নিউ নর্মালে আপনার মুখের বেশিরভাগটাই আজকাল মুখোশে ঢাকা| মাস্কের দাপটে সাজগোজ প্রায় মাথায় উঠেছে| তাই রূপে তোমায় ভোলাব না বলা ছাড়া আর বোধহয় তেমন কোনও গতি নেই| মাস্কের বাইরে মুখের যে সিকিভাগ দেখা যাচ্ছে, সেখানে শুধুই কথা বলছে আপনার একজোড়া চোখ| অতএব, চোখের আমি, চোখের তুমি, চোখ দিয়ে যায় চেনা| সেই চোখজোড়া সাজাতেই তাই উঠে পড়ে লেগেছেন প্রসাধন শিল্পীরা| কীভাবে আরও আকর্ষণীয়, আরও নাটকীয় আরও বাঙ্ময় করে তোলা যায় ওই চোখদুটিকে? লকডাউনের মধ্যেই চলছে সেইসব নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা|

ব্রাজিলিয়ান নিয়ন ও প্যাস্টেলের ব্যবহার আই মেকআপে

এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এক ইন্টারন্যাশনাল মেকআপ ট্রেন্ডের খবর দিলেন প্রসাধনশিল্পী সমৃদ্ধা নাগ| আন্তর্জাতিক ফ্যাশন দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দেওয়া অত্যন্ত কালারফুল এবং উজ্জ্বল এই মেকআপ ট্রেন্ড মূলত এসেছে ড্র্যাগ মেক আপ থেকে| বিভিন্ন গাঢ় উজ্জ্বল রঙ, সঙ্গে প্যাস্টেল ও নিয়ন রঙের ব্যবহারের এই ধরণের লাউড আই মেকআপের চল প্রথম শুরু হয়েছিল এল জি বি টি কম্যুনিটিতে| ড্র্যাগ কুইন এবং ড্র্যাগ কিংদের মধ্যেই বেশি জনপ্রিয় এই মেকআপ| কিন্তু আজ বিশ্বের প্রথম সারির প্রসাধন শিল্পীদের হাত ধরে ক্রমশ মূলধারার ফ্যাশন ও প্রসাধন জগতেও জায়গা করে নিচ্ছে এই মেকআপ ট্রেন্ড|

বিদেশের পাশাপাশি এখন কলকাতাতেও নতুন এই মেকআপ টেকনিকটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন সমৃদ্ধার মত এই যুগের প্রসাধন শিল্পীরা| মূলত কিছু ব্রাজিলিয়ান টেকনিকের সাহায্যে এই মেকআপ করা হয়| ব্যবহার হয় গ্রাফিক আই লাইনার, কালারড লাইনার, গ্লিটার আই শ্যাডো| এমনকি ব্যবহার করা যেতে পারে হোয়াইট লাইনারও| ‘সমৃদ্ধা’জ ভ্যানিটি বক্স’এর উদ্যোগে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস| সেখানেই টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে সমৃদ্ধা শেখাচ্ছেন স্টেপ বাই স্টেপ মেকআপ টেকনিক| উৎসাহী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়|

রঙের ব্যবহারে কয়েক গুণ বাড়ে চোখের আবেদন

কলকাতা, মুম্বইয়ের বেশ কয়েকটি নামী প্রতিষ্ঠান থেকে পেশাগত শিক্ষা নেওয়া চন্দননগরের মেয়ে সমৃদ্ধার মতে ফ্যাশন, মেকআপ এই শব্দগুলো এখন আর শুধুই গ্ল্যামার দুনিয়ায় আটকে নেই| বরং সাজগোজের প্রতি প্যাশন থেকেই তাঁর মত অনেক ছেলেমেয়েরাই পেশাগতভাবে পা রাখতে চাইছেন এই জগতে| কেউ আবার উৎসাহী হচ্ছেন নিজেকে সাজাতে| ইউ টিউব টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে খোঁজ করছেন নতুন নতুন পদ্ধতির| তাদেরই পথ দেখাতে আগ্রহী সমৃদ্ধা| টলিউডের বেশ কিছু ছবিতেও প্রসাধন শিল্পী হিসেবে ইতিমধ্যেই হাত পাকিয়ে ফেলেছেন এই তরুণী|

ব্রাইডাল ফ্যশনেও ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে ড্রামাটিক আই মেকআপ

সমৃদ্ধা জানালেন,

“এই নয়া টেকনিকের পুরোটাই আসলে রঙের খেলা| দেশীয় ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে এতসব জোড়ালো রঙ না এলেও বেশ কিছু নামিদামি ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডে এই ধরনের কালারড্ মেকআপ প্রডাক্ট রেঞ্জ রয়েছে| এই ব্রাজিলিয়ান মেকআপ টেকনিকের আর একটা বড় সুবিধে হল যেকোনও কমপ্লেকশনের ত্বকেই এটা ভাল লাগে| তবে সাজগোজের আঙিনায় এই রঙের খেলায় মেতে ওঠার আগে কয়েকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে| সবার আগে ভাল করে বুঝে নিতে হবে কালার থিয়োরিটা| আর যে চোখজোড়াকে আপনি সাজাবেন তাকে ঠিকমত জানতে হবে| চিনতে হবে চোখের বিভিন্ন অংশ, ভাল করে বুঝতে হবে চোখের আকৃতি| জেনে নিতে হবে সেটা হুডেড না ড্রুপি, ওরিয়েন্টাল নাকি আমন্ড শেপের| আর সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল সঠিক ব্লেন্ডিং| বাকিটা পুরোটাই হাতের ম্যাজিক যেটা আয়ত্ব করতে হবে নিয়মিত অনুশীলনে| ‘তবে প্যাস্টেল কালার বা উজ্জ্বল ব্রাজিলিয়ান টেকনিক যেটাই ব্যবহার করি না কেন সবসময় খেয়াল রাখতে হয় যিনি সাজবেন তাঁর ব্যক্তিত্বের দিকটা।”

বিশেষ দিনে সেজে উঠুন এক অনন্য সাজে

ইতিমধ্যেই ক্রিয়েটিভ মেকআপের পাশাপাশি ব্রাইডাল ফ্যাশনেও গুটি গুটি পায়ে ঢুকে পড়েছে এই কালারফুল মেকআপ টেকনিক| বিয়ের দিন নিজেকে একটু অন্যরকম সাজে সাজাতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে চাইছেন সাহসী কনেরাও| ‘ব্রাইডালে অবশ্য মেকআপের পাশাপাশি শাড়ি, গয়না, ফুল এসবও খুব ইম্পর্ট্যান্ট’ বললেন সমৃদ্ধা| একটা সামান্য টায়ারা কিংবা একটু অন্যরকম কম্বিনেশনের ব্লাউজও, লাল চেলি আর বেনারসির একঘেয়েমির থেকে আপনাকে করে দিতে পারে আর পাঁচজন কনের থেকে একদমই আলাদা| সেই সব দিকগুলোতেই নজর রাখে সমৃদ্ধা’জ ভ্যানিটি বক্স|

আপনার মনের মানুষ যেন সেদিন চোখ ফেরাতে না পারে

মেকআপ ইন্ডাস্ট্রির ড্রেসিং রুম বলছে, এই ২০২০তে পুজো থেকে বড়দিন সাজগোজের দুনিয়ায় হট ফেভরিট হতে চলেছে এই নতুন কালার মেকআপ ট্রেন্ড| তাই সচেতন সাজুনীরা এই লকডাউনের একঘেয়ে অবসাদগ্রস্থ দুপুরগুলোকে কিন্তু কাজে লাগাতে শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই| পুজোর তো আর বেশি দেরি নেই!

কে জানে করোনা বিধ্বস্ত বে-রঙিন বছরেও চোখের পাতার এই রঙের মিশেল হয়ত মন ভাল করবে কারও|

এক সময় বাংলা খবরের চ্যানেলে প্রোডাকশনের পেশায় যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে লেখালেখি করে আর দুই সন্তানের দেখভাল করেই হুশ করে কেটে যায় সংযুক্তার দিন। অবসর সময়ে ভালোবাসেন পরিবারের সকলের সঙ্গে বেড়াতে যেতে।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *