জীবন থেকে জীবনে: পর্ব ১২

Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
An array of Indo-Anglian writers

আগুন, বই আর গোলাপ

আগের পর্বের লিংক: [] [] [] [] [] [] [] [] [] [১০] [১১]

ক্রমশ অনুভব করছি যে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার একটা মস্ত জায়গাই হল নিজের হারিয়ে যাওয়া পুরনো লেখা। কী ভেবেছি, কী লিখেছির চেয়েও সেখানে বড় করে ফুটে বেরয় অমুক সময়ে এই ‘আমি’-টা কেমন ছিলাম। একটা নতুন জানা, হয়তো একটু অন্যরকম ভালোলাগাও হয় নিজেকে। এই যেমন এখন খুঁজে পাচ্ছি ১৯৮৯-এর সেই হারিয়ে যাওয়া লেখাগুলো। তারা আশ্চর্যভাবে ফিরে এসে এক অদ্ভুত আয়নার কাজ করছে। আমার প্রিয় কলকাতাকে বিখ্যাত বিদেশি লেখকরা কীভাবে দেখেছেন, তা-নিয়ে সেসময় এই যে লেখাটা লিখেছিলাম. এতে আমার তখনকার মন ও মুখ ধরা পড়েছে, যা আমার আত্মকথারও বড় বিষয়। এ মায়ের বড় কৃপা যে এভাবে আমার আমি ঠিক এই শুভলগ্নেই ফিরে এল। যেভাবে এসেছে সেভাবেই তুলে দিলাম। পাঠকের জন্য। আপনারা পড়ুন…

*** 

বৌবাজারের এক বাঈজিবাড়িতে কলের গানে হিন্দি ফিল্মের রেকর্ড চালিয়ে নাচছে এক তরুণী তবায়েফ। আর সামনে বসে দুই বিলেতফেরত নবীন ইন্দো-ইংলিশ লেখক গভীর হতাশার সঙ্গে ভাবছেন, ও হরি! এই তা হলে কলকাতার বাঈজি! আর এই নিয়ে এত বলা-কওয়া, লেখাজোকা? একটু পরেই অবধারিত প্রস্তাবটি এল। মেয়েটিকে কি রাতের মতন নেওয়া হবে? অমনি তরুণ ইন্দো-ইংলিশ কবি আর ইন্দো-ইংলিশ গদ্যকার নাচগানের মূল্য চুকিয়ে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ত্রস্ত পায়ে নামতে লাগলেন। গদ্যলেখক অন্ধ, তাই তাঁর নামতে একটু সময় লাগছিল। খদ্দের ছুট হচ্ছে দেখে সিঁড়ি আগলে দাঁড়িয়ে ছিল যে-দালাল, সে মাথাগরম করে চাকু চালিয়ে বসল। কিন্তু মারাত্মক ব্যাপার কিছু ঘটল না, অতিথিদের একজনের পরনের জামার একদিক ফালা হয়ে গেল। 

ঘটনার সত্যিমিথ্যে জানার কোনও উপায় নেই কারণ ঘটনার বিবরণ কবি ডম মোরেজ়ের কলমে, যিনি ভ্রমণকাহিনিও সত্যি-মিথ্যে মিশিয়ে লেখেন এবং তাঁর অন্ধ সঙ্গী বেদ মেহতা পরবর্তীকালে তাঁদের যুগলভ্রমণের যে-সব বৃত্তান্ত লিখেছেন, তাতে ডমের ‘গন অ্যাওয়ে’ বইয়ের বহু উপাখ্যানই মিথ্যে হয়ে যায়। ডম তাঁর ভারতভ্রমণ কথায় কলকাতাকে বলেছেন ‘স্পাইডার সিটি’, মাকড়শা নগর। ষাট দশকের গোড়ার দিকে বইটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল এবং বিলিতি শিক্ষিত দেশি কবির এইসব বিদেশি বিদেশি পর্যবেক্ষণে অনেক পাঠকই বেশ আমোদ বোধ করেছিলেন।

Dom Moraes and Ved Mehta
ইন্দো ইংলিশ কবি ডম মোরেজ় (বাঁয়ে) ও অন্ধ লেখক বেদ মেহতা

এক প্রতিষ্ঠিত, বিশ্ববিখ্যাত, বিদেশি কবি-ঔপন্যাসিক সরকারের আয়োজিত সফরে বেড়াতে এসেছেন কলকাতা। শহরের এক ইন্দো-অ্যাংলিয়ন কবির বাড়িতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের আয়োজন করা হয়েছে স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকদের। কিন্তু সাহেব দেখছেন যে বইয়ের তাকে দেওয়াল ঢাকা শৌখিন বসার চাটাইয়ের ওপর বসে যাঁরা, তাঁদের নব্বই শতাংশেরই সংস্রব নেই বাংলায় লেখালিখির সঙ্গে। তাঁর বিনোদনের জন্য উপস্থিত কিছু হালফ্যাশানি মহিলা ইংরেজিতে স্বরচিত পদ্য পড়ছেন ময়ূর, মেঘ ইত্যাদি নিয়ে। আর সাহেবের মনে পড়ছে সুদৃশ্য দৃশ্যটির বাইরে ধুলোয় মোড়া রাস্তায় গরিব ছেলেপুলেদের খেলাধুলার ছবি। সাহেবের ভ্রমণোপন্যাস ‘দ্য ফ্লাউন্ডার’-এ এই দৃশ্যই দেখছে নায়ক ভাস্কো। আর ভাবছে যে সেরকম পরিস্থিতির উদয় হলে সে উপস্থিত কোন মেয়েটিকে বগলদাবা করে বিছানায় যাবে। 

এই বৃত্তান্ত গুন্টার গ্রাসের। যিনি ১৯৭৬-এ কলকাতায় এসে প্রায় ক্ষেপে গিয়েছিলেন। এটা একটা শহর! এত দারিদ্র, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে এত বৈষম্য, সভ্যতা ও অসভ্যতার বৈপরীত্য, আর এখানকার কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের কোনও দায়-দায়িত্ব বলে কিছু নেই! তাও নিজের ভাষায় নয়, ইংরেজিতে অখাদ্য রোমান্টিক পদ্য লিখছে! ভাস্কোর আড়ালে গ্রাস বললেন, এ শহরে ঈশ্বর পায়খানা করে দিয়েছেন। দেশে ফিরে কোনও নবদম্পতিকে তিনি মধুচন্দ্রিমা যাপনের জন্য কলকাতাকে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেবেন। এখান এলে দাম্পত্যের প্রারম্ভে তাদের ধারণা হবে বাস্তব কী, জীবন কী বৈপরীত্যে সংক্রামিত। গ্রাস সত্যিই কোনও নবদম্পতিকে এ পরামর্শ দিয়েছিলেন কিনা জানি না, তবে এগারো বছর পর স্ত্রী উটে-কে নিয়ে নিজেই কয়েকমাস কাটিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতায়। সাধারণ লোকের মাঝখানে থাকবেন বলে শহরের উপকণ্ঠে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন, পরে সে-বাড়ি ছেড়ে শহরের অন্য উপকণ্ঠে উঠে গিয়েছিলেন এবং সেখানকার আর পাঁচটা বাসিন্দার মতো ভিড়ের লোকাল ট্রেন, বাস, বাস, রিকশা ঠেঙিয়ে শহরকেন্দ্রে যাতায়াত করেছেন। সঙ্গে রাখতেন নোটবুক, তাতে শহরের দৃশ্য স্কেচ করতেন, মানুষের কথাবার্তা, নাম-ঠিকানা আর নিজের অনুভূতির আদল টুকে রাখতেন। 

Gunter Grass
কলকাতা হতাশ করেছিল গুন্টার গ্রাসকে

প্রথমবারের মতন স্রেফ ইন্দো-অ্যাংলিয়নদের পাল্লায় পড়েননি, খুঁজে খুঁজে বাঙালি লেখক-কবিদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় বসেছেন এবং এবারও এক অন্যভাবে হতাশ হয়েছেন। তাঁর মনে হয়েছে যে, বাঙালি যাঁরা বাংলায় লেখেন, তাঁরাও পাশ্চাত্যমুখী। ভারতের অন্য প্রদেশের জীবন ও সাহিত্য বিষয়ে তাঁদের আগ্রহ নামমাত্র বললেও বেশি বলা হয়। তাঁদের মস্তিষ্ক জুড়ে আছে কামু, কাফকা, কিটস এবং এঁরা কলকাতার নিজস্ব, বাস্তব, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক উপন্যাস কেউ লিখছেন না।

গ্রাস অতি সাধারণ লেখক এটা মনে রেখেও না-বলে উপায় নেই যে তিনিও তাঁর লম্বা সফরের শেষ যে-বইটি লিখলেন, ‘সুঙ্গে সেগান’ (‘জিভ দেখানো’), কলকাতাকে নিয়ে, তা আর পাঁচটা শ্বেতাঙ্গের কলকাতা দর্শনের চেয়ে কোনও দিক থেকেই আলাদা নয়। পাশ্চাত্যে কলকাতা সম্পর্কে যা-যা বাঁধা ধারণা আছে তার কোনও একটি থেকেও যে তিনি মুক্ত হয়েছেন তার কোনও প্রমাণ নেই ‘জিভ দেখানো’-য়। উল্টে ‘দ্য ফ্লাউন্ডার’-এর যে কাব্য, যে সরল বিস্ময় ও বিরক্তি, তাও যেন হারিয়ে গেছে এ বইয়ের অতিসরলীকৃত কিছু সমাজ দার্শনিক পর্যবেক্ষণে। বস্তুত তাঁর পাঁচ-ছ’মাসের কলকাতা নিবাসে এমন কিছুই তিনি জানেননি যা জার্মানিতে বসেই জেনে উঠতে পারতেন না। তিনি কলকাতায় এমন কতকগুলো দৃশ্য ও অভিজ্ঞতার সন্ধান করেছেন, যা তাঁর কলকাতা সম্পর্কে গড়ে তোলা ধারণাকে সমর্থন করবে। কলকাতায় লেনিনের পাশে কালীর ছবি, মহাকরণে কর্মবিমুখ করণিকের স্রোত সেই ধারণার সঙ্গে মিলেমিশে এক হওয়ার মতো টুকরো টুকরো বাস্তব; সমতুল বাস্তব শহরের মুসলমান মহল্লার খণ্ডদৃশ্যগুলিও। আমরা সবাই জানি এসব আছে এবং এরা সাহেবদের চোখ এড়ায় না। 

Guntar Grass in Kolkata
পাশ্চাত্যে কলকাতা সম্পর্কে যা-যা বাঁধা ধারণা আছে তার একটি থেকেও তিনি মুক্ত নন

সে গ্রাসই হোন, বা দোমিনিক লাপিয়ের। বছর পঁয়ত্রিশ পিছিয়ে গেলে যোগ করে দিতে পারি এক বিশ্ববিশ্রুত, মহৎ পণ্ডিতের নাম। ক্লোদ লেভি-স্ত্রোস, যাতে মনে হয় যে সব বিদেশিই কলকাতায় আসেন শহরটি সম্পর্কে একটা পূর্ণাঙ্গ রচনা মাথায় তৈরি করে রেখে। এবং কলকাতা ঘুরে গিয়ে লব্ধ স্মৃতির ভিত্তিতে ঠিক সেই রচনা বা কাহিনিটিই সন্তর্পণে লিখে ফেলেন। আর একইভাবে হয়তো বলা হয় কলকাতার মিথোলজি। ১৯৬৪ সনে তাঁর ভারতকথা ‘অ্যান এরিয়া অফ ডার্কনেস’-এ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ত্রিনিদাদীয় লেখক ভি এস নায়পল বিদেশি বৃত্তান্তের এই ধারার কথা স্মরণ করেই বইয়ের কলকাতার সংক্রান্ত পরিচ্ছেদ, ‘ফ্যান্টাসি অ্যান্ড রুইনস’-এ লিখেছিলেন—

It was all there in Kipling, barring the epilogue of the Indian inheritance. A journey to India was not really necessary. No Writer was more honest or accurate; no writer was more revealing of himself and his society. He has left us Anglo-India; to people these relies of the Raj we have only to read him. 

VS Naipaul
নায়পল ভারতকে বর্ণনা করেন ‘কান্ট্রি অফ এলিয়েন রুইনস’ বলে

‘রাজ’-কে রক্তমাংসের চেহারায় দাঁড় করাতে যে মানুষজন দরকার, তা কিপলিং পড়লেই পেয়ে যাওয়া যাবে— নায়পলের এই অভিমত। অভিমতটার সঙ্গে আমরা তর্ক জুড়ব না, কারণ কথাটা বহুলাংশে সত্য। আর এর সত্য হওয়ার কারণ, কিপলিং শ্বেতাঙ্গ বিদেশি হয়েও নানাভাবে, বৃহৎভাবে ভারতীয়ও। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান এই গাথাকার তাঁর লাহোরের জীবনের যে-স্মৃতি লিখেছেন তাঁর ‘সামথিং অফ মাইসেলফ’ রচনায়, সেই ক্লাবভিত্তিক জীবনযাত্রা, সেই নির্দিষ্ট ইংরেজ বন্ধুবান্ধব, শ্বেতাঙ্গচক্র সবই যেন টায়ে টায়ে মিলে যায় ‘রাজ’-এর এক প্রধান স্তম্ভ, কলকাতার জীবনচরিত্রের সঙ্গে। কলকাতার মিথোলজির একটা মস্ত অংশ তার এই রাজ-কাহিনি, রাজ-সংস্রব। বিদেশিদের রচনায় কলকাতা কখনও রাজ-নগর, কখনও রাজ-ভস্ম, কখনও রাজ-উচ্ছিষ্ট, কখনও রাজ-দুঃস্বপ্ন, কখনও রাজ-অরাজকতা। আর এই সব কিছু মিলিয়েই শহরটা শেষমেশ রাজ-এর শেষ, পর্যাপ্ত আর্কিটাইপ বা প্রতীক। যখন নায়পল ভারতকে বর্ণনা করেন ‘কান্ট্রি অফ এলিয়েন রুইনস’ বলে, তাঁর মাথায় কিন্তু ঘোরে কলকাতা। এবং অনতিবিলম্বে তিনি উল্লেখ করেন, ‘দ্য হিউমারলেসনেস অফ দ্য ভিকটোরিয়া মেমোরিয়াল ইন ক্যালকাটা’-র। কিন্তু নায়পল আরও একটা জিনিসও করেন। তিনি কলকাতা ওরফে ভারত ওরফে ‘রাজ’-কে দিয়ে ঊনবিংশ শতকের ইংল্যান্ডের একটা ধারণা পান। এবং লেখেন: 

Warren Hastings can only with difficulty be read as an Englishman; as an Indian, he fits. But the Raj, though so completely of India, is part of nineteenth century England.

একথা বলার পর কলকাতার বর্ণনায় পথ ঘুরতে ঘুরতে তিনি ঢুকে পড়েন চোরবাজারের মল্লিকবাড়িতে এবং প্রাসাদটির কোরিন্থীয় স্তম্ভ পেরিয়ে অন্দরে এসে অনুভব করেন যে এখানে কর্তার তৈলচিত্রটি ছাড়া কোনও কিছুই ভারতীয় নয়। ‘But already we can sense the Anglo-Bengali encounter going sour.’

‘রাজ’-এর কলকাতা নয়, শহরটায় আরও প্রাচীন নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের খোঁজে ছিলেন এই শতকের এক অতি সম্মানিত পণ্ডিত লেভি-স্ত্রোস। কিন্তু ভদ্রলোক উত্তরভারত চষে বেড়ালেও কলকাতায় থাকলেন কম, দেখলেন আরও কম আর লিখলেন একেবারেই নগণ্য দুই প্যারাগ্রাফ, দুটি মন্দির বিষয়ে। পরেশনাথের মন্দির ও কালীঘাট মন্দির। নিকৃষ্ট ইতালীয় কারিগরির মর্মরমূর্তিতে ঠাসা, আয়না বসানো, সুগন্ধীতে ম’ ম’ জৈন মন্দিরটিকে নৃতাত্ত্বিকের মনে হয়েছিল তাঁর ঠাকুর্দার আমলের লোকদের কাঙ্ক্ষিত বনিতাগৃহের কাছাকাছি কিছু। পাশে দাঁড়ালে স্থানীয় একজন যখন কালীঘাটের মন্দিরকে সপ্তদশ শতকের বলে দাবি করল, তখন লোকের চোখে ধরা ছিল মন্দিরের স্থাপত্যে ঊনবিংশ শতকের অলঙ্কৃত টালি। এরপর কালীঘাটের যে-বর্ণনা দিলেন লেভি-স্ত্রোস, তা তাঁর অসাধারণ ভ্রমণোপাখ্যান ‘ত্রিস্ত ত্রোপিক’-এর অংশ বলে ভাবতে অসুবিধে হয়। যে গভীর মানবদরদ তাঁর সমস্ত বইটিকে— বস্তুত তাঁর যাবতীয় রচনাবলিকে আচ্ছন্ন করে রাখে, তাঁর সূক্ষ্মতম, দুরূহতম বিশ্লেষণ ও বিচারেও যা আবছা হয়ে পড়ে না, তা কীভাবে কীভাবেই যেন কলকাতায় এসে থমকে দাঁড়ায়। ফলে তাঁর মতো তাঁর পাঠকও তাঁর দেখা কলকাতাকে সত্বর ভুলতে চেষ্টা করে। 

Levi Strauss Author
লেভি-স্ত্রোস-এর অসাধারণ ভ্রমণোপাখ্যান ‘ত্রিস্ত ত্রোপিক’ যেখানে তিনি কলকাতার কতা লিখেছেন

তবে কলকাতার প্রতি লেভি-স্ত্রোসের মমতার দৈন্যকে সুদে-আসলে ভরিয়ে দিতে চেয়েছেন আর এক ফরাসি— দোমিনিক লাপিয়ের। কিন্তু তিনি লিখতে জানেন না। আর যা লেখেন তার মধ্যে অজস্র মনগড়া কথাবার্তা থাকে যা কলকাতা গপ্পে লেখকদের শোভা পেলেও একজন আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার লিখিয়ের ক্ষেত্রে মৃত্যুবৎ। তিনি তাঁর কলকাতাভিত্তিক উপন্যাস ‘সিটি অফ জয়’-তে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুকে পদার্থবিদ্যায় নোবেল প্রাইজ পাইয়েছেন, কলকাতায় ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপ উঠিয়েছেন, দেখিয়েছেন শহরের রিকশাওয়ালারা পান চিবিয়ে মুখ লাল করে থাইসিসের রক্ত-থুতু ঢাকছে, গরিব মেয়েরা চার টাকার বিনিময়ে ভ্রূণ বিক্রি করছে, প্রদীপ পাল নামের বাঙালি রিকশাচালক পুত্রের নাম রাখছে হাসারী পাল (হরিপদ কেরানির ছেলের নাম আকবর বাদশাহ হলে যেমন শোনাবে আর কি!), পিলখানায় পোলিশ পাদ্রির আট বাই আট ঘরে যাজকের কাজের টেবিল, শোবার খাট ছাড়াও কত মানুষ যে ঢুকছে যে থেকে থেকে মনে হয় এত ভুল তথ্য সাপ্লাই করার জন্য সাহেব এত যাতায়াত, গবেষণা করলেন কেন। এত ভুল তো অনুমান থেকেও করা যায়! গোদের ওপর বিষফোঁড়া হল লাপিয়েরের গ্যাদগেদে, উচ্ছ্বাসী ভাষা। এ উপন্যাস ছাড়া ফ্রান্সের বিখ্যাত ‘জেয়ো’ পত্রিকায় ভদ্রলোকের কলকাতা বিষয়ক নিবন্ধ পড়েও একই ধারণা হয়েছিল আমার। ভাবছিলাম, মানুষটি এতবার করে শহরে এসে কী দেখেন তা হলে? নাকি কলকাতাকে ঠিক-ঠিক দেখলে তাকে নিয়ে আর লেখা যায় না? নাকি কলকাতাকে লেখার জন্য তথ্য নয়, তত্ত্বই সর্বেসর্বা?

Dominique Lapierre
দোমিনিক লাপিয়ের-এর বিখ্যাত বই ‘সিটি অফ জয়’ মনগড়া বিবরণে ভরা

শেষের সন্দেহটা অগ্রাহ্য করার মতো নয় হয়তো। তা না হলে ষষ্ঠীব্রতর মতো বাঙালিনন্দনও তাঁর বছর দুয়েকের বাসি ভারতবৃত্তান্তে কলকাতা সম্পর্কে ঠিক সেই-সেই ঠাট্টাগুলোই লিখবেন কেন যা একাধিক সাহেব লিখে লিখে পচিয়ে ফেলেছেন? সেখানে কলকাতার ফ্যাশনেবল পার্টিতে মহিলাদের উপস্থিতি ও আচার-ব্যবহার সম্পর্কে যে মশকরা করেছেন তিনি, তাতে তাঁর সম্পর্কে একটিই প্রশ্ন জাগে পাঠকের— ভদ্রলোক লেখক নাই বা হতে পারলেন, তা বলে ইংরেজদের রসবোধটাও শিক্ষা করতে পারলেন না?

একেবারে হালে বিদেশিদের কলকাতাচর্চায় কতকগুলো বিপজ্জনক লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে। এই চর্চাকে এক জাতীয় মনুমেন্টচর্চা বলা যেতে পারে। সাতদিনের ঝটিকা সফরে এসে এই বিদেশিরা একদিন মাদার টেরিজা, একদিন রাইটার্সে জ্যোতি বসু (তা না হলে পুরসভার কমল বসুই সই), একদিন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ধাপার মাঠ ও মেট্রো রেল এবং একদিন অতি অবশ্যই সত্যজিৎ রায়ের দর্শন নিয়ে দেশে ফিরে দু’রিম কাগজ ভরিয়ে ফেলেন। এরকম সাহেব-মেমদের জন্য প্যাঁচে পড়ে বার তিনেক ফোন করেছিলাম সত্যজিৎবাবুকে এবং তিনি খুবই ন্যায্যত ‘না’ বলে দিয়েছিলেন। এতদসত্ত্বেও বিদেশিদের আক্রমণ থেকে তিনি যে খুব নিরাপদ একথা বলা যায় না। 

ওঁকে কলকাতার এক প্রতীক বিচার করে কিছুদিন আগে এক অভিজাত মার্কিন জার্নালে এক দীর্ঘ কৌতূহলোদ্দীপক রচনা পড়েছিলাম। সত্যজিৎ রায়কে ধরে কলকাতার বাবু সমাজ, তার বিবর্তন ইত্যাদি নানান প্রসঙ্গে গিয়েছিলেন লেখক। বেশ পড়াশুনো করে, ভেবেচিন্তে লেখা রচনাটির শিরোনাম ছিল ‘সত্যজিৎ রে: দ্য লাস্ট ইংলিশম্যান’। তবে লেখাটির গোড়াতে আনন্দবাজার পত্রিকা সম্পাদক অভীক সরকারের যে সংক্ষিপ্ত মন্তব্য— ‘ক্যালকাটা ইজ লাইক প্যারিস’— সেটির গুরুত্ব নিবন্ধলেখক বারুমা বোধ হয় সম্পূর্ণ ধরতে পারেননি। অভীক বলতে চেয়েছিলেন, যে ইংরেজদের হাতেগড়া এই শহরটি কিন্তু শেষমেশ অনেক কাছের হয়ে পড়ে প্যারিসের, তার জনগণের মেধাবী, দিলখোলা স্বতঃস্ফূর্ততায়। চিনে ছাত্রদের উপর গুলি চললে, প্যারিসে ছাত্রবিপ্লব হলে, রাশিয়ায় গ্লাসনস্ত হলে, টোকিয়োর টাইফুন, মেক্সিকোর ভূমিকম্প, কি চাঁদে মানুষ নামলে যে-শহরে মিছিল বেরোয়, দূতাবাসে কাচ ভাঙাভাঙি, অব্যবস্থায় ধর্মঘট কি মোচ্ছব হয়, তার নাম কলকাতা। এর সঙ্গে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, টোকিয়ো কি বোম্বাই, দিল্লি, ওয়াশিংটনের মতো হিজ় হুজ়, স্বার্থপর শহরের কোনও সম্বন্ধ থাকতে পারে না, যেখানে সময়ই অর্থ, চিন্তা অনর্থ, আবেগ অসভ্যতা। 

Bharati Mukherjee and Clarke Beige
ভারতী মুখোপাধ্য়ায় ও তাঁর স্বামী ক্লার্ক বেজ় ইংরিজিতে লিখেছেন কলকাতার বৃত্তান্ত

কলকাতার মনুমেন্টচর্চায় এক আধুনিক সংযোজন প্রবাসী বাঙালি ইংরেজি ভাষার লেখিকা ভারতী মুখোপাধ্যায় ও তাঁর প্রাক্তন স্বামী ক্লার্ক ব্লেজ়-এর যুগলবন্দি বই ‘ডেজ অ্যান্ড নাইটস ইন ক্যালকাটা’। স্বামী-স্ত্রীতে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন কলকাতার বিবরণের দায়িত্ব। কলকাতার মেয়ে ভারতী কিছু স্মৃতি, কিছু ফিরে দেখা, কিছু সমাজদৃশ্য, অন্দরমহল লিখেছেন। ক্লার্ক লিখেছেন বিদেশাগত গবেষকের স্টাইলে। এবং যৌথ প্রয়াসে দু’জনে একটি চমৎকার খারাপ বই পয়দা করেছেন। বইটা পড়লে এই দম্পতি কাদের কাদের চেনেন জানা যায়, কিন্তু সেই সেই লোক, বিষয় এবং, সর্বোপরি কলকাতাকে আমাদের আর চেনা হয় না। সেজন্য শেষ অবধি আমাদের ফিরে যেতে হয় ফের এক ইংরেজের কাছে, যিনি জীবনের অনেকখানি সময় কাটিয়েছিলেন কলকাতায় এবং এক সময় লিখেও ফেলেছিলেন তথ্যসমৃদ্ধ, অতি কার্যকর এক অনাড়ম্বর বই যার নামটিও খুবই অনাড়ম্বর— ক্যালকাটা। কলকাতার স্টেটসম্যান পত্রিকার চাকরি ও বই শেষ করে ফিরেও গেলেন তিনি ইংল্যান্ডে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে হয়ে রইলেন না ঘরকা, না ঘাটকা। 

কলকাতার প্রতি লেভি-স্ত্রোসের মমতার দৈন্যকে সুদে-আসলে ভরিয়ে দিতে চেয়েছেন আর এক ফরাসি— দোমিনিক লাপিয়ের। কিন্তু তিনি লিখতে জানেন না। আর যা লেখেন তার মধ্যে অজস্র মনগড়া কথাবার্তা থাকে যা কলকাতা গপ্পে লেখকদের শোভা পেলেও একজন আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার লিখিয়ের ক্ষেত্রে মৃত্যুবৎ। তিনি তাঁর কলকাতাভিত্তিক উপন্যাস ‘সিটি অফ জয়’-তে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুকে পদার্থবিদ্যায় নোবেল প্রাইজ পাইয়েছেন, কলকাতায় ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপ উঠিয়েছেন, দেখিয়েছেন শহরের রিকশাওয়ালারা পান চিবিয়ে মুখ লাল করে থাইসিসের রক্ত-থুতু ঢাকছে, গরিব মেয়েরা চার টাকার বিনিময়ে ভ্রূণ বিক্রি করছে…

সেই সাহেব, জেফ্রি মোরহাউস, যিনি কলকাতা জীবন ও ইতিহাসের একটা গাইডই হয়তো লিখতে চেয়েছিলেন, শেষ পরিচ্ছেদ, বিষয় ও তথ্যের বিন্যাসে এমন কতকগুলো প্রেক্ষিতে পৌঁছে গেলেন তাঁর বইতে, যে এতদিনে সে-সব তথ্যের বেশ কিছু হেরফের হলেও বইটি থেকে গেছে (যা মোরহাউসের অভিপ্রেতও বটে) এর পরিচ্ছন্ন দলিল। অনেক পরে, ১৯৮৩-তে, মোরহাউস তাঁর সংক্ষিপ্ত ব্রিটিশভারতকথা ‘ইন্ডিয়া ব্রিটানিকা’-তে ইতিহাসের কলকাতা নিয়ে বলতে বলতে পৌঁছে গেছেন এ শহরে সাহেবদের ফেলে যাওয়া রক্তমাংসের ঐতিহ্যে— অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়। প্রথমে সম্প্রদায়টির ইতিহাস ও পরে তাদের নৃতত্ত্ব এবং শেষে তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক টানাপোড়েন, প্রহসন ও ট্র্যাজেডি নিয়ে লিখেছেন। এই ফিরিঙ্গি, ‘টমি স্টক’দের তিনি তাঁর কলকাতার জীবনে কাছ থেকে দেখেছেন, আর এখন সুদূর ইংল্যান্ডে বসে তাদের স্মরণ করতে বসে মোরহাউস নিজেও ঠিক তেমন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন, যেমনটি তিনি এককালে তাদের হতে দেখতেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান হিরো জেমস স্কিনার (আলেকজান্দারের সঙ্গে প্রচ্ছন্ন তুলনায় যাঁকে তারা উল্লেখ করত সিকান্দর সাহিব বলে), লেখক জন মাস্টার্স, গায়ক এঙ্গেলবার্ট হাম্পারঙ্কি, কি ক্লিফ রিচার্ডের কথা বলতে গিয়ে।

বিলিতি সাহেব হয়েও মোরহাউস, ম্যালকম মাগারিজ়, জেমস ক্যামেরুন প্রমুখ এক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ভাবনাবলয়ের প্রতিনিধি। চমৎকার লেখক এঁরা, কিন্তু এঁদের বিশেষ আকর্ষণ এক মনোভঙ্গি, ওঁদের সম্পদ এক বিশেষ সময় ও স্মৃতি। 

এই বিশেষ সময়টা উল্লেখিত ক্ষেত্রে হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরবর্তীকাল, কিন্তু এই সময়টারও একটা দীর্ঘ অতীতমূর্ছনা আছে, যার শুরু বলা যায় ‘রাজ’-এর রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর দিয়ে। দিল্লির দরবার ও রাজধানীর স্থানান্তর কলকাতার ব্রিটিশ মহল, লর্ড কার্জন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মর্মাহত করলেও অন্য কারও মধ্যে এর কোনও রেখাপাত ঘটল না। কলকাতার অবমূল্যায়ন বাঙালি গর্ববোধে আঘাত করলেও ভারতের অন্যত্র এর কোনও প্রতিক্রিয়া হল না। ভাঙা বাংলাকে জোড়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বাঙালির মনের ক্ষেত্রে কিছুটা আরাম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হল। রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ সেই পদক্ষেপকে ‘ট্রায়াম্ফ অফ ব্রিটিশ জাস্টিস’ বলে অভিহিত করলেন। কার্জন ও কিছু ব্রিটিশ ছাড়া রাজধানীর দিল্লিযাত্রাকে স্থানীয় ইংরেজরাও ক্রমে দার্শনিকভাবে নিতে শুরু করলেন এবং কলকাতার প্রধান ইংরেজি দৈনিক ‘স্টেটসম্যান’-এর এক প্রতিবেদক প্রশ্ন তুললেন,

‘Would a change of capital from London to the ancient capital, Winchester, have any effect upon racing at Epson, Newmarket, Asiot or Doncuster?’

মোরহাউস মন্তব্য করেছেন যে, উপরোক্ত ভদ্রলোকের এই উদাসীনতা সম্ভব হয়েছিল কারণ, কলকাতায় অবমূল্যায়ন ও ‘রাজ’-এর বিলীয়মান হওয়ার সম্পর্কগুলো তিনি ধরতে পারেননি। কলকাতার শেষ ও ‘রাজ’-এর শেষের শুরুর প্রভাব দুটো বিশ্বযুদ্ধ টপকে এখনও এক সাংস্কৃতিক খোঁয়াড়ি হয়ে টিকে আছে কলকাতার জীবনে। ইতোমধ্যে আরও বহুৎ কিছু ঘটেছে যা কলকাতাকে আরও জটিল, ব্যঞ্জনাময় করেছে। কলকাতার ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব না জেনে সে-কলকাতাকে লিখে ফেলা যায় না। দেশি কলমে কী হয়েছে, তা বলার জায়গা এটা নয়; বিদেশি কলমে কী হয়েছে, কী হতে পারে সে জানার আগ্রহ আমাদের থেকেই যাচ্ছে। উদগ্রীব হয়ে আমরা নতুন কোনও বইয়ের দিকে তাকাই এবং পরে বিমর্ষ হই দেখে, যে কেউ কথা রাখেননি। 

 

*পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ১৫ জুলাই
*ছবি সৌজন্য: IMDB, Wikipedia, MUBI, The Star
Sankarlal Bhattacharya Author

শংকরলাল ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট, কলকাতায়। ইংরেজি সাহিত্যে স্বর্ণপদক পাওয়া ছাত্র শংকরলাল সাংবাদিকতার পাঠ নিতে যান প্যারিসে। তৎপরে কালি-কলমের জীবনে প্রবেশ। সাংবাদিকতা করেছেন আনন্দবাজার গোষ্ঠীতে। লিখেছেন একশো ত্রিশের ওপর বই। গল্প উপন্যাস ছাড়াও রবিশংকরের আত্মজীবনী 'রাগ অনুরাগ', বিলায়েৎ খানের স্মৃতিকথা 'কোমল গান্ধার', হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিমালা 'আমার গানের স্বরলিপি'-র সহলেখক। অনুবাদ করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে সত্যজিৎ রায়ের চিত্রনাট্য পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

banglalive.today/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.today and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: banglalive.today/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives banglalive.today/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com