শোণিতমন্ত্র (পর্ব ৯)

তাহলে তুমিও একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো সর্দার। তরু একমাত্র আমার। তুমি নিজে হাতে তুলে দিতে চাইলে ভালো নইলে লাঠির দাপে ওকে তুলে নিয়ে যাবো আমি, মনে রেখো কথাটা।
শোণিতমন্ত্র (পর্ব ৫)

পরমুহূর্তেই “হা রে রে রে রে” ভয়ঙ্কর বজ্রহুঙ্কারে কেঁপে উঠলো নীলের জঙ্গল। পালকির ভিতরে ভূপতি রায়ের মনে হল গোটা জঙ্গলটাই যেন ভেঙে পড়ছে মাথার ওপর। কুলকুলি শোনামাত্র গাছ থেকে লাফিয়ে মাটিতে নেমে পড়েছে দলের ছেলেরা। ভোজপুরি সেপাইরা তো আগেই ফৌত হয়ে গেছিল। বাকি চল্লিশজনের লেঠেল ফৌজ খড়কুটোর মত উড়ে গেল বিশ্বনাথের দলবলের সামনে।
শোণিতমন্ত্র (পর্ব ৪)

“জয় মা কালী।” রক্তচোখে স্যাঙ্গাতদের দিকে তাকিয়ে ফের একবার হুঙ্কার ছাড়লো বিশ্বনাথ। “ফেরাসনে মা হাতখালি/একশো পাঁঠা দেবো বলি।” প্রত্যুত্তরে সমবেত গলায় বজ্রগর্জন উঠলো রাতের নিস্তব্ধতা চিরে। এক এক করে সামনে এগিয়ে আসতে লাগলো দলের লোকেরা। বাটিতে তর্জনী চুবিয়ে সবার কপালে রক্ততিলক এঁকে দিলো বিশ্বনাথ।
শোণিতমন্ত্র (পর্ব ১)

রাত আর ঠাণ্ডা দু’টোই বাড়ছে জঙ্গলে। হাতের চিমটে দিয়ে যজ্ঞকুণ্ডের আগুনটাকে ফের একবার খুঁচিয়ে দিলেন জঙ্গলগিরি। করোটিপাত্র থেকে একচুমুক কারণ পান করলেন। চৌরঙ্গা আলখাল্লাটাকে টেনে নিলেন বুকের কাছে। এই চার রঙের আলখাল্লার জন্যই ভক্তদের অনেকে চৌরঙ্গিবাবা নামেও ডাকে ওঁকে। আর সেই থেকেই এই জঙ্গলের নাম হয়েছে নাকি চৌরঙ্গির জঙ্গল। অবিশ্বাসীরা ফুট কাটে ফের। চৌরঙ্গা কম্বল না ছাই। আসলে জঙ্গলের মাঝখানে মেঠো চৌরাস্তার একটা মোড় রয়েছে। সেই থেকেই চৌরঙ্গি। ভক্তদের মুখে এসব শুনে হাসেন জঙ্গলগিরি।
গোলকিপার (শেষ পর্ব)

“টাকার জোরে, ক্ষমতার নেশায় তার চতুর্দিকের সব কিছু নিজের ইচ্ছে মতো চালাতে চায়, এরকম একটা উন্মাদ, একটা পাগলের জন্যে তোমাকে ভুগতে হয়েছে গোলকিপার। তোমার সঙ্গে সঙ্গে আমাকেও হয়েছে। ঠাম্মাকে হারিয়েছি আমি এই পাগলামির জন্যে। তখন তো জানতামই না। কিন্তু সেই পাগলটাকে কি আজ এক মুহূর্তের জন্যেও দেখতে পেলে? অবশ্য দেখবেই বা কী করে! তুমি তো আজ একবারও তাকাওইনি তার দিকে!”
গোলকিপার (পর্ব ২৩)

সুজাত একটু ভেবে বললেন, “আজ শিম-পোস্তটা কোরও। বলছিলে না, কুর্চি ভালোবাসে? তার সঙ্গে মটর ডাল আর ঢেঁড়স ভাজা। তারক একটু পরে গলদা চিংড়ি দিয়ে যাবে। চিংড়ি কিন্তু সবাই নাও খেতে পারে। আর একটা মাছ লাগবে। বসন্ত দেখ, বাজারে যদি পাবদা পাও আজ। তাহলে পাবদার তেল-ঝাল। পাবদা না-পেলে একটা ফোন করে জানিও ট্যাংরা, ভেটকি কোনটা পাওয়া যাচ্ছে। মৌরলা পেলেও নিয়ে নিও, তাহলে ঢেঁড়সের বদলে মৌরলা ভাজা। বারো জন খাচ্ছি আমরা, সেই বুঝে মাছ নেবে। পাবে তো?”
গোলকিপার (পর্ব ২২)

এতক্ষণ মুখ খোলেননি সুমিত্রা। এবার ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “যে মেয়েটা তোর ভালোর কথা ভেবেই এত কিছু করছে, আমি তো দেখছি সেই একেবারে প্রথম দিন থেকে, তার সঙ্গে কোনও কথা না বলে তাকে এক কথায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না ছোটু। সে যদি তার বাড়িতেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে থাকে…” মা’কে কথা শেষ করতেও দিল না অরিত্র, ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে উঠল, “তুমি কিছু জানো না মা। কুর্চি আমার বন্ধু বলে এই লোকটা, কুর্চির বাবা, আমাকে শেষ করে দিতে চায়। দেবুদাই দুদিন আগে বলছিল, ভাড়াটে খুনি লাগাবে আমার পেছনে। এখন ওরই সঙ্গে আমাদের থাকতে হবে? পাগল নাকি!”
গোলকিপার (পর্ব ২১)

কুর্চি একবার ভাবল ফিরেই যাবে কিনা। তারপর নিজেকে বোঝাল, অনেক ভেবেচিন্তেই তো এখানে এসেছে সে। এখন ফিরেই বা যাবে কেন? একতলায় বসার ঘরে ঢুকে দেখল, খালি গলায় গাইছেন মানিনীদি আর বাবার সঙ্গে বসে একমনে গান শুনছেন নন্দিতাদিদা, সুচিরাপিসি আর সুশোভনজেঠু। কুর্চি যেদিক দিয়ে ঢুকল, তার উল্টো দিকে তাকিয়ে আছেন তাঁরা, মানিনীদির দিকে মুখ করে। চোখ বন্ধ করে গাইছিলেন মানিনী, গান শেষ হতে তিনিই প্রথম দেখতে পেলেন কুর্চিকে। বললেন, “ওই তো কুর্চি এসে গেছে।” সুজাত তাঁর সোফায় পাশের জায়গাটা দেখিয়ে বললেন, “আয়, বোস।”