সেদিন একটা বাচ্চা এসেছে… পুরোনো পেশেন্ট…ওসিডি (OCD)। বাচ্চাদের ওসিডি এমনিতেই একটু অন্যরকম… বাচ্চারা ভালো করে কল্পনা আর বাস্তবের পার্থক্য করে উঠতে পারে না, উপসর্গ ভালো করে বুঝতে পারে না, বুঝলে সেটা বোঝাতে পারে না, যথেষ্ট জটিল!!

তো বাচ্চাটি ওষুধ খেয়ে ভালোই ছিলো, কিন্তু কয়েকটা মাস ভালো থাকার পরে যথারীতি বাবা-মা এর মনে হয়েছে, “ভালোই তো আছে, ওষুধ বন্ধ করেই দেখা যাক “… সুতরাং বাচ্চার আবার রিল্যাপ্স হয়েছে। অগত্যা বেশ কিছু মাস পরে আবার চেম্বারে হাজির!!

তো আমি বাবা মাকে বোঝাচ্ছি, “আসলে কি জানেন তো,  সাইকিয়াট্রির ওষুধগুলো যেহেতু ধীরে ধীরে কাজ করে, আর এই কাজটা চোখে দেখা যায় না, কিছুদিনের পরে আমাদের মনে হয় যেন অসুখটা ‘এমনই’ হয়েছিল, ‘এমনই’ সেরে গেছে। ওষুধের কোনও ভূমিকা নেই। ফলে আমরা দুম করে ওষুধটা বন্ধ করে, অসুখটা বাড়িয়ে ফেলি।”

সেটা শুনে বাচ্চা – ” হ্যাঁ আন্টি, ওই যেমন স্কুলে আমাদের যখন পড়ায় আমাদের মনে হয় সবই মনে আছে, না পড়লেও চলবে…. কিন্তু তারপরে আর মনে পড়ে না, সেরকম তাই না??”

কি ভালো বোঝালো বাচ্চাটা। হ্যাঁ, খানিকটা সেরকমই। অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে দেখেছি সুগার বা প্রেসারের ওষুধও এভাবে বন্ধ করে দিতে আর সেখানে মানসিক ওষুধ হলে তো কথাই নেই। ক্রনিক অসুখগুলো জ্বর-সর্দির মতন নয় যে একটা  ৫ দিনের কোর্স করলেই সেরে যাবে। ওষুধ শুরু করা বা বন্ধ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন বহু মানুষ একই প্রেসক্রিপশনের ওষুধ মাসের পর মাস খাচ্ছেন যেই ওষুধ হয়তো দুই সপ্তাহের জন্য দেওয়া। এমন করেই স্টেরয়ড খেয়ে যাচ্ছেন বছরের পর বছর!

মানসিক অসুখের ওষুধ অনেকদিন খেতে হয়, তার মানেই সেটা addiction–এমন নয়, ডায়বেটিস-এর ওষুধও দীর্ঘ দিন খেতে হয়, সারাজীবন খেতে হয়। প্রশ্ন হল খেয়ে আপনি কেমন আছেন? আর depression থেকে সুস্থ হওয়ার দুমাসের ভিতরে যদি আপনার মনে হয় আপনি এমনই সুস্থ হয়েছেন, ওষুধ আর এমন কি করেছে, আপনার ভুল মনে হচ্ছে। ওষুধ না খেলেও হয়তো আপনার ডিপ্রেশন কমত, কিন্তু ওষুধ না খেলে ডিপ্রেশন দীর্ঘ হবে, severity বেশি হবে, হসপাতালে ভর্তি বা আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি থাকবে এবং আবারও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে, residual symptoms থেকে যাবে। ওষুধ বন্ধ করে দিলে অবশ্যই আপনার রিল্যাপস-এর সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে, বিশেষ করে আপনি যদি খুব কম সময় ওষুধ খেয়েই ওষুধটি বন্ধ করে দেন!

ওষুধ খান, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ বন্ধ করুন!

প্রবন্ধটি দ্য ডক্টরস ডায়লগ ওয়েব পত্রিকায় পূর্ব প্রকাশিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *