কুমারী ও তার পরিবারকে বিদায় জানিয়ে সকাল নটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম। লঙ্কাদেশে দ্বিতীয় দিন। পশ্চিম উপকূলরেখা বরাবর কিছুটা উত্তরদিকে এগিয়ে আজকের গন্তব্য মুন্নেশ্বরম হয়ে কালপিটিয়া। প্রায় দেড়শো কিলোমিটার যাত্রাপথ। তবে শহর ছেড়ে যাওয়ার আগে নেগোম্বোর বিখ্যাত মাছের বাজারটায় একবার ঢুঁ মারলাম। বিশাল পাইকারি বাজার। ব্যস্ততা, হাঁকডাক, দরাদরি। নানান প্রজাতির, নানান সাইজের মাছ। প্রায় দশ ফুট লম্বা বিশাল ওজনের মাছটা দেখে বোঝার উপায় নেই ওটা মাছ না ছোট হাঙর! রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে বড় বড় লবস্টার, জায়েন্ট ক্র্যাব, বেবি অক্টোপাস, স্কুইড। শুঁটকির বৈচিত্র্য তো দেখার মতো। রোগা, মোটা, গোলাকার, লম্বা, কোনোটার দৈর্ঘ্য আবার ছ’ফুটেরও বেশি।
শহর ছেড়ে এগোতেই গ্রাম্য পরিবেশ শুরু হয়ে গেলো। বড় বড় বাড়ি, অট্টালিকা সব উধাও। দু’পাশে চাষের খেত। অনেকগুলো নদী পেরিয়ে এসেছি। নীচের খালগুলোতে জেলেদের ডিঙিনৌকা বাঁধা আছে। পাড়ে তাদের অস্থায়ী ঝুপড়ি। সবচেয়ে সুন্দর খাঁড়িটার নাম কচ্চিকাড়ে। এ যেন রংতুলিতে আঁকা ‘আমাদের ছোটো নদী’ কবিতা। এমনই এক ছোট্ট নদীর পাশে পথের ধারে ফলের পশরা সাজিয়ে বসেছে এক বিক্রেতা। আম, কলা, তরমুজ, আনারস… এগুলো এদেশে বেশ কমন। কিন্তু যেটা চোখে পড়ার মতো, সেটা হলো থ্যাম্বিলি (স্থানীয় নাম)। সোনালি বর্ণের কিং কোকোনাট। আহা! স্বর্ণাভ ডাব! দেখতে এতো সুন্দর, খেতে না জানি কী! ভারতীয় মুদ্রায় ৩২ টাকা। আর বরফ ঠাসা বাক্স থেকে বের করলে দাম ৪০ টাকা।

ডাবের মিষ্টি জলে তৃষ্ণা মিটিয়ে এগিয়ে চললাম। মাদামপে বাজার পেরিয়ে বিশাল এক মন্দিরের সামনে এসে সাহান গাড়ি থামিয়ে দিল। লর্ড মুরুগান টেম্পল। মুরুগান হলো শিবের ছেলে কার্তিক, যুদ্ধ ও বিজয়ের দেবতা। ছয় মাথা বিশিষ্ট মুরুগান তামিলদের আরাধ্য দেবতা। তামিল ভাষায় মন্দিরকে কোভিল বলা হয়। প্রাচীনত্ব নেই, মাত্র বছর কয়েক আগে তৈরি রংবাহারি কোভিল। অনেকটা ছড়ানো চত্বর। কার্তিক, গণেশ, শিব, পার্বতীর বড় বড় মূর্তি। মন্দিরগাত্রে চিত্রিত আছে কার্তিকের আখ্যান। গর্ভগৃহে কালো কষ্টিপাথরের তৈরি মুরুগানের পাশে অধিষ্ঠান করছেন তার দুই পত্নী, ভল্লি ও থেবানি। কিন্তু সিমেন্ট বাঁধানো রোদগরম উঠোনে খালি পায়ে হেঁটে বেড়ানো অসহনীয় ঠেকছিল। জলদি জলদি এক চক্কর পাক দিয়েই বেরিয়ে এলাম।
মাদামপে থেকে সাত কিলোমিটার দূরে চিলাও। চৌরাস্তার মোড়, বড় মার্কেট এলাকা। এখান থেকে ডানদিকে ঢুকে তিন কিলোমিটার চলার পর পৌঁছে গেলাম মুন্নেশ্বরম। দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যে তৈরি সুবিশাল এক মন্দির, যা শ্রীলঙ্কার রামায়ণ-সংক্রান্ত স্পটগুলির মধ্যে অন্যতম। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলোর সঙ্গে হুবহু মিল। ঠিক উল্টোদিকে বিরাট অশ্বত্থ গাছের তলায় গণেশের পুজো চলছে। পুণ্যার্থীরা ধূপ জ্বেলে গোল হয়ে গাছটিকে প্রদক্ষিণ করছে। এক কোণে মন্দির কমিটির স্টল। মন্দির সম্পর্কিত কিছু তথ্যের খোঁজ পাব, এমন আশায় একটা পাতলা বই কিনে ফেললাম। মন্দিরকে ঘিরে বেশ জমাটি পৌরাণিক কাহিনি আছে।

লঙ্কেশ্বর রাবণকে হত্যা করে লঙ্কা বিজয়ের পর রামচন্দ্র তাঁর স্ত্রী সীতাকে নিয়ে পুষ্পক রথে চেপে অযোধ্যা অভিমুখে রওনা দিয়েছেন। হঠাৎ তাঁরা লক্ষ্য করলেন, একটা বড় কালো ছায়া তাঁদের ধাওয়া করেছে এবং রথখানা কাঁপছে। রাবণ ব্রাহ্মণ ছিলেন। রামচন্দ্র বুঝতে পারলেন, ব্রাহ্মণহত্যার পাপ থেকে তাঁকে মুক্তি পেতে হবে। এখানে পৌঁছে রামচন্দ্র লক্ষ করলেন, সেই কালো ছায়া আর দেখা যাচ্ছে না এবং রথও কাঁপছে না। তিনি রথ থামান। এখানে একটা শিবলিঙ্গের দর্শন পেলেন ও তাঁর পুজো করলেন। কীভাবে এ দোষ খন্ডানো যায়, সেটা জানতে শিবের কাছে প্রার্থনা করলেন। এরপর শিবের নির্দেশ অনুযায়ী, রাম চারটে জায়গায় শিবমন্দির স্থাপন করলেন। তার মধ্যে তিনটিই শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত ও একটি ভারতে। প্রথমটি আছে এই মুন্নেশ্বরমের কাছে মানাভরিতে, অপর দুটি মন্দির আছে কোনেশ্বরম ও কোথেশ্বরমে। শেষ মন্দিরটি স্থাপন করেন ভারতের রামেশ্বরমে।
কাল্পনিক গল্পকথার আগাছা সরিয়ে যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে বলা যেতে পারে মন্দিরটি এক হাজার বছরের পুরনো। গর্ভগৃহের দরজা সোনার তৈরি। শিবলিঙ্গ দর্শনে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়। মূলত, এরা শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী ভারতীয় তামিল। তবে এখানে বাড়তি কড়ি ফেলে আগেভাগে দর্শনের সুবিধা নেই। সবাইকেই লাইন দিয়ে পরপর আসতে হবে। কোনওরকম ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়ি নেই। মন্দির চত্বরে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, গণেশ, গরুড়, দুর্গা, কার্তিকের মূর্তির পাশাপাশি দশাননের মূর্তিও আছে।

দুপুর দেড়টা। রাস্তার দুপাশে চোখ রেখে ভোজনশালা খুঁজে চলেছি। চিলাও মোড়ের আগেই ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কাছে ‘রমেশ এন্ড কোং ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট’। দরজা ঠেলে ঢুকতেই কর্মচারীদের মুখগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বিদেশের মাটিতে দেশের মানুষের দেখা পাওয়ার অনুভূতি। তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত এলাকায় এদের ঘর। বয়স প্রায় আঠারো থেকে পঁচিশের মধ্যে। কে তামিল, কে বাঙালি- সবকিছু ছাপিয়ে শুধু ‘ভারতীয়’। ভাতের সঙ্গে ডাল-পালক, পনির টিক্কা মশালা আর স্থানীয় নদীর মাছ তালাপাথ। দুপুরের ভরপেট আহারের পর আবার চলা শুরু। চিলাও মোড় থেকে কিছুটা এগিয়ে বেশ চওড়া দাদুরু ওয়া। সিংহলা ভাষায় ‘ওয়া’ শব্দের অর্থ ‘নদী’। প্রচুর মানুষ স্নান করছে নদীর জলে। চারপাশে সবুজের সমারোহ। নদীর পাড় ঘেঁষে সমান্তরাল রেখায় লাল রাস্তাটা যেন রাঢ়বঙ্গের চেনা ছবি।

দাদুরু ওয়া থেকে আরও পাঁচ কিলোমিটার। গাড়ি এবার মূল রাস্তা ছেড়ে বাঁ দিকের সরু পথ ধরল। এলাকার নাম বাঙ্গাদেনিয়া। বেশিদূর যেতে হল না। একটু এগিয়েই মানাভরি শিভান কোভিল। আড়ম্বরহীন, সাদামাটা মন্দির। মুন্নেশ্বরমে শিবের আদেশ পাওয়ার পর এটিই রামচন্দ্রের নিজের হাতে বালি দিয়ে তৈরি প্রথম শিবলিঙ্গ। পূজারীর ভার্শান আনুযায়ী, মন্দিরটি ৫০০০ হাজার বছরের পুরনো। মুন্নেশ্বরমের তুলনায় মন্দির চত্বর বেশ ছোটো, পরিচ্ছন্ন। ভিড় একেবারেই নেই। মন্দির চত্বরে কালো কষ্টিপাথরের রাজেশ্বরী, গণেশ, মুরুগানের মূর্তিও আছে।
মহাকাব্য পর্বের আপাতত ইতি। গাড়ি ছুটে চলেছে কালপিটিয়া রোড ধরে। পথের দু’পাশে নিবিড় নারকেল কুঞ্জের ছায়াঘেরা বিস্তীর্ণ অঞ্চল। মাঝে মাঝে টালির চালের ছোট ছোট বাড়ি। পালাভিয়া মোড় থেকে বাঁ দিকে বাঁক নিতেই ডানদিকে পথের সঙ্গী হল সুবিশাল পুত্তালাম লেগুন। মানচিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, পশ্চিম উপকূলের এই জায়গায় এক ফালি স্থলভাগ সরু হয়ে ঢুকে পড়েছে সাগরে। সেই উপদ্বীপেই এখন প্রবেশ করেছি। কখনও নীল জলরাশির বিস্তীর্ণ প্রকাশ, কখনও আবার গাছপালার আড়ালে তার লুকোচুরি খেলা। ব্যাকওয়াটারের মাঝে জেগে আছে ঘাসের ঝোপ।
বাঁদিকে অনেকটা এলাকা জুড়ে নুনের প্রকল্প। কয়েক মিটার ব্যবধানে বড় বড় সাদা নুনের ঢিবি। এ অঞ্চলের জলে সোডিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি। চাষের জোতের মতো আল দিয়ে জলাশয়গুলোর বিভাজন হয়েছে। রোদে পুরোপুরি জল শুকোনোর পর তলানিতে পড়ে থাকে নুন। তবে এই নুনে আয়োডিনের অস্তিত্ব নেই। কারখানায় এর বিশুদ্ধিকরণের সঙ্গে সঙ্গে আয়োডিনও যুক্ত হবে। রাশি রাশি উইন্ডমিলের পাখাগুলো বাতাসের ইশারায় ঘুরছে। কুরিঞ্চিপিটিয়া পেরিয়ে বিকেল চারটে নাগাদ কালপিটিয়া পৌঁছলাম। বড় একটা মসজিদ পেরিয়ে পোস্ট অফিস, তার পাশেই সাদা রঙের বিশাল এক বুদ্ধমূর্তি দন্ডায়মান। উল্টোদিকে রাস্তার গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে ভগ্নদশাপ্রাপ্ত ডাচ ফোর্ট। এটি নৌবিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ভারতীয়দের কোনও টিকিট লাগে না। পাসপোর্ট জমা রেখে প্রবেশের অনুমতি মিলল। নৌবিভাগের এক কর্মী ‘কালু আগগালা’ নিজেই এগিয়ে এসে গাইড হয়ে আমাদের সঙ্গ নিলেন।

১৬৬৭ সালে তৈরি এই ফোর্ট ছিল কালপিটিয়া বন্দরের প্রবেশদ্বার। মূল ফটকটি কিন্তু অক্ষত আছে। ধ্বংসাবশেষের মধ্যেও বেশ কিছু ঘরের অস্তিত্ব টিকে আছে। ভিতরে একটি চার্চও ছিল। সেটা ছিল স্থানীয় মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার উপায়। ধর্মাচরণকে সামনে রেখে আসলে অবাধে দারুচিনির ব্যবসা চলত। ছাদে উঠে ঘুরে ফিরে ফোর্ট দেখা হল। এককোণে বিশাল নীল তিমির কঙ্কাল রাখা। মিঃ আগগালা জানালেন, কয়েক বছর আগে সমুদ্রে ভেসে এসেছিল এই মৃত তিমি। ওলন্দাজদের তৈরি আর একটি পরিত্যক্ত চার্চ আছে দুর্গের বাইরে, বাজার এলাকায়। ছাদ থেকে সেটি দেখাও যাচ্ছে। সূর্য বিদায় নেওয়ার পালা। পাসপোর্ট ফেরত নিয়ে তড়িঘড়ি ছুটলাম ৮ কিলোমিটার দূরে কালপিটিয়া সৈকতের দিকে।
সমুদ্রের ধারে জেলেদের ছোট্ট গ্রাম। গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেলাম সাগরপাড়ে। অর্ধচন্দ্রাকৃতি নির্জন বেলাভূমি। একটিমাত্র ঝুপড়ি দোকান, উনুনে চায়ের জল চেপেছে। ক্রেতা-বিক্রেতা মিলিয়ে জনাতিনেক লোক ছাড়া কেউ কোথাও নেই। শুধুমাত্র উর্মিমালার আসা-যাওয়া। সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে মাছ ধরার নৌকা। জাল শুকোচ্ছে। হাওয়ায় ভেসে আসছে আঁশটে গন্ধ। দূরে উইন্ডমিলের উকিঁঝুঁকি।

সৈকতের বাঁ দিক ধরে একটু এগোলে বড় বড় বোল্ডার আর পাথর জমে তৈরি হয়েছে একটা প্রাকৃতিক বাঁধ। ক্রমেই তা সরু হয়ে সমুদ্রের গর্ভে বিলীন হয়েছে। আর তাতেই সৃষ্টি হয়েছে বাঁক। খুব সাবধানে বোল্ডারে পা ফেলে ফেলে চলে এলাম বাঁধের একেবারে শেষ প্রান্তে। আকাশটা আজ বড্ড বেশিই পরিচ্ছন্ন, এক টুকরো মেঘও চোখে পড়ছে না। পশ্চিম আকাশের বড় লাল টিপটা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে দিকচক্রবালের দিকে। তারই রাঙা প্রতিচ্ছবি ছড়িয়ে পড়েছে জলে। একটা সময় টুপ করে ডুব দিল সাগরের অতলে। কী প্রবল হাওয়া! টাল সামলানো দায়। কেমন যেন গা ছমছম করে উঠল! যদি হঠাৎ কোনও ঢেউয়ের দাপট ভেঙে দেয় এই পাথুরে বাঁধ! এলোমেলো করে দিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সবকিছু! দিনের আলো নিবেছে। দল বেঁধে পাখিরা বাসায় ফিরছে। আমরাও ফিরে চললাম। এই গ্রামেই কোথাও খুঁজে নিতে হবে রাতের অস্থায়ী বাসা।
অনামী সৈকতে হাতে গোনা কয়েকটা অভিজাত হোমস্টে। সবকটাই প্রায় ফাঁকা। সবচেয়ে কমদামি হোমস্টের ভাড়া ৩৫ ডলার। কেয়ারটেকারের সঙ্গে দরদাম করতে গেলাম। কিন্তু এটা তার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তাই ফোন করে মালিকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলিয়ে দিল। শেষমেশ অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ভাড়া নেমে দাঁড়াল ২৫ ডলার। গাছের ছায়াঘেরা বড় বাগান, সুন্দর কাঠের দোতলা বাড়ি। নির্মাণশৈলী, অন্দরসজ্জা বেশ নজরকাড়া। কেয়ারটেকারের স্ত্রী চিকেন চাউমিন রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একটু আগেই গ্লাসভর্তি ঠান্ডা তরমুজের শরবত সারাদিনের ক্লান্তি ঘুচিয়েছে। ডিনারের ডাক আসতে ঢের দেরি। জনমানবহীন নির্জনতা উপভোগ করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। স্ট্রিট লাইটের বালাই নেই। টর্চটাও নিয়ে বেরতে বেমালুম ভুলে গেছি। বাগানের দিকের আলোটা আড়াল হতেই রাতজাগা জ্যোৎস্না পথ দেখিয়ে নিয়ে এল সমুদ্রের ধারে। বালিয়াড়িতে একের পর এক আছড়ে পড়ছে ঢেউ। তার শব্দই নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দিচ্ছে।

রাত পোহালো। ফুরফুরে রোদ। সোনালি সৈকতের বুকে সোনালি কিরণের আদুরে লুটোপুটি। জেলেদের ব্যস্ততা, হাঁকডাক। মাছধরার নৌকাগুলো শিকারি সাজে প্রস্তুত। একটু পরেই ভেসে পড়বে সাগরের বুকে। বেলাভূমির ডানদিক ধরে হাঁটতে লাগলাম। কয়েকটা ট্যুরিস্ট বোট বালির বুকে গেঁথে আছে। শীতকালে এই বোটগুলো গভীর সমুদ্রে পর্যটকদের ডলফিন দেখাতে নিয়ে যায়। এত হাওয়া! অনেকেই তাই এখানে ঘুড়ি ওড়াতে আসেন। বিরাট আকারের, বিচিত্র সব ঘুড়ি উড়ে বেড়ায় কালপিটিয়ার আকাশে।
কম্প্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্টের বহর দেখে আমাদের চোখ কপালে ওঠার অবস্থা। টোস্ট, ডিমের পোচ, আনারস আর তরমুজের রস, টুকরো করে কাটা পাকাপেঁপে-তরমুজ-আনারস, একছড়া কলা আর নারকেল রুটি (দেখতে অনেকটা ছোট পিৎজা ব্রেডের মতো)। কিছুটা খেয়ে, বাকিটুকু পথের খোরাক হিসেবে ছাঁদা বেঁধে নিলাম। আর দেরি নয়, দুপুরের আগেই পৌঁছতে হবে শ্রীলঙ্কার প্রাচীন রাজধানী অনুরাধাপুরা শহরে।
*সব ছবি লেখকের তোলা
দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। ভ্রমণ, আনন্দবাজার ই-পেপার, ভ্রমী পত্রিকার নিয়মিত লেখক। এছাড়া যারা-যাযাবর, তথ্যকেন্দ্র, লেটস্-গো, আজকাল, প্রতিদিন, গণশক্তি প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত। ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরাম ইন্ডিয়ার সদস্য। প্রধান শখ ও নেশা বেড়ানো আর ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফি।
ভালো হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার ডাবের রঙ আমার চোখে বহ্নিশিখার মতো লেগেছিল।