সকালেই যা তরতাজা, দিন ফুরোলেই বাসি। এই যে গোটা ফেব্রুয়ারি মাসটাকে নিয়ে এত মাতামাতি, এ মাস নাকি ভালবাসার মধুমাস, বসন্তের হিমহিম হাওয়ায় ভালবাসার কণারা ভেসে বেড়ায়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির হিমেল হাওয়া যেই না ফুরোল, মার্চ মাসটি হাজির হল ভারিক্কি চালে, নারীবাদী গন্ধ নিয়ে। ৮ মার্চ যে নারী দিবস!

প্রতিবছর এই দিনে মেয়েদের কতই না যত্নআত্তি চলে। সকাল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ফেসবুকে, তুমুল ঝড়, ‘হ্যাপি উইমেনস ডে’, ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা।’ নারী আন্দোলনের কর্মীদের সে দিন নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। ঠিক যেন বারোয়ারি সরস্বতী পুজোর পুরুতমশাইটি, এদিক ওদিক ছুটোছুটি, সভায় সভায় ভাষণ, নারীবাদী মিছিলে স্লোগান, ‘আটই মার্চ দিচ্ছে ডাক, পিতৃতন্ত্র নিপাত যাক।’ 

এসব শুনে টুনে ঘরবন্দি এক বউ, যে কিনা কিশোরীবেলায় স্বপ্ন দেখত বড় সাঁতারু হবে, বা ওই যে গেছো মেয়ে, যে এখনও সুযোগ পেলেই দাদার সাইকেল নিয়ে চষে বেড়ায় এ গলি সে গলি, আর কল্পনা করে একদিন সে খুব বড় সাইক্লিস্ট হবে, দু’জনেরই শিরায় শিরায় নতুন করে রক্তোচ্ছ্বাস ছোটে। কিন্তু হায়, যেই না ৮ মার্চের রাত পোহাল, নারী আবার ছিটকে গেল তার নিজস্ব কোণে। বাসি ফুলের মতো সৌরভহীন, জৌলুশহীন। ছেঁড়াফাটা সংসারের সব ছিদ্র ভরাট করার কাজে। 

তাহলে দরকার কী শুধুই একটি দিন (৮ মার্চ) মেয়েদের চোখে মায়াকাজল পরিয়ে? কেন এই মিথ্যের বেসাতির সওয়ার হবে মেয়েরা?

আসলে মেয়েরা নিজেরাই আদৌ সচেতন নয় নিজেদের অধিকার বিষয়ে। বলতে দ্বিধা নেই, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আসল তাৎপর্য কী, আজকের অনেক নারীর কাছেই এর ধারণা অস্পষ্ট। 

Womens day
১৯৭৫ সালে নারীর অধিকারের লড়াইকে স্বীকৃতি দেয় রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেই শুরু নারী দিবস পালনের

এক শতক আগে এই দিনে মহিলাদের সংগ্রামের কথা, ১৯৭৫-এ রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতি – এসব কথা ক’জন জানে? আসলে ‘মেয়েরা হল পরের আঙিনার গাছ’- মায়ের মুখে এ কথা শুনেই তারা বড় হয়। তাকে ‘মেয়েলি’ বানিয়ে রাখার জন্য ছোট থেকে মাথায় ঝুঁটি বেঁধে, টিপ পরিয়ে, পুতুল আর খেলনাবাটি হাতে ধরিয়ে সংসার সংসার খেলায় উৎসাহ দেওয়া হয়। আর একটু বড় হতেই আরও কিছু আচারবিচার, সংস্কারের মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তার অবস্থান পুরুষদের নীচে বা পুরুষদের আশ্রয়ে এবং তাদের সেবার মধ্যে দিয়েই নারীত্বের চরম উৎকর্ষ ও পরম প্রাপ্তি।  অর্থাৎ জন্মলগ্ন থেকেই, মেয়েদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তারা একটি আলাদা প্রজাতি।

এখানে ছোটবেলায় দেখা একটি ঘটনার উল্লেখ করার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। শীতের নরম রোদে এক মা তাঁর দুই যমজ শিশু সন্তানকে বেশ করে গায়ে তেল মাখিয়ে মাদুর বিছিয়ে শুইয়ে দিয়েছিলেন। সকালের রোদে প্রচুর ভিটামিন ডি, শরীরের পক্ষে ভাল… শিশু দুটির মা বয়সে কচি হলেও যথেষ্ট বিজ্ঞান পড়া মেয়ে। স্বাস্থ্য সচেতনও। লেখাপড়াতেও সে বেশ তুখোড়।

কিন্তু অল্পবয়সেই বিয়ে, পড়াশুনোর মাঝপথেই ইতি, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার যমজ সন্তানের মা। হাজার কাজকর্মের ফাঁকেই সে বিশ্বের খবরাখবর রাখে। কিছুক্ষণ পরে বাচ্চাদের ঠাকুমা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে উঠোনে চোখ ফেললেন, দেখলেন নাতি নাতনিকে, ভেতরে চলে গেলেন তৎক্ষণাৎ। ফিরে এলেন একটু পরেই। নাতনির পা গলিয়ে একটি প্যান্টি পরাতে পরাতে গজগজ করে বললেন, ‘বৌমাটার আর বোধভাস্যি হবে না।  মেয়ে সন্তানকে কেউ এমন উলঙ্গ করে শুইয়ে রাখে?’

বউমা রান্নাঘরেই ছিল, উঁকি দিয়ে দেখল সব, একটু পরে আর একটি প্যান্টি নিয়ে এসে সে তার ছেলেকেও পরাতে যায়। বৃদ্ধা হাই হাই করে উঠলেন, ‘আরে, কর কী, কর কী, রোদটা একটু খাওয়াতে দাও দাদুভাইয়ের শরীরে’। বউমা অবাক, ‘তাহলে আপনার দিদিভাই যে …’ বিরক্ত শাশুড়ি বললেন, ‘বড্ড ঠ্যাঁটা তো তুমি বউমা, শুধু মুখে মুখে কথা। বোঝ না, মেয়েমানুষের সব সময় আব্রু দরকার। ছেলেকে ন্যাংটো করে রাখলেও লজ্জা নেই।’ 

কচি বউমাটি ঠ্যাঁটাই বটে। আবার কলকল করে উঠল, ‘দুধের শিশুর মধ্যেও আব্রু টানছেন মা! এই জন্যই তো … । শাশুড়ি এবার রক্তচক্ষু বের করলেন। ‘নিজের কাজে যাও দিকিনি। তোমার ওই কেতাবি ভাষা খবরদার সংসারে ফুটিয়ো না। জন্ম থেকে জেনে এসেছি, মেয়েরা মেয়েই। সে শিশুই হোক কি বুড়ি।’

তাই বুঝি সিমোন দ্য বোভোয়া তাঁর ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’ বইটিতে বলেছিলেন, ‘শিশু মেয়ে হয়ে জন্মায় না, সে মেয়ে হয়ে ওঠে।’ নানা সামাজিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তাকে ভবিষ্যতের নারীরূপে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।

তবে দিন তো পাল্টেছেই। এখন আমরা দাবি করি মননে, চিন্তনে আমরা আধুনিক। অথচ মিডিয়াগুলো যখন পঞ্চাশ বছরের আগের ট্যাগ লাইন, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’, ঝুলিয়ে সস্তার সিরিয়াল তৈরি করে, আমরা বুঁদ হয়ে তা দেখে চলি। এর জন্য বাড়ির ড্রয়িং রুমগুলো বিকেল থেকেই ‘হাউজফুল’, রান্নাঘরগুলো কয়েক ঘণ্টার জন্য ‘শাট ডাউন’। সিরিয়ালের মূল চরিত্রে থাকে এক নারী, যাকে প্রায়ই শিফটিং ডিউটিতে থাকতে হয়। কখনও শ্বশুর শাশুড়ির লক্ষ্মী বউমা, কখনও দেওর ননদের মিষ্টি বউদিভাই, দুষ্ট ছেলেমেয়েদের আদর্শ মামমাম আর শেষরাতে স্বামীর বাধ্য শয্যাসঙ্গিনী। এরপরেও সে সংসারে চরম নির্যাতনের শিকার, যাকে বলে ‘ভিকটিম’।  

কচি বউমাটি ঠ্যাঁটাই বটে। আবার কলকল করে উঠল, ‘দুধের শিশুর মধ্যেও আব্রু টানছেন মা! এই জন্যই তো … । শাশুড়ি এবার রক্তচক্ষু বের করলেন। ‘নিজের কাজে যাও দিকিনি। তোমার ওই কেতাবি ভাষা খবরদার সংসারে ফুটিয়ো না। 

শুধু কি তাই! কিছু খলনায়িকা অর্থাৎ কুচক্রী নারীর চক্রান্তেও সে জেরবার। কখনো সাবান জল মেঝেতে ফেলে তার হাত পা ভাঙা হচ্ছে, কখনো আবার তার সাধের রান্নায় নুন ঢেলে তাকে সকলের সামনে অপদস্থ করা হচ্ছে। বউটি সব বুঝেও চুপ। কে কালপ্রিট জেনেও হাতে নাতে ধরে ফেলছে না। কারণ স্ক্রিপ্ট ওভাবেই লেখা, প্রতি এপিসোডে ভরপুর সাসপেন্স। সাসপেন্স খতম তো সিরিয়ালের আয়ুও খতম। অবাক লাগে ভাবতে, এটা কি মেয়েদের পক্ষে চরম অপমানকর নয় যখন সিরিয়ালগুলিতে ষড়যন্ত্রকারীর ভূমিকায় নামে এক নারী?

এভাবে কতদিন নারীরা এই অসুস্থ সমাজের হাতে কলের পুতুল হয়ে থাকবে? কেন তারা দাবি করবে না সেই সব সিরিয়ালই টিভির পর্দায় আসুক, যেখানে একজন নারীর সার্থক জীবনের গল্প থাকবে? যে গল্পে তাদের স্বপ্নগুলো বার বার চুরি হতে চায়, তবু মানসিক দৃঢ়তা দিয়ে তারা সেই চুরি যাওয়া স্বপ্নগুলোকে আবার খুঁজে নিয়ে জুড়ে দেয়!

নারীকে পণ্য করতে অবশ্য বিজ্ঞাপন জগতেরও জুড়ি নেই। এক একটি পণ্যের আইকন এখন এক একজন গ্ল্যামারাস, লাস্যময়ী নারী। জিনিসের গুণাগুণ দেখাবার জন্য নারী শরীরের ব্যবহার কি এতই জরুরি? আমার এই লেখাটির মধ্যে সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে অধিকার দাবিতে নারীদের অজ্ঞানতা বা উদাসীনতার কথা। কিন্তু আমি নিজে একজন ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ। তাই গাঢ় অন্ধকারেও আগামীতে ভোর ফুটে ওঠার স্বপ্ন দেখি। 

কিছুদিন আগেও কাবুলের মেয়েদের, সমাজে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হত। জন্ম থেকে মৃত্যু, কোথাওই নাম থাকত না তাদের। একবার একটি বিদেশি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় একটি ছেলের কাছে জানতে চাওয়া হয় তার মায়ের নাম। ছেলেটি হতবাক, মায়ের নাম! তারপর খানিক নখ টখ কামড়ে ভীষণভাবে মনে করার চেষ্টা করে তার মায়ের নাম, পারে না। পারার কথাও নয় অবশ্য। আসলে তাদের সংসারে কেউ তো কোনওদিন তার মাকে কোনও নাম ধরে ডাকেনি। স্কুলের খাতাতেও মায়ের নাম নেই। এটাই তাদের সমাজের রীতি। কবরেও লেখা থাকে, অমুকের বৌ, তমুকের মা…।  

সিরিয়ালের মূল চরিত্রে থাকে এক নারী, যাকে প্রায়ই শিফটিং ডিউটিতে থাকতে হয়। কখনও শ্বশুর শাশুড়ির লক্ষ্মী বউমা, কখনও দেওর ননদের মিষ্টি বউদিভাই, দুষ্ট ছেলেমেয়েদের আদর্শ মামমাম আর শেষরাতে স্বামীর বাধ্য শয্যাসঙ্গিনী। এরপরেও সে সংসারে চরম নির্যাতনের শিকার, যাকে বলে ‘ভিকটিম’।  

তবে এখন ছবিটা একটু হলেও বদলেছে। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী মেয়েরা। ফেসবুক-টুইটারে প্রচারের ঢল, #হোয়্যারিজমাইনেম। ধীরে ধীরে কাজও হয়। আফগানিস্তানের জনপ্রিয় গায়ক ফারহাদ দারিয়া স্ত্রীর সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করে লিখলেন – ‘ফারহাদ ও সুলতানা দারিয়া’। এসব থেকেই বলা যায় নারীবাদ হল সমাজ-নির্মিত পৌরুষের ধারণার বিরুদ্ধে এক সরব প্রতিবাদ। তাই নারী দিবস পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার দিন, পুরুষের বিরুদ্ধে নয়। অর্থাৎ নারীবাদ মানে নারী বনাম পুরুষের যুদ্ধ নয়।

নারী দিবসের এই লেখার সমাপ্তিতে আরও দু’টি ঘটনার কথা বলতে চাই। 

ঘটনা ১: আমার পাশের বাড়িতে সত্তর পেরনো এক বৃদ্ধ দম্পতির বাস।  রোজই দেখি, ঠিক যখন বেলার রোদ এলিয়ে পড়ে, বিকেলের নীল নীল আলো ছেয়ে যায় চারিদিকে, তাঁরা এসে বসেন ঘরের সামনে খোলা এক ফালি ছাদে। পঙ্গু বৃদ্ধাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ঠেলে ঠেলে নিয়ে আসেন বৃদ্ধ। নিজে বসেন একটা বেতের চেয়ারে। সামনে পাতা থাকে বেতের টেবিল, সেখানে সাজানো টি পট, দুটো সুন্দর কারুকাজ করা কাপ, সাদা ধবধবে প্লেট, তাতে কখনও কুচো নিমকি, কখনও মুচমুচে বিস্কুট। 

বৃদ্ধ নিজেই চা বানান, স্ত্রীর সামনে সুন্দর করে সাজিয়ে দেন চা আর স্ন্যাক্স, তারপর খেতে খেতে গল্প করেন দুজনে। বৃদ্ধার মুখেই বেশি কথা, বৃদ্ধ বেশির ভাগ সময়ে শ্রোতা। তাঁর ডানহাত শুধু ছুঁয়ে থাকে স্ত্রীর শিরা ওঠা দু’টি হাতকে। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরও তাঁরা ওঠেন না। গুনগুন করে কথার শব্দ আসে। একসময় মনে হয়, ওগুলো কথা নয়, গান। একদিন কান পেতে শুনলাম সত্যিই গান গাইছেন দুজন। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের গান, ‘আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি’। 

Old couple
তোমাদের মাসিমা তো এতদিন আমাকে যত্ন করলেন, এবার আমার ফিরিয়ে দেওয়ার পালা

প্রথম প্রথম ওঁদের দেখে ভাবতাম, বাব্বাঃ! বৃদ্ধ বয়সের কী প্রেম! একদিন জিজ্ঞাসাই করে ফেললাম, ‘মেশোমশাই, আপনি খুব ভালবাসেন মাসিমাকে, না? এত সেবা যত্ন করেন, কখনও ক্লান্তি আসে না?’ এমন করে হেসেছিলেন সেদিন মানুষটা, আমি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলাম। হাসি থামতে বললেন,

‘আসলে মেয়েদের সেবা নিতে আমরা প্রস্তুত, সেটাকে আমরা কর্তব্য ভাবি। কিন্তু পুরুষরা কিছু করলেই তাকে খুব বড় করে দেখতে শুরু করি। এই যে তোমার মাসিমা এতদিন ধরে আমায় ঘড়ি ধরে অফিসের ভাত বেড়ে দিল, জামাকাপড় ইস্ত্রি করে গুছিয়ে রাখল, অভাব অনটনেও একই রকম সহনশীল হয়ে পাশে থাকল, এর প্রতিদানে কি কিছু চাইতে পারে না ও? আমি তো তাই খুশি মনেই ওর সমস্ত কাজ করি। এতকাল আমি ওর ছায়ায় বেড়ে উঠেছি, এবার তো আমার সেই ছায়া ফিরিয়ে দেওয়ার পালা।’ 

স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম বৃদ্ধের উত্তর শুনে, বেবাক স্তব্ধ। নিজেকেও ধিক্কার দিয়েছিলাম, এমন প্রশ্ন কেউ করে? কিন্তু সেই দিনই অনুভব করেছি, এই হল আসল প্রেম, আসল ভালবাসা। এই হল নারীর স্বীকৃতি। এখন মনে হয় ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রোজই ভালবাসা দিবস, নারী দিবস পালন করছেন তাঁদের সুখী গৃহকোণে, সংগোপনে। 

ঘটনা ২: কয়েকবছর আগে সংবাদপত্রে একটা খবর পড়ে চমকে উঠেছিলাম, বৃন্দাবনে হোলির দিন বিধবারা কৃষ্ণের পায়ে রঙ ছুঁইয়েছে, একে অপরকে রঙ মাখিয়েছে, করতাল, মৃদঙ্গের তালে তালে নেচেছে, গেয়েছে, একে অপরকে বুকে জড়িয়ে আনন্দাশ্রু ঝরিয়েছে। 

Vrindavan widow holi
বৃন্দাবনে দোলের রঙে রেঙেছেন বিধবারা

খবরটা পড়তে পড়তে নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে উঠেছিল। মনে হয়েছিল স্বর্গ দেখে ফেললাম। এই পৃথিবীই সেই এক টুকরো স্বর্গ যেখানে আশি বছরের বৃদ্ধাও রঙের খেলায় মেতেছেন, মুঠো মুঠো আবির ছড়াচ্ছেন আকাশে বাতাসে, তাঁদের দুঃখী মুখে বেদনার আঁকিবুঁকি ঢেকে গিয়ে আনন্দের ইকির মিকির রেখা ফুটে উঠেছে।

কে জানে হঠাৎ হয়তো আবিরের সেই গুঁড়োতে রেঙে উঠেছে কোনও বৃদ্ধার শূন্য সিঁথি। কিশোরী মেয়ের মতো তখন তিনি চুপিসারে নিজের ঘরে গিয়ে দোর দিয়েছেন, একটা সস্তার সবুজ ফ্রেমের আয়নায় খুঁটিয়ে দেখেছেন নিজের লজ্জা লজ্জা মুখখানা। তারপর মুগ্ধ হতে হতে ডুকরে উঠেছেন। 

বৃন্দাবনে ওই দোলের দিনটিই, আমার মতে সত্যিকারের নারী দিবস।

*ছবি সৌজন্য: Facebook, Pixabay, Pinterest

পেশায় রাজ্য সরকারের মানবাধিকার কমিশনে কর্মরত শাশ্বতী নিয়মিত লেখালেখি করেন নানান বাংলা সংবাদপত্র ও পত্রপত্রিকায়। মীলত গল্প লিখতে পছন্দ করেন তবে প্রবন্ধ লেখাতেও সমান স্বচ্ছন্দ। শিশু সাহিত্যও ওঁর পছন্দের মাধ্যম। স্বপ্নবলাকা, বসন্ত অফুরান, দৈত্যের বাগান, ওঁর কিছু প্রকাশিত বই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *