আমাদের বাড়ির পাশে একটা পুরনো শিব মন্দির আছে। মন্দিরটা অনেক পুরনো। কত পুরনো কেউ ঠিক করে বলতে পারে না। ভেতরে একটা শিবলিঙ্গ আছে। আমরা যখন এই পাড়ায় আসি, তখন মন্দিরটা খুব ভাঙ্গাচোরা ছিল। চূড়োয় গাছপালা গজিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তখনও রোজ দুবার পুরোহিত পুজো করে যেত। সকালে আর বিকেলে।

তারপর একদিন মন্দিরটা সারানোর কাজ শুরু হল। অনেক মিস্তিরি কাজ করতে লাগল। চারদিকে বাঁশের মাচা বেঁধে কাজ হতে লাগল। মাচায় উঠে মিস্তিরিরা কাজ করত। দুপুরে কাজ থামিয়ে মন্দিরের চাতালে এসে ওরা বসত। ব্যাগ থেকে খাবার বের করে খেত। মাঝে মাঝে ওদের মধ্যে একজন আমাদের বাড়িতে কলিং বেল বাজিয়ে মার কাছে খাবার জল চাইত। ওরা খালি বোতল দিত, মা সেটায় ফ্রিজের জল ভরে দিত। একদিন আমি দরজা খুলেছিলাম। যে এসেছিল তার নাম নাসিমুল। আমি জিজ্ঞেস করায় বলেছিল। ওদের আসল বাড়ি মুর্শিদাবাদ কিন্তু কাজের জন্য নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়। বাড়িতে বাবা মা বউ দুই ছেলে আর এক মেয়ে আছে বলল। বলল মেয়েকে ইস্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে। সবাই বারণ করেছিল কিন্তু ও তাদের কথা শোনেনি। মেয়ে এখন ক্লাস টুয়ে পড়ে।

মন্দিরের কাজ শেষ হয়ে গেলে নাসিমুল কাকারা চলে যায়। যাবার আগে মায়ের কাছে চেয়ে দুটো পুরনো শাড়ি নিয়ে যায়। মা ওকে একশ টাকা দিয়ে বলে ছেলেমেয়েদের মিষ্টি কিনে দিতে।

কিছুদিন পরে মন্দিরটায় একটা ছোটখাটো অনুষ্ঠান হয়। পাড়ার সবাই সেই অনুষ্ঠানে এসেছিল। আমাদের ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও ছিলেন। এখন মন্দিরটা খুব সুন্দর দেখতে লাগে। পুরোহিত দুবেলা পুজো করে যায়। আর দুপুরে মন্দিরের চাতালে কয়েকটা কুকুর শুয়ে ঘুমোয়। রাতে বাবা, নিমাই কাকা, তরুণ জেঠু, আর কয়েকজনে মিলে বসে আড্ডা মারে।

ক্লাস এইটের তিস্তা কাশীনাথপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ভালোবাসে পাহাড়, রসগোল্লা আর রবিবার।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *