কলকাতার শীত যেন বাঙালির ভাগ্যরেখা ধরে চলছে। বাঙালির যেমন হব হব করেও, কিছুতেই শেষে গিয়ে ভালটা আর হয় না, তেমনই আমাদের এখানেও আশা দেখিয়ে আসব আসব করে শীত আর এসে উঠতে পারে না। শীতের আমেজ আর আয়েশ করে গায়ে মাখা হয় না। শীতের সকালের মিঠে রোদ পোহানো কল্পনাতেই তাঁত বোনে, গায়ে আর ওঠে না। শীতের অজুহাতে প্রেমিক-প্রেমিকার ঘন হয়ে বসার সুযোগ মরা ঘাসের মাঠে মারা যায়। বাজারে ভাল খেজুর গুড় ওঠে না, তরুণীর জমপেশ হুড দেওয়া সোয়েট শার্ট আলমারিতে ন্যাপথালিন জড়িয়ে পড়ে থাকে আর রাহুল নামক যুবসম্প্রদায়ের জ্যাকেট-দিন পূর্ণতা পায় না। ছাদ-বারবিকিউ’এ কাঠকয়লার সঙ্গে জ্বলে জারের আকাঙ্ক্ষা।

এ হেন বঞ্চনা আর কত দিন সহ্য করা যায়? বাঙালির মাঙ্কি টুপি পরার দুর্নামও আর থাকবে না। কারণ তৎকালীন যেটুকু শীতে বাঙালি মাঙ্কি টুপি পরে ঘুরত, এখন সে-ও ভিন্টেজ হয়ে গেছে। যে দু-তিন দিন পারদ নীচের দিকে নামে, তখন ক্লাব-পাড়ার সাহেবসুবোরা শীতকে ‘ভিন্টেজ ক্যালকাটা উইন্টার’ বলে হ্যাটা করেন। এর একটা ন্যায়-বিচার হওয়া দরকার। আমরা কত দিন আর শীত শীত ভাবকে শীত ভাবব। শুনেছি, উত্তমকুমারের গাড়ির চালককে না কি অনেকটা মহানায়কের মতোই লাগত এক এক সময়। তা হলে আমরাও কি শীতের আমেজকেই শীত ভাবব?

আসলে এটা একটা চক্রান্ত বই কিছুই নয়। বাঙালি একটু সুখে-দুঃখে মাঝামাঝি জীবনযাপন করুক, এ কেউ চায় না। পাতে এক টুকরো পোনা মাছ আর শীত কালে দিন কয়েকের হিলহিলে ঠান্ডা, এ বই কি জীবনে কোনও চাহিদা ছিল বাঙালির? গ্যাস-অম্বলের তাড়নায় ফুলকপি অবধি শীতের সময় সে বড় একটা খায় না। তবু বাঙালির সাহেব সাজার দিনগুলো কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ঠিক জানি, এ কেবল বাঙালি হওয়ার অপরাধ। যেহেতু বঞ্চনা সহ্য করেও সে মুখ ফুটে কিছুটি বলে না, তাই এত বড় অন্যায়টা তার ওপর দিয়ে বেশ চালিয়ে দেওয়া যায়। মুখচোরা কি না, তা-ই প্রতিবাদ করবে না, এ কথা সবাই বেশ জানে।

তবে এই বেলা বলে রাখা ভাল, সব সহ্যের একটা সীমা থাকে। বাঙালি কেন্দ্রের বঞ্চনা থেকে শীতের বঞ্চনা, যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধেই গর্জে উঠতে পারে, এ কথাটা জানা ও জানানো দরকার। আমাদের বরাদ্দ কমালে আমরা আর মুখ বুজে মেনে নেব না। দরকার হলে চিনের পথ গ্রহণ করব। চিন নকল মেঘ তৈরি করে বৃষ্টি নামাতে পারে। আমরা শীতলতা জমিয়ে জমিয়ে পারদ নামাব। কিন্তু শীতের পার্কস্ট্রিটের দিব্যি, পাখা চালিয়ে নাহুমস-এর কেক খাব না।       

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র‌্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *