এবার এক পণ্ডিত বললেন, বাগ্মিতা বিষয়ে আমাদের কিছু বলুন।
তিনি বললেন:
তখনই তুমি মুখর হয়ে ওঠো, যখন তোমার ভাবনার শান্তি থেকে তুমি বিচ্যুত।
প্রোথিত নির্জনতায়, যখন তোমার ভাবনাগুলির সঙ্গে হৃদয়ে তুমি আর বাস করোনা, তখনই তো বাঙময় হয়ে ওঠো তোমার ঠোঁটে, কিন্তু ওই শব্দগুলিও তোমার কাছে চিত্ত বিক্ষেপকারী এবং বিলাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
আর এও তো ঠিক যে, ভাবনাগুলি বক্তব্যে প্রকাশ হয়ে পড়লে সেই ভাবনার বীজ প্রায় অর্ধেকই ধ্বস্ত হয়ে যায়।
ভাবনাগুলি আসলে সব মহাশূন্যের পাখি, যা শব্দের খাঁচায় বন্দি অবস্থায় ডানা মেললেও, আকাশে তা উড়ান টানতে পারেনা।
তোমাদের মধ্যে এমনও অনেকে আছ, যারা নিজেদের নিঃসঙ্গতার ভয়ে, সমানেই বাচাল মানুষদেরই খুঁজে বেড়াও।
একাকীত্বের নীরবতায়, চোখের সামনে বেরিয়ে পড়ে তাদের সেই নগ্ন সত্তাটাই, যা থেকে তারা নিজেরাও পালাতে চায়।
আর যারা জ্ঞান শূন্য এবং পূর্বাপর বিবেচনা রহিত, তাদের বকবকানিতে সারসত্য কিছু ধরা পড়লেও, সেটা যে আসলে কী, তারা কিন্তু তা নিজেরাই বুঝে উঠতে পারেনা।
প্রকৃত জ্ঞানের আধার আসলে তারাই, যারা সহজে জানান দেয়না এবং স্বভাবতই তারা তাই নিরুচ্চার।
এরই মর্মস্থলে বাস করে সেই লীলায়িত প্রাণসত্তা – এক ছান্দিক স্তব্ধতায়।
রাস্তাঘাটে বা বাজারে, কোনও বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে, নীরবতার এই শক্তিকেই তোমার ঠোঁটে কথা বলাও, আর তোমার জিভে উঠে আসুক সেই শক্তিরই প্রকাশ , যা বাস করে তোমার প্রাণসত্তার গহনে।
তোমার স্বরও সেই মর্মস্থলের স্বর হয়েই কথা বলুক, অপরের শ্রবণেরও মর্মস্থলের শ্রবণে।
কারণ মদিরার স্বাদ মনে থেকে যাওয়ার মতোই, তোমার হৃদয়ের সারসত্যটিও ধরে রেখেছে কিন্তু তোমার প্রাণ।
এমনকি তখনও, যখন আমরা আর মনেও রাখিনা যে, কী ছিল সেই প্রাণ পাত্রটির রং বা, সেটির সুচারু সেই কারুকাজ।