মাথার ওপরে
কে যেন একটা টাকা মাথার ওপরে রেখে
বাইরে চলে গেল
ভুবন তখন কিছুটা আবছা অন্ধকারে
বিনবিন করছে কুয়াশা
গত রাতে মনে মনে বলেছিলাম, কাল খুব ভোরে উঠব
ভোরে উঠে জল দেব চারাগুলিতে
কিন্তু এখন দেখছি, কে যেন একটা টাকা
আমার ওপরে রেখে চলে গেল
আমি আর মাথা উঁচু করতে পারি না
বাইরে কী হচ্ছে তা-ও জানি না কিছুই
চমনবাহার
অনেক বছর পরে, তার সঙ্গে দেখা হল
অন্তুদা-র বাড়ি।
আগের সেসব কথা, বৃষ্টিতে শোওয়ার কথা
মনে আছে তার?
কী ভেবে চমকে উঠে, চুপ করে তাকিয়ে থেকেছি
সে তো নীচে, মেঝেতেই,
হাতে তার পান আর চমনবাহার।
সেই চোখ, কিছুটা ধূসরলীন, অবরোধ
মাথা তুলে আছে।
সেই তিল বসে আছে থুতনির কাছে।
তার মেয়ে পাশে-বসা। হাতে সেলফোন।
এতদিন পরে দেখা! শুধু ভাবি— তাকাবে কখন!
পোঁটলা
একটা ছোট্ট কৌটোর মতন পোঁটলা মাথায় নিয়ে
একজন লোক হেঁটে চলেছে…
তার পিঠে দুর্দমনীয় ঘাম আর মুখে
ঘাম
কী আছে ওই পোঁটলায়? কী এমন জিনিস?
বাড়ি গেলে ছেলেমেয়েরা হাত দিতে গেলে
লোকটি সরিয়ে নেয় পোঁটলাটি
হাঁটতে হাঁটতে লোকটির বয়স বেড়ে যায়, আর
ক্রমশ পোঁটলাটি ছোট্ট হতে থাকে
একদিন লোকটির পোঁটলাটি খুলে ফেলেছে সংসার
পোঁটলার ভিতর থেকে স্বপ্ন প্রজাপতি হয়ে উড়ে গেল…
লোকটি ফিরে এল না আর
যূথিকানগরে
যূথিকানগরে গিয়ে রাত্রিবেলা থমকে দাঁড়ালাম
এক বন্ধ দরজার সামনে
একটি নিস্তব্ধ ঘোড়া দাঁড়িয়ে রয়েছে পাশে।
দেখে ভয় পেলাম
এটা কি ট্রয়ের কোনও ঘোড়া?
যদি তার পেট থেকে বেরিয়ে পড়ে সব অস্ত্রধারী!
আকাশ থেকে নক্ষত্রেরা ঝরাচ্ছিল তাদের সোনার আলো
নামছিল অচিন্ত্যনীয় রঙিন জরি
এই সময় তোমার দরজায় আমরা
ভয় নেই, আমরা কিচ্ছুই বলব না তোমাকে
শুধু নিস্তব্ধ ঘোড়াটিকে জাগাতে থাকি
দেখলাম— কেশর ধীরে ধীরে উড়তে থাকে হাওয়ায়
পাখির ভেতর
আমার কবিতা থাকে পাখির ভেতর।
দুটো দানাপানি থাকে
কিনে-আনা অলসের দাঁড়ে।
তলার বাটির মধ্যে— দু’চামচ জল…
এখানে কবিতা কী যে পারে
কবি কেন বুঝতে পারে না?
যখন রাত্রি নামে… নিবিড় নীহার
আমি ভাবি, তারা এসে, দেখে চলে যাক
তার কবি, জগতের ওপার হতে, একজন কবি
কী কাজ করেছে দ্যাখো আজ?
সে যেন করেছে শুধু কবিতার অনুক্ত আওয়াজ।
তবু কবি, মাঝেমাঝে সে-আওয়াজ পেত
কবির কবিতা থাকে পাখির ভেতর।
অসাধারণ লাগলো আপনার কবিতা। আরো পড়ার ইচ্ছে রইলো।