আগের পর্বের লিংক: খলিল জিব্রানের দ্য প্রফেট-এর অনুবাদ: [কথামুখ] [প্রেম] [বিবাহ] [সন্ততি] [দান ও দাক্ষিণ্য] [পান-ভোজন] [কাজ-কারবার] [দুঃখ ও সুখ] [ঘর-বসত] [পরিধেয়] [বিকি কিনি] [অপরাধ ও শাস্তি] [আইনসম্মত] [স্বাধীনতা] [যুক্তি ও আবেগ] [সময়] [ভাল ও খারাপ] [প্রার্থনা]
সুখ
বছরে যিনি একবারই মাত্র আসেন এ শহরে, পরিব্রাজক সেই সন্ন্যাসী এগিয়ে এসে এবার বললেন, সুখ সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।
তিনি বলতে শুরু করলেন:
সুখই হল মুক্তির সঙ্গীত।
কিন্তু তা মুক্তি নয়।
এ হল আকাঙ্ক্ষার কুঁড়িগুলির ফুটে ওঠা।
তা কখনওই কিন্তু আকাঙ্ক্ষার ফল নয়।
এ এমন এক গভীরতা, যা সদা সর্বদা উচ্চতাকেই ছুঁতে চায়।
আসলে কিন্তু তা, না গভীর বা না উঁচু।
এ হল বন্দিত্বের ডানায় উড়ান।
আবার কখনওই তা কিন্তু, বিস্তারে বিছিয়ে পড়াও নয়।
আহা! সুখ তাই যথার্থই মুক্তির গান।
যখন সে গান, তুমি হৃদয়ে পরিপূর্ণ হয়ে গাইবে, আমি আনন্দ পাব; কিন্তু এও তো চাইবনা যে, এই গানেই তোমার হৃদয় হারাক।
তোমাদেরই মধ্যে কয়েকজন যুবক সুখকেই সর্বোত্তম ভেবে খুঁজে বেড়াও এবং তখনই তোমাদের বিচার চলে আর জোটে ধিক্কার।
আমি অবশ্য এদের বিচারও করব না, আর ধিক্কারও দেব না; আমি চাই যে তারা খুঁজেই চলুক।
তাই সুখের সন্ধান তারা পাক, কিন্তু তা শুধু যেন সুখমাত্র না হয়।
এরা আসলে সেই সাত বোন, যাদের সবচেয়ে কনিষ্ঠটিই সুখ ছাপিয়ে অপরূপা।
তোমরা কি শোননি সেই লোকটির কথা, মাটিতে শিকড় খুঁজতে খুঁজতে, যে গুপ্তধন পেয়ে গিয়েছিল?
আর তোমাদের সেই পূর্বসূরি যাঁরা সখেদে মনে করতে পারবেন যে, তাঁদের সেই ভুলগুলি আসলে মত্ততার বশেই করা।
ধিক্কারের মেঘে তাঁদের মন ছেয়ে ফেললেও এই আক্ষেপ আসলে কোনও শাস্তির কারণে নয়।
তাই সুখকে তাঁরা স্মরণ করুন একান্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে, কারণ নিদাঘের তাপ মেখেই তো তাঁদের ঘরে, তাঁরা ফসল তুলবেন ।
আক্ষেপে ডুবেই যাদের স্বস্তি, তারা সে ভাবেই স্বস্তি পাক।
এ ছাড়াও তো তোমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে, যারা অল্প বয়সেই আকাঙ্ক্ষার তাড়না থেকে মুক্ত এবং বুড়ো বয়সেও স্মরণে আনেনা, সেই বিগত সুখের কথা।
এই স্মৃতি কাতরতা এবং আকাঙ্ক্ষার তাড়নাকে ভয় পেয়ে, আসলে সুখকেই জলাঞ্জলি দেয় এবং পাছে তা চলে যায়, এই ভেবে হয় সুখের মর্মকেই অবহেলা করে, না হয়তো এর বিপ্রতীপে গিয়ে, সুখকেই আক্রমণ করে বসে।
তাদের কাছে সুখের অনুভব তাই, সুখ ছেড়ে যাওয়ার মধ্যেই।
আর এভাবেই খুঁজে পায় ঐশ্বর্য, যদিও শিকড়ের খোঁজেই, কাঁপা কাঁপা হাতে তারা মাটি খুঁড়েছিল।
কিন্তু আমাকে বল, যে কে তার বাধা হয়ে দাঁড়াল?
নাইটিংগেলের গানে কি চুরমার হয়, নিথর রাত্রির নীরবতা , নাকি জোনাকির ওড়া উড়িতে ধ্বস্ত হয় ওই নক্ষত্রলোক?
তোমাদের জ্বালানো আগুন বা ধোঁয়া, কোনটিই কি বাতাসকে ভারি করতে পারে?
তুমি কি মনে কর যে সুখের মর্মটি হল এক নিস্তরঙ্গ পুকুর, যেটিকে তুমিই বার বার শুধু ঘুলিয়ে তুলতে পার লাঠি দিয়ে?
সুখ থেকে নিজেকে বার বার বঞ্চিত করলেও, তুমি কিন্তু সেই বাসনাগুলিকেই জমিয়ে রাখ তোমার এই গোপন অবদমনে।
কে বলতে পারে, যে আজকে যা বাতিল যোগ্য সেটাই হয়ত কালকের অপেক্ষায়?
এমনকি এও জানবে যে প্রকৃতির নিয়মে, চিরাচরিত পথেই তোমার শরীরও চিনেছে এই সুখগুলিকেই এবং এও জেনেছে যে এই ন্যায্য অধিকারের চাহিদা থেকে সে কিন্তু প্রতারিত হবেনা।
তোমার শরীরই তো হৃদয়ের বীণা।
এ তো তোমারই কর্তব্য তাই, শরীর নিংড়ে প্রকাশ করা সেই মাধুর্যময় সঙ্গীত, এমনকি যদি তা সামঞ্জস্যহীন হয় তাও।
এখন হৃদয়ে প্রশ্ন জাগিয়ে তোল, “কীভাবেই বিভাজিত করব, সুখের নিরিখে কোনগুলি ভাল আর মন্দই বা কী”?
নিজের এই শস্যখেত ও ফলন্ত বাগানের, নিজেই ঈশ্বর হও এবং দেখবে যে তখন নিজেই কেমন শিখে যাবে – এই হল সেই সুখ, যে সুখে মৌমাছি, উড়ে উড়ে ফুল থেকে ফুলে মধু সংগ্রহ করে।
আবার একই সঙ্গে ফুলেরও তা সুখ, মৌমাছির জন্যে এই মধু উৎপাদন করায়।
কারণ, মৌমাছির কাছে জীবনের উচ্ছল প্রস্রবণই হল ফুল।
আর ফুলের কাছে মৌমাছিই হল প্রেমের দূত।
তাই ফুল ও মৌমাছি দু’জনের কাছেই সুখের এই পারস্পরিক আদান প্রদানই হল একই সঙ্গে চাহিদা এবং উল্লাস।
ওহে অরফালেসের মানুষ, তোমাদের সুখের খোঁজে, এই ফুল ও মৌমাছির মধ্যে নিরন্তর যা ঘটে চলেছে, সেই পারস্পরিকতাকেই তোমরাও মানো।
আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।