আগের পর্বের লিংক: খলিল জিব্রানের ‘দ্য প্রফেট’-এর অনুবাদ: কথামুখ

প্রেম

ঈশ্বর প্রেরিত এবং ঈশ্বরের পরম ভালবাসার সেই আল মুস্তাফা, যিনি নিজেই তাঁর নিজের জীবনের দিগন্তেও ভোর, তেরো বছর ধরে অপেক্ষা করে আছেন এই অরফালেস শহরের বুকে, অবশ্যম্ভাবী সেই জাহাজটির জন্যে, যেটি অরফালেসের তীর ছুঁয়েই তাঁকে নিয়ে ফিরে যাবে তাঁরই জন্মভূমি– সেই ছোট্ট দ্বীপটিতে।

ধান কাটার এই মরশুমে, আজ বারোতম বছরে, অঘ্রাণের সপ্তম দিনে পাহাড় চূড়ায় উঠে এলেন আল মুস্তাফা, যেখানে নগর প্রাচীরে ঘেরা নয় এবং তিনি তাকিয়ে রইলেন সমুদ্রের দিকে; আর তখনই দেখলেন যে সমুদ্র– কুয়াশা জড়িয়ে, অরফালেসের তীরে এগিয়ে আসছে জাহাজটি।

আর তখনই হাট হয়ে খুলে গেল হৃদয়ের কপাট এবং তাঁর সেই উদ্বেল আনন্দ উড়ে যেতে লাগল, সমুদ্র ছাপিয়ে দূরান্তে। এবং তিনি বন্ধ করলেন দু’চোখ আর নীরবে প্রার্থনা করতে লাগলেন তাঁর আত্মার গভীরে।

কিন্তু পাহাড় থেকে নীচে নেমে আসবার সময় কেমন যেন মনমরা বোধ হল তাঁর এবং তিনি মনে মনে ভাবলেন:

দুঃখকে সঙ্গে না নিয়ে কীভাবেই বা শান্তিতে ফিরে যাব আমি? নাহ! নিজের আত্মাকে ক্ষত বিক্ষত না করে তো এ শহর ছেড়ে যাবওনা আমি।

সে এক দীর্ঘ যন্ত্রণার সময়, যা আমি কাটিয়েছি এই শহরে, এই পাঁচিল ঘেরা চৌহদ্দিতেই, এবং কম নয় সেই নিঃসঙ্গতার রাতগুলিও, তাই আক্ষেপ আড়াল করে কেইবা ছেড়ে যেতে পেরেছে তার দুঃখ আর একাকীত্বের ভার?

টুকরো টুকরো বোধের ছিন্ন যত নির্যাস আমি ছড়িয়ে রেখেছি এখানকার পথে পথে এবং বিস্তর নগ্ন শিশুর মতোই আমার বাসনাগুলি ঘোরাফেরা করে এখানকার এই পাহাড়গুলিতেই, আর সেই বেদনার বোঝায় জর্জরিত না হয়ে তো আমি পারবও না, এসব থেকে নিজেকে আলগা করে নিতে।

এটি কোনও পোশাক নয়, যে আজ আমি তা খুলে রাখলাম। কারণ এ তো আমারই গায়ের চামড়া যাকে টেনে, ছিঁড়ে তবে আলাদা করা যায়, আর তা আমারই এই দুটো হাত দিয়ে।

নয়, এমন কোনও ভাবনাও যা আমি পিছনে ফেলে রেখে চলে যাব। এ কিন্তু আমারই হৃদয়মাধুর্য, যা খিদে আর তৃষ্ণায় জড়ানো।

তবুও , এই এত সব ভাবনা আর আমি টানতেও চাই না বেশি দূর।

আমাকে, সবকিছু ছাপিয়ে ডাকছে এই সমুদ্রগর্জন এবং ওই জাহাজটিতে আমার তাই উঠে পড়াই উচিত।

আর এখানে থাকলেও, এই সামান্য সময়টুকুও দেখতে দেখতেই পুড়ে যাবে রাতের গভীরে এবং তা জমাট ঘন হয়ে থেমেও যাবে একটা ধাঁচে।

এখানকার সবকিছুই তো আমি সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারি, কিন্তু কীভাবে?

যেগুলি তাকে দিয়েছিল ডানার উড়ান, সেই কণ্ঠস্বর তো জিভ বা ঠোঁট দু’টিকে বহন করতে পারে না। তাই নিশ্চিত তা একা একাই খুঁজে বেড়াব মহাশূন্যতায়।

আর ঈগলটাও তো তার বাসা ফেলে রেখে, একাই উড়ে যাবে সূর্য পার হয়ে।

পাহাড়ের সানুদেশে পৌঁছনোমাত্র, আবার তিনি ফিরে তাকালেন সমুদ্রের দিকে। আর তখনই দেখতে পেলেন যে তাঁর জাহাজটি এগিয়ে আসছে বন্দর ছুঁতে, এবং সেই জাহাজের সামনের দিকে যে নাবিকদল, তারা তাঁরই দেশের মানুষ।

স্বভূমির মানুষগুলির জন্যেও মুচড়ে উঠল তাঁর বুক এবং তিনি বলে উঠলেন:

আমার প্রাচীন মায়ের ছেলেরা, উত্তাল জোয়ার পার করা নাবিক দল,

আমার স্বপ্নে, কতবারই তো তোমরা পার হয়েছ সমুদ্র আবাদ, আর আজ সত্যি সত্যি ভেসে এলে আমার জাগরণে, যা আসলে আমার এক গভীরতর স্বপ্ন।

যাব। যেতে আমি প্রস্তুতও। সমুদ্র পারাপারে আমার এই আগ্রহ দেখতে বাতাসও অপেক্ষারত।

স্থির এই বাতাসে আরও একবার শ্বাস নেব আর একবারই মাত্র ভালবেসে তাকাব পিছনে।

আর, তারপরই দাঁড়াব তোমাদের মধ্যে গিয়ে, ওই যাত্রীদলে, অন্যান্য যাত্রীদেরই মতো।

আরও পড়ুন: পীতম সেনগুপ্তের কলাম:  কবি-সমীপে: রবীন্দ্রনাথ ও অতুলপ্রসাদ

 এবং তুমি হে সমুদ্র বিস্তার, হে ঘুমন্ত জননী,

তুমি একাই প্রশান্তি এবং নদী ও উপনদীর মুক্তি,

এই উপনদীই তো পারে, আর একটা বাঁক নিতে এবং উন্মুক্ত প্রান্তরে জাগাতে জলের কলধ্বনি।

এবং আমিও তো তখনই পারব, একটি নিঃসীম বিন্দু হয়ে মিশে যেতে এই অনন্ত সমুদ্রে।

এবং হাঁটতে হাঁটতেই দূর থেকে তিনি দেখলেন, যে মেয়ে পুরুষের দল, তাদের ফলন্ত আঙুরের খেত ও শস্যমাঠ ছেড়ে দ্রুত এগিয়ে আসছে , নগর দরজার দিকে।

তিনি শুনতেও পাচ্ছেন তাদের গলায়, তাঁরই নাম ধরে ডাকাডাকি এবং মাঠ থেকে মাঠে চীৎকার করে পরস্পরকে তারা জানাচ্ছে যে, জাহাজটি এসে গেছে।

এবার তিনি নিজেকে নিজেই বললেন:  

বিচ্ছেদের দিনটিই কি জমায়েতেরও দিন হয়ে উঠতে পারে না?

সত্য কি এই নয়, যে আমারই সন্ধ্যার গভীরে ডুবে থাকে, আমারই আবার সকাল হবার  সম্ভাবনাটুকু?

এবং শেষ পর্যন্ত কিই বা দিতে পারব তাকে, যে চষা ক্ষেতে হাল দেওয়া ছেড়ে এখানে এলো, বা সেই একজনকে, যে তার আঙুর ফল মাড়াই এর যন্ত্রের চাকাটি বন্ধ করে এখানে এসেছে?

আমার হৃদয় কি অফুরান ফলভারে নত সেই গাছটি হয়ে উঠতে পারবে, যেগুলি সংগ্রহ করে আবার তাদেরই আমি বিলিয়ে দিতে পারব?

আর আমার আকাঙ্ক্ষাগুলিও কি ঝরে পড়বে ফোয়ারার মতো, যা দিয়ে আমি পূর্ণ করে দিতে পারব তাদের পেয়ালাগুলি?

আরও পড়ুন: মন্দার মুখোপাধ্যায়ের কলমে: প্রান্তবাসীদের আইসোলেশন

আমিই কি সেই বীণা যে স্বয়ং ঈশ্বরের হাত আমাকে স্পর্শ করবে, বা সেই বাঁশিটি যে আমারই মধ্যে দিয়ে নির্গত হবে তাঁর শ্বাস?

আমিও কি নই ওই নৈঃশব্দ্যের কাঙাল? এবং কী এমন সম্ভার আমি পেয়েছি এই নিস্তব্ধতার গভীরে, যা আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অনায়াসেই বিলিয়ে দিতে পারি?

আজ যদি হয় আমার ফসল কাটার দিন, তো কোন সে শস্যখেত, যেখানে বীজ বুনেছিলাম এবং কি সেই ভুলে যাওয়া ঋতুটি?

আর সত্যি যদি এ এক মাহেন্দ্রক্ষণ, যখন লন্ঠনের আলোটি আমি তুলে ধরলাম, তা আসলে আমার দেখানো আলোক শিখাটি নয়, যা নিজের মধ্যেই জ্বলে নিঃশেষিত হয়ে যাবে।

শূন্য এবং অন্ধকারে আমি যদি আমার এই লন্ঠনটিও তুলে ধরি

তো, রাতের রক্ষক এসে তাতেই তেল ভরে আলোও জ্বালিয়ে দেবেন।

উচ্চারণে এই কথাগুলিই তিনি বললেন। কিন্তু আরও অনেক কথাই থেকে গেল তাঁর হৃদয়ে, অনুচ্চারিত। কারণ, তিনি প্রকাশ করতে পারলেন না, তাঁর সেই গভীরতর অনুচ্চার রহস্যবোধ।

এবং যখন তিনি শহরে প্রবেশ করলেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলো সকলেই, আর তাদের কান্নার রোলও উঠল সমস্বরে।

বয়স্ক নগরবাসীরা সামনে এস দাঁড়ালেন এবং বললেন:

এখনই চলে যেও না, আমাদের ছেড়ে।

আমাদের গোধূলিতে তুমিই তো মধ্যাহ্নের জোয়ার, আর তোমার যৌবনই তো স্বপ্নের পর স্বপ্ন দেখিয়েছে আমাদের।

না তুমি আগন্তুক, বা অতিথি, উপরন্তু আমাদেরই সন্তান আর খুবই ভালবাসার জনও তো।

আমদের চোখ জুড়ে এখনও তোমাকেই দেখার কাতরতা।

যাজক স্ত্রী ও পুরুষেরা তাঁকে বললেন:

এই সমুদ্র বিস্তার, তোমার সঙ্গে এখনই যেন বিচ্ছেদ না ঘটায় আমাদের; আর বছরের পর বছর ধরে আমাদের মধ্যে, তোমার যে এই বসবাস তা যেন স্মৃতি হয়ে না যায়।

আমাদের জীবনে তুমি হেঁটেছ অন্তরাত্মা হয়ে। তোমারই ছায়া, আমাদের মুখে এঁকে দিয়েছে আলো।

তোমাকে খুব ভালবেসেছি আমরা। আমাদের এই অস্ফুট ভালবাসা, জড়ানো আছে ভালবাসারই ওড়নার আরও এক ওড়না হয়ে।

তা এখন উচ্চকিত হচ্ছে কান্নায়, আর সেই কাতরতাই প্রকাশ হয়ে পড়ছে তোমারই সামনে।

এমনটা কি কখনও হয়েছে যে বিচ্ছেদের মুহূর্ত ছাড়া জানতে পেরেছে কেউ, যে কী সেই প্রকৃত ভালবাসা এবং তা কতখানি গভীর?

এবার অন্যদেরও এগিয়ে আসতে দেখা গেল এবং তারাও অনুরোধ করল তাঁকে। তিনি কিন্তু শুধুমাত্র মাথা ঝুঁকিয়ে, তাদের প্রতি নিরুত্তর ও নীরব হয়েই থাকলেন; যারা  সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তারাই কেবল দেখতে পেল, যে তাঁর দু’ চোখের পাতা, জলে উপচে গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে বুকে।  

তিনি এগিয়ে চললেন, মন্দিরের দিকে সেই বিরাট চত্বরটার কাছে এবং তাঁকে অনুসরণ করল বাকিরা।

এবং তার উপাসনার স্থান থেকে বেরিয়ে এলো, আল মিত্রা নামের সেই মেয়েটি, যে নিজেও একজন ভবিষ্যতদ্রষ্টা।

এবং এক নরম নৈকট্যে দৃষ্টি বিছিয়ে তিনিও তাকে দেখলেন, কারণ এ শহরে আসার প্রথম দিনেই এই ভবিষ্যদর্শী আল মিত্রাই তো প্রথমজন, যে তাঁকে চেয়েছিল আর বিশ্বাসও করেছিল খুব।

এবার সে স্তুতি করতে লাগল তাঁর:

হে দৈববাণীর ঘোষক, আপনি খুঁজে চলেছেন পরমাত্মাকে, তাই তাকে খুঁজছেন জাহাজ থেকে অনেকটাই দূরত্বে।

আপনার জাহাজটি আজ এসে গেছে, আর এও নিশ্চিত যে আপনাকে তাই চলে যেতেই হবে।

ফিরে যেখানে যাবেন, সেখানকার স্মৃতিও তো আপনাকে কাতর করে রাখে এবং সেটি যে আপনার বাসভূমি – তাই অধিক আকাঙ্ক্ষারও বটে ; ফলে আমাদের ভালবাসা না আপনাকে বাঁধবে, না আপনাকে ধরে রাখা যাবে  আমাদের আকাঙ্ক্ষায়।

তবুও, অবিলম্বে আমাদের ছেড়ে চলে যাবার আগে, এইটুকুই অনুরোধ আপনাকে, যে আমাদের কিছু বলে যান এবং  সেইমতো দিয়ে যান, আপনার অনুভবে যাকে সত্য বলে বোধ হয় আপনার।  

সেগুলিই আমরা চারিয়ে দেব, আমাদের সন্তানদের মধ্যে এবং তারাও আবার তাদের সন্তানদের মধ্যে এবং এই সন্তান পরম্পরায় তা ধ্বংস হবে না কোনওদিন।

সঙ্গীহীন আপনি আমাদের লক্ষ্য করেছেন দিনমানে এবং আপনার অতন্দ্র রাতগুলিতে শুনেছেন আমাদের কান্না, আর আমাদের ঘুমে বিশ্রামে – হাসিও।

তাই, আমাদের কাছে এখন নিজেকেও উন্মুক্ত করুন এবং সব বলুন, জন্ম এবং মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে যা কিছু দেখেছেন।

এবার তিনি বললেন:

ওহে অরফালেসবাসী, কী আর এমন বলতে পারি! কারণ যা যা বলব, তা কি তোমাদের হৃদয়ে এখনও তোলপাড় করছে না?

আল মিত্রা বললে, তাহলে প্রেম সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।

আরও পড়ুন: ডাঃ আনন্দ সেনের কলমে: রঘুপতি আর আমি

এতক্ষণে মাথা তুললেন তিনি এবং চোখ ফেরালেন সমবেত জনতার দিকে, যাদের ওপর বিছিয়ে আছে নৈঃশব্দ্য। প্রগাঢ় স্বরে এবার তিনি বললেন:

প্রেমের সংকেত পেলে অনুসরণ কর তাকে, যদিও তার গতিপথ খাড়াই এবং কষ্টকর।

তোমাকে যখন সে আলিঙ্গন করবে তার ডানায়, সমর্পণও কোরও।

যদিও, তার ডানায় লুকনো তরবারি জখম করবে তোমাকে।

তাকে বিশ্বাসও কোরও, যখন স্বর হয়ে সে জানান দেবে।

যদিও তার স্বর, চুরমার ভেঙে দিতে পারে তোমার স্বপ্ন, যেমন উত্তুরে হাওয়ায় লুটিয়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায় বাগান।

প্রেম যেমন রাজমুকুট পরায় তোমার মাথায়, তেমনি ক্রুশবিদ্ধও করতে পারে। তা যেমন তোমার বৃদ্ধি, তেমনি সে ছাঁটকাট করে দেবে তোমায়।

সে তোমায় যেমন উচ্চতায় ওঠাবে, রোদে কাঁপা কোমল শাখাগুলিতে আদর বোলাবে,

সে ভাবেই চারিয়ে যাবে তোমার শিকড়েও, আর নাড়িয়েও দেবে মাটির সঙ্গে তোমার আঁটসাঁট সম্পর্কটি।

যতক্ষণ না সেই শস্যের বোঝা যা সে সংগ্রহ করেছে, তা তার নিজের কাছে জড়ো হয়,

আছড়ে, নগ্নও করে দেবে তোমাকে।

তোমাকে টেনে বার করবেই সে, তোমার খোলস থেকে।

গুঁড়িয়ে সাদা করে ফেলবে সে তোমাকে

ঠেসে ঠেসে তালগোল পাকাবে সে তোমাকে, যতক্ষণ না তুমি নমনীয় হচ্ছ।

এবং এরপরই সে তোমাকে অর্পণ করবে তার পবিত্র অগ্নি, যাতে সেই শুদ্ধ আগুনে সেঁকা একটি পবিত্র রুটি হয়ে, ঈশ্বরের ভোজ্য হতে পারো তুমি।

আরও পড়ুন: বিভাস চক্রবর্তীর কলমে: বঙ্গনাট্যের একাল সেকাল

প্রেম এসব করবেই, যতক্ষণ না তুমি তোমার গূঢ় হৃদয়ে তাকে উপলব্ধি করতে পারছ, আর এই উপলব্ধ অভিজ্ঞানই ক্রমে জীবন-হৃদয়েরই খণ্ড হয়ে গড়ে উঠবে।

কিন্তু প্রথমেই ভয় পেয়ে, প্রেমে যদি কেবল শান্তি ও আনন্দ খুঁজে বেড়াও,

তাহলে তোমার পক্ষে এটাই উপযুক্ত যে তুমি আড়াল কর তোমার নগ্নতা এবং ছেড়ে চলে যাও প্রেমের এই শস্য আছড়ানোর উঠোনটি,

ঋতুহীন এই দুনিয়ায় যখন তুমি হাসবে, তা কিন্তু তোমার সম্পূর্ণ হাসি নয়, তেমনই কাঁদবে যখন সেও তোমার অসম্পূর্ণ কান্না।

প্রেম আর কিছুই দেয় না নিজেকে ছাড়া এবং নিজেকে ছাড়া আর কিছু নেয়ও না এই প্রেম।

প্রেম, নিজে যেমন কোনও কিছুই অধিকার করেনা, তেমন তার ওপরও কোনওই আধিপত্য চলে না।

প্রেমের পরিপূর্ণতা একমাত্র প্রেমেই।

তুমি যখন আমর্ম প্রেমে, তখন এমন বোলও না যে “ঈশ্বর আমার হৃদয়ে”, বরং বোলও যে “আমিই ঈশ্বরের হৃদি- মধ্যে”।

ভুলেও ভেব না যে তুমিই পথ দেখাবে প্রেমকে, কারণ তোমাকে যদি সে যোগ্য মনে করে তো, নিজেই সে নির্ণয়ে আনবে যাবতীয় লেনদেন।

নিজেকে পরিপূর্ণ করে তোলা ছাড়া আর কোনও কিছুতেই আগ্রহী নয় প্রেম।

যদি প্রেমে পড় এবং প্রেমেরও যদি আকাঙ্ক্ষা থাকে তার নিজস্ব চাহিদা পূরণের, তখন তার সেই আকাঙ্ক্ষাকেই তোমারও আকাঙ্ক্ষা বলেই জেনো।

দ্রব হতে চেয়ে, ওই খুদে নদীটির মতো হয়ে যাও, যে রাত অবধিও সুরমাধুর্যে গান গায়।

অতি কোমলেও জানতে চাও বেদনার অনুভব।

নিজেরই ভালবাসার বোধে যদি আঘাতও আসে ,

রক্তাক্ত হও স্বেছায় এবং আনন্দে,

এমন এক সকাল যদি ঘুম ভেঙে চাও, যার হৃদয়ে ডানার উড়ান, তো ধন্যবাদ জানাও আরও একটি প্রেমময় দিন উপহার হিসেবে পাওয়ার জন্যে।

আরাম আনতে মধ্যাহ্নের প্রহরগুলিতে, ধ্যানমগ্ন হও প্রেমের উচ্ছ্বলতায়।

সান্ধ্য জোয়ারে ঘরে ফেরো, কৃতজ্ঞতার আবেশে।

হৃদয়ের অণুতে অণুতে প্রার্থনা সাজিয়ে, তারপরে ঘুমোতে যাও; আর তোমার ওষ্ঠ এবং অধরে তারই জন্যে জাগিয়ে রাখ প্রশংসার গান।    (চলবে)

            প্রকাশিত হবে প্রতি সপ্তাহে বুধবার করে। 

Mandar Mukhopadhyay

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *