলের সঙ্গে আমাদের সেই নাড়ির যোগ, মাটির যোগ।”

অর্থাৎ বিকাশের মতে এইটিই শিল্পীর মূল কথা— সাহিত্য শিল্পকলায় সেই নাড়ির যোগ, সেই মাটির যোগকে তীব্রভাবে ছুঁয়ে থাকা চাই। দেবী প্রতিমার বিষয়ে অবলম্বনে চিত্র নির্মাণ প্রসঙ্গে অন্যত্র তিনি লিখেছেন— “দুর্গা সেই ছেলেবেলা থেকে আমার মন জুড়ে আছে। মা’র অঙ্গে থেকে থেকেই লাল পাড় শাড়ি জড়িয়ে দিই, যা থেকে আমার মা বঞ্চিত হয়েছে। ভবিষ্যতে আমার আকাঙ্খায় মার অহরহ আনাগোনা।” এই কথার মধ্যে কি তাঁর শৈশবে পিতাকে হারানোর সেন্টিমেন্ট জড়ানো আছে? আধুনিক শিল্পরসিকের মতে ব্যক্তিজীবনের সেন্টিমেন্ট অধিকাংশ সময়ে তাঁর শিল্পকলাকে স্বদেশ, কালের গণ্ডিতে বেঁধে রাখে, বিশ্বজনীন হতে দেয় না। বিকাশের ক্ষেত্রেও কি এমনটা ঘটেছিল? ঘটে থাকলেও শিল্পী তাকে আমল দিতে রাজি নন।

Bikash Bhattacharya
কলকাতার টিপিক্যাল দৃশ্য। কলকাতার অন্তর দেখতে পাওয়া শিল্পীর তুলিতে। ছবি সৌজন্য – pinterest

কিশোর বয়েসে চোখের সামনে শোভাবাজারের রাজবাড়ির নাটমন্দিরে গড়ে ওঠা দুর্গাপ্রতিমার নির্মাণ তাঁকে এতটাই নাড়িয়ে দিয়েছিল —যে আজীবন শিল্পীর চিত্রপটে দেবীর আনাগোনা চলেছে প্রায় একই ভঙ্গিতে, কখনো হয়তো সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি নিজের গায়ে কোনও তথাকথিত ‘আধুনিকতার’ লেবেল ধরিয়ে দিতে রাজি নন। এমনকি প্রাচীন মূল্যবোধ আঁকড়ে থাকার জন্য কোনও প্রকার বিরূপ সমালোচনার তিনি পরোয়া করেননি। আজীবন নিজের স্থির বিশ্বাসে অটল থেকেছেন। তাঁর অজস্র ক্যানভাসে মায়াময় ইন্দ্রজাল রচনা করতে প্রবল সহায়ক হয়েছে পাশ্চাত্য প্রথায় ছাত্রজীবনের সযত্ন পাঠগ্রহণ। শুধু তেল রঙ নয়, প্যাস্টেল, জলরঙ বা কোলাজ ইত্যাদি যে কোনও আঙ্গিকে বিকাশ ভট্টাচার্যের ছবি মুহূর্তে ঝড় তুলতে পারে। একটা সময়ে বিমূর্ত ভাবনায় আকৃষ্ট হয়ে ছবি আঁকলেও সেখান থেকে সরে এসেছেন, মন সায় দেয়নি।

Bikash Bhattacharya
দুর্গার আরও এক রূপ। বিকাশের চোখে। ছবি সৌজন্য – pinterest

বিকাশের ছবি নিয়ে আধুনিক শিল্পবেত্তাদের মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে। তবে তাঁর ছবি যে-কোনও মানুষকে নাড়িয়ে দেয়, সে ব্যাপারে কোনও দ্বিমত নেই। আগেই বলেছি কেউ কেউ বলেন, তাঁর ছবি দেশ কালের সীমানা অতিক্রম করে আধুনিকতার দুয়ার স্পর্শ করে না। প্রশ্ন উঠতে পারে আজকের এই “আধুনিকতা” অর্থ কি পশ্চিমের ভাবনায় জড়িত? শব্দটি কি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল নয়? এসব তর্ক থাক। শুনেছি বুদ্ধদেব বসু বলতেন, “কবিকে কিছু বলতে হয়”। সেই সূত্র ধরে বলি, শিল্পীর কি কিছু বলার দায় নেই? কেবল দৃষ্টিগ্রাহ্য সৌন্দর্য, আর কিছু নয়? হ্যাঁ, সাহিত্যের কথা নিঃসন্দেহে আলাদা। তবে দৃশ্যশিল্পের আসরে শুধু “আর্ট ফর আর্টস সেক”? আমার মনে হয়, শিল্পীকেও কিছু বলতে হয়, অবশ্যই তার মতো করে। আর সেখানেই বিকাশ অনেকটা এগিয়ে আছেন।

শেষ করি তাঁর একটি ছবির উপস্থাপনা দিয়ে। কলকাতার গ্যালারিতে প্রদর্শিত হতে দেখেছি লাইফ-সাইজের সেই ছবি। সাদা-লাল-পেড়ে শাড়ির ঘোমটায় মাঝবয়সী মহিলা বসেছেন পুজোর আসরে। রুপালি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন তাঁর মুখমণ্ডলের কেবল চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। ছবিটিকে রাখা হয়েছে প্রায় মেঝের সঙ্গে, সামনে আলপনায় অলংকৃত মেঝেতে রাখা সিঁদুর মাখা ঘট, ফুল, তীরকাঠি ইত্যাদি পুজোর সরঞ্জাম- ছবি ও প্রকৃত উপকরণের চমৎকার সজ্জা। আধুনিকরা আজ যখন ইনস্টলেশনের নেশায় মগ্ন, তখন এই ছবি আমাকে স্মরণ করায় বাঙালিয়ানায় অবগাহিত চিত্রীর এই অভিনব শিল্পচিন্তা।

sushobhan adhikary

বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী সুশোভন অধিকারী একইসঙ্গে শিল্প-ঐতিহাসিক এবং সংরক্ষক। একদা কলাভবনের ছাত্র হিসেবে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। পরে সেখানেই তত্ত্বাবধায়ক পদে কর্মরত ছিলেন দীর্ঘকাল। বর্তমানের রবীন্দ্র-গবেষকদের মধ্যে তাঁর নাম অগ্রগণ্য। রবীন্দ্র চিত্রকলা নিয়ে রয়েছে বিশেষ অধ্যয়ন ও চর্চা। মাস্টারমশাই নন্দলাল নামে তাঁর লেখা বই পাঠকমহলে বহুল সমাদর পেয়েছে।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *