বেদেডাঙ্গার চরের খাঁড়িটায় আড়ালে ভিড়িয়ে রাখা চারখানা ছিপ নৌকো। প্রথম নৌকোটার গলুইয়ের সামনে ওঁৎপাতা শিকারি বেড়ালের মত গুঁড়ি মেরে বসে রয়েছে বোদে। দুপাশে দুই বিশ্বস্ত অনুচর। শম্ভু আর কাশেম। ঘন মেঘ আর স্যাঁতস্যাঁতে জোলো হাওয়া গায়ে মেখে সন্ধে নামছে চারপাশে। কিছুক্ষণ আগে জোর একপশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। শনশন বাতাসে তীরবেগে গঙ্গার দিকে ছুটে যাচ্ছে খড়ে চূর্ণীর স্রোত। ক্রোশখানেক দুরেই গঙ্গা। তাই স্রোতের টানটাও মারাত্মক এখানে। অপেক্ষা করতে করতে ক্রমশ ধৈর্য হারাচ্ছিল বোদে।

“কিরে খবর পাকা তো?” ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্ন করল গলুইয়ের গায়ে শরীরটাকে মিশিয়ে শুয়ে থাকা কাশেমকে।

“একদম পাকা খবর সর্দার। দেবীপুর মেয়েটার বাপের বাড়ি। ওই গাঁয়েরই পালান নমো, খবরটা দিয়েছে আমাকে। পালান অনেকদিন ধরে আমাদের দলের আড়কাঠি। এমনকি নৌকোর ধরনটাও বুঝিয়ে দিয়েছে ভালো করে।

তিন দাঁড়ের পাটা নৌকো। দশহাত পাল। বড় ছই। লাল শালু ঢাকা। তিনটে বাউরি মাল্লা আর বাপের আমলের একটা হাটকালা বুড়ি ঝি ছাড়া আর কেউ নেই মেয়েটার সঙ্গে। আজ সকালেই রওনা দিয়েছে ওরা। “ঠিক আছে” বলে চুপ করে গেল বোদে। পাশে উপুড় হয়ে শোয়া শম্ভু। উশখুশ করছিল অনেকক্ষণ ধরে।

“একটা কথা বলব সর্দার?”

“কী?” ঈষৎ বিরক্তিমাখা গলায় ঘাড় না ঘুরিয়েই বলল বোদে।

“শুনেছি মাগীটার গতরখানাও সরেস। মালপত্তরের সঙ্গে ওটাকেও তুলে নিয়ে গেলে কেমন হয়? গিয়ে তো লাগবে সেই শতখানেক বে করা বাপের বয়েসি বুড়ো কুলীন বামুনটার ভোগে। আমাদের সঙ্গে গেলে বরং কদিন বেশ ফুত্তিমোচ্ছব হবে। তারপর না হয় বেচে দেয়া যাবে শান্তিপুর, ডোমকল বাঁ রামবাগানের রাঁঢ়পাড়ায়…।” সাপের মত চকচক করছিল শম্ভুর চোখজোড়া।

“আঃ এখন চুপ মার তো।” প্রশ্রয় মাখানো একটা মৃদু ধমক দিল বোদে।

“শালা গাছে উঠতে না উঠতেই এক কাঁদি। আগে কাজটা ঠিকঠাক উতরোক। তারপর ওসব নিয়ে…।”

কথা শেষ হবার আগেই কাঁধে হাতের চাপ। ডানপাশে কাশেম। আঙুল তুলে দেখাচ্ছে সামনে। দূরে নদীর বুকে একটা টিমটিমে আলো ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে।

গলুইয়ের ভেতর টিমটিমে আলোয় বসে রয়েছে বিজয়াবালা। গলায় ফিনফিনে একটা মটরমালা। কানে দুল আর দুগাছি চুড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই অঙ্গে। মাথার ঘোমটা ঈষৎ সরে গিয়ে গলুইয়ের আলো এসে পড়ছে ফরসা অপরূপ সুন্দর মুখখানায়। গভীর আয়ত একজোড়া চোখ। এই মুহূর্তে অজানা এক দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগের ছাপ সেই চোখে। এ যেন এক নিরুদ্দেশের উদ্দেশে যাত্রা। কোথায় কোন ঘাটে তরী ভিড়বে জানা নেই। সেই কোন বছর সাতেক বয়সে বিয়ে হয়েছিল মথুরাপুরের কুলীন বিনোদ মুখুজ্জের সঙ্গে। মুখুজ্জে মশাই তখনই দুকুড়ি পেরিয়ে গেছেন। ঘরে দু দুটি পরিবার। এছাড়াও কমপক্ষে পঁচিশ তিরিশটি কুলীন কন্যার পিতাকে কন্যাদায় থেকে উদ্ধার করেছেন। বিজয়ার পিতৃদেব শ্রী রাখহরি গাঙ্গুলি ছিলেন সম্পন্ন গৃহস্থ। খাস-দেবোত্তর মিলিয়ে বিঘে পঞ্চাশ জমি ছিল। এছাড়াও ফলের বাগান, গোয়ালে বেশ কয়েকটি হৃষ্টপুষ্ট গাভি…সব মিলিয়ে অভাব ছিলনা কোনওকিছুরই। কিন্তু বিধিবাম। একদিন দুপুরবেলা ক্ষেতখামারির তদারকি সেরে বাড়ি ফিরে সবে দাওয়ায় বসেছেন, হঠাৎই তীব্র যন্ত্রণা বুকে। বাঁ হাতে বুক চেপে ধরে দাওয়াতেই হেলে পড়ে গিয়েছিলেন রাখহরি। দৌড়ে গিয়ে কোবরেজ মশাইকে ডেকে এনেছিল আধিয়াররাকোবরেজ মশাই এসে নাড়ি টিপেই হতাশ গলায় নিদান দিয়েছিলেন – সন্ন্যাস রোগ। সব শেষ। বিজয়া তখন সবে পাঁচ।

“একটা কথা বলব সর্দার?” “কী?” ঈষৎ বিরক্তিমাখা গলায় ঘাড় না ঘুরিয়েই বলল বোদে। “শুনেছি মাগীটার গতরখানাও সরেস। মালপত্তরের সঙ্গে ওটাকেও তুলে নিয়ে গেলে কেমন হয়? গিয়ে তো লাগবে সেই শতখানেক বে করা বাপের বয়েসি বুড়ো কুলীন বামুনটার ভোগে। আমাদের সঙ্গে গেলে বরং কদিন বেশ ফুত্তিমোচ্ছব হবে।

স্বামীর মৃত্যুতে শোক পেলেও হতাশায় ভেঙ্গে পড়েননি বিজয়ার মা সরোজনলিনী দেবী। স্বামীর মৃত্যুশোক ভুলে সংসারের হাল ধরেছিলেন শক্ত হাতে। জমিজমা তদারকির কাজ সামলানো ছাড়াও গোয়ালাদের সঙ্গে চুক্তিতে দুধের কারবারও শুরু করেছিলেন। তাই অর্থকড়ির চিন্তা সেভাবে না থাকলেও অন্য একটা ভাবনা রয়েই গিয়েছিল মনে। সেটা ওই বিজয়াবাপ মরা একমাত্র মেয়ে। ফুলের মত ফুটফুটে। বেঁচে থাকতে থাকতে ওর একটা গতি করে দিয়ে যেতেই হবে। চারদিকে ঘটক লাগিয়েছিলেন সরোজনলিনী। খাসা সম্বন্ধও এসেছিল একটা। বর্ধমান কালনার বিপিন চাটুজ্জের ছেলে অভয়পদ।

বয়স মাত্র কুড়ি। টোল আর বৃত্তি দুটোই পাশ দিয়ে কোম্পানি সেরেস্তার কর্মচারী। সংস্কৃত ছাড়াও ফারশিটা বলতে কইতে জানে বেশ ভালোরকম। পণপাওনা, গয়নাগাঁটি মিলিয়ে নেবেখুবে বেশ ভালোরকমই। সেসব নিয়ে বেশি ভাবেননি সরোজনলিনী। একটাই তো মাত্র মেয়ে। তাছাড়া এরকম পাত্র লাখে একটা মেলে। শুভ দিনক্ষণ দেখে পাকা কথাও হয়ে গেছিল। কালনা থেকে ছেলের বাড়ির লোকজন এসে দেখে গেছিল বিজয়াকে। কিন্তু ওই যে বলে, নিয়তি। সেই নিয়তি বোধহয় আরও একবার বিশ্বাসঘাতকতা করল মা মেয়ের সঙ্গে। আশীর্বাদের যখন আর মাত্র হপ্তাখানেক বাকি, সেরেস্তা যাবার পথে কালনার ঘাট পেরনোর সময় নৌকাডুবিতে মৃত্যু হল অভয়পদর। স্বামীর মৃত্যুশোক সামলেছিলেন বুকে পাথর রেখে। শুধুমাত্র মেয়ের মুখ চেয়ে। কিন্তু এই খবরে পায়ের নীচে মাটি টলে গেল সরোজনলিনীর।

গাঁয়ের মাতব্বর আর পাড়াপড়শিরা বলতে লাগল – “বাগদত্তা মেয়ে। বিয়ের আগে এই ঘোর অমঙ্গল! নিদেন কাটান দিয়ে এখনই ফের বিয়ের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি। নইলে আজীবন লগ্নভ্রষ্টা হয়ে যাবে।” ব্রাহ্মণ পণ্ডিত আর পাঁচ গাঁয়ের মোড়লরা এলেন। নিদান দিলেন- “মূল্য ধরে দিলে সবকিছুর নিদেন কাটান আছে শাস্তরে।” ফের একদফা ছোটাছুটি তত্ত্বতালাশ। পাত্র পাওয়া গেল বিনোদবিহারীকে। নিবাস মথুরাপুর। যদিও বয়স অনেকটাই বেশিকিন্তু এই সংকটকালে আর উপায় কি। পাত্র নিজেই জানালেন যে ইতিমধ্যেই যদিও দু-গণ্ডারও বেশি দার পরিগ্রহ করেছেন তিনি তবুও কুলীন কন্যার এই দুর্দশা দেখে চুপ করে থাকাটাও মহাপাপ হবে। অগত্যা আরও একবার বিবাহে তিনি রাজি। কিন্তু এর জন্যও যথোপযুক্ত পণমূল্য ধরে দিতে হবে। তবে শর্ত একটাই – বিবাহের পরে কন্যাকে বাপের বাড়িতেই থাকতে হবে। এর মাত্র মাসখাকের মধ্যে বিনোদবিহারীর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা পড়ে বিজয়ার। বিয়ের পর আর একটি দিনের জন্যও শ্বশুরবাড়িমুখো হননি বিনোদবিহারী। এর মধ্যে কত জলই না বয়ে গেল খড়ে চূর্ণী দিয়ে।

সেদিনের সেই সাত বছরের বালিকা বিজয়া, দেখতে দেখতে আজ উনিশ বছরের যুবতি। বছরখানেক আগে মারা গেলেন সরোজনলিনী। মা মারা যাওয়ার পর হঠাৎই দুনিয়াটা বিলকুল ফাঁকা হয়ে গেল বিজয়ার সামনে। নির্জন খালি বাড়িটা যেন গিলে খেতে চাইছিল ওকে। অভিভাবকহীন খালি বাড়িতে একা সোমত্ত যুবতি মেয়ে। গাঁয়ের শেয়াল শকুনরা সজাগ হল আশেপাশে। রাতবিরেতে বাড়ির চালে ঢেলা পড়তে আরম্ভ করল। পথে বেরোলে ঘাটের ধারে আর বাঁশবনের আড়াল থেকে ভেসে আসা শিস…এখানেই থেমে থাকল না ব্যাপারটা। রাত বাড়লেই দরজায় কড়া খটখটানির আওয়াজ…প্রমাদ গুনল বিজয়াজেদ চেপে গেল মাথায়। শুধু পৈতৃক ভিটেটুকু রেখে জমাজমি, গরু সবকিছু বেচে দিল জলের দামে। মায়ের জমানো অর্থ, নিজের গয়নাগাঁটি, জমি, সম্পত্তি, আসবাবপত্র…সব বিক্রি করে যা পাওয়া গেছে তা নেহাৎ কম নয়। এইসব নিয়ে একটু ঠাঁই হবে না মাথা গোঁজার?

গলুইয়ের ভেতর টিমটিমে আলোয় বসে রয়েছে বিজয়াবালা। গলায় ফিনফিনে একটা মটরমালা। কানে দুল আর দুগাছি চুড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই অঙ্গে। মাথার ঘোমটা ঈষৎ সরে গিয়ে গলুইয়ের আলো এসে পড়ছে ফরসা অপরূপ সুন্দর মুখখানায়। গভীর আয়ত একজোড়া চোখ। এই মুহূর্তে অজানা এক দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগের ছাপ সেই চোখে।

নৌকোর ছইয়ের মধ্যে এইসব উথালপাথাল ভাবনাই ভেবে চলেছে বিজয়াপাশে শোয়া ভোগলের মা। আশি পেরনো খুনখুনে বুড়ি। বদ্ধ কালা। সাতকুলে কেউ নেই। মা যখন বিয়ে হয়ে দেবীপুরে আসে তখন মায়ের সঙ্গে এসেছিল। ছোটবেলা থেকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে বিজয়াকে। বিজয়া শ্বশুরবাড়ি যেতে চায় শুনে মানা করেছিল অনেককিন্তু বিজয়ার জেদ দেখে রাজি হয়েছে। তবে একটি শর্তে। সেও সঙ্গে যাবে। মেয়ের যদি দুটো খুদকুঁড়ো জোটে তাহলে ওরও জুটে যাবে। বাধ্য হয়েই ভোগলের মাকে সঙ্গে নিতে হয়েছে বিজয়ার। “মাঠান”, ছইয়ের পরদা সরিয়ে উঁকি দিলো বদন মাঝি। “পরিহারের ঘাট এইসে গেল পেরায়। সেখেন থেকে মথুরাপুর ক্রোশটাক পথ। ওটুকু পথ পায়ে হেঁটেই যেতে হবে। এবার আপনি একটু গোছায়ে গাছায়ে তোয়ের হন।” “ঠিক আছে।” ঘোমটার আড়ালে মাথা নাড়ল বিজয়াপরদা নামিয়ে বাকি দুই নাইয়ার উদ্দেশ্যে হাঁক পাড়ল বদন-“পরিহার ঘাট আর বেশি দূর নয়। একটু পাড় ঘেঁষে ঘেঁষে চল।”

ছিপের গলুইয়ে শরীরটাকে মিশিয়ে পড়ে থাকা বোদে, চোখের সামনে দিয়ে চলে যেতে দেখল তিন দাঁড়ের নৌকোটাকে। পাশে একইভাবে পড়ে থাকা কাশেম প্রশ্ন করল ফিসফিসে গলায়, “সর্দার নাও বাড়াতে বলি সব্বাইকে?” “না!” কাশেমের কাঁধটা খামচে ধরল বোদে। “ভরা নদীতে মাল্লারা ভয় পেয়ে হুড়োপাড়ি জুড়ে দিলে নৌকো উল্টে যেতে পারে। তাহলেই সব্বোনাশ। আমও গেলো ছালাও গেল। তার চেয়ে পরিহারের ঘাটে নৌকো ভিড়ুক। তিনটে তো মোটে মাল্লা। আমাদের দেখলেই কাপড়েচোপড়ে হয়ে যাবে। লাঠি তোলার দরকারই পড়বে না।” “ঠিক আছে” বলে চুপ করে গেল কাশেম।

আগের পর্ব – শোণিতমন্ত্র (পর্ব ১১)

জন্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তর কলকাতার পুরোনো পাড়ায়। বহু অকাজের কাজী কিন্তু কলম ধরতে পারেন এটা নিজেরই জানা ছিল না বহুদিন। ফলে লেখালেখি শুরু করার আগেই ছাপ্পান্নটি বসন্ত পেরিয়ে গেছে। ১৪২১ সালে জীবনে প্রথম লেখা উপন্যাস 'দ্রোহজ' প্রকাশিত হয় শারদীয় 'দেশ' পত্রিকায় এবং পাঠকমহলে বিপুল সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে আরও দুটি উপন্যাস 'জলভৈরব' (১৪২২) এবং 'বৃশ্চিককাল' (১৪২৩) প্রকাশিত হয়েছে যথাক্রমে পুজোসংখ্যা আনন্দবাজার এবং পত্রিকায়। এছাড়া বেশ কিছু প্রবন্ধ এবং দু চারটি ছোটগল্প লিখেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকা আর লিটিল ম্যাগাজিনে। তার আংশিক একটি সংকলন বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে 'ব্যবসা যখন নারীপাচার' শিরোনামে। ২০১৭ সালে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার।

One Response

  1. ১৮ ও ১৯ শতাব্দী তে বাংলার সমাজ জীবনের পরিস্থিতি যে কি ভয়ঙ্কর ছিল তার এক অনুপুঙ্খ বিবরণ প্রকাশিত হলো , তার সঙ্গে প্রকাশিত হলো সেই অসাধারণ ইঙ্গিত , ব্রাহ্মণ্যবাদের নারী নিপীড়ন সমাজ আর শাস্ত্রের নামে , কন্যারা যেখানে দায় , পিতার দায় , তাকে তাড়াতে পারলে বা বহুবল্লভের পাত্রস্থ করতে পারলেই নাকি সমাজ বাঁচে, সমাজ যে বাঁচলো না তা ক্রমশ ফুটে উঠছে সুপ্রিয় লেখকের কলমে। নারী সেখানে ব্রাহ্মণেরও ভোগ্য আবার তস্কর দেরও , কারণ সমাজ তখন ‘রক্ষা ‘ করতো ব্রাহ্মণ পুরুষ তস্কর রা , তাদের স্খলিত শিশ্নের অকর্মণ্যতার ‘তাকতে’ , তাই কাশেম আর ব্রাহ্মণ মৃতপ্রায় বহুবল্লভ একই তস্কর প্রজাতির। চলুক এই ধারা , কুর্নিশ সুপ্রিয় লেখক কে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *