অর্থনীতির হাল ক্রমশ চলেছে নিচের দিকে। বাড়ছে বেকার সমস্যা। উৎসাহ হারাচ্ছে যুবসমাজ যারা চায় উচ্চতর শিক্ষা, উন্নত পেশা এবং দুর্দান্ত জীবনশৈলি। কিন্তু পাচ্ছে না বলে হতাশায় ডুবে যাচ্ছে অনেকেই। না, ভারত নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার কথা বলা হচ্ছে এই লেখায়। ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের অন্তর্গত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) হিসাব অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার হার ২০.২%। বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার হারের প্রায় দ্বিগুণ (সারা বিশ্বে এই হার ১০.৫৩%)। কাজেই জীবনের মধ্যে থেকেই অবসাদ আর হতাশার আরোগ্য খুঁজতে নানা পন্থা আশ্রয় করছেন কোরীয়রা। তারই মধ্যে একটি পন্থা এসেছে সংবাদ শিরোনামে, তার অভিনবত্বের কারণে। 

সিওল শহরের হিয়োউন (Hyowon) হিলিং সেন্টার শুরু করেছে অবসাদ কাটানোর এক অভিনব পদ্ধতি। জীবন্ত শেষকৃত্য! টিনএজার থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত – সকলেই এখন ছুটছেন শেষকৃত্যের অভিনয় করে সুস্থতার পথে এগোতে। ২০১২ সাল থেকে এই পরিষেবা শুরু করেছিল হিয়োউন। তবে সম্প্রতি তা প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হয়েছেন বলে দাবি সংস্থার।

কী করা হয় এই জীবন্ত শেষকৃত্যে? এক এক অঞ্চলের মানুষ এক এক ভাবে পালন করেন নিজের শেষ কাজ। কেউ কাফন দিয়ে নিজের দেহ আচ্ছাদিত করে মৃত্যুচিন্তা করেন, কেউ লেখেন নিজের এপিটাফ, আবার কেউ বা বন্ধ কফিনে ঢুকে শুয়ে থাকেন দশ মিনিট। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে “ডায়িং ওয়েল” বা “শান্তিতে মৃত্যু”। আসান মেডিকাল সেন্টারের অধ্যাপক-চিকিৎসক ইয়ু ইউন সিল এই প্রকল্পের ব্যাপারে খুবই উৎসাহী। বললেন, “খুব শিশু বয়স থেকেই মৃত্যুচেতনা গড়ে ওঠা খুব জরুরি। মৃত্যু সম্পর্কে মানসিক প্রস্তুতিও রাখা দরকার।“ 

৭৫ বছরের চো জাই হি সম্প্রতি এসেছিলেন প্রকল্পে অংশ নিতে। তাঁর কথায়, “মৃত্যুচেতনা যদি নিজের মধ্যে জাগ্রত করা যায়, যদি সেরকম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা যায়, তাহলেই জীবনের মূল্য বোঝা সম্ভব। নতুন ভাবে জীবনকে দেখার উৎসাহ দেয় এই প্রকল্প।“ ২৮ বছর বয়সী চোই জিন-কিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। জানালেন, “আগে সকলকেই কেমন নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতাম। সব সময় যেন একটা প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকার চাপ অনুভব করতাম। এখানে এসে দশ মিনিট কফিনে বন্দি থাকার পর উপলব্ধি করলাম, এসবই অর্থহীন। এখন মনে হচ্ছে পড়াশোনা শেষ করে নিজের উদ্যোগে কোনও ব্যবসা করব। চাকরির অনর্থক ইঁদুরদৌড়ে আর থাকব না।“ 

হিয়োওন হিলিং সেন্টারের প্রধান জেয়ং ইয়ং-মুনের মতে এই প্রকল্প জীবনের মূল্য দিতে শেখায়। ক্ষমা আর ত্যাগের তাৎপর্য বোঝায়। বোঝায় পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিলেমিশে জীবনকে উপভোগ করার অর্থ। তাঁর কথায়, “আমাদের কোনও আত্মীয় যখন মারা যান, তখন পরিবারের সকলে একত্র হই শোক ভাগ করে নিতে। কিন্তু তার জন্য কেউ মারা যাওয়াটা কি জরুরি? কারও মৃত্যু না হলে কোনও পুনর্মিলন সম্ভব নয়? আমাদের হাতে সময় তো আসলে খুব কম! এই কারণেই আমার মনে হয়েছিল মৃত্যুর আবহ সৃষ্টি করতে পারলে উপলব্ধিগুলো সহজে আসতে পারে। বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটানোর জন্য এটা একটা কার্যকরী উপায় হতে পারে।“ 

জেয়ং এ ভাবে অনেককেই নিশ্চিত আত্মহত্যার মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। সে অভিজ্ঞতাই ভাগ করে নেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। তাঁর কথায়, “যাঁরা ভাবছিলেন কী ভাবে জীবন শেষ করবেন, তাঁদের সেই সিদ্ধান্তটা পালটে দেওয়ার পর এক অদ্ভুত সন্তুষ্টি পাই। এই প্রকল্প বিশেষত তাঁদেরই জন্য। আমি তাঁদের বোঝাতে চাই, তাঁদের জীবনের দাম কারও চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। তাঁরা না-থাকলে আরও কেউ খুব মনোকষ্টে থাকবেন।“ জেয়ং মনে করেন এই অবস্থার স্থায়ী পরিবর্তন করার লক্ষ্যেই তাঁদের কাজ করে যেতে হবে, কারণ বর্তমানের অপর নাম আসলে আনন্দ।

লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *