পণ্ডিত রাজন মিশ্রকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সম্বুদ্ধ গেয়েছেন বেনারসের একটি ঐতিহ্যবাহী ঠুমরি। 


 

দিনটা রবিবার, আমার গানের ঘরে ক্লাস চলছে পুরোদমে। তার মধ্যে বাজল ফোন। তালিমের মাঝখানে আছড়ে পড়ল রিংটোন, মূর্তিমান রসভঙ্গের মতো। এই প্রথমবার আমার মনে হল, ফোনের রিংটোন বড়ই কর্কশ। এককণাও সুর নেই তাতে।

রবিবার সকাল থেকেই ছাত্রছাত্রীরা ভিড় জমায়। ক্লাস চলে বেশ বেলা অবধি। তারই মাঝে একটু বিরতি নিয়ে জলখাবার ও চা পান। এই গানের মাস্টারি সত্যিই ভারি ঝকমারি! এক একজনের এক এক রকম অভিজ্ঞান, এক একরকম স্বরসপ্তক ও প্রতিভা। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্লাস নিতে নিতে আমিও বেজায় ক্লান্ত।

দুপুর দেড়টা বাজে প্রায়। পেটে ছুঁচোয় ডন মারছে। ক্লাস দেরিতে চলছে, মেজাজ এমনিতেই ভালো নেই। তার ওপর ফোন! ঘাড় ঘুরিয়ে একঝলক তাকিয়েই দেখি ভেসে উঠেছে শহরের প্রখ্যাত তবলিয়ার নাম। এই অবেলায় আমায় ফোন করছেন? কী দরকার পড়ল রে বাবা!        
– এই, থাম তোরা, আমি ফোনটা ধরি। দরকারি ফোন।
সবুজ বোতাম টিপতেই ওপাশ থেকে মন্দ্র, গভীর কণ্ঠস্বর, “বেটা, কেমন আছিস?”
– ভাল। স্যার, আপনি? তাঁর ফোন পেয়ে আমি যারপরনাই আনন্দিত।    
– ভাল। শোন আগামী বৃহস্পতিবার বিকেলে কোনও কাজ রাখবি না। তানপুরা নিয়ে বিড়লা একাডেমিতে চলে আসবি ঠিক ছ’টায়।”
– কেন স্যার? আমার কৌতূহল উপচে পড়ে।
– পণ্ডিত রাজনজি-সাজনজি  আসছেন। তুই তানপুরা ধরবি।

‘রাজন-সাজন’ নামদুটো যেন তানপুরার জোড়ির তারের মত। একটা স্পর্শ করলে আর একটা অমনি বাজে। মুহূর্তেই কানে শুনলাম জোড়ির তারের ভ্রমরগুঞ্জন। এক লহমায় যেন টাইম মেশিনে চেপে পনেরো বছর পিছিয়ে গেলাম।

Rajan and Sajan Mishra
মঞ্চে দুই ভাই – (ডাইনে) রাজন ও সাজন মিশ্র

জানুয়ারির শেষ দিকে রবীন্দ্রসদনে রাজ্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠান। তখন আমি সবে রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটিতে সঙ্গীত নিয়ে ডিগ্রি শুরু করেছি। গুরুজির তালিম আর রেওয়াজে বুঁদ হয়ে থাকা এই আমি, বাবা-মা’র সঙ্গে একরকম জোর করেই এসেছি রবীন্দ্রসদনে। সকালের অনুষ্ঠান, পৌঁছতে একটু দেরিই হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে হলে ঢুকতেই মনে হল, যেন কোন এক গন্ধর্বলোকে এসে পড়েছি। মঞ্চে তখন দ্বৈতগায়নে পণ্ডিত রাজন মিশ্র আর পণ্ডিত সাজন মিশ্র। তবলায় পণ্ডিত কুমার বোস। দেশি টোড়ির আলাপ শুরু হয়েছে।        

আসনে বসেই চাপা গলায় মাকে বললাম, “মা, রেকর্ডারটা বার কর, শিগগিরি।” তখনকার দিনের সোনি কোম্পানির ছোট্ট ক্যাসেট রেকর্ডার, মায়ের ব্যাগের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে আছে। রেকর্ডিং বাটনটি চেপে ধরে বুঁদ হয়ে শুনছি সঙ্গীতসুধা, বিলমপদ “নৈয়া মোরি ভয়ি পুরানি।” ঋষভ থেকে মন্দ্র নিখাদের কন্ ছুঁয়ে ষড়জে কণ্ঠ প্রতিস্থাপিত হল, মনে হল যেন বেনারসের গঙ্গায় উঠল মৃদু ঢেউ। তার জল ছলকে উঠে ভিজিয়ে দিল আমার মনন। কী এক সম্মোহনে ধীরে ধীরে সমাহিত হচ্ছি আমি। কী অসাধারণ প্রশান্তি এ গানে! দুই সুরসাধক যেন খেলাচ্ছলে একে অপরকে সুরের ঢেউয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছেন, সে ঢেউয়ে নিঃশব্দ অবগাহন করছে হলভর্তি মানুষ।

হঠাৎ রাজনজি গান থামিয়ে বললেন, “আমরা বেনারসের মানুষ। বেনারস, মানে যেখানে রস আগে থেকেই তৈরী থাকে- ‘বনা-হুয়া-রস’। গানের এই নদীই আমাদের জীবন নদী, আমাদের শরীর হল নৌকা। বন্দিশে সে কথাই বলা আছে। ‘নৈয়া মোরি ভঈ পুরানি।’ মাঝি হলেন আমাদের গুরু। নৌকা এপার থেকে ছেড়ে যখন ওপারে গিয়ে ভেড়ে, তা সাধনার সিদ্ধি ছাড়া কিছু নয়।”

সামনের সারিতে বসা বিদ্দ্বজ্জন-সহ গোটা হল ‘হা হা’ করে উঠল এমন মর্মস্পর্শী ব্যাখ্যায়। বিলম্বিত বিস্তারে এমনই সুর জমল যে অবরোহী গতির আরোহী স্বরসমন্বয় যতবার ষড়জে এসে কায়েম হচ্ছে, ততবারই মনে হচ্ছে গঙ্গার ঢেউ এসে বেনারসের ঘাটের সিঁড়িতে যেন ধাক্কা মারছে। ছলছলাৎ শব্দ আমার শরীরের প্রতিটি কোষে ঢুকে যাচ্ছে, আমার সঙ্গীতের তৃষ্ণা নিবারিত হচ্ছে, আমি শিহরিত। অপার্থিব ব্যঞ্জনা। এমনও অনুভূতি হয়?

Rajan and Sajan Mishra
মঞ্চে সৃষ্টি করতেন সুরের অপার্থিব ব্যঞ্জনা

গায়কদ্বয় তাঁদের হাতের মুদ্রায় হাওয়ায় ছবি আঁকছেন। বিলম্বিত শেষে দ্রুত বন্দিশ ধরলেন তাঁরা – ‘মনুবা লরজে, মোরা।’ কোমল নিষাদের দৃপ্ত গমকে ও হুম্ফ্নে ঘনমেঘের কল্পচিত্র আঁকা চলছে। তানের মুক্তধারা আসন্ন বসন্তেও বর্ষার প্রতিলিপি এঁকে চলেছে। যেন প্রেয়সী বসন্ত মিলনের কামনায় তার দয়িতকে আকুল আহ্বান জানাচ্ছে রাগ দেশি টোড়িতে।

গান শেষ হল এক স্বর্গীয় অনুভূতি দিয়ে, অপূর্ব আমেজ রেখে। মস্তিষ্কের কোষে কোষে ছেয়ে আছে দেশি টোড়ি, মন্ত্রমুগ্ধ আমি ভিড় ঠেলে এগোলাম গ্রিনরুমের দিকে। প্রণাম করেছিলাম দু’জনকে। আশীর্বাদ করে বললেন, “সুরমে রহো।”

বাস্তবে ফিরলাম স্যারের গলায়। ফোনের ওপ্রান্তে অধৈর্য তিনি।
– কী রে, আছিস? না লাইন কেটে গেছে?
– না না স্যার, লাইন কাটেনি, এই তো, আছি আমি। হ্যাঁ স্যার, ঠিক চলে যাব বৃহস্পতিবারে সন্ধ্যে ছ’টার সময়।

স্যার খুশি। সাবধান করলেন,
– জানিস তো ওঁদের সময়জ্ঞান কীরকম। দেরি করবি না মোটেই। একটু আগেই আসিস বরং।

ফোন রেখে দিলেন। আমি বাকরহিত। নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি তানপুরা ধরব সেই দুই গন্ধর্বের সঙ্গে? যাঁদের গানে একদিন বেনারসের গঙ্গার ঢেউ ছলকে উঠেছিল বুকে? এ কী বাঁধভাঙা আনন্দ! নাঃ, আজ আর ক্লাস করাতে পারব না। কোনওমতে নিজেকে সংযত করে ছাত্রছাত্রীদের বললাম,
– তোরা আজ যা। ক্লাসে মন বসবে না আর।

আমার ভাবান্তর তারা বুঝতে পেরেছে। বিদায় নিল একে একে।

মন আমার বশে নেই আর। ঘুরেফিরে চলে যাচ্ছে মাঝের পনেরোটা বছরের অলিগলিতে। ডোভার লেন, উত্তরপাড়া সঙ্গীতচক্র, রামকৃষ্ণ মিশন, বেলুড়ে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসরে কতবার শুনেছি তাঁদের। ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের ঐতিহ্যবাহী তাঁরা দুই গুণী শিল্পী, প্রবাদপ্রতিম, ভারতবিখ্যাত। শুধু তো গানই নয়, বাচনভঙ্গী, দেহভঙ্গী, মুখের অভিব্যক্তি ও সর্বোপরি সঙ্গীতের ঔপপত্তিক বিষয়ে তাঁদের অগাধ পাণ্ডিত্য আমাকে প্রতিবারই বিমোহিত করেছে। কোনও বিষয়ে সহমত না হলে, প্রতিবাদ করার তহেজিব দেখেও অবাক হয়েছি মনে মনে ভেবেছি, মানুষ অভিজাত হয় তার শিক্ষায়। সর্বাংশে সদগুণাত্মক এই মানুষদুটি শুধু সার্থক শিল্পীই নন, দুজন উদার, দয়ালু, সরস মনের মানুষ। যার ছাপ পড়েছে তাঁদের গানে, তাঁদের সঙ্গীত চিন্তায়।

একবারের কথা আজ বড্ড মনে পড়ছে, খুব নাড়া দিয়েছিল মনকে। একটি অনুষ্ঠানে রাজনজি বললেন, “বুর্জুগরা রাগের আর কিছুই বাকি রাখেননি। যখনই নতুন কিছু আবিষ্কার করি, ভাবি আমিই বোধহয় প্রথম খুঁজে পেলাম, তখনই মিলিয়ে দেখি – না! এ তো আগেই তৈরি হয়ে গেছে! হিন্দুস্থানি রাগসঙ্গীতের কলাবন্তগণ আমাদের চিন্তাভাবনার আর কোনও অবকাশ রাখেননি।”

শুনে আমি বিস্মিত, চমৎকৃত। কতখানি বিনয়ের সমুদ্র হলে এমন কথা বলা যায়? তিনি আরও বলতেন, “যদি সঠিকভাবে ইয়মনের গান্ধার বা টোড়ির ঋষভ লাগাতে পারো, তাহলে বুঝবে জীবন ধন্য। আমি তো এখনো ‘সা’কেই খুঁজে চলেছি জীবনভর।” তাঁর উপলব্ধি, চেতনা আমায় স্তব্ধ করে দিয়েছে বারবার।

Rajan Mishra performing
মঞ্চ আলো করে রাজন মিশ্র

দেখতে দেখতে বৃহস্পতিবার এসে গেল। সকালে রেওয়াজ সেরে তৈরি হচ্ছি। মনে এক অনাস্বাদিত পুলক, যেন অকাল বসন্তের হিল্লোল। আবার দেখতে পাব তাঁদের, সিক্ত হব সঙ্গীতের স্রোতস্বিনীর ধারায়। অনেকটা সময় হাতে রেখে বেরতে হবে। কপালগুণে সেদিনই কোন এক রাজনৈতিক মিছিল ও মিটিং। রাস্তায় আটকে পড়লে মুশকিল। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। বেরোবার কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ি জ্যামে আটকে গেল। সামনে মিছিল। প্রমাদ গুনলাম। কী করি? ফোন করলাম স্যারকে। রাস্তার পরিস্থিতি জানালাম। স্যার সান্ত্বনা দিলেন, “বেটা, এ জগতে সবই পূর্বনির্ধারিত। আগে থেকে ঠিক হয়ে আছে। তোমার কপালে যদি থাকে তো ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে।”

সান্ত্বনায় আমার কী হবে? রক্তচাপ বাড়ছে। অসহায় বসে আছি রাস্তার দিকে চেয়ে। কখন খালি পাব, পৌঁছব আমার গন্তব্যে, আমার তীর্থক্ষেত্রে। সে এক অসহনীয় সময়।

ইষ্টনাম জপতে জপতে শেষমেশ পৌঁছনো গেল। উর্দ্ধশ্বাসে হলের গ্রিনরুমে এসে দেখি অনুষ্ঠান শুরু হতে তখন মিনিট চল্লিশ বাকি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। পন্ডিত রাজন ও সাজন মিশ্র চেয়ারে বসে স্যারের সঙ্গে সঙ্গীত নিয়ে আলোচনা করছেন। আমি তানপুরাটি নিয়ে একপাশে এসে দাঁড়ালাম। প্রণাম করলাম তিনজনকেই। রাজনজি আমায় চিনতে পেরেছেন। আমার গানও মনে আছে। বললেন, “বেটা কিসকে পাস সিখতে হো?”

করজোড়ে গুরুর নাম বললাম, “সঙ্গীতাচার্য অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।” শুনেই এক মুখ হাসি নিয়ে কপালে হাত ঠেকালেন, “বাংলায় এমন গায়ক আর জন্মাবেন না। এক মহান সঙ্গীতগুণী তোমার গুরু। ভাল করে শেখ।” সুরমণ্ডলে হাত রাখলেন এবার, “বেটা তানপুরা মেলাও।” সযত্নে সুর মেলালাম প্রতিটি তারে। তারপর সুরে বাঁধা তানপুরাটি এগিয়ে দিলাম তাঁর দিকে। তখনই হাত থেকে নিয়ে তানপুরা রেখে নিলেন নিজের কাছে। তাঁর স্পর্শে ধন্য হল আমার তানপুরা।

একবার তানপুরা ছেড়ে পরখ করে নিলেন সুর। আমার  মুখের দিকে তাকিয়ে সেই প্রেমময় হাসিটি হাসলেন, “সহি হ্যায়। থোড়া জোয়ারি দেখ লো।” পছন্দমতো জোয়ারি হতে নিশ্চিন্ত হলেন।

 

আরও পড়ুন: সঞ্জয় সেনগুপ্তের কলমে: বেজে ওঠে পঞ্চমে স্বর

আসর শুরু। মেহফিল জমে উঠল ঋষভ পঞ্চম অনুষঙ্গের ‘শ্রী’ রাগে। রাগের সে কী সুগভীর ব্যঞ্জনা! শ্রোতারা মুগ্ধ। তানপুরা হাতে পিছনে বসে আমি শুধুই সুরে অবগাহন করছি। একে একে আসছে বসন্ত-বাহার, ভজন- ‘ চলো মন বৃন্দাবন কি তীর।’ গোটা আসর সুরের মায়াজালে বুঁদ হয়ে আছে। আমার এই প্রথম এত কাছ থেকে ওঁদের গান শোনা। ভেতর থেকে মাঝে মাঝেই বেরিয়ে আসছে, “আহা”, নিজের অজান্তে। শোনামাত্রই পণ্ডিতজি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন, স্নেহপূর্ণ হাসি। আমার বিভ্রম হচ্ছে, এ কি বাস্তব? না স্বপ্ন? হে ভগবান, এমন স্বপ্ন যেন না ভাঙে!   

দুই গন্ধর্বের গানে এক অদ্ভুত মাতৃত্ব আছে, যা সর্বদা সঙ্গীতকে যত্নে লালন করে। আমার চিত্ত লালিত হচ্ছে সেই সঙ্গীতের কোলে, সুধারসে ভরে যাচ্ছে দেহের প্রতিটি কোষ। এ কী অনির্বচনীয় অনুভূতি! অনুষ্ঠান শেষ, আমার ঘোর কাটেনি। মনের মধ্যে পূর্ণচন্দ্রের প্রভার মতো গানের রেশ নিয়ে বাড়ি এলাম।

Rajan Mishra
শরীরের মৃত্যুকে হারিয়ে দিয়ে অমর হয়েছে তাঁর সৃষ্টি

তারপর?

তারপর আর এ শহরে সেভাবে অনুষ্ঠান হয়নি। অতিমারীর করাল গ্রাসে চলে গেল গোটা দুনিয়া। ঘরবন্দি জীবন যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। আশা ছিল এ স্তব্ধতা সাময়িক। আবার ছন্দে ফিরব আমরা, ফিরে আসবে মেহফিল, সুরের ঝরনাতলায় দেখা হবে আবার। স্বপ্নেও ভাবিনি মারীর ছোবল পণ্ডিত রাজনজির কণ্ঠকেও চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দেবে!

গত রবিবারের বিকেল। গানের ঘরে আমি একা। ছাত্রছাত্রীর ভিড় নেই। এখন ক্লাস হয় অনলাইনে। অতিমারী বদলে দিয়েছে জীবন। ফোন বাজল আবার। বুকটা কেমন দুলে উঠল। এমন এক রবিবারেই তো একটা ফোন আমার হাতে স্বর্গের চাবিকাঠি তুলে দিয়েছিল! আজ ওপ্রান্তে আমারই এক ছাত্র। “গুরুজি, রাজনজি আর নেই!”

আমার কানে কে যেন আগুনের শলাকা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। অসাড় হয়ে যাচ্ছে বোধ। অন্যপ্রান্তে কী বলছে ছেলেটি, কী সব অর্থহীন কথা, আমি শুনতে চাই না, চাই না! হে ভগবান, বধির করে দাও আমায়!

আমার চোখ ঝাপসা। বুকের মধ্যে ধু ধু এক মরুভূমি। কিন্তু সে শুধু সাময়িক। আস্তে আস্তে সেখানে জ্বলে উঠল এক প্রত্যয়ের দীপশিখা। এই তো তিনি! আত্মার মৃত্যু নেই। আছেন, তিনি আছেন, আমাদের হৃদয়ে আছেন অবিনশ্বর হয়ে। তাঁর সঙ্গীতের মধ্যেই তিনি বেঁচে আছেন। অগণিত ছাত্রছাত্রী ও গুণমুগ্ধ শ্রোতার মননে তাঁর অক্ষয় আসনটি পাতা। সঙ্গীতের আর্কাইভ, রেকর্ডিং, ইউটিউব ধরে রেখেছে তাঁর গান। শরীরের মৃত্যুকে হারিয়ে দিয়ে অমর হয়েছে তাঁর সৃষ্টি।

সঙ্গীত সুধাকর তিনি। ভারতীয় মার্গসংগীত জগতের এক অসংবিদিত নাম – পণ্ডিত রাজন মিশ্র। তাঁর আশিসের হাতটি সর্বদাই আমাদের মাথায় আছে, এই প্রত্যয়ে শুধু এটুকু বলি, ক্ষুদ্র এই আমি তাঁর স্মৃতির তর্পণ করে আপ্লুত। তাঁর চরণের ধূলি হয়ে ধন্য।

“ধন্য ভাগ্য সেবা-কা-অবসর পায়
চরণ কমল কি ধুল বনা হুঁ ম্যায় 
মোক্ষদ্বার তক আয়া।”

বিষ্ণুপুর ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কণ্ঠশিল্পী। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গীতে স্নাতোকত্তর। বর্তমানে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। সম্বুদ্ধ বেতার, দূরদর্শন ছাড়াও দেশে ও বিদেশে অসংখ্য সঙ্গীত সম্মেলন ও অনুষ্ঠানে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মান।

5 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *