আমাদের ছোটবেলায় এতো পুজো ছিল না। অল্প কিছু পুজো ছিল।রাস্তাঘাটে আজকের মতো ভিড় থাকত না।ছিল না আজকের মতো রেস্ট্রিকশন। খুব আরামেই পুজো দেখতাম। আমরা থাকতাম গলফ ক্লাব রোডে।আমাদের একটা বড় স্টেশন ওয়াগন গাড়ি ছিল। ওই গাড়ি করেই আমরা ঠাকুর দেখতে যেতাম। বাবাই নিয়ে যেতেন আমাদের। সঙ্গে থাকত আমার মাস্তুতো,মামাতো ভাইরা। আমরা একসঙ্গেই প্রতিমা দর্শন করতাম।একবার মনে আছে,আমার মা’র শারীরিক অসুস্থাতার কারণে মা-কে গাড়িতে করে ঘোরানো হচ্ছিল। এর জন্য বাবাকে স্পেশাল পারমিশন নিতে হয়েছিল। বাবা মাকে নিয়ে গাড়ি করে একেবারে প্রতিমার সামনে গিয়ে নেমেছিলেন। সেটার মজাই ছিল আলাদা। সকলেই খোঁজ নেয়,কার কটা জামা কাপড় আছে। পুজোর আলাদা জামা কাপড় হয়; এটা আমি আর আমার দাদা ছোটবেলায় জানতাম না। তখন আমার বোধ হয় দশ কী এগারো। তখন থেকেই জানতে পারলাম পুজোয় জামা কাপড় হয়। আমাদের বাড়িতে সব সময় কস্টিউম সেলাই হত। দরজি কাজ করতেন। মা একটা খাদি আর চিকনের পিস কিনলেন। খাদির পিস দিয়ে একটা স্কার্ট বানানো হল। আর চিকনের পিস দিয়ে তৈরি হল ওপরের টপ। সেই আমার পুজোর প্রথম জামা। সেই পোশাকই রাতে কেচে সকালে পরা হত। সেটা যে কী আনন্দের!

আমাদের মা বাবা সব সময় আমাদের আদি পুজো দেখাতেন। আসল পুজোর স্বাদ বোঝানোর এটাই ছিল একটা সাংস্কৃতিক শিক্ষা। শোভাবাজার, মল্লিক বাড়ি,হাটখোলার দত্ত বাড়ি, রাণীরাসমণির বাড়ি এবং বাগবাজারের পুজো। বাগবাজারের পুজো যদিও সর্বজনীন পুজো ছিল;তা-ও ওই পুজোর বেশ ব্যতিক্রমী ঐতিহ্য ছিল। তার পর ফায়ার ব্রিগেডেও একটা পুজো হত। বাবা আমাদের সেখানেও নিয়ে যেতেন। বিজয়া হয়ে গেলে আমাদের হাতে হাতে পোস্ট কার্ড আর ইনল্যাণ্ড লেটার দেওয়া হত। বড়রা যাঁরা দূরে থাকেন,তাঁদের বিজয়ার প্রণাম জানিয়ে চিঠি লিখতে হত। আমি কঠোর ডিসিস্প্লিনের মধ্যে বড় হয়েছি। আমাকে পাড়ায় বেড়ানো,পাড়ায় ঘুরতে দেওয়া হয়নি। পুজোর সময় আমি বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতাম মেয়েদের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছেলেরাও আনন্দ করছে। কাউকেই আমি চিনতাম না। পুজো প্যান্ডেলে গেলে আবার অনেকের সঙ্গে আলাপ হত। এটাই ছিল পুজোর বাড়তি আনন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *