আগের পর্ব [১] [২] [৩] [৪] [৫] [৬] [৭] [৮]
তিনমাথার মোড় থেকে ডানদিকে রাস্তা গেছে ট্রিঙ্কোমালি, বাঁদিকের ক্যান্ডি রোড ধরে এগিয়ে চললাম। ভরদুপুর, ক্লান্তশরীরে আলসেমি। পথ অবশ্য বেশি নয়, মাত্র ১৮ কিলোমিটার। ডাম্বুল্লা, সেন্ট্রাল প্রভিন্সের নামজাদা শহর। এ শহরকে গর্বিত করেছে ‘রানগিরি ডাম্বুল্লা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম’। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সাহান বলল, “মাত্র ১৬৭ দিনে এই স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছিল”। এ শহর বিখ্যাত হওয়ার আর একটা কারণ ‘গোল্ডেন রক টেম্পল’। তাকে পাশ কাটিয়ে আরও এক কিলোমিটার, একেবারে গুহামন্দিরের টিকিট কাউন্টারের সামনে এসে থামলাম।
পাশ দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে টিলার মাথায়। সকালে বারোশো সিঁড়ি ভেঙে ওঠা-নামার পর এনার্জি লেভেল তলানিতে এসে ঠেকেছে।এক মন বলছে, “আর তো পারি না”। দ্বিতীয় মন বলছে, “এখানে সিঁড়ির সংখ্যা ৩৭৮, কষ্টেসৃষ্টে উঠে যাব”। দ্বিতীয় মনকে প্রাধান্য দিয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। উপত্যকার দৃষ্টিনন্দন শোভা মনকে আরাম দিচ্ছে। অনেক দূরে সিগিরিয়ার ‘লায়ন রক’ মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
হ্যাঁচরপ্যাঁচর করে কোনওমতে পাহাড়ের উপরে উঠে এলাম। মাঝদুপুরে সূর্যের অগ্নিবাণ। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত ব্যাপার হল, গরমে তেতে থাকা গোটা পাথুরে চত্বর খালি পায়ে পরিদর্শন। পায়ের পাতায় ভর করে, গোড়ালি উঁচু করে ছুটে ছুটে চলে এলাম মন্দির অলিন্দে।

গুহামন্দির চত্বরটিই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। শ্রীলংকার সর্ববৃহৎ সংরক্ষিত গুহামন্দির এলাকা। এ চত্বরে প্রায় আশিটিরও বেশি চিত্রিত গুহা আছে, যার মধ্যে পাঁচটি প্রধান। গুহামন্দিরগুলি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের। কথিত আছে, রাজা ভালাগাম্বা এই প্রাচীন গুহাগুলিকে মন্দিরে রূপান্তরিত করেন। অনুরাধাপুরা থেকে নির্বাসিত হয়ে রাজা ১৪ বছর কাটিয়েছিলেন এই গুহাগুলিতে। পরবর্তীকালে রাজত্ব ফিরে পেয়ে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই গুহামন্দির নির্মাণ করান। বর্তমানে এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। গুহা মন্দিরের মুখ্য আকর্ষণ ২১০০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে গুহাচিত্র ও ১৫৩টি বুদ্ধমূর্তি।
পাঁচটি গুহাই পাশাপাশি। সামনে টানা বারান্দা। কারুকার্যমণ্ডিত দরজা। প্রথম গুহাটির নাম ‘দেবরাজ বিহার’। গুহার সবটা জুড়েই বুদ্ধের লম্বা একটি শায়িত মূর্তি। সঙ্গে আরও কিছু বৌদ্ধভিক্ষুর মূর্তি। পাশাপাশি, গুহার মধ্যে একটা ছোট মন্দিরে বিষ্ণু ও গণেশ মূর্তি আছে। প্রথম গুহা থেকে বেরিয়ে এবার দ্বিতীয় গুহা। ‘মহারাজ বিহার’। পাঁচটির মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। বুদ্ধমূর্তি ছাড়াও এই গুহার সিলিং-এর নজরকারা কারুকাজ দেখে থ বনে গেলাম। অসাধারণ কিছু ম্যুরাল চিত্র যেখানে গৌতম বুদ্ধের জীবনকথা অঙ্কিত হয়েছে।
বাকি তিনটি গুহা যথাক্রমে ‘আলুত বিহার’, ‘পচ্ছিমা বিহার’ আর ‘দেবানা আলুত বিহার’। সেখানেও বিভিন্ন ভঙ্গিমায় বুদ্ধমূর্তি আর অসাধারণ সব ম্যুরাল চিত্র। শেষ গুহাটিতে বুদ্ধমূর্তির সঙ্গে বিষ্ণু ও মুরুগানের (কার্তিক) মূর্তিও আছে। গুহাগুলির অন্দরের আলো-আঁধারি পরিবেশ রহস্যময়তায় ঘিরে আছে। একটি স্কটিশ পর্যটকদল আশেপাশেই ছিল। তাদের গাইড শায়িত মূর্তির ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন… “বুদ্ধের ঘুমন্ত মূর্তি আর অনন্তশয্যার মধ্যে মূল তফাৎটা কী! বুদ্ধমূর্তির পায়ের পাতার দশ আঙুল যদি একসঙ্গে মিলে থাকে, তবে বুঝতে হবে তিনি নিদ্রামগ্ন। অনন্তশয্যার মূর্তিগুলোর ক্ষেত্রে দুপায়ের আঙুলগুলি একসঙ্গে মিশে থাকবে না, উপরে বাঁ পায়ের পাতার আঙুলগুলো সামান্য পিছিয়ে থাকবে। আর পেটের কাছটা একটু ভিতর দিকে ঢুকে থাকবে”।

কেভ টেম্পল থেকে বেরিয়ে এলাম। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। অন্যদিক দিয়ে সিঁড়িপথ ধরে নেমে এলাম গোল্ডেন টেম্পল এর কাছে। প্রবেশদ্বারের মাথায় সোনার পাতে মোড়া গৌতম বুদ্ধের বিরাট মূর্তি। ধর্মচক্র মুদ্রায় বসা বুদ্ধের এই মূর্তিটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তিগুলির মধ্যে অন্যতম। লাগোয়া একটি বৌদ্ধ মিউজিয়াম আছে। সেদিকে আর এগোলাম না। এখন অনেকদূর যেতে হবে। দিনের আলো ম্লান হয়ে এসেছে। মন্দিরের সামনের লনটায় বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দ সাদা পোশাকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছে। চেহারায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ছাপ। সমবেত মন্ত্রচ্চারণ ভেসে আসছে-‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি’।
ক্যান্ডি রোড ধরে এবার চলেছি ক্যান্ডি শহরের উদ্দেশে। সবুজে ছাওয়া পথ। ডানদিকে অনুচ্চ পাহাড়ের শোভা। মনটা অশান্ত হয়ে আছে। পরিকল্পনামাফিক ক্যান্ডিতে দুরাত্রি থাকার কথা। তিনদিন আগে অনুরাধাপুরায় বিক্রম সিংঘের হোম-স্টেতে ছিলাম। কথায় কথায়, ক্যান্ডিতে থাকার কোনও ব্যবস্থা হয়নি জেনে তাঁর ভাইঝিকে ফোন করে আমাদের রাত্রিবাসের বন্দোবস্ত পাকা করে দিয়েছিলেন। শুধুমাত্র ঠিকানা আর ফোন নম্বর সম্বল করেই ক্যান্ডি চলেছি। কিন্তু, সমস্যাটা অন্য জায়গায়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সিঁড়ি ভাঙাভাঙির ব্যস্ততায় ক্যান্ডিতে ফোন করে যোগাযোগ করার কথা কারোর মনে ছিলো না। এখন দিনের শেষে ‘ভাইঝি’কে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে চালক সাহান ঠিকানাটা বুঝতে পারছে না, ক্যান্ডিতে লেওয়েল্লা রোড সে চেনে না। সন্ধ্যা নেমেছে। অগত্যা যোগাযোগ করা না গেলে, মাথা গোঁজার অন্য ব্যবস্থা খুঁজতে হবে।

পথের দুধারে বেশ কিছু স্পাইস ভিলেজ পেরিয়ে মাতালে পৌঁছলাম সাড়ে ছটা নাগাদ। সমুদ্র সমতল থেকে বেশ কিছুটা ওপরে উঠেছি। বলা যেতে পারে, এখান থেকেই শ্রীলঙ্কার পাহাড়ি পথে দিনকয়েকের সফর শুরু হল। মধ্যপ্রদেশের জেলাসদর শহর মাতালে বেশ বড় জায়গা। ঘন বসতি, দোকান-বাজার নিয়ে জমজমাট। উঁচু টিলার অনেকটা ওপরে বুদ্ধমূর্তি। এরমধ্যেই স্বস্তির বার্তা নিয়ে সাহানের ফোনে মিস্টার বিক্রমের ভাইঝির কণ্ঠস্বর…“ক্যান্ডি থেকে বলছি, ঘর রেডি আছে”।
এখন আর রাত বাড়লেও চিন্তা নেই। বাজার এলাকায় কিছু বাটিকের শো-রুম আছে। বাটিকের সঙ্গে বাঙালি মনের যোগ সর্বকালীন, তা সে শান্তিনিকেতনেই হোক বা শ্রীলঙ্কায়। নিশ্চিন্ত মনে চা আর ফিসরোল দিয়ে নাস্তা সেরে, ঘুরে-ফিরে শ্রীলঙ্কার বাটিক শিল্পের কিছু নমুনা দেখা হল। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কিছু শুকনো খাবার, ম্যাগির প্যাকেট আর জলের বোতল কিনে এগিয়ে চললাম ক্যান্ডির পথে।
রাস্তায় লোক চলাচল কমে গেছে, এক এক করে দোকানপাটের ঝাঁপও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাত আটটা বেজে গেছে যে! ডাম্বুল্লা থেকে ক্যান্ডির দূরত্ব খুব বেশি নয়, মাত্র ৭১ কিলোমিটার। শহরে ঢোকার মুখে যানজট কাটিয়ে রাত সাড়ে আটটা পার করে ক্যান্ডি পৌঁছলাম।

হোম-স্টের মালকিন বিক্রম সিংঘের ভাইঝি কেশিনী সাদর অভ্যর্থনা জানাল। প্রথমেই তার বিনীত দুঃখপ্রকাশ, সারাদিন এক অসুস্থ আত্মীয়কে নিয়ে হসপিটালে ব্যস্ততার কারণে সে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি। তারপরই আমাদের কী লাগবে, না লাগবে… সেইসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। স্মার্ট, ঝকঝকে একরত্তি মেয়েটা দশাননের দেশে দশভুজা। একা হাতে সবদিক সামলাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম, “সিংহলা ভাষায় ‘কেশিনী’ শব্দের অর্থ কী?” মুচকি হেসে বলল, “সিংহী”। নামে সিংহী হলেও, স্বভাবে সে খুবই মিষ্টভাষী।
অনুচ্চ পাহাড়ের ঢালে কেতাদুরস্ত বাড়িঘর। তবে এই এলাকাটা তেমন ঘিঞ্জি নয়। বেশ শান্ত। রাস্তার গা ঘেঁষে দোতলা অতিথিশালা। পিছনে এক চিলতে উঠোন আর তার পরেই গৃহকর্ত্রীর বাসভবন। আমাদের জায়গা হয়েছে অতিথিশালার দোতলায়। নজরকাড়া ট্র্যাডিশনাল আসবাবে সজ্জিত ছিমছাম, ঝাঁ চকচকে অ্যাপার্টমেন্ট। ড্রয়িংরুম-কাম-ডাইনিং, আধুনিক রান্নাঘর…ব্যবস্থাপনা এককথায় অতুলনীয়। চায়ের ছাঁকনির মতো ঝুলে থাকা বারান্দাটায় দাঁড়ালে শহরের আলো ঝলমলে চেহারাটা চোখে পড়ে।
ঘরদোর, মূল দরজার চাবি, ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড ইত্যাদি সব কিছু বুঝে নিয়ে একটু থিতু হতেই প্রায় সাড়ে নটা বেজে গেল। এত রাতে কেশিনীকে খাবার বানাতে বলতে ইচ্ছে করল না। সে বেচারি সারাদিন হাসপাতালে ছোটাছুটিতে বিধ্বস্ত। সঙ্গে ম্যাগি আছে আর কেশিনীর কাছ থেকে কয়েকটা কাঁচা ডিম চেয়ে নিলাম। সে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে, সিঁড়ির আলো নিবিয়ে, ‘গুড নাইট’ জানিয়ে চলে গেল।
স্মার্ট, ঝকঝকে একরত্তি মেয়েটা দশাননের দেশে দশভুজা। একা হাতে সবদিক সামলাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম, “সিংহলা ভাষায় ‘কেশিনী’ শব্দের অর্থ কী?” মুচকি হেসে বলল, “সিংহী”।
দিনের শেষে ক্লান্ত পা এখন রীতিমত বিদ্রোহ ঘোষণা করছে। তার ওপর সারাদিন চড়া রোদ আর অসহ্য গরম। ধকলটা নেহাত কম নয়। শরীর শুধু খাবার আর বিশ্রাম চাইছে। স্নানটান সেড়ে দশটা নাগাদ রান্নাঘরে ওভেন জ্বালতে গিয়ে দেখি গ্যাস-সিলিন্ডার ফাঁকা। কেশিনীকে হোয়াটস্অ্যাপে কল করতেই, সে এসে হাজির। আবার দুঃখপ্রকাশ, “সকালে চেক আউট করার সময় ট্যুরিস্টরা জানিয়েছিলেন, কিন্তু সারাদিনের চাপে একদম ভুলে গেছি। কাল সকালেই নতুন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
তাহলে এখন উপায়? কেশিনীর সঙ্গে একতলায় এলাম। এখানেও ওপরতলার মতো একইরকম ব্যবস্থাপনা। কোলাপ্সিবল্ গেটে তালা পড়ে গেছে। একতলার ঘরগুলোতে কেউ আছে কিনা বুঝতে পারলাম না। মশলার কৌটো, আনাজপাতি, কিছু এঁটো বাসনকোসন দেখে মনে হল, এই রান্নাঘরটা রোজ ব্যবহার হয়। চাবির গোছাখানা হাতে গুঁজে দিয়ে কেশিনী শুধু বলল, “হয়ে গেলে, কোলাপ্সিবল্ গেটে তালা দিয়ে দিও আর লাইটগুলো সব নিবিয়ে দিও।” এটুকু বলে সে উঠোন পেরিয়ে নিজের বাড়িতে ঢুকে গেল। আমি অবাক হয়ে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভাবলাম…সত্যি কি একজন মানুষকে এতটা বিশ্বাস করা যায়! ক্ষণিকের আলাপে আমি নিজে কি পারব গোটা গেস্টহাউসের চাবির গোছা এক ভিনদেশির হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে!

রাতের অন্ধকারে সেভাবে বুঝতে পারিনি। দিনের আলোয় বারান্দা থেকেই ক্যান্ডি লেকের কিছুটা অংশ দৃশ্যমান। বেশ কৌলিন্য আছে শহরটার। প্রাচীন নাম ‘মাহানুয়ারা’। শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল প্রভিন্সের মুখ্য শহর। রাজা তৃতীয় বিক্রমবাহু এই শহরটি গড়ে তোলেন। সবুজ পাহাড়ের কোলে সুন্দর এই লেককে কেন্দ্র করে এর অবস্থান। পর্তুগিজ, ডাচ আক্রমণের পর সবশেষে ব্রিটিশের দখলে আসে মাহানুয়ারা। নতুন নামকরণ হয় ক্যান্ডি। ‘কান্দা’ শব্দ থেকে ‘ক্যান্ডি’, যার অর্থ পাহাড়।
ক্যান্ডির মুখ্য আকর্ষণ ‘দ্য টেম্পল অব দ্য স্যাক্রেড টুথ’ বা টুথরেলিক মন্দির। মন্দিরের গর্ভগৃহে রক্ষিত আছে বুদ্ধদেবের একটি দাঁত। “সারাদিনে ছয়বার গর্ভগৃহ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। খুব ভিড় হয়। সাড়ে নটার মধ্যে পৌঁছতে পারলে দর্শন হয়ে যাবে।” ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট সাজাতে সাজাতে তাড়া দিচ্ছিল কেশিনী। সারাদিনের প্ল্যান-প্রোগ্রামটাও গুছিয়ে দিল। এখান থেকে মন্দির খুব বেশি দূরে নয়। বেরিয়ে পড়লাম ক্যান্ডি দর্শনে।

বাঁক পেরোতেই ধরা দিল সবুজে ছাওয়া মনোরম ক্যান্ডি লেক। মিনিট দশেকের ছোট্ট ড্রাইভ, নটার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম টুথরেলিক মন্দিরে। চৌমাথার মোড়ের কাছে এসে জ্যামে আটকালাম। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মিছিল। পুলিশ-প্রশাসন পাইপ দিয়ে জল ছিটিয়ে আগে রাস্তা ভিজিয়ে ঠান্ডা করে দিচ্ছে। তারপর তারা করজোড়ে বড় রাস্তা ধরে খালি পায়ে হাঁটছে। বেশ রাগ হচ্ছিল। সাধারণ মানুষ যখন পা পুড়িয়ে বৌদ্ধস্থানগুলি দর্শন করে, কই! তখন তো কেউ জল দিয়ে পথ ভিজিয়ে দেয় না!
দেশিয় নাম ‘শ্রী দালাদা মালিগাওয়া’। দুর্গের মতো উঁচু প্রাচীর ঘেরা সুবিশাল চত্বরে মন্দির ছাড়াও আছে রাজপ্রাসাদ, মিউজিয়াম। প্রবেশমূল্য বেশ চড়া, ১০০০ এল.কে.আর অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ৪০০ টাকার মতো। এ দেশে প্রত্নতত্ত্ববিভাগের অন্তর্গত ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের টিকিটে ৫০% ছাড় দেওয়া হয়। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পেলেও এখানে সে সুবিধা মিলল না।
চৌমাথার মোড়ের কাছে এসে জ্যামে আটকালাম। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মিছিল। পুলিশ-প্রশাসন পাইপ দিয়ে জল ছিটিয়ে আগে রাস্তা ভিজিয়ে ঠান্ডা করে দিচ্ছে। তারপর তারা করজোড়ে বড় রাস্তা ধরে খালি পায়ে হাঁটছে।
কিন্তু পরের পরিস্থিতির জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। চত্বরে প্রবেশের মূল ফটকের কাছেই জুতোজোড়া খুলে রাখতে হবে। ৫০০ মিটার উচ্চতায় গরমের দাপট যে সমতলের তুলনায় কোনও অংশে কম নয়, তা বেশ ভালোই মালুম হচ্ছে। মাথার ওপর সূর্যটা যেন দুর্বাশার দৃষ্টি। রোদে তেতে থাকা পাথুরে ঢালাই স্ল্যাবে পা দিতেই মনে হল গরম চাটুর ছ্যাঁকা খেলাম। এত বড় ক্যাম্পাস খালিপায়ে পরিদর্শন, এ যেন চরম শাস্তি! এ দেশে ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো, বিশেষ করে বৌদ্ধস্থান দর্শনের ক্ষেত্রে খালি পায়ে হাঁটার ব্যাপারটা ক্রমেই আতঙ্ক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
*পরবর্তী পর্ব ২৯ নভেম্বর ২০২২
*ছবি সৌজন্য: লেখক
দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। ভ্রমণ, আনন্দবাজার ই-পেপার, ভ্রমী পত্রিকার নিয়মিত লেখক। এছাড়া যারা-যাযাবর, তথ্যকেন্দ্র, লেটস্-গো, আজকাল, প্রতিদিন, গণশক্তি প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত। ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরাম ইন্ডিয়ার সদস্য। প্রধান শখ ও নেশা বেড়ানো আর ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফি।