২০১৫ সালে ভারতে মুক্তি পেয়েছিল ইন্দো-জার্মান সহযোগিতায় তৈরি পঞ্জাবি ভাষার ছবি ‘কিসসা- দ্য টেল অফ আ লোনলি গোস্ট’। তার আগেই অবশ্য ২০১৩ সালে টরন্টো ফিল্মোৎসবে দেখানো হয় সেই ছবি। তাতে উম্বর সিং নামে এক পুত্রাকাঙ্ক্ষী পঞ্জাবি সর্দারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ইরফান খান। তাঁর স্ত্রীয়ের ভূমিকায় ছিলেন টিস্কা চোপড়া, মেয়ের ভূমিকায় তিলোত্তমা সোম এবং মেয়ের বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করেন রসিকা দুগগল। পরাবাস্তবতা, জটিল মনস্তাত্ত্বিক ওঠাপড়া, সম্পর্কের অদৃশ্য ঘূর্ণাবর্ত নিয়ে তৈরি এই ছবিটির পরতে পরতে ছিল ইরফান-কে নতুন করে আবিষ্কার করার সুযোগ। যোগ্য সঙ্গত করেছিলেন তিলোত্তমাও। ক্যুইনসল্যান্ড আন্তর্জাতিক ফিল্মোৎসবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন ইরফান। ছবির পরিচালক ছিলেন অনুপ সিং। আর চিত্রনাট্যকার ছিলেন কলকাতার মেয়ে মধুজা মুখোপাধ্যায়। ছবিটি তৈরির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকার সুবাদে ইরফানের সঙ্গে কাজ করার, তাঁকে কাছ থেকে দেখার, কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলেন মধুজা। ইরফানের অকালপ্রয়াণের পরেই বাংলালাইভের তরফে যোগাযোগ করা হয় মধুজার সঙ্গে। একান্ত আড্ডায় ইরফানকে নিয়ে নিজের স্মৃতির ঝুলি উপুড় করলেন তিনি। শুনলেন পল্লবী মজুমদার।
কী ভাবে জড়িয়ে পড়লেন ‘কিসসা’ প্রজেক্টে?
যাদবপুরে পড়ার সময়, ১৯৯৯ সালে ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে একটা ক্রিয়েটিভ ডকুমেন্টারিতে সহকারি পরিচালক এবং পোশাক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছিলাম। পরিচালক ছিলেন অনুপ সিং। ছবিটার নাম ছিল ‘একটি নদীর নাম’। অনুপ জেনিভায় থাকেন এবং একাধিক আন্তর্জাতিক প্রজেক্টে কাজ করতেন তার আগে থেকেই। তথ্যচিত্রটা করার সময়েই আমার ওঁর সঙ্গে পরিচয়। তার কিছুদিন পরে আমরা দু’জনে মিলে কিসসার স্ক্রিপ্টটা নিয়ে কাজ শুরু করি। সেটা ২০০৪ সাল। গল্পটা অনুপেরই। তারপরে আমরা দু’জনে চিত্রনাট্য এবং সংলাপের ওপর কাজ করি। এই সংলাপই পরে পঞ্জাবিতে অনুবাদ করা হয়। ২০০৮ পর্যন্ত লেখার কাজটাই চলে। একাধিক অভিনেতার কথা ভাবা হচ্ছিল সেই সময় প্রধান চরিত্রের জন্য। কিন্তু ইরফানের কথা মাথায় আসার পর আর কিছু ভাবতে পারিনি, কারণ ইরফান ছাড়া এরকম একটা জটিল, সংঘাতময় চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তোলা প্রায় অসম্ভব। ২০১২-তে শ্যুটিং হয়। আন্তর্জাতিক মুক্তি ২০১৩-তে টরণ্টো ফিল্ম ফেস্টিভালে। ভারতে মুক্তি পায় ২০১৫ সালে।
কেন?
সেটা বলতে গেলে ‘কিসসা’র গল্পটা একটু বলতে হয়। গল্পের মূল চরিত্র উম্বর সিং একজন পঞ্জাবি শিখ যিনি ১৯৪৭-এ দেশভাগের সময় তিন মেয়েকে নিয়ে ভারতে চলে আসেন। তাঁর একমাত্র ইচ্ছে তাঁর একটি পুত্রসন্তান হোক, যে বংশের ধারা এগিয়ে নিয়ে যাবে। এবং এই ইচ্ছে একসময় অবসেশনে পৌঁছে যায়। স্ত্রী মেহের যখন ফের অন্তঃসত্ত্বা হন, উম্বরের দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায় এ বার তাঁর ছেলেই হবে। প্রসবের পরেই সন্তানকে কোলে তুলে নিয়ে হাসিমুখে উম্বর ঘোষণা করেন যে তাঁর ছেলে হয়েছে। নামকরণ করেন কাঁওয়ার সিং। কিন্তু মেহের দেখেন, আসলে এ বারও তাঁদের কন্যাসন্তানই হয়েছে। মেহের উম্বরকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেন। এমনকি এটাও বলেন যে শিশুটিকে গোপনে মেরে ফেলা হোক। কিন্তু উম্বর মানতে নারাজ।
‘ছেলে’ হিসেবেই বড় করে তোলেন কাঁওয়ারকে। এক সময় সে ঋতুমতী হয়, শরীরে নারীত্বের চিহ্ন আসে। কিন্তু সবটা দেখেও না-দেখার ভান করে এক অদ্ভুত ‘ডিনায়াল’-এর মধ্যে বাঁচতে থাকে উম্বর। এক সময় নিজের বন্ধুর মেয়ে নিলি-র সঙ্গে কাঁওয়ারের বিয়ে ঠিক করে উম্বর। বিয়ে হয় এবং নিলি বুঝতে পারে সে কখনও মা হতে পারবে না। সে পালিয়ে যেতে চায়। উম্বর তাকে আটকায় এবং ধর্ষণ করতে যায়। কাঁওয়ার বাধা দিতে এলে সে বলে, একমাত্র এ ভাবেই বংশে পুত্রসন্তান আনা যাবে। কাঁওয়ার সহ্য করতে না-পেরে বাবাকে গুলি করে খুন করে। নিলিকে নিয়ে পালিয়ে যায় গ্রাম থেকে। কিন্তু তবু উম্বরের পুত্রের আকাঙ্খার মৃত্যু হয় না। সেই অবসেশনের জোরে শারীরিক মৃত্যুর পরেও ফিরে ফিরে আসতে থাকে উম্বর। তার কখনও না-পাওয়া একটা আনন্দের মুহূর্ত সে খুঁজতেই থাকে একা একা, অশরীরী হয়ে।
এই উম্বর সিংয়ের চরিত্রটা আপাতদৃষ্টিতে নেগেটিভ বলে মনে হয়। আমার ধারণা, সম্ভবত অনুপেরও সেটাই ধারণা ছিল, যে অন্য যে কোনও অভিনেতা এই চরিত্রে কাজ করলে উম্বর একটি আদ্যন্ত ভিলেন হিসেবে দেখা দিত। কিন্তু ছবির মূল সুরটাই তাতে নষ্ট হয়ে যেত। উম্বর ভিলেন নয়। সে আদতে এক দুর্ভাগ্যজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার, যার জেরে তার ইচ্ছে ক্রমশ অবসেশনের রূপ নেয় এবং জগৎ সংসারের বাস্তবতা থেকে সে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইরফান ছাড়া এই মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা ওই ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা আর কোনও সমকালীন অভিনেতার ছিল বলে মনে হয় না। এটা বিশেষত আরও এই কারণে বলছি, যে ইরফান ওঁর স্বকীয় ঘরানায় চরিত্রটাকে এমন একটা মাত্রা দেয় যে দর্শক কিছুতেই উম্বরকে ঘৃণা করতে পারে না। কোথাও একটা উম্বরের একাকিত্ব, তার না-পাওয়ার যন্ত্রণা, তার মৃত্যুতেও শান্তি না-পাওয়াটা দর্শককে কষ্ট দিতে থাকে। ছবির শেষে দর্শক উম্বরের প্রতি দুর্বল হয়ে যায়।
ইরফানের সঙ্গে প্রথম আলাপ তো নিশ্চয়ই এই ছবির সূত্রে। সেটা কী রকম ছিল?
স্ক্রিপ্ট পড়া, আলোচনা এই সময়টা আমি অনুপের সঙ্গে ছিলাম না। কারণ আমি তখন পুরোদস্তুর যাদবপুরে পড়াই। ফলে ফিল্মিংয়ের গোড়ার দিকে আমাদের খুব বেশি কথা হয়নি। এরপর ওরা শ্যুটিং করতে চণ্ডিগড়ে চলে যায়। সেখানেও আমি বেশিদিনের জন্য যেতে পারিনি। আমি মুম্বই যাই ২০১১-এর মে মাসে এডিটের সময়। তখন সেশন ব্রেক চলছিল। কাজেই ওই সময় আমি একমাস মুম্বইতে ছিলাম। তখন ভালো ভাবে ইরফান, তিলোত্তমা সকলের সঙ্গেই আলাপ হয়। প্রায়দিনই বিকেলে আমাদের আসর বসত। কখনও ইরফান একা, কখনও তিলোত্তমা, কখনও ক্রুয়ের অনেকে মিলে দারুণ আড্ডা জমত।
ইরফানকে প্রথমবার সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
কপিবুক ধরনের সুপুরুষ ছিলেন। ছবি সৌজন্য – nilnews.com
পর্দায় যেমনই দেখাক, সামনে থেকে দেখে প্রথম একটা কথাই মনে হয়েছিল, লোকটা কী অসম্ভব হ্যান্ডসাম! ছিপছিপে, লম্বা, চাপা রং – মানে একদম কপিবুক টল, ডার্ক অ্যান্ড হ্যান্ডসাম! ওর চোখ দু’টো একটু বড় বড়, সামনের দিকে বের করা। হয়তো সেই জন্যই ওকে টিপিক্যাল রোম্যান্টিক হিরোর মতো লাগত না। আজ শুনছি সকলেই প্রায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ওর চোখের কথা বলছে। সত্যিই ওরকম সুন্দর দৃষ্টি আর অদ্ভুত সুন্দর চাপা হাসি আমি খুব কমই দেখেছি। হাসলে গালে টোলও পড়ত! হিজ স্মাইল ওয়জ টেরিফিক অ্যান্ড হি ওয়জ ইমেন্সলি চার্মিং।
এডিট টেবলে উম্বরের চরিত্রে ওঁর অভিনয় দেখে কী মনে হয়েছিল?
অবিশ্বাস্য লাগত এক একটা দৃশ্যে। মানে শ্যুটিং যখন হয়, তখন তো সব সময় অভিনেতাকে জিজ্ঞাসা করা যায় না, যে এটা কী ভাবে করছেন, ওটা নিয়ে কী ভাবলেন… কারণ ওঁদের ওপরে প্রচণ্ড চাপ থাকে তখন। অত লোক, অত আলো, শিডিউলের ডেডলাইন, নিজেদের পারফরম্যান্স, ক্যামেরা, লাইট – সবমিলিয়ে খুব একটা বিশদে কথা বলার সুযোগ থাকে না। এডিটের সময় সেটা পেয়েছিলাম।
একটা দৃশ্যের কথা বিশেষ ভাবে বলতে চাইব। কাঁওয়ারের যখন পিরিয়ড হয় এবং ও বাবাকে এসে বলে, ওর বাবা ব্যাপারটা লুকিয়ে ফেলে। তারপর একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছেলে ‘বড়’ হয়ে গেছে বলে। সেই অনুষ্ঠানে একটা নাচের দৃশ্য আছে – ইরফান দুহাত তুলে নাচছে। মানে সামান্য দুলছে। দৃশ্যটা দেখলে মনে হয় উম্বর যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে। একটা অদ্ভুত উচ্ছ্বাসহীন আনন্দ চোখেমুখে, যাকে বলে কোয়ায়েট ব্লিস। আমি ওটা দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, ‘ইসকা তো স্ক্রিপ্ট মে কুছ ডেস্ক্রিপশন নেহি হ্যায়! ম্যায়নে কুছ লিখা নেহি ডিটেলমে! আপনে ইয়ে অজীব সা এক্সপ্রেশন ক্যায়সে দিয়া?’ তাতে ও বলেছিল, “ম্যায়নে সোচা ইয়ে ইতনে সব লোগ কিতনে বেওকুফ হ্যায়। ম্যায় ইনকো বেওকুফ বনা রাহা হুঁ, অর ইয়ে বন রহে হ্যায়!” এর পরে যখন দৃশ্যটা আবার দেখি, মনে হয় ঠিক যেন এইটাই ও পর্দায় করে দেখাচ্ছে! একটা অদ্ভুত কৌতুক কোথাও লুকিয়ে আছে ওর ওই অভিব্যক্তিতে, যেটা খুব প্রচ্ছন্ন। সামনে থেকে অন্যরকম দেখায়। অথচ আছে কোথাও লুকিয়ে। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম কী আশ্চর্য রকম রিফলেকটিভ একজন মানুষ, অথচ সে নিজেকে কখনও খুব সিরিয়াসলি নেয় না।
উম্বর সিংয়ের চরিত্রের জন্য কি কোনও ওয়র্কশপ করেছিলেন ইরফান? কী ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
ইরফান কোনও ওয়র্কশপ করেননি। ওঁর প্রস্তুতিটা ওঁর ভেতরে ভেতরে হতে থাকত। অবশ্যই পরিচালকের সঙ্গে, ডিওপি-র সঙ্গে আলোচনা, আদান প্রদান এসব তো চলেই। কিন্তু আসল প্রস্তুতিটা ওঁর ভিতরেই চলত। আসলে, সাধারণ ভাবে ভালো অভিনেতা মাত্রেই একটা চেষ্টা থাকে, যে ছবিটার যেটা Tone, সেটার সঙ্গে নিজেকে মানানসই করার চেষ্টা করা। ইরফান যেটা করত, সেটা হল চরিত্রটাকে নিয়ে নিজের একটা আলাদা নিজস্ব জগৎ তৈরি করে নিত।
উম্বর সিংয়ের সাজে। ছবি সৌজন্য – songsuno.com
মানে উম্বরের কথাই ধরা যাক। উম্বরকে লোকে যা ভাবছে, উম্বর নিজে তো নিজেকে তা ভাবছে না! ইরফান সেই জায়গাটায় পৌঁছে যেত অনায়াসে। আর সেই জন্যেই ইরফান ওয়জ এবল টু ব্রিং সিমপ্যাথি ফর দ্য ক্যারেকটার। আমার কাছে এটা অবিশ্বাস্য লেগেছিল। কেউ যে শুধু পারফরম্যান্স দিয়ে এই কাজটা করতে পারবে, যাতে একজন পোটেনশিয়াল রেপিস্টের জন্যেও কোথাও গিয়ে দর্শকের খারাপ লাগবে, উম্বরের অ্যাকশনগুলো ছাপিয়ে চরিত্রের পেথোস-টা তাদের নাড়া দেবে, এটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
আসলে আমার মনে হয়, সমস্ত ভালো পারফরমারদেরই এই নিজস্ব গোপন কুঠুরিটা থাকে। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত যদি শোনও, দেখবে একটা কথা বলা হয়, ‘রাগের পকড়’। অর্থাৎ কিনা রাগের চলন, তার নিজস্বতা, তার গতিপথ। ইরফানের সেই ‘পকড়’টা ছিল সাঙ্ঘাতিক। আমি অনেক বড় বড় অভিনেতাকে দেখেছি, পরিচালক যা দেখাচ্ছেন হুবহু কপি করে দিচ্ছে। বা পরিচালক যা নির্দেশ দিচ্ছেন অক্ষরে অক্ষরে সেটাই করে যাচ্ছে। হয়তো সিচ্যুয়েশানটা নিয়ে ভাবছে, কিন্তু সিচ্যুয়েশনের বাইরে চরিত্রটা নিয়ে তেমন ভাবছে না। ইরফান এটা পারত। গোটা স্ক্রিপ্টটা পড়ে প্রথমে চরিত্রটার শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে ভাবত, মানে এই চরিত্রটা কী ভাবে হাঁটবে, কী ভাবে বসবে, কথা বলার সময় হাতগুলো কী রকম করবে, এগুলো ঠিক করত। আর তারপর সিচ্যুয়েশন পেরিয়ে চরিত্রটার খাঁজেখোঁজে অন্দরে ঢুকে পড়ে তার রসটা ধরত। এই অঙ্কটা ও নিজে নিজে করত, একা।
আবার সেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উদাহরণটাই দিচ্ছি। ধরো, সব রাগেরই একটা স্পষ্ট কাঠামো থাকে। আরোহী অবরোহী সব ঠিক করা আছে। সেগুলো সবাই জানে। কিন্তু গাইবার সময় আলাপ, ঝালা, তানকারি, লয়কারি এগুলো নিজের মতো করেই করতে হয়। তবেই সে রাগের সৌন্দর্যটা ফুটে বেরোয়। তার বৈচিত্রটা কোন ওস্তাদ কেমন করে নিজের গলায় বা বাজনায় আনতে পারেন, সেটাই তো শোনার! ইরফানের ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই ছিল। কাঠামোটা ও শুনে নিত। তারপর নিজের মতো কোথায় বোলতান দেবে, কোথায় তেহাই দেবে, সেটা ইনস্টিংকটিভলি ঠিক করত। আর সেই জন্যই সম্ভবত ওই অভিনয়টা বেরত। এবং অভিনয় করতে করতে ও বুঝতে পারত সেটা কোন দিকে যাচ্ছে। হি ওয়জ এবল টু জাজ হিমসেল্ফ হোয়াইল পারফরমিং! আর সেটা বুঝে ও নিজের স্টাইলটা বদলাত। এটা একটা অকল্পনীয় ক্ষমতা। চূড়ান্ত সেল্ফ-রিফলেকটিভ না হলে এটা সম্ভব নয়।
আর কোনও সিনের কথা বিশেষ ভাবে মনে পড়ছে?
হ্যাঁ, একটা তো এক্ষুনি মনে করতে পারছি। সিনটা আপাতদৃষ্টিতে খুব সাধারণ। উম্বর তার পুত্রবধূ নিলিকে বলছে, আমার পা-টা টিপে দাও। কাঁওয়ার-ও তখন সেখানে উপস্থিত। তার সঙ্গে খুব হালকা চালে কথা বলতে বলতে উম্বর নিলিকে পা টিপে দেবার কথা বলে।
চরিত্রের নিজস্ব জগতে ঢুকে পড়তেন অনায়াসে। ছবি সৌজন্য – news18.com
এই সিনটা লেখার সময় আমি আর অনুপ অনেক আলোচনা করেছিলাম, কারণ সিনটার মধ্যে একটা সূক্ষ্ম যৌনতার আভাস দেওয়ার দরকার ছিল। অর্থাৎ উম্বর যে তার পুত্রবধূর প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করছে সেটা প্রচ্ছন্ন ভাবে বোঝাবার দরকার ছিল। তখন আমিই এই পা টিপে দেওয়ার ব্যাপারটা সাজেস্ট করি। এরকম আমার নিজের অভিজ্ঞতায় ছিল, যে কোনও একজন প্রবীণ মানুষ তার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট কাউকে পা টিপে দিতে বলছে। নিছকই পা টেপা, আর কিছু নয়। কিন্তু তার মধ্যে খুব গভীর যৌন ইঙ্গিত আছে। ইংরেজিতে বলতে গেলে বলব sexually loaded gesture। সেই ভেবেই দৃশ্যটা লিখেছিলাম। কিন্তু এই কথাটা স্ক্রিপ্টে স্পষ্ট ভাবে কোথাও লিখিনি।
অথচ ইরফান যখন অভিনয়টা করল, ওর চাহনি, ছেলের সঙ্গে কথা বলা, তার মাঝখানেই বৌমাকে পা টিপে দিতে বলা, পুরো ব্যাপারটার মধ্যেই আবার সেই নির্লিপ্ত কৌতুকের ভঙ্গিটা নিয়ে এল। তার সঙ্গে একটা খুব নিচু তারে বাঁধা যৌন আবেদন। আমি ওটা নিয়েও একই প্রশ্ন করেছিলাম। স্ক্রিপ্টে তো কিছু বিশদে লেখা নেই, কী ভেবে এরকম এক্সপ্রেশন দিলে? তাতে ও আবার সেই সিগনেচার হাসিটা হেসে বলল, “মনে মনে ওটাই ভাবতে লাগলাম যে লোকটা কতবড় হারামজাদা! নিজের মেয়ের জীবনটা তো শেষ করেইছে, এবার অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে পড়েছে! আর এরা একে মেনেও নিচ্ছে! কেন নিচ্ছে কে জানে!” এর পরে যখনই দৃশ্যটা দেখেছি, যেন মনে হয়েছে কানে ওর কথাগুলো বাজছে।
এটাই বোধহয় ইরফানের অভিনেতা হিসেবে সবচেয়ে বড় গুণ। প্রতিটা চরিত্রে অভিনয় করার সময় ও মনে মনে তার খারাপ দিকগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারত। আ স্ট্রেঞ্জ সেল্ফ-ক্রিটিক অফ ইচ ক্যারেক্টার। তুমি পিকুর চরিত্রটার কথাই ভাবো। রাজা চৌধরি। কখনও মনে হবে রোম্যান্টিক, কখনও লুজার, কখনও একগুঁয়ে… আসলে যে লোকটা কী, সেটা কখনওই যেন ঠিক ধরা যায় না। হয়তো একটা সংলাপ মজার ছলে বলল। পরে ঠিক সেখান থেকেই আর একটা গভীর অর্থবহ সংলাপের খেই ধরে ফেলল। এরকম খুব কমই দেখা যায়। হি রিয়েলি হ্যাড আ ক্রিটিকাল অ্যান্ড রিফ্লেকটিভ মাইন্ড। তুমি যদি ওর অসুস্থতার সময়ের লেখা বা ট্যুইটগুলো পড়ো, দেখবে তাতেও এই ব্যাপারটাই ধরা পড়ে।
কোনও ক্ষেত্রে অনুপের ভাবনার সঙ্গে ইরফানের ভাবনাটা মেলেনি, মতের অমিল হচ্ছে, এ রকম ঘটনা ঘটেনি?
জেনারেলি স্পিকিং, অনুপ এবং ইরফান দু’জনেই এত নম্র, ভদ্র, ঠান্ডা মাথা, যে মতবিরোধের জায়গা সে ভাবে আসেনি। আর ভাবনার স্তরেই পরিচালক-অভিনেতাদের এত ডিটেলে আলোচনা হত, যে জটগুলো সেখানেই অনেকটা কেটে যেত। তাও হয়তো কোনও শটের পরে অনুপ বলল, “ইরফান লেটস ডু ইট ওয়ান্স মোর।” ইরফানের ক্ষেত্রে ওটুকু ইঙ্গিতই যথেষ্ট ছিল বোঝার জন্য যে পরিচালকের সঙ্গে কোথাও একটা ভাবনার সংঘাত হচ্ছে। অভিনেতা যেটা করছে, ঠিক সেটাই হয়তো পরিচালক চাইছেন না। এই ইশারাটুকুই ওর জন্য যথেষ্ট। অনুপের জন্যও। আর আমি যখন এডিট করতে গেলাম, আমার সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্রই ইরফান জিজ্ঞেস করল, “আপকো ক্যায়সা লগা? আপনে য্যায়সা সোচা থা ঐসা হুয়া?” আমি আর কী বলব তখন…। তারপরেই ওর সঙ্গে সিন বাই সিন আলোচনাগুলো হল।
অসুস্থ হওয়ার পরে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে?
সত্যি বলতে কি, হয়নি। আমরা গোড়া থেকেই জানতাম যে এটা অত্যন্ত ক্রিটিকাল কেস। ও যে তারপরেও দু’ বছর লড়াই করেছে, এটা স্রেফ মনের জোর আর ইচ্ছাশক্তি। ওই অদম্য ইচ্ছেশক্তি না থাকলে কেউ অতবড় অপারেশনের ধাক্কা সামলে উঠে ‘আংরেজি মিডিয়াম’ করতে পারে না।
ওর শেষের দিনগুলো দেখতে দেখতে আমার খুব নবারুণদার কথা মনে হত। নবারুণ ভট্টাচার্য। ওঁর কোলনে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছিল। আমি যতদূর শুনেছি, কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে বড় সমস্যা, ক্যান্সারের মূলে পৌঁছনোই যায় না। লিভারের পেছনের ওই জায়গাটা এতটাই অগম্য যে ঠিক করে চিকিৎসা করাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু নবারুণদারও ছিল সেই অনির্বাণ একটা মনের জোর। অপারেশন করে ফিরে এসে ফের লেখালিখি শুরু করলেন। হাঁটাচলা শুরু করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই আবার ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ইরফানের সঙ্গেও যেন অনেকটা এরকমই হল।
ইরফানের সফলতম জুটি। ছবি সৌজন্য – indiatvnews.com
ও প্রথমবার সুস্থ হওয়ার পরে আমি আর অনুপ দুজনেই একবার ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম একটা ছবির ব্যাপারে। অনুপ আসলে ইরফানকে ছাড়া কোনও ছবি কল্পনাই করতে পারত না। আমরা অনেক আলোচনা করছিলাম আরও দুটো প্রজেক্ট নিয়ে। ২০১৮-তে অনুপ কলকাতায় এসে বেশ কিছুদিন ছিল এই কারণে। এর মধ্যে একটায় ইরফানকে একজন সঙ্গীত পরিচালকের চরিত্রে ভাবা হচ্ছিল। অন্য ছবিটায় ওকে একজন ক্রস-ড্রেসিং নর্তকীর ভূমিকায় ভাবা হচ্ছিল যে বৃন্দাবন থেকে মুম্বই আসে। ছোটখাটো নাটকে রাধা সেজে পারফর্ম করে। ইন ফ্যাক্ট গত ডিসেম্বরেও অনুপ যখন কলকাতায় এল ছবি নিয়ে কথা বলতে, আমি ওকে বললাম, ‘ইরফান তো বলে দিয়েছে কিসি অর কে সাথ কিজিয়ে।’ কিন্তু অনুপ সাফ বলে দিল ‘উই উইল ওয়েট ফর হিম।’
অসুস্থ হবার আগে, ২০১৮-র জানুয়ারি নাগাদ মনে হয়, একবার অনুপের সঙ্গে গিয়েছিলাম ইরফানের বাড়ি। ও তখন ‘করিব করিব সিঙ্গল’ শ্যুট করা সবে শেষ করেছে। সে বার ফিল্ম নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল। আসলে কি জানো, অনেক স্টারই ডাউন টু আর্থ হন। বিশেষত যাঁরা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসেন। যেমন ধরো রণবীর সিং বা অমিতাভ বচ্চন, ওঁদের মধ্যেও স্টারসুলভ হামবড়া ভাব একেবারেই নেই। ইরফানেরও ছিল না। কিন্তু ইরফানের যেটা ছিল, সেটা হচ্ছে সমস্ত বিষয়ে পড়াশুনো, সচেতনতা। ওর সঙ্গে সে বার খাবার টেবিলে আমাদের রীতিমতো একটা রাজনৈতিক আলোচনা চলেছিল বহুক্ষণ। দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে কথাবার্তা হল। এবং প্রতিটি ব্যাপারে ওর মতামত ছিল অত্যন্ত সুচিন্তিত। যে কোনও ব্যাপারে ওর সঙ্গে অনায়াসে আলোচনা করা যেত। ওয়র্ল্ড সিনেমা থেকে পুরনো হিন্দি ছবি – সমস্ত ব্যাপারে ও আপডেটেড। ওর পরিণত মতামত ছিল। আড্ডা দেওয়া যেত রীতিমতো।
আপনার কি মনে হয় না, ইরফানকে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি একটু টাইপকাস্ট করে ফেলেছে?
আসলে মেনস্ট্রিম হিন্দি ছবিতে তো এই ব্যাপারটা আছেই। কোনও একটা জিনিস হিট হয়ে গেলে বা বাজারে ভালো চললে অনেক পরিচালকই বলেন, ‘উয়ো সিন য্যায়সা কর দিজিয়ে।’ তখন ওই একই জিনিস বারবার করার বিষয়টা এসে পড়ে। এটা অমিতাভ বচ্চনও একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন। আর ইরফানের ক্ষেত্রে আমি নিজে বলতে পারি, ওর চরিত্রটাই, যাকে বলে লেড ব্যাক। এই একটু অভিনয় করলাম, আড্ডা দিলাম, হাসিঠাট্টা করলাম। ফলে ওকে যদি সেই চ্যালেঞ্জটা দেওয়া না যায়, তাহলে ওর কুঁড়েমি এসে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কাজেই সে রকম চ্যালেঞ্জিং চরিত্রেই ওর সবচেয়ে বেশি সাফল্য। সেটা হয়তো খুব বেশি পরিচালক পারেন না। সে সব ক্ষেত্রে একটু একঘেয়ে বা টাইপকাস্ট মনে হতে পারে।
ওঁর ‘দিল কবড্ডি’ বলে একটা ছবি দেখেছিলাম। সেখানে এক অল্পবয়সী মডেলের সঙ্গে ওঁর রীতিমতো নাচগানের দৃশ্য রয়েছে। কিংবা ধরুন এআইবি-র জন্য একটা মিউজিক ভিডিও করেছিলেন ‘বলিউড পার্টি সং’ বলে… দেখে হাঁ হয়ে গিয়েছিলাম যে ওই চটুল ব্যাপারগুলোও কী অনায়াসে করে ফেলছেন। অদ্ভুত জামাকাপড় পরে স্মার্টলি নাচ করছেন… যেগুলো আমরা মেনস্ট্রিম বলিউড হিরোদের করতে দেখি। ইরফান হেসেখেলে করে ফেলছেন। এটা কী করে সম্ভব?
(হেসে) এর অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমত তো প্র্যাকটিস। প্রতিটি অভিনেতাকে, সে যে রকম ফিল্মেই অভিনয় করুন না কেন, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুভমেন্ট, জেশচার প্র্যাকটিস করতেই হয়। ইরফানের নাটকের ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল। ফলে কিছু জিনিস ওর অনুশীলনের মধ্যে থাকতই।
প্রাণবন্ত, দিলখোলা মানুষ ইরফান। ছবি সৌজন্য – gulfnews.com
আর দ্বিতীয় কারণটা বলতে পারি, ইরফান কিন্তু আসলে অসম্ভব ফান-লাভিং একজন মানুষ ছিল। হি লাভড টু ডু লাইটার রোলস। আমার মনে আছে, করিব করিব সিঙ্গলের পর আমার সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন বলেছিল, “ডার্ক রোলস আপকো অন্দর সে নিচোড় লেতা হ্যায়। য্যায়সে জিন্দগি কা এক হিসসা নিকল গয়া অন্দর সে। অপনে অন্দরকে অন্ধেরে কো জগানা পড়তা হ্যায় টু ব্রিং আউট দ্যাট ডার্কনেস, দ্যাট ইভিল অন স্ক্রিন।” সেটা খুবই পরিশ্রমসাধ্য একটা ব্যাপার এবং ইরফান সেটা অজস্রবার করেছে। কিন্তু হালকা মজার, খুশিয়াল ধরনের রোল ওর খুব পছন্দ ছিল। আসলে হি ওয়জ অ্যান এক্সট্রিমলি জোভিয়াল ম্যান।
একেবারে সাধারণ চরিত্রাভিনেতা থেকে এই যে বিপুল স্টারডম, এটা ওঁর ওপর কোনও ছাপ ফেলেনি? মানুষ হিসেবে পাল্টেছিলেন?
এর উত্তর হ্যাঁ এবং না। স্টারডমটা খুবই উপভোগ করত। সেটা কথাবার্তায় মনে হত। আবার তার খারাপ দিকগুলো সম্পর্কেও খুবই সচেতন ছিল। ছেলেদের ব্যাপারে চাইত না ওরা অভিনয়ের জগতে বেশি আসুক। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলত, “স্টারডম সে সর ফির যায়েগা।” ফলে জনসমক্ষে হয়তো কিছুটা স্টারসুলভ ব্যবহার ওকে করতেই হত। কিন্তু আড্ডা মারতে গেলে আসল মানুষটা বেরিয়ে আসত। তখন বোঝা যেত, আসলে লোকটা বদলায়নি। আমার মনে হত, হি নিউ ইট ভেরি ওয়েল, হোয়্যার টু বিহেভ লাইক আ স্টার অ্যান্ড হোয়্যার নট।
স্ত্রী সুতপা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন ইরফানের যুদ্ধে। ছবি সৌজন্য – outlookindia.com
মৃত্যুসংবাদের পর ওঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে?
আমি সুতপার কথা ভাবতেই পারছি না। সেই এনএসডি-র সময় থেকে সুতপা-ইরফান একসঙ্গে। প্রথম প্রথম কী অনিশ্চিত জীবন! আর্থিক অনিশ্চয়তা। কতদিন ধরে চেষ্টা করে করে ইরফান ওর কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছল। তারপর আচমকা একটা স্টারডম, বিরাট ফ্যান ফলোয়িং। সেগুলো সামলানো কি সহজ কথা? সুতপা সেটাও হাসিমুখে করেছিল। তার মধ্যেই দুই ছেলেকে মানুষ করা। আর তারপর ওই ভয়ানক রোগ। দু’বছর ধরে লাগাতার যুদ্ধ। এবং এই পরিণতির জন্য অপেক্ষা। ওর সংগ্রামের কথা কল্পনা করাও অসম্ভব আমাদের পক্ষে।
সবচেয়ে কী খারাপ লাগে, কত বছর ধরে লোকটা এই কাজই করে গিয়েছে। ‘সালাম বম্বে’ কি আজকের কথা? তারপর ‘এক ডক্টর কি মওত।’ তার পরে ছোটপর্দায় কাজ করেছে। কিন্তু স্বীকৃতিটা পেতে পেতে সেই মকবুল পর্যন্ত আসতে হল। আর তারপর ঠিক যখন হি ইজ মেকিং ইট বিগ, চলে গেল। এটা অন্যায্য বলে মনে হয় না? ওর মতো প্রতিভা, এমন তো না যে শ’য়ে শ’য়ে ছবি করেছে! ক’টা ছবি করল? কতটা মূল্যায়ণ হল ওর? সবে তো মেনস্ট্রিম বলিউড ওকে আবিষ্কার করতে শুরু করেছিল। এত অকালে সেটা শেষ হয়ে গেল ভাবলে এত আপশোস হয়!
লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!