আগের পর্বের লিংক: খলিল জিব্রানের দ্য প্রফেট-এর অনুবাদ: [কথামুখ] [প্রেম] [বিবাহ] [সন্ততি] [দান ও দাক্ষিণ্য] [পান-ভোজন] [কাজ-কারবার] [দুঃখ ও সুখ] [ঘর-বসত] [পরিধেয়] [বিকি কিনি] [অপরাধ ও শাস্তি] [আইনসম্মত] [স্বাধীনতা] [যুক্তি ও আবেগ] [সময়]
ভাল এবং খারাপ
এবার, শহরের বয়স্ক মানুষদের মধ্যে থেকে এগিয়ে এসে একজন বললেন, ভাল ও খারাপ সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।
তিনি বললেন:
বলতে পারি শুধুমাত্র তোমার ভালটুকু নিয়েই, খারাপ দিকটির বিষয়ে কিন্তু নয়।
মন্দ কি সেটাই নয়, যখন ভাল তার নিজস্ব ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় নিজেই অত্যাচারিত ?
বাস্তবিকই, ভাল যখন নিজেই ক্ষুধার্ত, তখন অন্ধকার গুহাতেও তো সে তার খাদ্য হাতড়ে বেড়ায় এবং তৃষ্ণায় আকুল হলে পান করে ফেলে, জমে থেকে থেকে পচা সেই অপরিস্রুত জলও।
আসলে, তুমি তখনই ভাল যখন তোমার সত্তার সঙ্গে সহাবস্থান করছ তুমি।
যখন তুমি স্বধর্ম চ্যুত, তখনও যে তুমি মন্দ তা কিন্তু নয়।
বাড়ি ভাগ হয়ে গেলেই , সেটি যে চোরের বাসা হয়ে যায় এমন তো নয়, ভাগাভাগিতে সমগ্রতা হারায় মাত্র।
নিশানা হারিয়ে, হাল বিহীন জাহাজ বিপজ্জনক দ্বীপের ঘূর্ণিতে পড়লেও, তা কিন্তু সমুদ্রে তলিয়ে যায় না।
নিজেকে নিঃশেষে উজাড় করে দিতে যখন তুমি উন্মুখ, তখনই তুমি ভাল।
আর তখনও অবশ্য তুমি খারাপ নও, যখন নিজেরই জন্য মুনাফা খুঁজে চলেছ।
লাভের জন্য যখন আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছ, তখন আসলে শিকড় হয়ে মাটি কামড়ে ধরিত্রীস্তনই পান করছ তুমি।
শিকড় গুচ্ছকে, ফল নিশ্চয়ই বলতে পারেনা, “ পরিপক্ব ও পূর্ণ হও আমার মতো, আর সতত উজাড় করে দাও তোমার প্রাচুর্য”।।
ফলের দায় যেমন উজাড় হয়ে ঝরে পড়ায়, শিকড়েরও চাহিদা তেমন টেনে শুষে নেওয়ায়।
সম্পূর্ণ সচেতন হয়ে যখন তুমি কথাবার্তা বলছ, তখনই তুমি ভাল।
আর তখনও তুমি মন্দ নয়, যখন উদ্দেশ্যহীন তোমার জিভ ঘুমের মধ্যে স্খলিত চলন হয়ে পড়ে।
অনেক সময় দ্বিধান্বিত ভাষণও, স্খলিত দুর্বল জিভকে শক্তি যোগায়।
যখন প্রত্যয়ী পা ফেলে, তোমার লক্ষ্যে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাবে তুমি, তখনই তুমি ভাল।
অবশ্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওদিক পানে চললেই যে খারাপ হয়ে গেলে তুমি, এমনটাও নয়।
এমনকি যারা খুঁড়িয়ে হাঁটছে, তারাও তো কেউ পিছু হাঁটছেনা।
কিন্তু, তোমারা যারা সবল ও দ্রুতিময়, খঞ্জের প্রতি করুণা বশত তারা আবার যেন খোঁড়াতে শুরু কোরওনা।
ফলে নানা ভাবেই তুমি ভাল, আর যখন ভাল নয়, তখনও যে মন্দ এমনও নয়।
আসলে নিষ্ক্রিয় তুমি, উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে ঘুরে মরছ।
করুণার্ত হও এই ভেবে যে, পুরুষ হরিণেরা কখনওই তো দ্রুতি শেখাতে পারেনা কচ্ছপদের।
এই বিরাট সত্তার জন্যে তোমার যে আকাঙ্ক্ষা, তার মধ্যেই তো নিহিত তোমার শুভ বোধ এবং এই আকাঙ্ক্ষা তো তোমাদের সকলের মধ্যেই আছে।
তোমাদের মধ্যেই তো কেউ কেউ, বিরাটত্বের সেই আকাঙ্ক্ষাকে ছুঁতে ,পর্বতের রহস্য এবং অরণ্যগানও বয়ে নিয়ে, এক প্রবল শক্তিতে ধেয়ে চলেছ ওই সমুদ্রেরই দিকে।
আর অন্যদের ক্ষেত্রে এ তো এক নিস্তরঙ্গ জলধারা, যা সমুদ্র তীরটি ছোঁয়ার আগেই, হারিয়ে যায় বাঁকে বাঁকে।
বিরাটের স্পর্শ চেয়ে যাদের গতি দুর্বার, তাদের তো আর কিছু বলবার নেই, কিন্তু এই আকাঙ্ক্ষাই যাদের নেই, তাদের কাছে জানতে চাও, “ তোমরা কেন এত শ্লথ এবং কেনই বা তোমাদের এই থেমে, ঠেকে থাকা”।
যদি সত্যি সত্যি ভাল হও তো নগ্নকে জিজ্ঞেসও কোরনা, “ তোমার পরনে পোশাক নেই কেন” বা গৃহহীনকেও, “ কোথায় কোন বাঁকে তুমি ঘরটি হারালে”?
আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।