গল্প: রূপকথা নয়

গত এক মাস থেকে একটি ছেলেও নিয়মিত আসছিল কফি শপে। তার মত সেও একাই একটা টেবিলে বসত। চোখে পড়ার মতন সুদর্শন, সম্ভবত বেশ অবস্থাপন্নও। অথচ সোবার। কিন্তু ঠিক সন্ধে আটটার সময় উঠে যেত। নন্দিনী লক্ষ্য করে দেখেছে যে ঠিক ঐ সময় একটা লাল রঙের বি এম ডব্লু গাড়ি এসে কফি শপ্টার সামনে হ্যাজার্ড লাইট অন করে দাঁড়াত।
কুহকীর নতুন গল্প ‘রূপকথা নয়’…
অনুবাদ গল্প: তিনটে আঙুল (প্রথম পর্ব)

আমি, পুরো বিশ্বাস না করেই, তার দিকে কিছু কাগজ এগিয়ে দিলাম। দেখলাম, সে টাইপরাইটারের প্লাস্টিক ঢাকনা সরিয়ে তাতে কাগজ পরাচ্ছে।
সে যখন টাইপ করতে শুরু করল, আমি আঁতকে উঠে দেখলাম তার বাঁ হাতে তিনটে আঙুল নেই। সে দুহাতের শুধু তর্জনী দিয়ে টাইপ করছে। দেখে মনে হচ্ছে তিনটে আঙুল যেন কেটে নেওয়া হয়েছে।
বড়গল্প: তুলোর পাখি

খাতা দেখা বা পেপার জমার সিজনে সেন্টার থেকে বেরোতে দশটা-এগারোটা হয় ঋতব্রতর, বেসমেন্টের পার্কিং জুড়ে তখন মোটা মোটা থামের ঠান্ডা ছায়া। একটার আড়ালে হয়তো ঘাপটি মেরে বসে থাকবে, নাগালে এলেই লাফিয়ে পেটে গুঁজে দেবে ফলা, ইন্ট্রা-অ্যাবডমিন্যাল ভ্যাসকুলেচর ফর্দাফাঁই। কিংবা হয়তো রক্ত দেখলে মাথা ঘোরে বলে বন্দুক জোগাড় করেছে। ফট ফট ফট। মুখ থুবড়ে পড়েছে ঋতব্রত। শপিং মলের আলোর নীচে দু’হাত উঁচু করে কাঁধ ছুঁয়ে মাপা কার্ডিগানের আকাশি ছাপিয়ে উঠছে লাল। গাঢ় লাল।
কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন গল্প…
গল্প: ফাইট

কান্নার তীক্ষ্ণ আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল। আধো আলোয় হাতড়ে হাতড়ে চশমাটা খুঁজছিল ও। হঠাৎ কিছুর টানে ওর ডান হাতটা আটকে যেতে বাঁ হাতেই বেডসুইচটা জ্বালিয়ে নিল। আলোর ঝলকানিতে নজরে এল ওর কোলের একদম কাছে সরে এসেছে বাচ্চাটা।
ছোটগল্প ‘ফাইট’, লিখলেন সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়…
গল্প: ছবি

দাদাইয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে মায়ায় হাসল ঠাম্মি, “মেজখোকা বলল না, মা স্বাধীন! মা কি সত্যিই স্বাধীন? নিজের ইচ্ছেমতো সব করতে পারে? এই বাড়িতে একটাও জায়গা নেই যেখানে তোর বাবার ছবিটা রাখি। দেয়ালে দেয়ালে কী সুন্দর ছবি, পেইন্টিং! এখানে কোথায় রাখি? রিয়াবুড়ির ঘরের দেয়াল জুড়ে রঙিন ছবি, ফুলের, প্রজাপতির, পুতুলের। বড্ড বেমানান লাগবে না, বল?”
আইভি চট্টোপাধ্যায়ের নতুন গল্প ‘ছবি’
গল্প: শিবার প্রতিশোধ

কলফিল্ড গোমড়া হয়ে খেয়ে গেলেন, হুঁ হাঁ ছাড়া বিশেষ কিছু বললেন না। ওঁর ধারণা কেউ ইচ্ছে করেই আমাদের শিকার নষ্ট করছে। খাওয়া শেষ করে সকলে বিশ্রাম নিচ্ছে, আমি আনমনে বসে আকাশ-পাতাল ভাবছি, বাবা কার্তুজের খালি খোলগুলো আলাদা করে একটা থলিতে ভরে রাকস্যাকের নীচের দিকে ঢুকিয়ে রাখছেন, দ্বিজেনদা একটু আড়ালে গেছে, বোধহয় বিড়ি খেতে— এমন সময় ঘটনাটা ঘটল।
শিব কিংকর বসুর নতুন গল্প…
গল্প: বন্ধু

তিস্তা টর্চটা বন্ধ করে মোবাইলটা ট্রের ওপরেই রাখল। টর্চ আর লাগবে না। আর কটা সিঁড়ি ও টর্চ ছাড়াই উঠে যেতে পারবে। দুটো সিঁড়ি তিস্তা নির্বিঘ্নে উঠে পড়ল। তারপরই ঠিক কি যে হল, ও ভাল করে বুঝে উঠতে পারল না। সামনের দিক থেকে একটা প্রবল ধাক্কা লাগল। মুহূর্তের মধ্যে তিস্তার হাত থেকে খাবারের ট্রে সশব্দে ছিটকে পড়ল। তিস্তা শুনল কেউ একজন “ও মাই গড!” বলতে বলতে ওকে জাপটে ধরেছে।
… শুভব্রতা রায়ের গল্প ‘বন্ধু’
গল্প: বাঁচবার দিন: তরুণ কান্তি মিশ্র

আগে ও খুব কাঁদত, ছোট্ট বাচ্চাদের মতো। এমনকি বাইধরের পায়ের উপরে মাথা রেখে বলত, চোখের জলে, চুমুতে ভিজিয়ে দিত তার দুটো পা– আমাকে ছেড়ে কোথাও যেও না, তোমাকে আমার দিব্যি। বাইধর তখন চুপ থাকত, একদম নীরব। কাঁদতে কাঁদতে সাবিত্রী অসাড় হওয়ার পড়লে ও ঘর থেকে বেরিয়ে যেত, চুপচাপ।
ওড়িয়া ভাষার বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক তরুণ কান্তি মিশ্রের গল্প ‘বাঁচবার দিন’, বাংলায় অনুবাদ করেছেন প্রদীপ কুমার রায়