কিছুদিন হল মিঃ মল্লিক গাড়ির বদলে শেয়ালদা থেকে ট্রেন ধরে ইছাপুর যাচ্ছেন। এখানে তাঁর পাঁচনম্বর বেকারিটা শিগগিরই চালু হয়ে যাবে। ভেবেছিলেন বহুদিনের অনভ্যাসে লোকাল ট্রেনে করে যাতায়াত হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু একদিন শেয়ালদার কাছে এসে গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় শেষ মুহূর্তে অন্য কিছু সম্ভব নয় দেখে ট্রেনেরই টিকিট কাটলেন। আর গাছপালা ফাঁকা মাঠের মধ্যে দিয়ে হুহু করে ছুটে কখন যে ইছাপুর এসে গেল, তিনি টেরই পেলেন  না। তারপর থেকে ইছাপুর আসতে হলে ট্রেন ছাড়া আর কিছুতে চড়ার কথা তিনি ভাবেননি।

যে সময়ে তিনি আসেন, উল্টোদিক বলে ফাঁকাই থাকে। আবার ফেরেন অফিসটাইমের অনেক আগে। তাই তখনও দিব্যি হাত পা ছড়িয়ে বসতে পারেন। আশপাশের লোকের সঙ্গে টুকটাক কথা বলে বিচিত্র সব ফেরিওলা দেখে সময়টা হুশ করে উড়ে যায়। একা একা বন্ধ গাড়িতে পেট্রোলের ধোঁয়া আর জ্যাম ঠেলে কী করে এত দিন এসেছিলেন, ভেবে অবাক হয়ে যান মিঃ মল্লিক। তেমন কেনা কাটার শখ নেই মিঃ মল্লিকের। নয়তো রুমাল চিরুনি মোজা ব্যাগ তরকারি ফল… কী না ওঠে ট্রেনে। বিশাল বোঝা নিয়ে চলন্ত ট্রেনে কী অনায়াসে ওরা যাতায়াত করে দেখে, তিনি অবাক হয়ে যান। আর কী বিচিত্র সব ডাক। মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনের রেকর্ডার অন করে রেকর্ড করেছেন অদ্ভুত সব সুর। পরে শুনে এবং অন্যদের শুনিয়ে খুব মজা পেয়েছেন। 

সেদিন কামরা মোটামুটি ফাঁকা। একটি ছেলে উঠল, যাকে আগে কখনও দেখেননি। সে ঝোলা  থেকে একটি দড়ি বার করে সেটা দিয়ে নানা রকম ম্যাজিক দেখাল। ছোট্ট একহাত একটা দড়িকে হাতের ওপর সোজা রেখে কখনও বাঁকিয়ে কখনও নাচিয়ে তাক লাগিয়ে দিল।কামরার অন্য লোকেদের কী মনে হচ্ছে মিঃ মল্লিক জানেন না। তিনি নিজে কিন্তু খুবই অবাক হয়েছেন। এর আগে অনেকবারই ম্যাজিক দেখেছেন, কিন্তু সেসবই দূর থেকে। স্টেজের ওপর নানা আলো আঁধারির খেলার মধ্যে। সেখানে ম্যাজিশিয়ানের পোশাক বাজনা শব্দ ও আলোর কেরামতিও ছিল অনেকখানি। এখানে কটকটে দিনের আলোয় এক হাতের মধ্যে ছেলেটি যেভাবে একটির পর একটি ম্যাজিক দেখাল তাতে তিনি তাজ্জব বনে গেলেন। ছেলেটির হাতে একটা পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে বললেন, “এত ভাল ম্যজিক জানও, শুধু ট্রেনের কামরায় না দেখিয়ে অন্যভাবেও তো শো করতে পার।”

ছেলেটি সমঝদার দর্শক পেয়ে এসে বসল মিঃ মল্লিকের সামনে। বলল, “বাবার কথার অবাধ্য হয়ে ম্যজিশিয়ান হয়েছি। সেইজন্য লড়াইটা একটু কঠিন। পুঁজি থাকলে আরও ভাল ভাল ম্যজিক দেখানো যেত।”

লোকাল ট্রেনের ফাঁকা কামরায় সেদিন একটা ছেলে উঠল। ছবি সৌজন্য – fineartamerica.com

একসময়ে হাত পাকাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মিঃ মল্লিকের আবার এই ম্যজিক জিনিসটার ওপরে বেশ দুর্বলতা আছে। ছেলেটির চেহারায় অভাবের ছাপ। তা সত্ত্বেও চোখে স্বপ্ন। মনে আশা। মিঃ মল্লিকের কেমন যেন মায়া হল। হয়তো নিজের কথা মনে পড়ল। তিনিও বাবার কথার অবাধ্য হয়ে ডাক্তারি না পড়ে ছোট্ট একটা বেকারি কিনে ব্যাবসা শুরু করেছিলেন। তার থেকে আজ কোথায় এসেছেন। চট করে মিঃ মল্লিকের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। তিনি ছেলেটিকে তাঁর কার্ড দিয়ে সুবিধেমতো কলকাতার ঠিকানায় দেখা করতে বললেন। এবং পাকা ব্যবসায়ী মিঃ মল্লিক সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড ঠিক করে ফেললেন।

আজকাল সবাই নতুন কিছু চায়। সেইজন্য কলকাতার দোকানটিকে তিনি একেবারে অন্য চেহারা দেবার কথা ভাবছিলেন কদিন থেকেই।তাঁর এই কদিনের অভিজ্ঞতা, তার সঙ্গে আজকের ছেলেটিকে দেখে মনে হল ট্রেনের কামরার আদলে খাবার দোকানটাকে সাজালে মন্দ হয় না। খদ্দেররা যেন সব ট্রেনের যাত্রী। হকারের সাজপোশাকে বেয়ারারা এসে খাবার দেবে। মাঝে মাঝে এই ছেলেটি ঘুরে ফিরে ম্যজিক দেখিয়ে সবার মনোরঞ্জন করবে। বাউল কীর্তন বা জনপ্রিয় গানগুলো গাইবে কেউ। যত ভাবলেন ততই উত্তেজিত হলেন তিনি।

কিছুদিন বাদে ছেলেটি দেখা করতে এলে মিঃ মল্লিক তার বিষয়ে বিস্তারিত শুনলেন। নাম ভুবন। বাড়ি তারকেশ্বর। একমাত্র নেশা ম্যাজিক। ক্ষেত খামার ইঁটভাটা কোল্ড স্টোরেজ ইত্যাদি নিয়ে বাড়ির অবস্থা বেশ ভালো। কিন্তু বাড়ির সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই। ছোটবেলা থেকে ম্যাজিকের নেশা ভুবনকে ঘরছাড়া করেছে। তার একমাত্র স্বপ্ন হাজার হাজার লোককে ম্যাজিক দেখিয়ে মুগ্ধ করা। আপাতত তার স্টেজ হল ময়দান আর ট্রেনের কামরা। পয়সা জমাতে পারলে তামিলনাড়ু গিয়ে এস রামনের ম্যাজিক স্কুলে ভর্তি হবে। কিন্তু সে অনেক টাকার ধাক্কা। কবে হবে জানে না। মিঃ মল্লিক মন দিয়ে শুনে তিনি কী করতে চান সেটা বললেন। ভুবন যে দারুন খুশি হল এমন নয়, তবে থাকা খাওয়ার একটা পাকাপাকি ব্যবস্থা হওয়াতে মনে হল নিশ্চিন্ত হয়েছে।

এর আগে অনেকবারই ম্যাজিক দেখেছেন, কিন্তু সেসবই দূর থেকে। স্টেজের ওপর নানা আলো আঁধারির খেলার মধ্যে। সেখানে ম্যাজিশিয়ানের পোশাক বাজনা শব্দ ও আলোর কেরামতিও ছিল অনেকখানি। এখানে কটকটে দিনের আলোয় এক হাতের মধ্যে ছেলেটি যেভাবে একটির পর একটি ম্যাজিক দেখাল তাতে তিনি তাজ্জব বনে গেলেন।

নতুন আইডিয়াটা ম্যানেজার কমলেশ্বর ছাড়া আর সবারই মোটামুটি পছন্দ হল।

ইতিমধ্যে ভুবন এসে পড়েছে। এতদিন যে ঘরটায় মাঝে মধ্যে কমলেশ্বর বিশ্রাম নিত, সেটাই এখন ভুবনের আস্তানা। দু’বেলা পেটপুরে খাওয়া ছাড়া তার আর কোনও কাজ নেই। সে কারও সঙ্গে বিশেষ মেলামেশা করে না। বাকি সময়ে দরজা বন্ধ। কমলেশ্বর একদিন ঠাট্টা করে জিজ্ঞেস করেছিল
— সারাক্ষণ দরজা বন্ধ করে কী কর? ধ্যান নাকি?
— ঠিক ধরেছেন।
— এতক্ষণ ধ্যান তো মুনি ঋষিদেরও করতে দেখিনি।
— কটা মুনি ঋষি দেখেছেন? কতটুকু জানেন এ ব্যাপারে? হিসেব নিকেশ করছেন তাই করুন মন দিয়ে। 

দোষটা ভুবনেরই। এসব কথা হাসিঠাট্টার মধ্যেই শেষ হয়। তার বদলে বিচ্ছিরি কথা কাটাকাটি হল। দোকানের সবাই ভুবনের ওপর অল্পবিস্তর চটে গেল। কিন্তু ব্যবসার লাভটা একলাফে তিনগুণ হওয়াতে খদ্দেরদেরও ব্যাপারটা বেশ মনে ধরেছে বলে মনে হল। শুধু কমলেশ্বর সুযোগ পেলেই মিঃ মল্লিককে বলেন, দোকান নতুন ধরনের সাজিয়েছেন সেটাই যথেষ্ট ছিল। অজানা অচেনা একটা ছেলেকে ধরে এনে একেবারে ঘরে তুলবার কোনও দরকার ছিল না। 

মিঃ মল্লিক শুধু হাসেন। কমলেশ্বর তাঁর বহুদিনের বিশ্বাসী কর্মী। সে খুশি থাকলে তাঁর ভাল লাগত, কিন্তু এটাও তাঁর নিজের একটা এক্সপেরিমেন্ট। কারও ভাল লাগছে না বলে তিনি বন্ধ করতে পারেন না। আর অবসর সময়ে ভুবনের কাছে ভুলে যাওয়া শখটার চর্চা করতেও যে তাঁর দিব্যি লাগছে, তার দামও তো কম নয়।  

এর মধ্যে একদিন ভুবন একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলল। টেবিল থেকে এক খদ্দেরের চায়ের কাপ তুলে ঢকঢক করে সেই চা খেয়ে কান দিয়ে বার করে দিল। নতুন করে চা দেওয়া সত্ত্বেও সেই খদ্দের মুখ গোঁজ করেছিল অনেকক্ষণ। কমলেশ্বর মিঃ মল্লিককে সমস্ত ঘটনাটা একটু রঙ চড়িয়ে বর্ননা করে বলল, এভাবে চললে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে। মিঃ মল্লিক কমলেশ্বরকে শান্ত করলেন এই বলে, যে উনি নিশ্চয়ই ভুবনকে শাসন করবেন। মনে মনে ভাবলেন, একে ঘরটা হাতছাড়া হয়েছে। তার ওপর ভুবনের ম্যাজিকের টানে লোক আসা কত বেড়ে গেছে তা হিসেবের খাতাই বলে দিচ্ছে। একটা লোক চটেছে বলে সেটা বন্ধ হতে পারে না। তবু মিঃ মল্লিক ভুবনকেও বললেন, খদ্দেরদের সঙ্গে দূরত্ব রেখে ম্যজিক দেখাতে পারলেই ভাল। 

কিছুদিন শান্তিতে কাটলেও এরপরের ঘটনাটার পর আর চুপ করে থাকা গেল না। একদিন বেশ রাতে কমলেশ্বর হন্তদন্ত হয়ে এসে হাজির।বসে জিরিয়ে নেওয়া পর্যন্ত তার তর সইল না। হাঁপাতে হাঁপাতে সে বলল,
— দেখলেন আমার কথা ঠিক হল কিনা? ছেলেটাকে আমার প্রথম থেকেই সন্দেহজনক লেগেছে।
মিঃ মল্লিক এক ধমক দিয়ে বললেন,
— বাজে কথা ছেড়ে কী হয়েছে বলবে কি দয়া করে?
— প্রতিদিন বাড়ি আসার আগে আমি ক্যাশ মিলিয়ে ভল্টে তুলে লক করে দিই। আগে অনেকসময়েই গা আলমারিতে টাকা রেখে আসতাম। যবে থেকে আপনি ওই ছেলেটাকে ঘরে ঢুকিয়েছেন তবে থেকে ভল্টে ছাড়া রাখি না। ভল্টের নম্বর আমি আর আপনি ছাড়া কেউ জানে না। অতএব সেদিক দিয়ে নিশ্চিন্ত। আজ হঠাৎ খানিকটা পথ এসে মনে হল ভল্টের নম্বরটা ঠিক মিলিয়েছি তো? ঠিক ওই সময়েই আপনার ফোন এল কিনা – কথা বলতে বলতে অন্যমনস্ক হয়ে কাজটা ঠিকমতো করলাম কি? মনটা খচখচ করতে লাগল। ব্যাঙ্ক দু’দিন বন্ধ ছিল বলে অনেকটা টাকাই রয়ে গেছে। আবার রওনা দিলাম দোকানের দিকে। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখি ভল্টের সামনে ভুবন। সামনে দরজাটা হাট করে খোলা। ভেতরে নোটের গোছা। এত পাকা চোর, আমাকে দেখে একটুও ঘাবড়াল না। বলল, ভল্ট খোলা ছিল। ভাবছিলাম কী করব। এখন এসে গেছ যখন বন্ধ করে দাও। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি জানলে কী করে ভল্ট খোলা? দরজা ধরে টানছিলে নাকি?
— ভল্ট বন্ধ থাকলে যে নম্বরগুলো থাকে আজ তার বদলে সব কটা খোপেই শূন্য দেখে কৌতূহল হল। হাতল ধরে টানতেই খুলে গেল।

দোষটা ভুবনেরই। এসব কথা হাসিঠাট্টার মধ্যেই শেষ হয়। তার বদলে বিচ্ছিরি কথা কাটাকাটি হল। দোকানের সবাই ভুবনের ওপর অল্পবিস্তর চটে গেল। কিন্তু ব্যবসার লাভটা একলাফে তিনগুণ হওয়াতে খদ্দেরদেরও ব্যাপারটা বেশ মনে ধরেছে বলে মনে হল।

— বুঝুন কাণ্ডটা! ভল্টের খুব কাছে না গেলে তো নম্বরগুলো দেখাই যায় না। তার মানে ও ফাঁক পেলেই ভল্টের কাছে ঘুরঘুর করে। তাই না? ওর নিজের কথাতেই তো ধরা পড়ে গেল। খুব পাকা মাথা! ভল্ট খুলেছে ঠিকই কিন্তু চাবি না থাকায় বন্ধ করতে পারেনি। ভাগ্যিস এর কলকব্জা অন্যরকম, নয়তো এতক্ষণে টাকা সরিয়ে ভল্ট বন্ধ করে সাধু সেজে বসে থাকত। বলত, আমি খুলতেই জানি না। আমি ওকে আর কিছু না বলে সব টাকা বার করে সোজা আপনার কাছে আসছি।  

কমলেশ্বর চলে যাবার পরও মিঃ মল্লিকের ঘুম এল না। কমলেশ্বরের কথাগুলো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভুবনের যদি সত্যিই এমন মতিগতি হয় তবে তো চিন্তার কথা। অভাবে স্বভাব নষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু ভুবনের তো এখন তেমন অভাব নেই। তবে কিসের জন্য ওর এত টাকা দরকার? পরদিন ভুবনকে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন
— কী ব্যাপার বল তো? তুমি কি বন্ধ সিন্দুক খোলার ম্যাজিক প্র্যাকটিস করছ নাকি?
— না শিখে প্র্যাকটিস করা যায় নাকি? তারপর হতাশ মুখে বলল,
— আমার দ্বারা আর কিছু হবে না। একঘেয়ে ম্যাজিক লোকে আর কতদিন দেখবে? তাছাড়া অন্য কাজে ব্যস্ত দর্শকের সামনে ম্যাজিক দেখাতেও আর ভাল লাগছে না।
— বলেছিলে যে তামিলনাড়ু গিয়ে এস রামনের স্কুলে ম্যাজিক শিখবে?
— সেটা বোধহয় আর হবে না। অত টাকা আমি জীবনেও জমাতে পারব না। এই তাস দড়ি কাগজ রুমাল নিয়ে একঘেয়ে খেলা দেখাতে আর ভালো লাগছে না।  

মিঃ মল্লিক আর কথা বাড়ালেন না। মনের এই অবস্থায় সিন্দুক খোলার ইচ্ছে হতেই পারে। কমলেশ্বর হলফ করে বলেছে সে সিন্দুক বন্ধ করে বেরিয়েছে।

এই ঘটনার পর সবার মনের মধ্যেই কেমন অবিশ্বাস আর সন্দেহ দানা বেঁধে উঠল। তার জন্য অবশ্য কমলেশ্বরই দায়ী। সে কিছুতেই ভুবনকে সহ্য করতে পারছিল না। এভাবে চললে ভুবনকে যে বেশিদিন রাখতে পারবেন না, সেটা মিঃ মল্লিক বুঝতে পারছিলেন। ভুবনের ওপর মায়া থাকলেও কমলেশ্বর এবং অন্যরাও বহুদিনের বিশ্বাসী লোক। তারা অসন্তুষ্ট হচ্ছে বলেও তাঁর ভাল লাগছে না। মহা মুশকিল। তিনি আপাতত ভল্টে টাকা রাখা বন্ধ করলেন। কর্মচারিরা সবাই নিশ্চিন্ত হল।  

কয়েকদিন বাদে মিঃ মল্লিক কমলেশ্বরকে জরুরি কিছু ব্যবসার কাজ দিয়ে বাইরে পাঠালেন। তিনি নিজে বেশ কিছুক্ষণ দোকানে ছিলেন।যাবার আগে ভুবনের কাছে একটু দাঁড়ালেন। যদি কিছু বলেও থাকেন কেউ তা শুনতে পায়নি। পরদিন সকালে হৈ হৈ কাণ্ড। ভল্ট খোলা পড়ে আছে। আর ভুবনের টিকিটিও কেউ দেখতে পাচ্ছে না। সে ত্রিসীমানাতেই নেই। অন্যরা চেঁচামেচি করলেও মিঃ মল্লিক নির্বিকার মুখে বললেন, গেছে বাঁচা গেছে। আপদ বিদায় হয়েছে। দোকানের অন্য কর্মচারীরা খুশি হল। কারণ তারা মনে মনে যা সন্দেহ করছিল, নিজেদের মধ্যে বেশ জোর দিয়ে বলাবলিও করছিল, সেটা সত্যি হল দেখে। পুলিশে খবর দেওয়া হল না, কারণ ভল্টে তো কিছুই রাখা হচ্ছিল না।

ভুবন তখন চেন্নাই এক্সপ্রেসের কামরায় বসে একটা চিঠি পড়ছিল।

“খুব ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ম্যাজিক শেখা আমার হয়ে ওঠেনি। তাই একটা ছোট্ট ম্যাজিক করার লোভ সামলাতে পারলাম না। তোমার মতো রাতকে দিন করার কারসাজি আমি জানি না। কিন্তু একদিনের মধ্যে কারও জীবনটা বদলে দেওয়াও একটা মস্ত ম্যাজিক, তাই না? ভাবলাম সেটাই করে দেখাই। সাপও মরল লাঠিও ভাঙল না! এটা করাও কিন্তু কম ম্যাজিক নয়। এই প্যাকেটের মধ্যে এস রামনের ম্যাজিক  স্কুলে পড়ার খরচ রাখা আছে। এটা তোমায় ধার দিলাম। ইন্দ্রজালের মায়ায় দেশ বিদেশের মন জয় কর। তাহলেই আমার ধার শোধ হবে।” 

চিঠিটা পড়তে পড়তে ভুবনের চোখ ঝাপসা হয়ে গেল।
সে সত্যিকারের ম্যাজিশিয়ানের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে বলল, তাই হবে। কথা দিলাম।

বাংলা সাহিত্য নিয়ে শান্তিনিকেতন ও প্রেসিডেন্সিতে পড়াশোনা। পরে শিক্ষাঙ্গনকেই বেছে নিয়েছেন কর্মজগত্‍ হিসেবে। তবে লেখালিখিই প্রথম ভালবাসা। ছোটদের ও বড়দের –-- দু'রকম লেখাতেই সমান স্বচ্ছন্দ। ছোটদের ও বড়দের গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি শান্তিনিকেতনের মেয়েদের হস্টেল জীবন নিয়ে তাঁর লেখা 'শ্রীসদনের শ্রীমতীরা' পাঠকসমাজে সমাদৃত। প্রিয় বিষয় সিনেমা, নাটক, রহস্য ও ইতিহাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *