গল্প: দিবসের শেষে – জগদীশ গুপ্ত

short story Jagadish Gupta

অধর বকশি সে-বার নৌকা যাত্রা করিবার ঠিক পূর্বদিন সন্ধ্যাবেলায় আবছায়া জ্যোস্নায় নিজেরই ছায়া দেখিয়া আঁৎকাইয়া উঠিয়াছিল,— প্রাঙ্গণে লাফাইয়া লাফাইয়া সে নিজেরই ছায়ার দিকে আঙুল দেখাইয়া ভীতস্বরে কেবলই চিৎকার করিয়াছিল— ও কে? ও কে ? …সে-দিন তার রক্তবর্ণ নিস্পলক চক্ষুর দিকে ভালো করিয়া চাহিয়া থাকিতে কাহারও সাহস হয় নাই। বহু চেষ্টায় সেদিনকার মতো আতঙ্কের নিবৃত্তি হইয়া সে নিরস্ত হইয়াছিল বটে, কিন্তু তার নৌকা আর ফেরে নাই, সে-ও না।

কমলাকান্তের দপ্তর: পতঙ্গ

Bankim chandra Chottopadhyay classic Kamalakanter daptar

অন্য জীবে কি ভাবে, তাহা বলিতে পারি না, কিন্তু আমরা পতঙ্গজাতি, আমরা ভাবিয়া পাই না, কেন এ শরীর? -লইয়া কি করিব? নিতা নিত্য কুসুমের মধু চুম্বন করি, নিত্য নিত্য বিশ্ব-প্রফুল্লকর সূর্য্যকিরণে বিচরণ করি– তাহাতে কি সুখ? ফুলের সেই একই গন্ধ, মধুর সেই একই মিষ্টতা, সূর্য্যের সেই এক প্রকারই প্রতিভা। এমন অসার, পুরাতন বৈচিত্র্যশূন্য জগতে থাকিতে আছে? কাচের বাইরে আইস, জ্বলন্ত রূপশিখায় গা ঢালিব। দেখ, আমার ভিক্ষাটি বড় ছোট-আমার প্রাণ তোমাকে দিয়া যাইব, লইবে না? দিব বৈ ত গ্রহণ করিব না। তবে ক্ষতি কি? তুমি রূপ, পোড়াইতে জন্মিয়াছ, আমি পতঙ্গ, পুড়িতে জন্মিয়াছি; আইস, যার যে কাজ, করিয়া যাই। তুমি হাসিতে থাক, আমি পুড়ি।

ছড়া: মোটা কেঁদো বাঘ

childrens rhyme by Rabindranath Tagore

এক ছিল মোটা কেঁদো বাঘ,/গায়ে তার কালো কালো দাগ।/বেহারাকে খেতে ঘরে ঢুকে/আয়নাটা পড়েছে সমুখে।

জেলে বসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে লেখা নেতাজির চিঠি

Subhas Chandra Bose's letter

সময়ে সময়ে আমি মনে না করে পারি না যে, দেশবন্ধুর অকাল-মৃত্যু ও দেহত্যাগের জন্য তাঁর দেশবাসীরা ও তাঁর অনুচরবর্গও কতকটা দায়ী। তাঁরা যদি তাঁর কাজের বোঝা কতকটা লাঘব করতেন, তা’হলে বোধ হয় তাঁকে এতটা পরিশ্রম করে আয়ু শেষ করতে হত না। কিন্তু আমাদের এমনই অভ্যাস যে, যাকে একবার নেতৃপদে বরণ করি, তাঁর উপর এত ভার চাপাই ও তাঁর কাছ থেকে এত বেশী দাবী করি যে কোনও মানুষের পক্ষে এত ভার বহন বা এত আশা পূরণ করা সম্ভব নয়। রাজনীতি-সংক্রান্ত সব রকম দারিত্বের বকলমা নেতার হাতে তুলে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকতে চাই।

গল্প: শিবরাম চকরবরতির মত কথা বলার বিপদ

Shibram Chakrabarty

যিনি এতক্ষণ চায়ের বিপক্ষে ছিলেন–চাউর করলেন : না, চা আসুক। এবং তুমিও এসো এই টেবিলে। ওহে, তিন কাপ চা, আর আর তিন ডজন বিস্কুট। চা খাই আর না খাই, তোমাদের তো—কি বলে গিয়ে—চা পান করাতে দোষ নেই?”

বৃক্ষবন্দনা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Rabindranath Poetry Brikkhabandana

মৃত্তিকার হে বীর সন্তান,/সংগ্রাম ঘোষিলে তুমি মৃত্তিকারে দিতে মুক্তিদান/মরুর দারুণ দুর্গ হতে;যুদ্ধ চলে ফিরে ফিরে;/সন্তরি সমুদ্র-ঊর্মি দুর্গম দ্বীপের শূন্য তীরে/শ্যামলের সিংহাসন প্রতিষ্ঠিলে অদম্য নিষ্ঠায়
… রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বৃক্ষবন্দনা’

কারাগৃহ ও স্বাধীনতা: অরবিন্দ ঘোষ

Sri Aurobindo Ghosh

আধুনিক যুগে আমরা নূতন সময়ের সন্ধিস্থলে উপস্থিত। মানুষ বরাবরই তাঁহার গন্তব্যস্থানে অগ্রসর হইতেছেন, সময়ে সময়ে সমতল ভূমি ত্যাগ করিয়া উচ্চে আরোহণ করিতে হয়, এবং সেইরূপ আরোহণ সময়ে রাজ্যে সমাজে ধর্ম্মে জ্ঞানে বিপ্লব হয়। … ১৫ অগস্টে অরবিন্দ ঘোষের লেখা।