বেড়াতে গেলে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা এক দিকে চমকপ্রদ আবার মজারও। আমার ভাগ্যে এদের আর্বিভাব অনেকটা ফাউ আলুকাবলি বা ফুচকার মতো। যত বার বেড়াতে গেছি, তত বার নানা অভাবনীয় আকস্মিক ঘটনাতে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হয়েছে। তারই কিছু আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি।
সালটা ১৯৮০ হবে। জীবনের প্রথম বিদেশ যাত্রা। স্বামীর সঙ্গে ইতালির রোম শহরে গেছি। কথা ছিল দু’দিন পর এয়ার ইন্ডিয়া গ্রুপের সঙ্গে যোগ দিয়ে ইউরোপ ভ্রমণ শুরু করব। ইতি মধ্যে আমরা কাপরি, সোরান্টো নেপল্স ঘুরে নেব কারণ ওগুলো এয়ার ইন্ডিয়ার ভ্রমণসূচীতে নেই। হোটেলের রিসেপশন থেকে তার ব্যবস্থা করে দেখলাম হাতে বেশ খানিকটা সময় আছে। আর ওমনি মনে হল আশপাশটা একটু ঘুরে নিলে কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমন কাজ। হোটেল থেকে বেরিয়ে সোজা একটি বাসে উঠে পড়লাম। ছড়িয়ে ছিটিয়ে লোক বসে আছে। আমি ব্যাগ থেকে পার্স বের করে রাখলাম ভাড়া দেওয়ার জন্য। অনেকটা সময় কেটে গেল, কেউ এল না। অস্বস্তি লাগছে। স্টপেজ আসতেই দরজা খুলে গেল। আমরা নেমে পড়লাম। বিনা ভাড়ায় এতটা পথ! পরে জেনেছিলাম বাস স্টপেই নাকি টোকেন কাটতে হয়। জিভ কেটে মনে মনে বললাম এ ভুল আর হবে না!
তার পর শুরু হল আমাদের আসল গল্প। নেমে তো পড়লাম , কিন্তু কোথায় ? জায়গাটি জনমানব শূন্য। বাস স্ট্যান্ড পুরো ফাঁকা। বসে পড়লাম। একটু চিন্তাও হচ্ছিল। হঠাৎ দেখি উল্টো দিক থেকে বাস আসছে। ঠিক আমাদের সামনে এসেই দাঁড়ালো। অভ্যাসবশত বাসের গায়ের লেখা পড়তে লাগলাম। ‘FU MARE!’ চেনা চেনা লাগল। আসার বাসটিতেও এই কথাটাই লেখা ছিল। আর যাই কোথায়! তড়াক করে বাসে উঠে পড়লাম। ওঠার মুখে ড্রাইভারকে আমাদের হোটেলের নামটা বললাম। সে একগাল হাসল। ভাবলাম তার মানে কোথায় যাব বুঝতে পেরেছে ,আমাদের হোটেলের দিকেই যাচ্ছে।
বাস চলছে তো চলছেই। শহর, শহরতলী, গ্রাম ও সব শেষে সুজলাং সুফলাং শস্য ক্ষেত্র। ভয়ে  লাফ দিয়ে বাস  থেকে নামলাম। আবার বিনা পয়সায় এতটা পথ চলে এলাম। কিন্তু কোথায় হোটেল,সামনে তো চৌরাস্তা। পূর্ব-পশ্চিমমুখী বাস দাঁড়িয়ে আছে। তারও গায়ে সেই এক কথা-FU MARE| মনে মনে ভাবলাম এ বার ঠিক হোটেলে পৌঁছে যাব। Fu Mare তখন আমাদের বিবাদী বাগ বা ধর্মতলার মতো একটি পরিচিত স্থান হয়ে উঠেছে। কিন্তু বিধি বাম! কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস হাইওয়ে ধরল। এই ভাবে আরও কিছুক্ষণ বাস ভ্রমণের পর, এক বৃদ্ধা ফুল বিক্রেতার সাহায্যে ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে শেষমেশ হোটেলে ফিরলাম। একমাত্র মহিলা যাঁর ইংরাজি বুঝতে কোনও অসুবিধে হয়নি।
‘FU MARE’ কিন্তু আমার অস্বস্তির কারণ হয়েই রইল। পর দিন এয়ার ইন্ডিয়া গ্রুপের সঙ্গে রোম মিউজিয়ামে ঢুকছি। থমকে দাঁড়ালাম। সামনে বড় বড় করে লেখা ‘FU MARE|’ আমরা তো অবাক। না পেরে গ্রুপ কন্ডাক্টারকে জিজ্ঞেস করলাম ,”এর মানে কি?”
উত্তর এল,’No Smoking’
শুনে তো আমরা হেসে কুটিপাটি। কারণ তত ক্ষণে ’ধূম্রপান নিষেধ’-কে ধাওয়া করে আমরা অর্ধেক রোম শহর বিনামূল্যে ঘুরে ফেলেছি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *