চ্যাট-জিপিটি নিয়ে প্রবন্ধ লিখছি শুনে বন্ধু বলল, “চ্যাট-জিপিটিকেই বল না, সেই-ই লিখে দেবে। আর লেখাটা তোর লেখার থেকে ভালো বৈ মন্দ হবে না।” তাই-ই করলাম। চ্যাট-জিপিটিকেই জিজ্ঞেস করলাম, “Write a small article on chatGPT in bengali”। চ্যাট-জিপিটি তার জবাবে এই লিখল:
“চ্যাট-জিপিটি হল ওপেন এআই দ্বারা তৈরি একটি বৃহৎ ভাষা মডেল, যা জিপিটি-৩.৫ বিন্যাসে উন্নয়ন করা হয়েছে। এটি মানুষের মতো কিছু বুঝতে এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য একটি স্বচ্ছতামূলক উপায় প্রদান করে। চ্যাটজিপিটি একটি স্বচ্ছতামূলক সংস্থার মতো কাজ করে এবং নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সমস্যাগুলি সমাধান করে। এটি বিভিন্ন ভাষার প্রশ্নগুলি উত্তর দেয় এবং প্রযুক্তিগুলির উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত হয়।

চ্যাটজিপিটি দ্বারা আপনি স্বচ্ছতামূলকভাবে কথা বলতে পারেন এবং প্রশ্ন করতে পারেন। এটি সমস্যাগুলির সমাধান খুব সহজ এবং প্রতিক্রিয়া প্রদান করার জন্য প্রস্তুত। এটি আপনার প্রশ্নের সাথে খুব সহজে সম্পর্কিত তথ্যগুলি খুঁজে বের করে দেয়।”

Artificial Intelligence

একে কেউই খুব সুললিত বাংলা বলে শনাক্ত করবে না, যদিও পড়তে অসুবিধে হয় না। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, প্রযুক্তির অসম্ভব উন্নতির ইতিহাস সত্ত্বেও, আজ থেকে বছর তিন-চার আগেও এ ধরণের প্রযুক্তি যে হাতের একদম কাছেই বসে আছে, সে কথা কেউই আমরা বুঝতে পারিনি। আমি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা মেশিন লার্নিং-এর এক্সপার্ট নই। কাজেই যা লিখছি তা প্রযুক্তিতে কাজ করা একজন সাধারণ ইঞ্জিনিয়ারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।

মেশিন লার্নিং-এর যা সব থিওরেটিক্যাল কাজ, তার অনেকটাই আজ থেকে কুড়ি-তিরিশ-পঞ্চাশ বছর আগেই হয়ে গেছিল। কিন্তু সেই সব কাজের ফলিত ব্যবহার করবার মতন শক্তি কম্পিউটারের ছিল না। এতদিনে কম্পিউটার চিপ (জিপিইউ) থেকে শুরু করে সস্তার মেমরি ও ডেটা স্টোরেজ, বিরাট ছড়ানো নেটওয়ার্ক, ডেটা ট্রান্সফারের জন্যে বড় ব্যান্ডউইডথ ইত্যাদি সহজলভ্য হওয়ায় অনেক অধরা কাজের এখন ফলিত ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: যদি প্রেম দিলে না প্রাণে

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) আর মেশিন লার্নিং (ML) – এদের একসঙ্গে AI-ML বলে দাগিয়ে দেওয়া হলেও এ দুই আলাদা জিনিস। আমি সে সব কচকচিতে ঢুকব না। খালি একটা জিনিস বলে নিই মেশিন লার্নিং সম্বন্ধে। মেশিন লার্নিং শব্দবন্ধের মূল অর্থ হল এমন পদ্ধতি যা মেশিন নিজে নিজে শিখবে, মানুষকে পইপই করে ইন্সট্রাকশন দিতে হবে না। সেই নিজে নিজে শেখার জন্যে প্রয়োজন প্রচুর তথ্য। মেশিন লার্নিং কাজ করে নানারকম মডেলের ওপর। যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাকে দুটো সেটে ভাগ করা হয়। একটা সেটকে বলা হয় ‘ট্রেনিং সেট’। এই সেট দিয়ে মডেলকে – ট্রেইন করানো বা শেখানো হয়। শেখার পরে সেই মডেলকে অন্য সেটের, (তার নাম ‘টেস্ট সেট’) ওপর চালিয়ে দেখা হয় মডেল ঠিকমতন কাজ করছে কিনা! যেমন ধরা যাক, ব্রেস্ট ক্যান্সারের মডেল। কম্পিউটার মডেলে অনেক এক্স-রে রিপোর্ট, ব্লাড রিপোর্ট ইত্যাদি পুরে দেওয়া হল। সেই রিপোর্টগুলোর কিছু ক্যান্সার-আক্রান্ত মানুষের, আর কিছু এমন পেশেন্টদের যাঁদের ক্যান্সার হয়নি। এবার সেই তথ্য পড়ে মডেল তৈরি হল যা এক্স-রে আর ব্লাড রিপোর্ট থেকে ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারবে। এবার সেই মডেল টেস্ট সেটের ওপর চালানো হল। টেস্ট সেটের ক্ষেত্রেও গবেষকরা জানেন কোন রিপোর্টের পেশেন্টের ক্যান্সার আছে, কার নেই। এবার টেস্ট সেটের ওপর মডেল চালানোর পরে মিলিয়ে দেখা হয় মডেল কাদের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পেরেছে। শনাক্তকরণের রেট ভালো হলে (৮০-৯০%-এর বেশি) বলা যেতে পারে মডেল কাজ করছে।

AI-ML

চ্যাট-জিপিটি শব্দবন্ধে দুটো শব্দ আছে। চ্যাট— কথোপকথন, আর জিপিটি। জিপিটি একটা অ্যাক্রোনিম। পুরো কথা জেনেরেটিভ প্রি-ট্রেনড ট্রান্সফর্মার (Generative Pre-trained Transformer)। জিপিটি হল আসল জিনিস, এটাই মডেল। নিউরাল নেটওয়ার্ক নামের একধরণের মেশিন লার্নিং-এর পদ্ধতি লাগিয়ে মানুষের ভাষায় কথা বলানোর মডেল। এর জন্যে চ্যাট-জিপিটির জিপিটিকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বেরোনো সব ওয়েবসাইট, বই, প্রবন্ধ ইত্যাদির তথ্য জোগান দেওয়া হয়েছে। সেই তথ্য থেকে জিপিটি শিখেছে কীভাবে মানুষের ভাষায় কথা বলতে হয়। শুধু কথা কীভাবে বলতে হয় তাই নয়, মানুষের কথা বোঝার উপায়ও। আমরা দিনরাত বলছি বলে বুঝি না যে আমাদের ব্রেন কী চমৎকার বুঝে ফেলে অন্যে কী বলছে! “তুমি খেয়েছ?” “খেয়েছ?” “তোমার খাওয়া হয়েছে?” “খেলে?”— এগুলো বললে আমরা একই মানে বুঝি। কিন্তু সাবেক কম্পিউটার এ ভাষা বুঝতে পারে না। সেই জন্যে কম্পিউটারের সঙ্গে কথোপকথনের জন্যে বিশেষ কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজের উদ্ভব হয়েছে। মানুষের ভাষা কম্পিউটারের পরিভাষায় ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ— স্বাভাবিক ভাষা। জিপিটিকে স্বাভাবিক ভাষায় লেখা নানারকম তথ্য সরবরাহ করে ট্রেইন করা হয়েছে যাতে সে স্বাভাবিক ভাষা বুঝতে পারে এবং স্বাভাবিক ভাষায় জবাবও দিতে পারে। ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ডেভেলপমেন্ট আর ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রিসার্চের একটা বড় ও পুরনো অংশ।

Brain and AI

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স লাগিয়ে ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং-এর প্রয়োগ প্রথম যে চ্যাট-জিপিটিতে হয়েছে তা নয়। গুগল অ্যাসিসটেন্ট, অ্যাপেলে সিরি, জিমেলের ইন্টেলিজেন্ট সাজেশন— এসবই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রয়োগ, যা আমরা জেনে বা না-জেনে বেশ কিছুদিন হল ব্যবহার করে আসছি।

কয়েকটা ব্যাপার এখানে স্পষ্ট করে নেওয়া ভালো—

১। আর্টিফিয়াল ইন্টেলিজেন্স কাজ করে সরবরাহ করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। চ্যাট-জিপিটিতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস অবধি তথ্য সরবরাহ করা আছে। কাজেই তাকে যদি ২০২২ সালের কোনও তথ্যগত প্রশ্ন করা হয়, তাহলে তার পক্ষে সে জবাব দেওয়া অসম্ভব। যেমন, যদি ২০২২ সালের ২৩ মে-র দৈনিক খবর চান চ্যাট-জিপিটির কাছে, সে তা বলতে পারবে না। কিন্তু ২০২১ সালের ২৩শে মে-র খবর দিতে পারবে। কারণ এ প্রশ্ন তথ্যগত, হিসেব করে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করে ২০২২ সালের ২৩ মে কী বার ছিল, চ্যাট-জিপিটি সঠিক উত্তর দেবে যে, ২৩ মে ২০২২ ছিল সোমবার। কারণ, হিসেব করে এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া সম্ভব যদি অন্য কিছু তথ্য তার কাছে থাকে।

২। যেহেতু ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল পুরনো তথ্য থেকে নিজের মডেল তৈরি করে, তথ্যের দোষগুণও সে একই সঙ্গে মডেলে আত্মীকরণ করে ফেলবে। তার একটা পরিণতি হল এই যে বিশ্বের অধিকাংশ ডিজিটাইজড তথ্য— যে তথ্য এ-আইকে সরবরাহ করা হয়েছে/হবে, সেগুলো যেহেতু ইংরিজিতে লেখা এবং পাশ্চাত্য দেশগুলোতে লেখা, সেহেতু পাশ্চাত্য দেশের লেখার স্টাইল, দৃষ্টিভঙ্গির বায়াস ইত্যাদি সবই মডেলে ঢুকে যাবে। যেমন, যে প্রশ্ন প্রথমে বাংলায় করে আড়ষ্ট বাংলায় জবাব পেয়েছিলাম, সেটাই ইংরিজিতে জিজ্ঞেস করলে অনেক সহজবোধ্য জবাব পাওয়া যায়— write a small article on chatgpt:

“ChatGPT is a large language model developed by OpenAI based on the GPT-3.5 architecture. It is an advanced AI system designed to interact with humans in a natural language format. ChatGPT can comprehend and respond to complex queries in a human-like manner, providing users with a personalized experience.

“ChatGPT is built on deep learning algorithms and has been trained on a vast amount of data, enabling it to understand various contexts and nuances in language. It can communicate effectively in multiple languages and respond to queries ranging from general knowledge questions to more complex tasks such as writing essays or generating code.

“One of the main advantages of ChatGPT is its ability to continually learn and adapt to new data, allowing it to evolve and improve over time. This feature makes it a valuable tool in various industries such as healthcare, finance, and customer service, where it can assist in automating routine tasks, enhancing productivity, and providing users with a better experience.

Despite the many benefits of ChatGPT, there are also concerns about the potential misuse of AI technology. As with any advanced technology, ChatGPT must be used ethically and responsibly to avoid negative consequences. OpenAI has taken steps to address these concerns by implementing ethical guidelines and safety measures to ensure that ChatGPT is used in a responsible and beneficial manner.

In conclusion, ChatGPT is a significant development in the field of artificial intelligence, with the potential to revolutionize the way humans interact with machines. As the technology continues to evolve, it will be interesting to see how it will be integrated into various industries and impact our daily lives.

এসব পরের মুখের ঝাল কেন খাবেন? কম্পিউটারের ব্রাউজার খুলে চলে যান https://chat.openai.com/। একটা ফ্রি অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকুন আর ভাবুন আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে কী পরিবর্তন আসছে – প্রযুক্তিতে আর তার ফলে বৃহত্তর সমাজব্যবস্থায়!

 

 

 

ছবি সৌজন্য: Pixabay, Publicdomainpictures

Sambit Basu Author

সম্বিৎ বসুর জন্ম ষাটের দশকের শেষে। জন্মসূত্রে মোহনবাগান ও উত্তর কলকাতা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ছুতোয় ল্যাদ ও আড্ডায় পাক্কা ট্রেনিং। ১৯৯৩ সালে উচ্চশিক্ষায় বিদেশ আগমন ও ঠ্যালার নাম বাবাজি দর্শন। গ্রাসাচ্ছাদন, তথ্য-প্রযুক্তির সূতিকাগার সিলিকন ভ্যালির ছোট-বড় কোম্পানিতে। ব্যক্তিগত প্রবন্ধের সংকলন- "আপন বাপন জীবন যাপন"। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আপাততঃ একটিই। প্রবন্ধ-টবন্ধ বেরিয়েছে এদিক-সেদিক। স্ত্রী পারমিতা ও দুই কন্যা-সহ বাস করেন ক্যালিফোর্নিয়ায় স্যান ফ্র্যানসিসকো শহরের তলিতে। স্বপ্ন দেখেন একদিন কলকাতায় ফিরে পেশাদার আড্ডাবাজের জীবন ফিরে পাবেন।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *