পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়  ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের একটি তফসিলি জাতি। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাস্তুচ্যুত বাঙালি সম্প্রদায়ের পোদ জাতিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে তফশিলী জাতি হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। পোদ একটি ‘আত্মপরিচয়’ ঘোষণা করে আত্ম-সম্মানের বোধ তৈরি করেছিল।১৯৭২ সালের জনবিবরণীতে এ জনগোষ্ঠীকে ‘পোদ’ অভিধায় উল্লেখ করা হয়। পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় জনগোষ্ঠী ব্রাহ্মণত্ব দাবি, উপবীত ধারণ ও আরও অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সামাজিক আন্দোলন করে। তাদের মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল ব্রাত্য-ক্ষত্রিয়-বান্ধব, প্রতিজ্ঞা, ক্ষত্রিয়, পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় সমাচার, সত্যযুগ, ক্ষত্রিয় বান্ধব, দীপ্তি, সঙ্ঘ, মাসিক পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় , শুভবাণী, প্রতিভা ইত্যাদি পত্রিকা।  

মাহাতোরা অর্থাৎ বেশির ভাগ মাহাতো যারা বাংলাদেশে আছে তারা কুর্মী গোত্রের। কুর্মী কিংবা এদের অন্যান্য গোত্র আছে কিন্তু এরা নামের শেষে মাহাতো কথাটি ব্যবহার করে বলে এরা মাহাতো নামে অধিক পরিচিত। আসলে এরা সবাই কুর্মী গোত্রের অর্ন্তগত কারণ এদের ভাষা কুর্মালী যা ভারতের ঝাড়খন্ড, বিহার, উড়িষ্যা, পশ্চিম বঙ্গ, আসামে এখনো প্রচলিত আছে এবং মাহাতোরা নিজেদের মধ্যে কুর্মালী ভাষায় কথা বলে। আর এদের পবিত্র গ্রন্থ “অ্যাইনাস”, মানুষ মারা গেলে তাঁর আত্মার মুক্তির জন্য পাঠ করা হয় এবং কোনও কাজ শুরু করার আগে এই “অ্যাইনাস” গ্রন্থ পাঠ করা হয়, যা দেবনাগরী হরফে  কুর্মালী ভাষায় রচিত। হিন্দুদের পবিত্র ও প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ বেদ -এর একটি শাখা ঋকবেদে কুর্মী সম্পর্কে উল্লেখ আছে। মূলত গোত্রগত দিক থেকে এরা সবাই কুর্মী হলেও এদের সম্প্রদায়ের নাম মাহাতো। এরা সবাই এদের নামের শেষে মাহাতো কথাটি ব্যবহার করে। মূলত সনাতন ধর্মের অনুসারী বলে এরা বিভিন্ন দেব দেবীর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং পূজা করে।

 মাহাতো ভাষায় প্রথম উপন্যাস ‘কারাম’। মাহাতোদের ভাষা সংস্কৃতি নিয়ে উপন্যাসটি লিখেছেন উজ্জ্বল মাহাতো। মাহাতো ভাষায় প্রথম নাটক হটংটয়া। নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেন দেবা মাহাতো ও রবীন্দ্রনাথ মাহাতো। কুর্মালি ভাষায় অনেক ঝুমুর, গান, বিবাহ গীত, বিভিন্ন পরব- এর অনেক গীত গেয়েছেন পরেশ মাহাতো। বাংলাদেশে একমাত্র পরেশ মাহাতোই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই সব পারফর্ম করেন।

মাহাতোরা অর্থাৎ বেশির ভাগ মাহাতো যারা বাংলাদেশে আছে তারা কুর্মী গোত্রের। কুর্মী কিংবা এদের অন্যান্য গোত্র আছে কিন্তু এরা নামের শেষে মাহাতো কথাটি ব্যবহার করে বলে এরা মাহাতো নামে অধিক পরিচিত। আসলে এরা সবাই কুর্মী গোত্রের অর্ন্তগত কারণ এদের ভাষা কুর্মালী যা ভারতের ঝাড়খন্ড, বিহার, উড়িষ্যা, পশ্চিম বঙ্গ, আসামে এখনো প্রচলিত আছে এবং মাহাতোরা নিজেদের মধ্যে কুর্মালী ভাষায় কথা বলে।

মারাঠিরাই প্রথম দলিত সাহিত্য আন্দোলনে আগ্রসর হয়েছিল দাদাভাই অম্বেডকরের প্রভাবে। আন্নাভাই শাঠে, শঙ্কররাও খরাট, বাবুরাও বাগুল ষাটের দশকের দলিত সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বাবুরাও বাগুলের ‘আমি জাত লুকিয়েছিলাম’ গল্পটি প্রকাশের পর সমাজে বিস্ফোরণ ঘটে যায়। দলিত সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এম এস ওয়াঙ্খেড়ে বলেছিলেন—‘রামায়ণ মহাভারতে দলীয় সাহিত্য নেই। দলিতদের আলাদা সাহিত্য তৈরি করতে হবে। মার্কিন দেশের কালোদের মতো’। ক্রমশ দলিতদের সাহিত্য সম্ভার সুগঠিত হয়ে ওঠে সারা দেশে। দয়া পাওয়ারের আত্মজীবনী পড়ে দেবেশ রায় ইংরেজিতে অনুবাদ করতে গিয়ে বলেন, ‘এই লেখা কোনো বিদেশী ভাষায় অনুবাদ করা যায় না। এমনকি বাংলাতেও এর অনুবাদ অসম্ভব’। দলিত সাহিত্যসম্ভারের একটা ধারা লক্ষ্য করা যায়। দলিত ভাষায় উপন্যাস রচিত হলেও সেই উপন্যাসগুলির থেকে আত্মজীবনী মূলক রচনাই সাহিত্যে স্থান ও মান পেয়েছে। মেয়েদের দলিত সাহিত্য নিয়ে লিখতে গিয়ে দেবেশবাবু মর্মপীড়া অনুভব করেছেন। শোষিত শ্রেণির মধ্যে এই মেয়েরা আরও বেশি  শোষিত বলে নিজেদের দলিত বলতেও নারাজ। দলিত নারীরা শুধু সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষদের দ্বারাই নির্যাতিত হয় না, দলিতদের অন্য গোষ্ঠী দ্বারাও সমান ভাবে নির্যাতিত হয়। ফলে তাদের আত্মজীবনী পড়লে মর্মপীড়া হওয়াই স্বাভাবিক। এই মেয়েরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর চর্চা করতে চায় না, কারণ তাতে তারা আরও বেশি পীড়িত হয়। এই মেয়েদের একজনের কাতর প্রার্থনা দেবেশ রায় উল্লেখ করেছেন…

ভগবান খান্ডবার কাছে
…………………………
…………………………

দুনিয়ার সামনে আমাদের আর ন্যাংটো কর না।
(অনুরাধা গুরব)       

 

বাংলার দলিত সাহিত্যের ধারা: পর্ব ২
বাংলার দলিত সাহিত্যের ধারা: পর্ব ১

তথ্যসূত্র: ফেসবুকের ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চা’ গ্রুপ,
আন্তর্জাল, দেবেশ রায়ের ‘অন্ত্যজ’,
‘The Structure Of Hindu Society’,
‘The Tribes and Casts of Bengal’. 

তুষ্টি হুগলি জেলার শেওড়াফুলির বাসিন্দা এবং বোটানিতে স্নাতক। গদ্য ও কবিতা লেখায় সমান আগ্রহ। প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা তিন - ভিজে যাওয়া গাছ, ব্ল্যাক ফরেস্ট ও এরিসেডের আয়না। গদ্যের বইয়ের নাম পদাবলি।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *