শাড়ি এবং বাঙালি নারী। সেই কস্মিনকাল থেকে দুজনের মধ্যে অসাধারণ বোঝাপড়া, ফাটাফাটি কেমিস্ট্রি। পাড়ার ফাংশনে নাচতে গিয়ে বুঁচকির শাড়ি খুলে যাওয়া বা বিয়েবাড়িতে নিজের ওজনের চেয়ে বেশি ভারী বেনারসি পরে বৈশাখ মাসের গরমে হাঁসফাঁস করার মতো দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বারো হাত এই কাপড়ের টুকরোর ওপর বাঙালির আস্থা অগাধ। আর হবে নাই বা কেন? আজও সরস্বতী পুজোর সকালে সারা বছর শর্টস-ট্রাউজার্স আর স্কার্ট-টপ-এর আঠারো ছুঁই ছুঁই যেই না ওই শাড়ি নামক বস্তুটি পেঁচিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়, অমনি, কী যেন এক রূপকথার গল্প তৈরি হয় এক মুহূর্তে। চোখ সরে না। পলক পড়ে না।

নিজের ওয়াড্রোব উপচে পড়া গাদা গাদা শাড়ি থাকা সত্বেও অন্যের শাড়ি-সাজ দেখে হামলে পড়াটা বাঙালি মেয়েদের মজ্জাগত। চলে আসছে জেনারেশন বাই জেনারেশন। পুজোর বাজার শেষ করেও তাই দোকানের কাচে চোখ রেখে চলতে থাকে দেদার উইন্ডো শপিং। এদিক ওদিক দেখে কেনাও হয়ে যায় দু-একটা, এমনই এর অমোঘ আকর্ষণ। কিন্তু শাড়ি এবং নারীর এই লাভ স্টোরিতেই টুইস্ট এনেছে “সময়”। আজকাল সময় বড়ই কম। কী বাঙালি,কী অ-বাঙালি, পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছেন মহিলারা। তাই শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ, পেটিকোট, এতসব কেনাকাটা করার সময়-সুযোগ বের করা বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। তাছাড়া জিন্স, ট্রাউজার্স, সালোয়ার স্যুট, পালাজোর মতো অন্যান্য যেকোনও পোশাকের তুলনায় শাড়ি জিনিসটা পরতে সময়ও লাগে অনেক বেশি। কিন্তু প্রেম যেখানে গভীর সেখানে হাজার বাধাও যে কোনো বাধাই নয় সে তো যুগে যুগে কালে কালে ট্রায়েড এন্ড টেস্টেড, পরীক্ষিত সত্য। অতএব, বাঙালি নারী ও শাড়ীর এই প্রেমে মধ্যস্থতা করতে হাজির ইউ টিউব। ওখানেই পাওয়া যাচ্ছে সহজে কম সময়ে শাড়ি পরার হাজারো টিউটোরিয়াল। বাটারফ্লাই স্টাইল, মারমেইড স্টাইল, নেক ড্রেপ স্টাইল, ধোতি স্টাইল। আরও কত কী!

শাড়ি পরতে গিয়ে মানানসই ব্লাউজ পাচ্ছেন না? চড়িয়ে নিন শার্ট বা ক্রপ টপ। হিমাচলী আঁচল নিয়ে পরেশান? ভিডিও খুলে দেখে নিন ঠিক কীভাবে বেল্ট দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন তাকে। মাঝ-সপ্তাহে অফিস ফেরত তাড়াহুড়োর বিয়েবাড়ি? বর-বাচ্চাদের সাজিয়ে হাঁচড় পাঁচড় করতে করতে কোনোরকমে হয়তো একটা শাড়ি বের করলেন কিন্তু তারপরেই আবিষ্কার করলেন জুতোর তাকে শুধুই কয়েকটা শীতকালীন বুট আর সাদামাটা পা-ঢাকা জুতো। কিন্তু তাতেও ঘাবড়াবেন না! লং বুট কিংবা ব্যালে ফ্ল্যাটও কী দারুণ মানিয়ে যায়, যদি শাড়িটাকে একটু অন্যভাবে পেঁচানো সম্ভব হয়।

শুধু কি তাই? ঠিক কোন উপায়ে শাড়ি পরলে আপনার বিশালাকার কলেবর ততটা চওড়া লাগবে না বা কীভাবে নিজেকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবেন আঁচলের সরু প্লিটসের কারিকুরিতে সে খবরও বাতলে দেবে ইউ টিউব। শাড়ির মতোই সময়ও যে অতি বিষম বস্তু সে আর কে না মানে। তাই এই সময়টাকেই সামাল দিতে “টু মিনিটস ম্যাগি”র মতোই এই খাজানায় মিলবে দু-মিনিটে শাড়ি পরার সহজ পথের হদিস।

রং মিলিয়ে পেটিকোট কেনার ঝামেলায় নাই বা গেলেন। বরং শাড়ির সঙ্গে গলিয়ে নিন ট্রেন্ডি প্যান্টস বা পালাজো। চিরাচরিত শাল বা লং কোট এর বদলে নিজেকেও অবাক করে দিয়ে সাহস করে চাপিয়ে ফেলুন একটা লেদার জ্যাকেট। তারপরে দেখুন কেমন ম্যাজিকের মতো আপনিই হয়ে উঠছেন “শো স্টপার”। এর পরেও, যাঁরা নেহাতই কুঁড়ে, এটুকুও করার উদ্যম অথবা ইচ্ছে নেই তাঁদের জন্য দোকানে দোকানে হাজির স্টিচড শাড়ি, লেহেঙ্গা শাড়ি, শাড়ি প্যান্ট বা পালাজো শাড়ি। অতএব সময়ের টানাটাটিতেও শাড়ি ও নারীর এই নেভার এন্ডিং প্রেমটি চলছে, চলবে। হই হই করে চলতেই থাকবে।

আর বাঙালির এই প্রেমের গাছে জল দিতে থাকবে ইউ টিউবের মতো হাত বাড়ালেই বন্ধুরা।

এক সময় বাংলা খবরের চ্যানেলে প্রোডাকশনের পেশায় যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে লেখালেখি করে আর দুই সন্তানের দেখভাল করেই হুশ করে কেটে যায় সংযুক্তার দিন। অবসর সময়ে ভালোবাসেন পরিবারের সকলের সঙ্গে বেড়াতে যেতে।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *