জীবন থেকে জীবনে: অন্তিম পর্ব

Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
memoir and elegy

আগের পর্বের লিংক: [] [] [] [] [] [] [] [] [] [১০]
[১১] [১২] [১৩] [১৪] [১৫] [১৬] [১৭] [১৮] [১৯] [২০] [২১] [২২] [২৩] [২৪]

হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডে এডিটিং ডেস্কের শিফট ছিল চারটে। মর্নিং, নুন, ইভেনিং এবং নাইট। প্রথম তিন মাস ইভেনিং এবং নুন শিফট করার পর আমাকে নাইট শিফটে পাঠানো হয়। সেই শিফটে চিফ ছিলেন কেরলের মানুষ বিক্রমন নায়ার। দুরন্ত ইংরেজি বলা ও লেখা ছাড়াও বাংলাতেও যে তাঁর কতটা দখল তা আটষট্টি বছর বয়সে সহসা ক্যান্সারে চলে যাবার আগে দু-দু’টো বাংলা বই লিখে জানিয়ে দিয়ে গেলেন বাঙালিকে। ওঁর ‘দুই ইউরোপের দিনলিপি’ আর ‘পশ্চিম দিগন্তে প্রদোষকালে’ বাংলায় লেখা ভ্রমণকাহিনির মধ্যে সেরার সেরা হয়ে উঠেছিল অচিরে। দেশ দেখার চোখ ও বোঝদারি যে কোথায় পৌঁছতে পারে তার এক দৃষ্টান্ত নায়ারদার ওই বই দু’টো। তবে পাণ্ডিত্য যে কী এবং ভালমানুষ যে কেমন হয় তা মুহুর্মূহু অনুভব করেছি নায়ারদাকে দেখে রাতের ওই শিফটগুলোয়। আত্মকথার পরবর্তী অংশে এই বিক্রমন নায়ার ঘুরে-ফিরে আসবে বারবার। এতই জড়িয়ে গেছেন নায়ারদা আমার জীবনে। ওঁর সঙ্গে ভাললাগা, ভালবাসার জট তৈরি হত ক্রমাগত তর্কে, তর্কে আর তর্কে। ওঁর সঙ্গে কাজ করতে করতেই বুঝে গিয়েছিলাম যে আমার হয়তো আর সাংবাদিকতা ছেড়ে চলে যাওয়া হবে না। ভাবনার শুরুটা হয়েছিল, আগেই বলেছি, খুলনা গিয়ে। যা আরও দানা বাঁধল বাংলা ও ইংরেজিতে লেখালিখি আর নায়ারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তর্কাতর্কি ও বই পড়ে। চার্লস ল্যাম্বের জীবনে যেমন কবি ও বিশ্বপড়ুয়া স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ, আমার জীবনেও তেমনটি ক্রমশ হয়ে উঠলেন বিক্রমন নায়ার। ল্যাম্ব লিখছেন কোলরিজ সচরাচর বই ফেরত দিত না, কিন্তু যদি বা দিত সে-বই বহুগুণ মূল্যবান হয়ে আসত পাতায় পাতায় কোলরিজের লেখা অপূর্ব সব মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণের দাক্ষিণ্যে। নায়ারকেও ধার দেওয়া বইয়ের বিনিময়ে সে-সব মহামূল্যবান আলোচনা, বিশ্লেষণ ফেরত পেতাম তা আজও কানে বাজে। এই লেখার মুহূর্তেও তা মনের আনাচে-কানাচে ঘোরাফেরা করছে।

Bikraman Nayar
বিক্রমন নায়ার

হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডে নাইট শিফটে কাজের একটা বড় মজা ছিল সমস্ত কপি প্রেসে পাঠানোর পর ডেস্কের সবার দল করে খেতে বসা। একেক দিন একেক জনের ওপর ভার থাকত ডেস্কের সবার জন্য খাবার আনার। কেউ একদিন আনল চাইনিজ (অবশ্যই দোকান থেকে অর্ডার করে), কেউ কোনদিন ঝোলায় করে চিকেন রোল, কেউ মশলা দোসা আর বড়া, কেউ ডিমসেদ্ধ আর ভেজিটেবল স্যান্ডউইচ। তবে সবার নজর থাকত আমার দিনটায়, কারণ মা সবার জন্য রেঁধে পাঠাত ফুলকো লুচি আর আলুর দম, সঙ্গে সন্দেশ। কপি ছাড়ার পর সে যে কী এক ভুরিভোজ তা লম্বা সময় চর্চায় ছিল আমি হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড ছেড়ে যাবার পরও। আমাদের সেই সব মধ্যরাতের ফিস্ট আনন্দবাজারের ডেস্কের সাংবাদিকরা জুল জুল করে দেখত। Jealous comment-ও কি ছুড়ত না মাঝে মাঝে? ছুড়ত বইকী!

এই রাতের ডিউটি করতে করতেই পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা হয়ে যায় আনন্দবাজারের তিন স্মরণীয় লেখকের সঙ্গে। নরেন্দ্রনাথ মিত্র, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় এবং শান্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেনদা ইভেনিং শিফটেই কাজ করতেন, ওই শিফট শেষ হওয়ার মুখে একদিন আমাকে দেখে হাত নেড়ে ডাকলেন। কথায় কথায় জানতে চাইলেন আমি কোথায় কোথায় পড়েছি এবং ওঁর লেখার সঙ্গে পরিচয় আছে কি না। ওঁর বেশ কিছু লেখার সঙ্গে পরিচিত জেনে প্রখ্যাত, প্রবীণ লেখক এতই খুশি হয়েছেন দেখে একই সঙ্গে অবাক এবং মুগ্ধ হয়েছিলাম। তারপর থেকে ইভেনিং শিফট থাকলেই আমরা একটু-আধটু গল্পে মজতাম। আনন্দবাজার ও হিন্দুস্থানের এডিট ফ্লোর যেখানে বেঁটে বেঁটে আলমারি দিয়ে ভাগ করা সেখানে দাঁড়িয়ে আমাদের গল্প চলত। এরকম একদিন কথায় কথায় উনি বলেছিলেন, “চার্লস ডিকেন্স পড়ে শিখেছি কত সুন্দর করে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে বলা যায়। ‘ডেভিড কপারফিল্ড’ পড়ে তো চোখে জলও এসেছে।”

Samuel Taylor Coleridge
কবি ও বিশ্বপড়ুয়া স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ

এই ডিকেন্স এবং টমাস হার্ডি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন শ্যামলদাও। এঁদের মধ্যে কে বড় লেখক জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলাম, “ডিকেন্স”। তাতে শ্যামলদা বলেছিলেন, “আমারও তাই মনে হয়। তবে হার্ডিও খুব বড়, গ্রামের জীবনে ওঁর দখল দারুণ।” শুনতে শুনতে ভাবছিলাম কথাটা বলছেন কে? না, বাংলায় গ্রামজীবনকে তলিয়ে দেখা এক মানুষ। শহরের এক চরিত্র নিয়ে ওঁর ‘নির্বান্ধব’ উপন্যাসটা আমার খুব প্রিয় শুনে দেদার রসিক লেখক বুকপকেট থেকে দুটো টাকা বার করে আমায় বলেছিলেন, “কী যে আরাম দিলে ভাই, এই দিয়ে একটু চা, মিষ্টি খেয়ো।” তখন বাধ্য হয়ে বলতেই হয়েছিল, “আরে, দাঁড়ান দাঁড়ান! টাকার অঙ্কটা বাড়বে, কারণ ‘দেশ’ পত্রিকায় আপনার ধারাবাহিক ‘কুবেরের বিষয় আশয়’-ও মুগ্ধ হয়ে পড়েছি সপ্তাহের পর সপ্তাহ।” বলা মাত্রই কী দিলখোলা হাসি লেখকের! আর বললেন, “জানো তো, ভাল পাঠকেরা ভাল লেখকদের চেয়েও মানুষ ভাল হয়।” বলেই ওঁর সেই সেমি-অট্টহাসি। তারপর হঠাৎ সেই হাসি থামিয়ে ব্যথাতুর কণ্ঠে বলেছিলেন, “এই ধারাবাহিকও হঠাৎ একদিন সম্পাদক ফোন করে বলেছিলেন আর তিনটে সংখ্যায় শেষ করে দিতে হবে!” 

জিজ্ঞেস করতেই হয়েছিল, “কেন?”

শ্যামলদার ব্যাখ্যা ছিল, “হয়তো গ্রামের বাস্তব জীবন রচছিল না পাবলিকের। তাদের পছন্দ শহরের ফেরেব্বাজি আর ধামসাধামসির কেচ্ছা। তবে আমি ছাড়বার পাত্র নই। আমি খুলনার মাল, গ্রাম নিয়ে লিখে যাবই।”

এই সময়ই আমার বাবার পরিচয় পেয়ে ওঁর সেই বর্ণনা— “তোমার বাবা খুলনার বাড়ির বারান্দায় ইজিচেয়ারে শাল জড়িয়ে বসে শেক্সপিয়ার পড়ছেন আর নীচের বাগানে পাড়া-বেপাড়ার ছেলে আমরা বাতাবি লেবুর ফুটবল খেলছি, চেঁচাচ্ছি… আর বঙ্কিমবাবু একমনে পড়েই যাচ্ছেন। এই স্মৃতি কি ভোলার?”

Shaymal Gangopadhyay
শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়

এরকমই একদিন গল্প হচ্ছিল শ্যামলদার সঙ্গে দুপুরের শিফটে যখন মনে হল পাশের কোনও টেবিল থেকে ওঁকে কেউ ইশারায় কিছু বলল। তাতে শ্যামলদা আমাকে বললেন, “বাবু, শান্তিদা মনে হয় তোমাকে কিছু বলতে চান।” ঘুরে দেখি অন্য টেবিল থেকে সৌম্যদর্শন বিশিষ্ট চেহারার সেই প্রৌঢ় শান্তিবাবু। দূর থেকে দেখেছি ওঁকে, কিন্তু আলাপ হয়নি। আমি ওঁর টেবিলে গিয়ে বসতেই ভদ্রলোক বললেন, “তোমায় প্রায়ই দেখি বইপত্তর নিয়ে আসা-যাওয়া করতে। খুব পড়োটড়ো বুঝি? শ্যামল তো বলছিল ওর কিছু লেখাও তুমি পড়েছ।”

বললাম, “তা দু’তিনটে কাজ পড়েছি।”

স্মিত মুখে শান্তিবাবু বললেন, “এই অধমও সামান্য কিছু লিখেছে। যদি…”

ওঁকে কথার মধ্যে থামিয়েই জিজ্ঞেস করে বসেছিলাম, “যদি নামটা একটু জানান।”

শান্তিবাবু কোনও ভনিতা না রেখে বললেন, “শান্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।”

ভনিতা বর্জন করে আমাকেও বলতে হল তখন, “তাহলে তো আপনার অনুবাদে স্তেফান জোয়াইগের গল্পটি আমার পড়া। ওঁর ‘দ্য ফ্যান্টাস্টিক নাইট’-এর অনুবাদ আপনি করেছেন ‘সেই আশ্চর্য রাত্রি’ নামে। ঠিক?”

হ্যাঁ, না, কী বলবেন শান্তিবাবু! তিনি গোল গোল চোখ করে আমাকেই দেখে যাচ্ছেন। তাতে আমাকেই ফের ব্যাখ্যায় যেতে হল: আসলে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ার সুফল এটাই। কত বই আর পত্রপত্রিকাই যে অবলীলায় এসে যেত হাতে। আপনার ‘সেই আশ্চর্য রাত্রি’ পড়ে প্রথম জানি স্তেফান জোয়াইগকে। পরে ওখানকার সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে পেয়ে যাই জোয়াইগের গল্প সংকলন ‘ক্যালাইডোস্কোপ’। সেটি ইস্যু করে গোগ্রাসে গিলেছিলাম আর ক্রমাগত ধন্যবাদ দিয়েছিলাম আপনাকে।

বলা বাহুল্য, এরপর এক সুন্দর স্নেহ (ওঁর দিক থেকে) ও শ্রদ্ধার (আমার দিক থেকে) সম্পর্ক হয় আমাদের মধ্যে। আমাকে পেলেই বসিয়ে চা খাওয়াবেনই আর কথাও শুরু করবেন এক বাঁধা প্রশ্নে: নতুন কী পড়লে বল?

জিজ্ঞেস করতে হত, বাংলা না ইংরেজি?

— আগে বাংলাই হোক। 

— আবু সয়ীদ আইয়ুবের ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’।

— Excellent! অপূর্ব! আর ইংরেজিতে?

— আসলে ফরাসি বই, তবে ইংরেজিতে। আলব্যের কামু’র ‘লিরিকাল অ্যান্ড ক্রিটিকাল এসেজ’। 

তখন শান্তিরঞ্জন বললেন, “কত অপূর্ব জিনিস যে পড়ার আছে! শুনলেই দুঃখ হয়, এবং আনন্দও।”

Charles Dickens & Thomas Hardy
ডিকেন্স এবং টমাস হার্ডি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন শ্যামলদাও

কেন যে এমন আফশোসের সুর ছিল শান্তিদা’র গলায় তার কিছুই বুঝিনি সেদিন। চমকে উঠে আন্দাজটা এল যেদিন সকালে কাগজ খুলে জানলাম শান্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় আর নেই। মৃত্যুর সংবাদের সঙ্গে বন্ধু সন্তোষকুমার ঘোষের মর্মস্পর্শী স্মৃতিচারণা। বাড়ি যাবার আগে স্বভাবমতন বন্ধুকে বলেও গেছেন, ‘চলি, সন্তোষ।’ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি আনন্দবাজারের যুগ্ম সম্পাদক যে এটাই বন্ধুর শেষ যাওয়া। বাড়ি গিয়ে পরিবার-পরিজনকে বুঝিয়ে বিষ খাবেন তিনি। ভরন্ত সুখের মধ্যেই চলে যাওয়া স্থির করলেন তিনি। পরিবারকে বোঝালেন যে, পূর্ণাতিপূর্ণ সুখই চলে যাওয়ার পরম লগ্ন। 

এর দিনকয়েক পরে শান্তিদা’র আরেক অনুরাগী ও বন্ধু শক্তি চট্টোপাধ্যায় ওঁর স্মরণে ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখে ফেললেন বাংলা ভাষার এক শ্রেষ্ঠ এলিজি ‘মৃত্যুর পরেও যেন হেঁটে যেতে পারি’। 

মানুষের মৃত্যু হলে মানুষের জন্যে তার শোক
পড়ে থাকে কিছুদিন, ব্যবহৃত জিনিসেরা থাকে
জামা ও কাপড় থাকে, ছেঁড়া জুতো তাও থেকে যায়
হয়তো বা পা-দুখানি রাঙা হলে পদচ্ছাপ থাকে
অনুপস্থিতি আর মরা পদচ্ছাপ রেখে ওরা—
যাদের পিছনে ফেলে দিয়ে গেলে, তারা মনে করে
তোমার স্বভাবস্মৃতি তোমার ভালোর সীমাহীন
তোমার সমগ্র নিয়ে আলোচনা হয় না কখনো
হতেও পারে না বলে মনে হয়, হতে পারে নাকি?
মৃত্যুর দুদিন আগে তোমাকে কী সুন্দর দেখালো!
গল্প বলেছিলে বটে, আর কোনো কাজ বাকি নেই
ঋণ নেই কারো কাছে, পাওনা নিয়ে করিনি তদবির—
আমি সুখী, তুমি জানো সুখ কাকে বলে?
সুখ সেই বিষণ্ণতা যে আমার কোলে বসে থাকে
অনন্যা একাকী কন্যা সেও তার নিজস্ব গৃহের
বারান্দায় বসে থাকে রাজার পুত্রের খেলাঘরে—
তারো কাছে আমি এক বাতিল বাবার
স্মৃতি ছাড়া কিছু নয়—অতীতের বিঘ্ন ও মধুর!
নিজেকে সরিয়ে নিতে চাই আজ, পূর্ণ আছি বলে
জানি না কখনো যদি পূর্ণতায় ইঁদুরের দাঁত
চাম কেটে বসে আর ফুটো করে সজল বালিশ
তাহলে উজ্জ্বল তুলো বাতাস ভাসাবে
পঙ্গু অনর্থক দিন বৃথা চলে যাবে
দক্ষিণদুয়ারে এসে দাঁড়াবে নির্ঘাৎ
চতুর্দোলা নিয়ে যম—
অপমান লাগে…

মৃত্যুর পরেও যেন হেঁটে যেতে পারি।।

Shakti Chattopadhyay
শক্তি চট্টোপাধ্যায়

এইভাবেই ইংরেজি সাংবাদিকতার পাশাপাশি বাংলা পদ্য গদ্য আর লেখকবন্ধু মানুষজনে জড়িয়ে পড়ছিলাম হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড, আনন্দবাজার, দেশ-এ। কাজের বাইরে এক মস্ত মেলামেশার জায়গা তখন আনন্দবাজার ভবন। কয়েক মাসেই আনন্দবাজার তকমা সেঁটে গেছে আমার সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পোশাকে। হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডের সহকর্মী উদয়নদা (ভট্টাচার্য) তো একদিন নাইট শিফটে ঠাট্টা করে বলেই বসল, “এই পোশাকে থাকলে মেয়েরা বসিয়ে গান শোনায় বুঝি?”

এইরকমই একদিন বাড়ির বাইরের ঘরে বসে কী সব ভাবছিলাম। হঠাৎ দেখি ছুটতে ছুটতে আসছে শুভরঞ্জন আর বলে যাচ্ছে, “দারুণ খবর আছে। এম.এ-র রেজাল্ট বেরিয়েছে—তুই ফার্স্ট, আমি সেকেন্ড”। জীবনের সেরা খবরটা এল এক রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে বন্ধুর মুখে। মা’কে গিয়ে বলতে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে মা বলল, “ওপর থেকে নিশ্চয় বাবা দেখছেন।” তারপর নিজের ঘরের মা কালীর পুজোর ফুল এনে কপালে ছুঁইয়ে বললেন, “তোমার বাবাও তো উকিল হয়েও বই আর পড়াশুনোয় থেকে গেলেন। তোমাকেও মনে হয় লেখালিখিতে টানছে। সেখানেও তো বই।”

পরদিন অফিসে খবরটা দিয়েছিলাম অভীকবাবুকে। খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে কী ঠিক করলে? জার্নালিজমে থাকছ?”

বললাম, “হ্যাঁ”।

নুন শিফটের কাজ শেষে দেখা করতে গিয়েছিলাম ফাদার হুয়ার্টের সঙ্গে। খবরটা দিতেই সুন্দর হেসে বললেন, “ইউ ডিজার্ভ ইট।” তারপর জার্নালিজমে আমার কাজের কথা শুনে বললেন, “যদি লেখালিখিতে এত আনন্দ পাও তাহলে জার্নালিজম ছেড়ো না। পড়াশুনোর জগৎ তো তোমার খোলাই রইল।”

বাড়ি ফেরার পথে নির্জন পার্ক স্ট্রিটে হঠাৎ করে মনের মধ্যে ভেসে উঠল প্রিয় মার্কিন কবির প্রিয় পঙক্তিগুলো।

Robert-Frost
রবার্ট ফ্রস্ট: The Road Not Taken

সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্ট চার্চের সামনে দাঁড়িয়ে আপন মনে নিজেকে শোনাতে শুরু করলাম—

Two roads diverged in a yellow wood,
And sorry I could not travel both
And be one traveler, long I stood
And looked down one as far as I could
To where it bent in the undergrowth;

Then took the other, as just as fair
And having perhaps the better claim
Because it was grassy and wanted wear,
Though as for that the passing there
Had worn them really about the same,

And both that morning equally lay
In leaves no step had trodden black.
Oh, I kept the first for another day!
Yet knowing how way leads on to way
I doubted if I should ever come back.

I shall be telling this with a sigh
Somewhere ages and ages hence :
Two roads diverged in a wood, and I,
I took the one less traveled by,
And that has made all the difference.

(দ্বিতীয় পর্ব সমাপ্ত)

ছবি সৌজন্য: Flickr, Lookandlearn.com, Facebook ও লেখক

Sankarlal Bhattacharya Author

শংকরলাল ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট, কলকাতায়। ইংরেজি সাহিত্যে স্বর্ণপদক পাওয়া ছাত্র শংকরলাল সাংবাদিকতার পাঠ নিতে যান প্যারিসে। তৎপরে কালি-কলমের জীবনে প্রবেশ। সাংবাদিকতা করেছেন আনন্দবাজার গোষ্ঠীতে। লিখেছেন একশো ত্রিশের ওপর বই। গল্প উপন্যাস ছাড়াও রবিশংকরের আত্মজীবনী 'রাগ অনুরাগ', বিলায়েৎ খানের স্মৃতিকথা 'কোমল গান্ধার', হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিমালা 'আমার গানের স্বরলিপি'-র সহলেখক। অনুবাদ করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে সত্যজিৎ রায়ের চিত্রনাট্য পর্যন্ত।

3 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

banglalive.today/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.today and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: banglalive.today/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives banglalive.today/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com