বিশিষ্ট বেহালাবাদক তথা ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র শিশিরকণা ধর চৌধুরী প্রয়াত হলেন ৯ মার্চ ২০২১। বাংলালাইভের তরফ থেকে তাঁকে স্মরণ করতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম তাঁর প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। শোকবিহ্বল হলেও তাঁরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন তাঁদের গুরুকে, বাংলালাইভের মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁদের শেষ প্রণাম। পাঠকদের জন্য রইল সেই বিশেষ সাক্ষাৎকার। আজ প্রথম পর্ব। শেষ পর্বের লিংক: শিশিরকণা ধর চৌধুরী
গত চল্লিশ বছর ধরে সঙ্গীতের সাধনায় নিমজ্জিত রশ্মি চক্রবর্তী। বেহালায় ধ্রুপদ সাধনা ভারতে খুব কম সঙ্গীতজ্ঞ করে থাকেন। রশ্মিদেবী সেই হাতে গোণাদের মধ্যে একজন। তিনি যে শুধু সঙ্গীতজ্ঞ, তা-ই নয়, পেশাগতভাবে অর্থনীতির অধ্যাপকও বটে। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে বেহালাবাদনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। বিদূষী শিশিরকণা ধর চৌধুরীর অন্যতম সেরা ছাত্রদের একজন ছিলেন রশ্মি চক্রবর্তী। তাঁর প্রিয় শিশিরদি-র স্মৃতিচারণে রশ্মি –
প্রখ্যাত সরোদিয়া পণ্ডিত অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে যখন আমার গুরুর প্রয়াণসংবাদ পেলাম, যে অপরিমেয় বেদনা অনুভব করেছিলাম, তা বলে বোঝানোর নয়। দিদিকে দেখেছি চার দশকেরও বেশি সময়। আমার কাছে তিনি ছিলেন মা সরস্বতীর প্রতিমূর্তি। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে, আরও স্পষ্টভাবে বললে ১৯৬৪ সালে, প্রখ্যাত তবলিয়া আচার্য শ্রী শঙ্কর ঘোষের পরামর্শে আমার মা আমাকে দিদির কাছে নিয়ে যান। আমি তখন স্কুলছাত্রী। তখন ওঁর কাছে যাঁরা শিখতে আসতেন, অধিকাংশই ছিলেন বয়স্থা মহিলা এবং আমার থেকে বয়সে অনেক বড়। তাঁরা ওঁকে দিদি বলে ডাকতেন, তাই শুনে শুনে আমিও ওঁকে দিদি বলতাম।
দিদির কাছেই আমার বেহালা শিক্ষার হাতেখড়ি। সে সময় বিখ্যাত মহিলা পাইলট দুর্বা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওঁর কাছে বেহালা শিখতে আসতেন। শিশিরদির মিষ্টি চেহারা, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের জন্য সকলে ওঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন, ওঁর ভক্ত হয়ে পড়তেন। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। বেহালার প্রতিটি খুঁটিনাটি হাতে ধরে, নিজে বাজিয়ে শুনিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। নিজে যতখানি মনোযোগ দিয়ে শেখাতেন, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেও সেইরকম একাগ্রতাই আশা করতেন।
সেসময় উনি একডালিয়া রোডে একটা ছোট বাসা ভাড়া করে থাকতেন। ক্লাসের সময় একতলার একটা ঘরে ছোট একটা চৌকিতে উনি বসতেন। মেঝেতে গালচে বা শতরঞ্চি পাতা থাকত। সেখানে আমরা ছাত্রীরা বসতাম। বিকেল চারটে থেকে ক্লাস শুরু হত। আটটা সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলত। ওঁর মেয়ের বয়স তখন মাত্র দুই। ওর ডাকনাম ছিল তুলতুলি, আর ভাল নাম সুররঞ্জনী। অনেকসময়ই এরকম হত, ক্লাসের মাঝখানে হয়তো কেঁদে উঠত ও, উনি চেষ্টা করতে ওকে শান্ত করার। এক আধবার হয়েছে মেয়ে অসুস্থ বলে ক্লাস নিতে পারেননি। কিন্তু ওঁর সিনসিরিয়াটি ছিল অবাক-করা। বারবার ক্ষমাপ্রার্থনা করে বলতেন, কেন ক্লাস নিতে পারলেন না। সেই নম্র, নিরহঙ্কার ব্যবহারও দেখে শেখার মতো।

বছর দু’য়েক পরে ওঁরা একডালিয়ার বাসা ছেড়ে হিন্দুস্থান রোডে একটি বাসায় উঠে আসেন। তিনতলার একটা বড় ফ্ল্যাট নেওয়া হল যাতে ওঁর অতিথি সৎকারে, ক্লাস নেওয়ায় কোনও অসুবিধে না হয়। ওখানে ছাদের মতো একটা বিরাট বারান্দা ছিল। এখনও মনে আছে, একটা হলঘরে আমরা বসতাম ক্লাস করতে। কয়েক ধাপ সিঁড়ি নেমে একটা ছোট ঘরে মৃণালদা থাকতেন, দিদিরই আর এক ছাত্র, যিনি ওঁর বাড়িতে থেকে শিখতেন। আমার থেকে অনেক সিনিয়র ছিলেন অবশ্যই। ও বাড়িতে, মনে আছে, বেশ জাঁকজমক করে তুলতুলির জন্মদিন পালন হত। আর সেই সন্ধেয় ছোট করে গানবাজনার ব্যবস্থাও করা হত। সেই অনুষ্ঠানেই দেখেছি ওঁর বন্ধু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, উৎপলা সেন এঁরা সব আসতেন।
সেরকমই একবার তুলতুলির জন্মদিনে উনি আমাকে বললেন, ‘রশ্মি তুমি এবার বাজাবে।’ আমি তখন সবে তিন-চার বছর শিখছি। খুব টেনশনে পড়ে গেলাম। বারবার জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম কী বাজাব। উনি নিস্পৃহভাবে বললেন, যতটুকু শিখেছ, তা-ই বাজাবে। এখন বুঝি, আমার নার্ভাসনেস বা জড়তা কাটানোর জন্যেই উনি এটা করতেন। সেবার বেশ বড় অডিয়েন্স ছিল। গুণী শিল্পীদের সামনে বাজাতে খুবই কুণ্ঠিত বোধ করেছিলাম। কিন্তু কীভাবে জানি না, উতরে গিয়েছিলাম সেই পরীক্ষায়।
শেখানোর ফাঁকে ফাঁকে গল্প করতেও ভালবাসতেন শিশিরদি। তখনই শুনেছি, যে ওঁর প্রথম গুরু ছিলেম মোতি মিয়াঁ। বলতেন, ‘শিলংয়ে আমার ছেলেবেলা কেটেছে। সেখানে তো ভীষণ ঠান্ডা। তাই ভোরবেলা আর রাত্তিরবেলা যখন রেওয়াজে বসতাম আঙুলগুলো একেবারে জমে থাকত। খুব কষ্ট হত। কিন্তু বাবা ছাড়তেন না। খুব কড়া ছিলেন। পরে নিজের মধ্যে যখন সেই একাগ্রতা আর সংকল্পের বোধটা জাগরিত হল, তখন আর রেওয়াজের জন্য বলতে হত না। তখন থেকে দশ-বারো ঘণ্টা রেওয়াজ করতাম আমি।’ উনি আমাকেও বলতেন দিনে অন্তত সাত-আট ঘণ্টা রেওয়াজ করতে। আমি তাই করতাম।
বাজনার ব্যাপারে উনি ছিলেন অসম্ভব ‘পারফেকশনিস্ট’ এবং খুব কড়া। একটা ঘটনা মনে পড়ে। তুলতুলির যখন বছর পাঁচেক বয়স, উনি তাকে একটা ছোট্ট বেহালা কিনে দিয়েছিলেন। একদিন ক্লাস করার সময় দেখি ছোট্ট তুলতুলি তার বেহালার ছড় টেনে টেনে বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের মজা লাগলেও দিদির মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। ক্লাস থেকে বেরিয়ে তুলতুলিকে বকুনি দিয়ে বললেন, ‘কী করছ? এটা কি সার্কাস নাকি?’ এটা যে একটা সাধনা, সেকথা ওই শিশুকাল থেকেই তুলতুলির মনে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
আর একটা ঘটনা মনে পড়ছে। একবার ওঁর সঙ্গে পণ্ডিত রবিশঙ্কর এবং উস্তাদ আলি আকবর সঙ্গীত নিয়ে কিছু আলোচনা করছিলেন। ভাগ্যক্রমে আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। খাঁ সাহেব বলেছিলেন, ‘মা লক্ষ্মী খুব সাদাসিধে মানুষ। চোর ডাকাত, যে-ই তাঁকে ডাকে, তিনি তাঁর ঘরে যান। কিন্তু মা সরস্বতী খুব কড়া ধাতের। তাঁকে অনেক সাধ্যসাধনা না-করলে তাঁর মন পাওয়া অসম্ভব।’ দিদির সাধনার মধ্যে এই বাক্যের প্রতিফলন আমি বারবার পেয়েছি।

কোনও ছাত্রছাত্রীকে অহেতুক প্রশংসা করে আত্মতৃপ্তির সুযোগ যেমন দিতেন না দিদি, তেমনই যখন আবার তাঁর ভয় কাটানোর দরকার, তখন ঠিক তাকে উৎসাহ দিতেন। নিজের মধ্যে তো আত্মগরিমা বা আত্মম্ভরিতা একেবারেই ছিল না। কোনওদিন আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে কিছু অর্জন করতে চাননি। অসম্ভব জেদী ও অভিমানী ছিলেন দিদি। অল ইন্ডিয়া রেডিও তাঁকে টপ গ্রেড না দেওয়ায় প্রতিবাদস্বরূপ রেডিওতে বাজানো ছেড়ে দিয়েছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও এই বোধ জারিত করে দিয়েছিলেন তিনি। আমরাও কেউ কখনও স্বজনপোষণের তোয়াক্কা করিনি। নিজেদের কৃতিত্বই ছিল শেষ কথা।
১৯৯৭ সালে দিদি সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান। তাঁর লেখা গবেষণাগ্রন্থটিতে তিনি দেখিয়েছেন যে বেহালা কিন্তু আসলে পাশ্চাত্ত্য থেকে আসা বাদ্যযন্ত্র নয়। বেহালার পূর্বসুরী একান্তভাবে প্রাচ্যের বাজনা ধনুর্বীণা যা সামগানের সঙ্গে বাজানো হত। সেকালে ছড়ের সঙ্গে বাদনযোগ্য এই একটিই বাজনা ছিল। ছড়ের আকার ধনুকের মতো বলে বাজনার নাম দেওয়া হয়েছিল ধনুর্বীণা।
ভারতের উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে দিদির যে অবদান, আমার মতে তার পরিপূর্ণ ও যোগ্য স্বীকৃতি তাঁকে কখনওই দেওয়া হয়নি। তাঁর বাজনাতে তিনি নানা ধরনের অলঙ্কার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র শৈলির সৃষ্টি করেছিলেন। আর এখানেই তাঁর প্রতিভা, তাঁর বিশেষত্ব। তিনি উত্তর ভারতের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ধ্রুপদাঙ্গ এবং গায়কী অঙ্গের একটি অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। কখনও দক্ষিণ ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের গমকশৈলীর প্রয়োগ করেছেন, কখনও পাশ্চাত্য বাদনকৌশল প্রয়োগ করেছেন। প্রায় সারাক্ষণই বেহালায় নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন দিদি।
আরও পড়ুন: শিশিরকণা ধর চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য: ছড়ের টানে শিশিরের শব্দ
আমি প্রায় বারো-তেরো বছর ওঁর কাছে শিখেছি। এবং পরেও ওঁর বাজনা যতবার শুনেছি, মনে হয়েছে, বাদনশৈলী নিয়ে এই নিরন্তর মননশীলতার প্রকাশ আমি আর কারও বাজনায় শুনিনি। জীবনের শুরুতে দিদির কাছে তালিম নিয়েছিলাম বলেই পরে অতি দুরূহ ডাগরবাণী ধ্রুপদশৈলীর বৈশিষ্ট্য বুঝে তাকে বাজনায় ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছিলাম।

আজও মনে পড়ে দিদির কাছে প্রথম আলাপ শেখার দিনটির কথা। ছোট্ট তুলতুলি মায়ের কাছে বসে খেলা করছে আর দিদি আমাকে আলাপ শেখাচ্ছেন। বলেছিলেন, আলাপ কখনও মুখস্থ করে বাজাবে না। সম্পূর্ণ স্মৃতিনির্ভর ছিল দিদির শিক্ষা। আসলে আলাপ তো রাগের ধ্যান, মননশীলতা ও চিন্তাশীলতার তাৎক্ষণিক প্রকাশ। যিনি যত বড় গুণী, তাঁর আলাপ তত নিপুণ, ততটাই স্বতঃস্ফূর্ত।
আমার পরম সৌভাগ্য যে শিশিরদিকে আমি গুরু হিসেবে পেয়েছিলাম। হয়তো আমি সবদিক থেকে তাঁর প্রত্যাশা মেটাতে পারিনি, কিন্তু তাঁর শিক্ষণ অনুসরণ করে নিজেকে তৈরি করবার নিরন্তর প্রচেষ্টা করেছি। ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের যে স্বর্গীয় শোভা আমি দিদির মধ্যে দেখেছি, তা আমার মনে চির-অম্লান থাকবে।
ইন্দ্রদীপ ঘোষ। মাইহার ঘরানার বিশিষ্ট বেহালাবাদক। তাঁকে ‘প্রিন্স অফ ভায়োলিন’-ও বলা হয়। ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি শিখেছেন বিদূষী শিশিরকণা ধর চৌধুরীর কাছে। পাঁচ তারের ভায়োলিন এবং আট তারের ভিয়োলা বাদনে তাঁর সমকক্ষ এ দেশে কমই আছে। বিদেশেও তাঁর খ্যাতি প্রচুর। তাঁর বাজনাকে সম্মান জানাতে আমেরিকার হিউস্টনে ১৫ অক্টোবর ২০১৭ দিনটিকে ‘ইন্দ্রদীপ ঘোষ ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন সেখানকার মেয়র। গুরুমায়ের স্মৃতিচারণে ইন্দ্রদীপ –
‘আমার অনেক সৌভাগ্য যে শিশিরকণা ধর চৌধুরীকে আমি আমার গুরু হিসেবে পেয়েছি। ওঁকে আমি গুরুমা বলে ডাকতাম। আমার বয়স যখন ন’বছর, তখন মা আমাকে ওঁর কাছে নিয়ে যান। সপ্তাহে একদিন করে শিখতাম। ওঁর কাছ থেকে বরাবর এই শিক্ষাই পেয়েছি যে সঙ্গীতসাধনা করা মানে শুধু রাগরূপ শেখা নয়, ভাল শিল্পী হতে গেলে ভাল মানুষ হতে হবে।
গুরুমার তালিম ছিল একেবারে অন্য ধরনের। গোড়াতেই আমাদের বলে দিয়েছিলেন, ‘যদি ভাব কবে গিয়ে রাগ বাজাতে শিখব, তাহলে আমার কাছে এস না। কারণ আমি নিজেও জানি না কবে তোমাদের রাগরূপ শেখাতে পারব। আমি তোমাদের শেখাব পাল্টা, সরগম এইসব। শিখতে শিখতে নিজেরাই রাগের মধ্যে হয়তো ঢুকবে। কিন্তু আগেই কবে রাগ শিখব ভেবে আমার কাছে তালিম নিতে এস না।’ সঙ্গীতটা ছিল ওঁর কাছে পূজার মতো। শেখাতেন সঙ্গীতের মাধ্যমে কীভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হয়।

বারবার বলতেন, ‘হাততালির জন্য বাজিও না। এমনভাবে বাজাও যাতে নিজেকে আনন্দ দিতে পার। তাহলে দেখবে সেই সুরে শ্রোতারা এমন আবিষ্ট হয়ে যাবে যে তারা হাততালি দিতে ভুলে যাবে। তখনই জানবে তোমার সঙ্গীত সার্থক হয়েছে। তা ঈশ্বরের কাছে পৌঁছেছে।’
ইন্দ্রদীপবাবু আরও বলেন, ‘গুরুমা-র বাবা মেঘালয়ের গভর্নরের গৃহচিকিৎসক ছিলেন। গুরুমার অল্পবয়সে ভি জি যোগ সাহেব ওঁদের বাড়িতে আসতেন, ওঁকে শেখাতেন, এসব গল্প ওঁর মুখেই শুনেছি। ওঁর আগে ভায়োলা-কে হিন্দুস্তানি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মূলস্রোতে ব্যবহার করার কথা কেউ ভাবেইনি। গুরুমা মাইগার ঘরানার ‘ধ্রুপদ অঙ্গ বাজ়’ এবং ‘তন্ত্রকারী’ রীতি ওঁর বাদনে সংযুক্ত করেছিলেন। ভায়োলাতে ঝালা বাজানোর সময় ডান হাতের কারুকাজে প্রথম তারটিকে চিকারি হিসেবে ব্যবহার করতেন।

এসবই ওঁর নিজস্ব বাদনরীতির সঙ্গে আলি সাহেবের শিক্ষণের ফসল। কলকাতায় উস্তাদজি এবং পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওঁর যে সব অনুষ্ঠানগুলির রেকর্ডিং রয়েছে, সেগুলি শুনলে বোঝা যায় কী অসাধারণ ওঁদের পারস্পরিক সঙ্গতি। উনি নিজে বেশ কয়েকটি রাগও সৃষ্টি করেছিলেন, সেগুলির কথা বেশি কেউ জানে না। রসরঞ্জিনী, তরঙ্গিনী এই রাগগুলি কেউ বাজায় না। উনি একবার দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে একটি অনুষ্ঠানে বাজাতে গিয়েছিলেন। প্রধান পুরোহিত এসে ওঁকে অনুরোধ করলেন নতুন কিছু বাজাতে। মঞ্চে বসেই গুরুমা সৃষ্টি করলেন এক নতুন রাগ, ভবতারিণী। উৎসর্গ করলেন মা কালীকে।’
পরবর্তী পর্বে থাকবে – তবলিয়া অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও পণ্ডিত বিক্রম ঘোষের কথা
*রশ্মি চক্রবর্তী লেখার ছবি: রশ্মিদেবীর সংগ্রহ থেকে
*ইন্দ্রদীপ ঘোষের লেখার ছবি: ইন্দ্রদীপবাবুর সংগ্রহ থেকে
*বাকি ছবি: Indiatimes, worldmusiccentral.org
মৌলিক‚ ভিন্নধর্মী ও সময়োপযোগী - এমনই নানা স্বাদের নিবন্ধ পরিবেশনের চেষ্টায় আমরা। প্রতিবেদন বিষয়ে আপনাদের মতামত জানান 'কমেন্ট' বক্সে | নিয়মিত আপডেট পেতে ফলো করুন - https://www.facebook.com/banglaliveofficial
Eta ekta samayopojogi samprachar….khub-e bhalo laglo…dhanyobad prastutkarta-ke….