অবশেষে সেই আলমিত্রা বলল, আমরা এবার মৃত্যু বিষয়ক কিছু জিজ্ঞাসা রাখব আপনার কাছে।
তিনি বললেন:
তোমরা তো জানোই যে মৃত্যু রহস্য কী।
কিন্তু প্রশ্ন এই যে, কী করেই বা পাবে তাকে, যদি না হৃদয়ের গভীরে তাকে খোঁজ।
প্যাঁচা, যার রাতচোরা চোখ সমস্ত দিনমান জুড়েই অন্ধ, আলোর রহস্য – অবগুণ্ঠন তো সে সরাতে পারেনা।
সত্যিই যদি মৃত্যুর নির্যাস বুঝতে চাও, তো হৃদয়কে প্রসার দাও, এই পার্থিব জীবন অবধি।
সমুদ্র আর নদী ঠিক যে ভাবে বহতায় পৃথক হয়েও এক এবং অভিন্ন, তেমনই ঠিক জীবন এবং মৃত্যুও।
আসলে জ্ঞানের অতীত হয়ে, তোমার নিজেরই আশা আকাঙ্ক্ষার মধ্যে নিথর হয়ে আছ তুমি।
এবং বরফের নীচে চাপা পড়ে থাকা বীজও যেমন স্বপ্ন দেখে, তেমনই তোমার হৃদয়ও স্বপ্নে বুনে চলে বসন্ত।
তাই বিশ্বাস কর এই স্বপ্নজালকে, কারণ তোমার অনন্তে প্রবেশের তোরণ দুয়ারটি যে এরই মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে ।
মৃত্যু ভয়ে তোমার কেঁপে ওঠা, ঠিক যেন রাজার সামনে এসে দাঁড়ান শিহরিত সেই মেষপালকটি, কারণ তাঁর রাজকীয় হাতটিই তো সম্মান সূচক হয়ে তার মাথাটিই স্পর্শ করবে।
ভয়ে কেঁপে ওঠার তলে তলেও কি সেই মেষপালক এ ভেবেও শিহরিত নয়, যে সে ধারণ করতে চলেছে রাজচিহ্ন?
তাই আনন্দের থেকেও, ভয় বোধটাই কি তার মনে বেশি করে আসবেনা?
মৃত্যু কি এসবের থেকে বেশি কিছু – যখন বাতাসে তোমাকে নগ্ন হয়ে দাঁড়াতে হয় বা গলে যেতে হয় প্রখর সূর্যের তাপে?
দম ফুরিয়ে যাওয়াও কি এক অর্থে, অস্থির জোয়ার থেকে বাতাসের মুক্তি পরোয়ানাই নয়, একমাত্র যখন উত্তুঙ্গ, বিস্তারিত এবং ঝাড়া হাত পা হয়ে সে খুঁজতে থাকবে ঈশ্বরকেই?
নীরবতায় যখনই তুমি নদী থেকে পান, তখনই আসলে তুমি গান।
এবং যখন তুমি পর্বত শীর্ষেও, তখন আসলে পাহাড়ে ওঠা শুরু করেছ মাত্র।
এবং তখনই তো তুমি যথার্থ নেচে উঠবে, যখন এই পৃথিবী আবার ফিরে পেতে চাইবে তোমার সব অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ এবং উপাঙ্গগুলিও।