মহামারী ও দোষারোপ

মহামারীর সময়ে সদ্ভাব সম্প্রীতি বিরল কেন? আসলে মহামারীর প্রকোপের সামনে মানুষ বড় অসহায়। অন্তত যতক্ষণ না বিজ্ঞান তার মোকাবিলা করতে পারছে। তাই বোধহয় ভয়, রাগ, চিন্তা সেইসময় মানুষকে –বা বলা ভালো অনেক মানুষকে – গ্রাস করে। সে একদিকে যেমন আশ্রয় খোঁজে ঈশ্বর ও অলৌকিক নানা শক্তির কাছে, অন্যদিকে শত্রু খোঁজে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার জন্য।
উত্তুরে: গন্ডারের মড়ক কি বিপদসংকেত?

গন্ডার তো আর ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে না! বা কাছে গেলেই বাধ্য ছেলের মতো ভ্যাকসিন নেওয়ার বান্দা গন্ডার কেন, কোনও বন্যপ্রাণিই নয়। অতএব জঙ্গল ঢু্ঁড়ে খুঁজে বের করতে হয় ওদের। হয়তো কোথাও ঘাসের আড়ালে লুকিয়ে আছে কিংবা কাদাজলে শরীর ডুবিয়ে বসে আছে। সেখানে ভ্যাকসিন দিতে গেলে ওদের বিরক্তি তো হবেই। সেজন্য কুনকির পাল, একদল বনকর্মী, ঘুমপাড়ানি গুলি, বন্দুক ইত্যাদি নিয়ে বিশাল আয়োজন। এ দিকে আবার, অচেতন করে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেই সরে যাওয়া যায় না।
অপ্রতিরোধ্য বসন্তদিন

কে রুখবে অপ্রতিরোধ্য বসন্তের হাওয়া? চারিদিকের এই মহেঞ্জোদাড়োর শূন্যতার মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দুরন্ত ম্যাগনোলিয়া। দু’মিটারের দূরত্ব বজায় রেখে সন্তর্পণে পাড়ায় হাঁটছি আলেকজান্দ্রা প্যালেসের দিকে। মার্চের প্রথম বাসন্তী রোদ গায়ে মেখে। মনে পড়ে যাচ্ছে বোকাচ্চিওর দশ বন্ধুর কথকতা। মহামারী প্রবল অন্ধকারের বুক থেকে ড্যাফোডিল আলো ছিনিয়ে এনে হালকা হাসিতে তারা ছড়িয়ে দিয়েছে বিংশ শতাব্দির করোনার কলোনিতে। এ সময় ভয়ের। এ সময় নির্ভীকতার। এ সময় সামাজিক দূরত্বে দাঁড়াবার। এ সময় ভীতিপ্রদ রক্তচক্ষুর দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকবার।
খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে…

ব্যাপারটা কী রকম বলুন তো? ধরুন, আপনার মাথায় উকুন আছে। তারা খায় দায় বাঁশি বাজায়। মাঝে মাঝে অল্পস্বল্প উপদ্রব করে। আপনি মাথা চুলকোন, শ্যাম্পু দেন, দু’পাশে দাঁড়াওলা চিরুনি চালিয়ে দু’চারটে বের করে টিপে মারেন। ওরা মরে, কিন্তু বিশেষ চৈতন্য হয় না। এবার বংশবৃদ্ধি করতে করতে এদের উপদ্রব এমন জায়গায় গেল, যে আপনি বিরক্ত হয়ে একদিন পাড়ার নাপিতকে বললেন মাথাটা কামিয়ে জঞ্জাল সাফাই করে দিতে। ফলে উকুনেরা সমূলে উৎখাত হল। মাসখানেক বাদে আপনি যখন ফের টেরি বাগাবেন, উকুনেরা তদ্দিনে ইতিহাস।
অসামাজিকতাই একমাত্র রক্ষাকবচ

আপনি বাঁচলে বাপের নাম— এখন আর নয়। এখন সবাই বাঁচলে নিজের বাঁচার একটা সম্ভবনা আছে। সুতরাং বাধ্য হয়ে সবার কথা ভাবতে হবে। কেবল নিজের হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা পাকা করলেই হবে না। অন্যের জন্য হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এক ডজন স্যানিটাইজ়ার কিনে ঘরে মজুত রাখলে বাঁচা যাবে না। অন্যের জন্য দোকানে স্যানিটাইজার ছাড়তে হবে। আবেগে ভেসে গিয়ে থালা বাজিয়ে মিছিল করলে হবে না। মনে রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জানলায় বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থালা বাজাতে। যে ভাবে অন্যান্য দেশ নিজের মতো করে স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছে। রাস্তায় বেরিয়ে নয়। ঘরে থেকে।
করোনা: হারানো প্রাপ্তি সংবাদ

করোনাভাইরাসের দৌলতে এই শব্দটা দিব্যি শিখে গিয়েছি আমরা। ডব্লুএফএইচ। মানে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। কথা শোনও, হাত ধোও, অফিসেতে যেও না। করোনায় প্রথম করণীয় কী, আঁচ করতে পেরেই একের পর পর এক অফিসে দিন পনেরোর ছুটি হয়ে গিয়েছে দেশের বেশ কয়েকটা শহরে। নামী কোম্পানির দামি সিইও বড় মুখ করে মিডিয়ায় বলছেন, প্রেস নোট দিচ্ছেন, ‘আমরা আমাদের কর্মীদের উপরে পূর্ণ ভরসা রাখি। আমরা জানি, অফিসে বসে তাঁরা দিন রাত এক করে যে কাজ করেন, একই উদ্যমে তাঁরা কাজ করে যাবেন বাড়িতে বসেও।’