ঠিক আজকের দিনটিতেই ১৯৬২ সালে মুক্তি পেয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী ছবি ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। এবং বাঙালি দর্শক মুগ্ধ হয়েছিলেন এক অচেনা নায়িকার সৌন্দর্য্যে, মাধুরীতে। ছবিতে তাঁর নাম ‘মনীষা’। বাস্তবে অলকনন্দা রায়। কিন্তু এই ছবির পর ইন্ড্রাস্ট্রির কোনও কোণেও আর দেখা গেল না তাঁকে। কুয়াশার পিছনে মুখঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার মতোই লুকিয়ে পড়লেন নায়িকাও। তার ছাব্বিশ বছর পর, ১৯৮৮-তে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘ফেরা’ ছবিতে ফের দেখা গেল তাঁকে। এরপর ২০০০ সালে অপর্ণা সেনের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘পারমিতার একদিন’-এ ছোট্ট একটি ভূমিকায় (ন’কাকিমা) এলেন। তারপর অবশ্য কমে এল বিরতি। ক্রমে হয়ে উঠলেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ। ধারাবাহিকে, মঞ্চে, ছবিতে সর্বত্র অতি পরিচিত হয়ে উঠলেন অলকনন্দা রায়। ‘গানের ওপারে’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে দর্শকের ঘরের লোক হয়ে উঠলেন তিনি। ডেবিউ ছবির ষাট বছর উপলক্ষে নস্টালজিয়ায় ভাসলেন সেদিনের মনীষা। শুনলেন অভিজিৎ সেন। 


‘আজ আপনারা ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ নিয়ে যে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, ষাট বছর আগে দর্শকরা যদি তার কণামাত্রও দেখাতেন, তা হলে ছবিটা তখন হারিয়ে যেত না সেই সময় এই ছবি দর্শক আনুকূল্য যেমন পায়নি, ঠিক তেমনই কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকেও ছবিটিকে কোনও বড় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠাবার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এটা মানিকদার খুব দুঃখের জায়গা ছিল

ফোনালাপের শুরুতেই খেদ ঝরে পড়ল ছবির নায়িকা অলকনন্দা রায়ের গলায় আজ ১১ মে, সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবির মুক্তির ৬০ বছর পূর্ণ হচ্ছে ১৯৬২ সালে ছবিটি মুক্তি পায় রূপবাণী, অরুণা, ভারতী সহ আরও বহু প্রেক্ষাগৃহে

অলকনন্দার কথায়, ‘সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ এটাই মানিকদার প্রথম রঙিন ছবি আর এই প্রথম তিনি নিজের গল্প অবলম্বনে ছবি করলেন

শুধু ছবির নায়িকা হিসাবেই নয়, ইংরেজি সাহিত্যের এমএ এবং পরে পুণের ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ‘ফিল্ম ক্রিটিসিজম’ নিয়ে পড়াশোনা করা অলকনন্দা যেভাবে ছবির বৈশিষ্ট্যগুলি তুলে ধরলেন তা আজকের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’প্রেমীদের নতুন চিন্তার খোরাক জোগাতে পারে 

Alaknanda Ray with N Vishwanathan
মেঘ কুয়াশায় ঢাকা শৈলশহরের উঁচুনিচু পথে সহ-অভিনেতা এন বিশ্বনাথনের সঙ্গে অলকনন্দা

‘আমার কাছে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ মেঘ-কুয়াশার আস্তরণে ঢাকা আবছা একটা ছবি ইস্টম্যানকালারে ছবিটা শ্যুট হলেও, রঙের ব্যবহার ছিল স্তিমিত, একেবারে নিচু পর্দায়  মনে হয় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নন্দলাল বসুর ওয়াশ টেকনিক মানিকদাকে অনুপ্রাণিত করেছিল শান্তিনিকেতন কলাভবনে ছাত্র থাকার সময় তিনি নিশ্চয়ই সেটা দেখেছিলেন এই পদ্ধতিতে ছবিতে রঙ দিয়ে শুকোতে দেওয়ার আগে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয় শুকোবার পর দেওয়া হয় আরেক দফা রং তার পর আবার ধোওয়া ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ও যেন সেই ভাবেই তৈরি এই ছবিতেও রংকে যেন বহু জায়গায় মেঘ-কুয়াশা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়

মজার ব্যাপার হল, একই সময়ে দার্জিলিংয়ে ‘প্রফেসর’ নামে একটি রঙিন হিন্দি ছবিরও শুটিং চলছিল মূল চরিত্রে ছিলেন শাম্মি কাপুর ও কল্পনা পরিচালক লেখ ট্যান্ডন তাঁরা সব সময় চাইতেন রোদ-ঝলমল আকাশ, গাছপালা, ফুল, বাগান তাই মেঘ-কুয়াশা এলেই গোটা ফিল্ম ইউনিটের গালে হাত এর নিট ফল হল, ১৯৬১ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে এক মাসের শুটিং শিডিউল সেরে সত্যজিৎ রায়ের ইউনিট যখন ফিরে যাচ্ছে, ‘প্রফেসর’ টিম তখনও দার্জিলিংয়ে বসে শুধু তাই নয়, ‘প্রফেসর’ ইউনিটের ফিল্মের র’স্টক কম পড়ে যাওয়ায়, সত্যজিৎ তাঁর কাছে থাকা ফিল্ম দিয়ে সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেন

অলকনন্দা মনে করেন এই ছবির মূল থিম হল অবদমন আর্থিক, পারিবারিক সব অর্থেই আর সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিনিধি রায়বাহাদুর ইন্দ্রনাথ চৌধুরী (ছবি বিশ্বাস), যাঁর অঙ্গুলিহেলনে চলতে অভ্যস্ত পরিবারের অন্যান্য সদস্য অলকনন্দা বললেন,

‘ফুল হল আনন্দের প্রতীক এ ছবিতে সেটা কোথায়? সেই কারণেই ছবিতে আমার (মনীষা) আর আমার বোন অনুভাদির (অণিমা) মাথায় ছাড়া আর কোথাও ফুল দেখতে পাবেন না’ 

Make up artist Ananta Das
নায়িকার মেক আপ করছেন সত্যজিতের রূপসজ্জাশিল্পী অনন্ত দাশ

‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ শুধু এক বিকেলের গল্প তাই কোনও চরিত্রেরই পোশাক বদলায় না ছবি বিশ্বাসের স্যুটে লাগে আভিজাত্যের পার্পল রং আর প্রকৃতিপ্রেমী জগদীশমামার (পাহাড়ি সান্যাল) কোট রাঙানো হয় জংলা রঙে। নিজের পোশাক নিয়ে অলকনন্দার একটু অভিমানই হয়েছিল। সোজা সত্যজিৎ রায়কে গিয়ে বলেছিলেন: ‘দিদি কী ভালো একটা ডুরে শাড়ি পরেছে! আর আমার বেলা একরঙা, তাও তেমন উজ্জ্বলও নয়।’ উত্তরে সত্যজিৎ রায় বলেন: 

‘অণিমার শাড়িটা ভালো করে দেখো। ও একটা ভুল বিয়েতে বন্দি। ওর শাড়ির ডোরাগুলো জেলখানার গরাদকে মনে করাবে। অন্য দিকে মনীষার জীবন এখনও মুক্ত আকাশ। সেখানে কোনও কালো মেঘের ছায়া পড়েনি। তাই সূর্যোদয়ের রং লেগেছে তোমার শাড়িতে।’

অন্যান্য ছবির মতো ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র বেলাতেও সত্যজিৎ রায় মূল চরিত্রগুলি স্কেচ করে রেখেছিলেন আর রক্তমাংসের সেই সব চেহারা খোঁজার ভার পড়েছিল তাঁর ট্যালেন্ট স্কাউটদের উপর সত্যজিতের এই বন্ধুরা জহুরির চোখ নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন চরিত্রদের এমনই একজন বিজয় চট্টোপাধ্যায় তিনি ছিলেন অলকনন্দার এক কাকার বন্ধু এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে অলকনন্দাকে দেখে তিনি খবর দেন সত্যজিৎ রায়কে সেই সঙ্গে পাঠিয়ে দেন ল্যান্ডলাইন ফোন নম্বরও    

নায়িকা হিসাবে অলকনন্দার মনোনয়ন অবশ্য সহজে হয়নি তাঁর বাড়িতে একদিকে ছিল ব্রাহ্ম সমাজের সংস্কারমুক্ত পরিবেশ, সাহেবি আদবকায়দা, আবার অন্য দিকে সিনেমা দেখা বা তাই নিয়ে আলোচনায় অসম্ভব কড়াকড়ি বাড়িতে ফিল্ম সংক্রান্ত কোনও পত্র-পত্রিকা আসত না এমনকী সুচিত্রা-উত্তমের ছবি দেখাও বারণ ছিল! তাই প্রেসিডেন্সি কলেজে ফোর্থ ইয়ারের ছাত্রী অলকনন্দার সিনেমা দেখার পুঁজি ছিল সামান্যই ‘টেন কম্যান্ডমেন্টস’-এর মতো কিছু ইংরেজি ছবি আর অবশ্যই ‘পথের পাঁচালী

manisha in the movie
একরঙা হাল্কা কমলালেবু রঙা শাড়ি পরেই গোটা ছবিটার শ্যুটিং হবে শুনে মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল

অথচ শুনলে অবাক লাগবে অলকনন্দার বড় জ্যোঠামশাই প্রমোদনাথ (পি এন) রায় ছিলেন বম্বে টকিজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বম্বে টকিজের প্রাণপুরুষ হিমাংশু রায় ছিলেন তাঁর মামাতো ভাই। অভিনেতা কুমুদলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অশোক কুমার’ নামটি প্রমোদনাথেরই দেওয়া। বি এন সরকারের নিউ থিয়েটার্সের পত্তনের পিছনেও তাঁর অবদান ছিল। অন্য দিকে, অলকনন্দার দুই মাসি সাধনা রায়চৌধুরী এবং নিবেদিতা দাস ছিলেন ব্যস্ত নাট্যকর্মী। আরেক মাসি বিনতা রায় ছিলেন ‘উদয়ের পথে’ ছবির নায়িকা। তা এমন বাড়িতে সিনেমা নিয়ে এমন শুচিবাই কেন? অলকনন্দা বললেন, ‘বাবা-জ্যোঠারা হিমাংশু রায়ের ভাই হয়েও সিনেমার অন্ধকার দিকটা জানতেন বলেই হয়তো আমাদের দূরে সরিয়ে রাখতেন।’

সত্যজিৎ রায় যে দিন অলকনন্দাদের বাড়ি আসেন তখন তিনি কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন প্রাথমিক আলাপচারিতার পর সত্যজিতের তাঁকে পছন্দ হয় অলকনন্দাও বলেন তিনিও অভিনয়ে আগ্রহী কিন্তু বাবা যে বড় কঠিন ঠাঁই! কলেজ থেকে ফিরে অলকনন্দা মায়ের কাছে শোনেন সত্যজিতের অনেক সাধ্যসাধনা, আশ্বাসের পর, তাঁর বাবা রাজি হয়েছেন তবে তখনকার নিয়ম অনুযায়ী পরিবারের বয়োঃজ্যোষ্ঠর অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন সেই রীতি মেনে সেই দিনই সত্যজিৎ অলকনন্দার বাবা প্রসাদ রায়ের সঙ্গে তাঁর হিলম্যান গাড়িতে চেপে তাঁর মেজদার গল্ফ ক্লাব রোডের বাড়ি গিয়ে সম্মতি আদায় করে আসেন

Instructions from the director
শটের আগে কাজ বুঝে নিচ্ছেন অলকনন্দা রায় ও অরুণ মুখোপাধ্যায়

সত্যজিৎ প্রতিশ্রুতি দেন, তাঁর ফিল্ম ইউনিট একটা পরিবারের মতো। তাই অলকনন্দার কোনও অসুবিধা হবে না শ্যুটিং হবে শুধু দিনের বেলা তাই ছবির নায়িকার কলেজের পরীক্ষার পড়া করতে কোনও অসুবিধা হবে না ছবির প্রযোজকই অলকনন্দার মায়ের যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা করবেন তা ছাড়া সত্যজিৎ দার্জিলিং যাবেন স্ত্রী-পুত্রকে নিয়েই

ছবির পরিবেশে সড়গড় হতে, শুটিংয়ের দু’দিন আগেই দার্জিলিং পৌঁছন অলকনন্দা সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা এবং ছবির অন্যতম নায়ক অরুণ মুখোপাধ্যায় (অশোক) তার আগে সত্যজিৎ রায় তাঁর কলকাতার বাড়ি গিয়ে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র চিত্রনাট্য শুনিয়ে বলেন, ‘এখন এটা তোমায় দেব না আপাতত, শুধু মনীষা চরিত্রটা নিয়ে ভাবো’ 

জালাপাহাড় রোডে জীবনের প্রথম শট আজও বেশ মনে আছে অলকনন্দার। দৃশ্যটি ছবির একেবারে শেষ দিকের। সেই যখন মিস্টার ব্যানার্জি (এন বিশ্বনাথন) মনীষাকে বলছেন, ‘এখন ইউ আর ফ্রি (তুমি মুক্ত),’ আর মনীষা ভারমুক্ত হয়ে বলেন, ‘ওঃ, মিস্টার ব্যানার্জি।’ সেই শট এক টেকেই ওকে হয়। 

‘একে অল্প বাজেটের ছবি, তার উপর সেলুলয়েড যুগ তাই মানিকদাকে খুব হিসেব করে শুটিং করতে হত সেলুলয়েডে ছবি তোলার অনুপাত রেখেছিলেন ২.৫:১ তাই রিটেক করা তাঁর কাছে ছিল বিলাসিতা ছবির প্রায় পুরোটাই হয়েছিল সিঙ্ক সাউন্ডে

ষাট বছরের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে টুকরো টুকরো গল্প ভেসে আসে সত্যজিৎ রায় সপরিবার উঠেছিলেন হোটেল মাউন্ট এভারেস্টে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা উঠেছিলেন হোটেল অ্যালিস ভিলায় অন্যান্য কলাকুশলী ছিলেন একটু অল্প দামি হোটেলে ছবির কিছুটা শ্যুটিং হয়েছিল সত্যজিতের অসম্ভব প্রিয় উইন্ডামেয়ার হোটেলে 

With Arun Mukhopadhyay
অবসরে নায়কের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতে দেখে রেগে আগুন হয়ে গিয়েছিলেন বাবা

দার্জিলিংয়ের হোটেলে ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে অলকনন্দার প্রথম সাক্ষাতে মিশেছিল একটু মজাও তিনি তাঁকে প্রণাম করে বললেন, ‘আমি আপনার ছোট মেয়ে’ নামটা বললেন না উত্তরে বাংলা ছবির আইকন বললেন, ‘শোনো ছোট মেয়ে সন্ধের পর আমার ঘরের দিকে একদম যাবে না’ অলকনন্দা তটস্থ হয়ে বললেন, ‘না, না আমি তো তখন পড়াশোনা করি’ বলাই বাহুল্য, সেই ঘরে বসত আসর সবাই যে মদ্যপান করতেন তা নয়, অনেকের কাজ ছিল ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে নিছক আড্ডা দেওয়া যেমন পানের ভক্ত পাহাড়ি সান্যাল সরাসরি বলেই দিতেন, ‘আমি পানাসক্ত, মদ্যাসক্ত নই

আশ্চর্য কাণ্ড করেছিলেন অরুণ মুখোপাধ্যায় অ্যালিস ভিলা হোটেলে আসার পরদিনই তিনি চলে যান কলাকুশলীদের হোটেলে অলকনন্দা এর কারণ জিজ্ঞাসা করায় অরুণ বলেন, ‘ছবিতে আমি গরিব পরিবারের ছেলে চাকরির আশায় ঘুরছি আর আপনারা সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষ এখন থেকেই দুরত্ব না রাখলে, অভিনয়ে সেটা ফুটিয়ে তুলব কী করে?’

সিনেমার ব্যাপারে অলকনন্দার পরিবারের রক্ষণশীলতা ধরা পড়ে শ্যুটিংয়ের সময়েও একদিন হঠাৎ তাঁর বাবা, তাঁর অন্য দুই মেয়েকে নিয়ে দার্জিলিংয়ে উপস্থিত উঠলেনও একই হোটেলে মুখে বললেন বটে, ‘বেড়াতে এসেছি’ কিন্তু আসল কারণ তো সবারই জানা একদিন শুটিংয়ের পর অবসর সময়ে অরুণ এবং অলকনন্দার মধ্যে সামান্য ঠাট্টা-ইয়ার্কি হয় ঘটনাটা এতই সামান্য যে অলকনন্দার মনেই ছিল না কিন্তু তাতেই তাঁর বাবা রেগে অগ্নিশর্মা এক সন্ধ্যায় স্পষ্ট হুমকি দিয়ে মেয়েকে বললেন, ‘নায়কের সঙ্গে এত হাসাহাসি করলে, এখনই তোমাদের সবাইকে নিয়ে কলকাতা ফিরে যাব

In aged Role
এখন মা দিদিমা ঠাকুমার ভূমিকায় অভিনয়ও একইরকম উপভোগ করেন

অভিনয় জীবনে অলকনন্দার মতো দীর্ঘ বিরতি কেউ নেননি কাঞ্চনজঙ্ঘার ২৬ বছর পর ১৯৮৮-তে বড় পর্দায় ফেরেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘ফেরা’ ছবির মাধ্যমে হাসতে হাসতে বললেন, ‘পঁচিশ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে জন্মেই নায়িকা হয়ে যায় তবে আমার কোনও আক্ষেপ নেই আমার ধরনটাই হল যখন যা করি, তাতে ডুবে যাই।’

ছবিতে ফিরে আসার পর, এই ৩৪ বছরে তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি উপচে পড়েছে রোলান্ড জফে থেকে শ্যাম বেনেগাল, অপর্ণা সেন থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষ, কার ছবিতে কাজ করেননি? একটি বিজ্ঞাপনের ছবিতে অলকনন্দা অভিনীত ঠাম্মার চরিত্র যেন চুপিচুপি বলে দেয় তাঁর মনের কথাও ‘বয়স যাই হোক, জীবনের সবটুকু রং ধরে রাখুন

 

*সমস্ত ছবি সৌজন্য: অলকনন্দা রায়

দু’দশক ইংরেজি সংবাদপত্রের কর্তার টেবিলে কাটিয়ে কলমচির শখ হল বাংলায় লেখালেখি করার। তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন কয়েকজন ডাকসাইটে সাংবাদিক। লেখার বাইরে সময় কাটে বই পড়ে, গান শুনে, সিনেমা দেখে। রবীন্দ্রসঙ্গীতটাও নেহাত মন্দ গান না।

2 Responses

  1. কিছু কিছু ব্যক্তিত্ব থাকেন যারা ভারি স্নিগ্ধ অনেকটা জলরঙের ছবির মতো। অলকনন্দা রায় একরকমই একজন, ওনার সম্পর্কে জানার একান্ত ইচ্ছা ছিল, স্বল্পপরিসরে আপনি জলরঙেই এঁকে দিলেন ছবিটা, তৃপ্ত হলাম, অনেক ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *