স্কুলপড়ুয়া ছেলের ছুটির লিস্টি অনুযায়ী এককালে আমরা নিয়ম করে বড়দিনের সময় বেরিয়ে পড়তাম। ২০০৬ সালে ঠিক হল লাভা, লোলেগাঁওয়ের দিকটায় যাব। আমাদের সঙ্গী বলতে চাটুজ্জে দম্পতি, অভিজিৎ আর উর্বী। সবকিছু পাকা করতে একটু দেরি হল। ফলে দার্জিলিং মেলে রিজার্ভেশন পেলাম বটে, কিন্তু পাহাড়ে বন দফতরের রেস্টহাউজ়গুলো দেখলাম সব ভর্তি।
অভিজিৎ একটু মুষড়ে পড়ল, কারণ থাকার জায়গা হিসেবে জঙ্গলের মধ্যে ওই কাঠের ঘরগুলোর কোনও তুলনাই হয় না। বছরকয়েক আগেই ওরা এসে থেকেছে। ১৯৮০-এর দশক থেকেই কালিম্পংয়ের কাছে জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ি এই গ্রাম দুটো ধীরে ধীরে টুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে। সরকারি উদ্যোগে ছবির মতো সব কটেজ বানিয়ে রাখা হয়েছে একেবারে নিরিবিলি পরিবেশে। লাভায় তো আবার খানদু’য়েক খাঁটি বিলিতি কায়দার লগ-কেবিনও আছে, যেখানে ফায়ারপ্লেসের আগুনে শরীর সেঁকতে সেঁকতে রোম্যান্সে ভরপুর হয়ে ওঠার গল্প শুনেছি চেনাশোনা অনেকের মুখে। তার বদলে আমাদের কপালে জুটল বেহিসেবি গজিয়ে ওঠা পাকা বাড়ির জটলাওলা ঘিঞ্জি অঞ্চলে তৈরি হওয়া হোটেল।

প্রথমে আমরা এলাম লোলেগাঁও। এনজেপি স্টেশন থেকে গাড়িতে সাড়ে চার ঘণ্টা। এখানকার কাফেলা গেস্ট হাউজ়ের ব্যবস্থা অবশ্য মন্দ নয়, পাশের খোলা ছাদ থেকে কাঞ্চনঞ্জঙ্ঘাও দেখা যায়। আমরা চটপট লাঞ্চ সেরে বেরিয়ে পড়লাম পায়ে হেঁটে জঙ্গলের দিকটায় ঘুরতে। জায়গাটা নেহাতই ছোট্ট। এক খামচা বাড়িঘর, দোকানপাট ছাড়ালেই জিপস্ট্যান্ড। তারপরেই শুধু পাইন গাছের বাহার। সরকারি নেচার রিসর্ট ‘আরণ্যক’। একপাশে ঢালু জমিতে অনেকটা খোলা জায়গা জুড়ে, ধাপে ধাপে নেমে গেছে ছোটবড় সব কটেজ। পরিবেশ হিসেবে দারুণ, তবে নিরিবিলি ব্যাপারটা তেমন নেই বলেই মনে হল।
বেলাশেষের পড়ন্ত আলোয় এগিয়ে চললাম পাহাড় আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। পায়ে-চলা পথ এঁকেবেঁকে অনেক নীচে হয়তো কোনও গ্রামে গিয়ে মিশেছে। লোক চলাচল খুব কম, বেলা শেষের আলো-আঁধারি। এরকম রাস্তায় আগেও বহুবার হেঁটেছি, মনটা বেশ তরতাজা হয়ে যায়। তা-ও কিছুটা গিয়ে ফিরে আসতে হল। এবার দেড় কিলোমিটার দূরে রমিতে ধারায় গিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে হবে। পথ বেশ চড়াই। পনেরো মিনিট লাগল উপরে পৌঁছতে, বসার ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু কুয়াশার চোটে চারদিক তখন এতই ঝাপসা, যে গিন্নি বসে বসে পা দোলালেন, উর্বী খান দশেক হাই তুলল আর অভিজিৎ নেচার রিসর্টে থাকতে না-পারার জন্য সমানে হাহুতাশ চালিয়ে গেল। ওকে মোটেই দোষ দেওয়া যায় না, কারণ উর্বীর এক কাকা, ওঁর মেয়ে- জামাই নিয়ে ওখানকার একটা বড় কটেজে দিব্যি জমিয়ে রয়েছেন, সেটা একটু আগেই দেখে এসেছি। আমরা ওখানে বুকিং পাইনি শুনে উনি যেভাবে ঘাড় নেড়ে চুক চুক করে উঠলেন, মনে হল ফার্স্ট বয় তার ফেল করা সহপাঠীকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।

হোটেল থেকে মাইলখানেক গেলেই পাহাড়ের গায়ে ‘হেরিটেজ ফরেস্ট।’ ঢুকতে মাথাপিছু দশ টাকা। এখানকার মূল আকর্ষণ হল প্রায় দু’শো মিটার লম্বা একটা ঝুলন্ত সেতু, চারপাশের মোটা গাছের গুঁড়িগুলোর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। কাঠের পাটাতনের ওপর দুলতে দুলতে ফার, ওক, আর বার্চের গভীর জঙ্গল ভেদ করে এদিক ওদিক করলাম। সেতুর মুখেই বোর্ডে বড় বড় করে লেখা ছিল, পনেরো জনের বেশি লোকের ওঠা নিষেধ। কিন্তু দেখলাম নজরদারি করার কেউ নেই। ফলে যে যেমন খুশি যাচ্ছে আসছে। সেতুর মাঝ-বরাবর এক জায়গায় আবার সেতু থেকে একটা সরু অংশ বেরিয়ে পাশের একটা গাছের মাথায় রেলিং-ঘেরা মাচার সঙ্গে জুড়েছে। অনেকটা ট্রি-হাউসের মতো এই মাচায় দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ মজা লাগে। আমাদের তেরো বছরের ছেলে বুবুল মহাফুর্তিতে সবাইকে লজেন্স বিতরণ শুরু করে দিল। অভিজিৎ কাঁধের বিরাট ঝোলায় করে তেলরঙে ছবি আঁকার গুচ্ছের সরঞ্জাম এনেছিল। জঙ্গলের মধ্যেই এক জায়গায় ক্যানভাস-বোর্ড সাজিয়ে বসে পড়ল। আমরা ওকে রেখে অন্যদিকে পা বাড়ালাম, শুভকাজে যাতে ব্যঘাত না ঘটে, এই ভেবে।
পেন্টিং পর্ব অবশ্য বেশি দূর গড়াল না, কিছুটা খসড়া করেই অভিজিতের ধৈর্যচ্যুতি ঘটল। বুঝলাম, অনেকটা সময় ধরে খেটেখুটে কাজ করার মন নিয়ে ও আসেনি। এই ফাঁকে আমার অবশ্য টুকটাক কিছু স্কেচ হল। হোটেলের ছাদ থেকে দূরে আরণ্যকের লাল মাথাওলা কটেজগুলো কিংবা ব্যস্ত জিপস্ট্যান্ড– এইরকম কয়েক টুকরো লোলেগাঁও থেকে গেল আমার খাতায়। মোটামুটি কম সময়ের মধ্যে যেখানে সেখানে রং, তুলি, প্যালেট ছড়িয়ে বসে ছবি এঁকে ফেলাটা ততদিনে ভালই রপ্ত করে ফেলেছি। পাহাড়ি যে কোনও জায়গায় নিয়মমাফিক একটা গুম্ফা থাকবেই। লোলেগাঁও নতুন গজিয়েছে, ফলে গুম্ফাটাও একেবারে হালে বানানো। যাবার রাস্তা আমাদের হোটেলের সামনে দিয়েই। অনেকটা পাহাড় ভেঙে নামতে হয়। পথে ছোট্ট গ্রাম পড়ে, বড় ছাতার মতো ছড়ানো ফার্ন গাছে ঘেরা কাঠের বাড়ি। সামনের বারান্দায় প্লাস্টিকের প্যাকেটে রঙিন মরসুমি ফুল আর অর্কিডের মেলা, কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়াতেই হবে। ভেতর থেকে একটা পুঁচকে মেয়ে বাটি, চামচ নিয়ে বেরিয়ে এসে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য জোর খটাং খটাং আওয়াজ শুরু করল।

ঘরের চালে আনাজপাতি রোদে শুকোতে দেওয়া। সেখানে প্রায় পটলের সাইজের কমলা রঙের এক থালা লঙ্কা দেখে গিন্নির কী উত্তেজনা! বললাম দুটো চেয়ে নিতে, দুপুরে মাংসভাতের সঙ্গে জমে যাবে। গুম্ফাটা অবশ্য একেবারে ন্যাড়া গোছের। দায়সারাভাবে টুকিটাকি জিনিস দিয়ে সাজানো। রাজমিস্ত্রির কাজ শেষ হয়নি। ফলে সিমেন্ট, ধুলোবালি। তারই মধ্যে পুজোআচ্চা চলে বলে মনে হল। আমাদের হোলসেল হতাশ হতে দেখে অভিজিৎ দমাদ্দম ড্রাম পিটিয়ে কিঞ্চিৎ মনোরঞ্জনের আপ্রাণ চেষ্টা করল।
দুটো দিন লোলেগাঁওতে কাটিয়ে এবার দু’দিনের জন্য লাভা্য় থাকব বলে এলাম। ‘রক ভিউ’-তে বুকিং আছে এবং এটা আমাদের ট্র্যাভেল এজেন্ট কান্তা রায়ের নিজস্ব হোটেল। কিন্তু কোথায় রক, কোথায় ভিউ? একটা স্যাঁতস্যাঁতে ঘুপচি ঘর, ছোট্ট ঘোলাটে জানলা দিয়ে বাইরের কিছুই ঠাহর করা যায় না। তবু বড়দিনের ডামাডোলের মধ্যে জুটেছে এই ঢের। কান্তা রায়ের দেওরের নেপালি বউ নমিতা গুরুং ‘রক ভিউ’ চালান। মহিলা হাসিখুশি এবং চমৎকার চিনে খাবার রাঁধেন। তিনতলায় ছাদের লাগোয়া খাবার ঘরটাও বড়সড়। ফলে আমরা সবাই ওখানেই আড্ডা জমাতাম। অভিজিৎ নমিতাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জেনে নিল বাঙালি বাড়ির নেপালি বউয়ের যাবতীয় ইনসাইড স্টোরি। মেয়ের বাড়ি ছিল দার্জিলিংয়ে আর ছেলে মাঝে মাঝে ওখানে আসতেন মাসির বাড়ি ছুটি কাটাতে। তারপর…? নমিতা সলজ্জ হেসে নটে গাছটি মুড়োলেন… ‘তারপর ভালবাসা হয়ে গেল।’
লাভায় গিয়ে প্রথমেই আমরা নেচার রিসর্টের ভেতরে ঘুরতে গেলাম। শহর ছাড়িয়ে পাহাড়ের অন্য ধারে শুধুমাত্র পাইন আর দেওদারের ঘন বনের মধ্যে ঢালু আঁকা বাঁকা পায়েচলা রাস্তার গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মনভোলানো সমস্ত কাঠের বাড়ি! দিনের বেলাতেও কী অদ্ভুত নিরিবিলি, গা ছমছমে পরিবেশ। চারদিক থেকে কানে আসছে শুধু নানারকম পাখির ডাক। এখানে না থেকে আমরা কিনা আছি ওই ঘিঞ্জি বাজারের মধ্যে! এবার আমারও মন হু হু করার পালা। অভিজিৎরা আগের বার ছিল লেপচা কটেজের একটায়। আমরা সেখানে গিয়ে ছোট্ট সিঁড়ি বেয়ে সামনের বারান্দায় উঠে উঁকিঝুঁকি মারলাম। এখানে কটেজগুলোর এরকমই সব নাম– গোরখা, ডুকপা, লেপচা। অনেক নীচে ক্যান্টিন। তার পাশেই এক ফালি জমিতে দোলনা রয়েছে। আমার গিন্নি আর উর্বী, দু’জনে দোল খেতে শুরু করল। বুবুল আর অভিজিৎ বল লোফালুফি করতে লাগল।
সেদিন গিন্নিকে ওখানে দাঁড়িয়ে কথা দিয়েছিলাম, এরপর শুধু এখানে থাকার জন্যেই আর একবার লাভায় আসব। সেটা সত্যি হতে হতে দীর্ঘ চোদ্দো বছর লেগেছিল, এই যা। লাভা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে হল রিশপ। এমনিতে গাড়ি চলার কাঁচা, নড়বড়ে একটা রাস্তা আছে বটে, তবে আমরা যাব পায়ে হেঁটে, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, পাহাড়ের মাথায় ভিউ পয়েন্ট তিরপিনদারা হয়ে। সকাল ন’টায় সবাই বেরিয়ে পড়লাম। সঙ্গে চলল ছোকরা গাইড আর.কে গুরুং। তার হাতে মোটা লাঠি। ছেলেকেও ডাল ভেঙে একটা বানিয়ে দিল। সরু রাস্তা ওঠানামা করছে। আমরা আধঘণ্টা পর এক জায়গায় পাথরের ওপর বসলাম জিরোতে। এদিকে গুরুংবাবাজি সারাক্ষণ গোছা গোছা জংলি ভেষজ গাছপাতা সংগ্রহ করে নিজের ব্যাগে পুরে চলেছে। এসব দিয়ে নাকি ওষুধ হয়। ছেলেটি বেশ চনমনে। একবার গাছের ফোকর দিয়ে গলে যাচ্ছে, একবার লম্বা শিকড় ধরে ঝুলে টার্জানের মতো দোল খেয়ে নিচ্ছে, আবার আমরা পিছিয়ে পড়লেই লাঠি মাথার ওপর তুলে ‘আগে বাড়ো’ বলে হাঁক দিচ্ছে।

ভিউ পয়েন্ট জায়গাটায় বড় বাঁধানো চাতাল করা। পা ছড়িয়ে বসাও যায়। সামনে অবশ্য শুধুই কুয়াশা। মিনিট কুড়ি অপেক্ষার পর আবছাভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন হল বটে, কিন্তু ততক্ষণে একদল আগমার্কা বাঙালি টুরিস্ট এসে পড়ায় আশপাশে মহা হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। এদের মধ্যে একজন মাতব্বর গোছের লোক ‘অ্যাই ঘোঁতন’ বলে এমন হুঙ্কার ছাড়ল, যে আমায় মাঝপথে ভিডিও করা থামিয়ে দিতে হল। এরা এসেছে রিশপ থেকে। বড়জোর আধঘণ্টার পথ এবং সবটাই নেমে যাওয়া।
বেলা বারোটার মধ্যে আট হাজার ফিট উঁচু রিশপে পৌঁছে গেলাম আমরা। তখন ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে সদ্য গজিয়ে উঠছে পাহাড়ি একচিলতে গ্রামটা। গুটিকয় থাকার জায়গা হয়েছে বটে, তবে তেমন আরামদায়ক কিছু নয়। বেশির ভাগ ছেলেছোকরাই এখানে ট্রেক করে আসে, যেমন তেমনভাবে থাকতে যাদের অসুবিধে নেই। গুরুং অবশ্য আমাদের সোজা নিয়ে গিয়ে তুলল একটা চমৎকার খোলা চত্বরে, যার পাশেই সাজানো-গোছানো টানা বারান্দাওলা বড় কটেজ। বাইরে সাইনবোর্ডে লেখা– সোনাখারি ট্যুরিস্ট লজ।

রঙিন বাগান-ছাতার নীচে চেয়ারটেবিল পাতা। আমরা জমিয়ে বসলাম। ট্রেকিং করে সবাই ক্লান্ত হলেও মনে মনে বেশ উত্তেজিত। পাহাড় বেয়ে নামার সময় একজায়গায় আমার গিন্নি সামান্য পা হড়কেছিলেন এবং পাকেচক্রে সে দৃশ্য ভিডিওতেও উঠে গেছে। এটা নিয়ে আমি ঠাট্টা করায় উনি ফোঁস করে উঠলেন, ‘অভিজিৎ কী সুন্দর সারাক্ষণ উর্বীর হাত ধরে ওঠানামা করিয়েছে ! আর তুমি?’ কী মুশকিল! ওদিকে মন দিলে তোমাদের এই দুঃসাহসিক কীর্তিকলাপের রেকর্ডিংটা কে করত শুনি? সেই ভিডিও আজও দেখতে বসলে ওই জায়গাটা ইচ্ছে করে বারবার রিওয়াইন্ড করি, আর গিন্নিও একইভাবে আমার বিরুদ্ধে সেই পুরনো অভিযোগটা জানাতে থাকেন।
সোনাখারির ছাতার তলায় স্কেচের খাতা বার করে বসলাম। উল্টোদিকের পাহাড়ের দৃশ্যটা আঁকার পক্ষে চমৎকার। গিন্নি তখন উর্বীকে নিয়ে বসে গেছেন মেনু ঘাঁটতে। দুপুরের খাওয়াটা এখানেই হবে। আঁকা শেষ হতে না হতেই দেখি নিঃশব্দে এসে খাতার পাতা ওল্টাতে শুরু করেছেন একজন। নীল টুপি আর খয়েরি সোয়েটার গায়ে, হালকা দাড়িওলা মাঝবয়েসি ভদ্রলোককে দেখেই বুঝলাম বাঙালি। আলাপ হল। ওঁর নাম সঞ্জয় সিংহ। সম্প্রতি এখানে হোটেলের ব্যবসা শুরু করেছেন। কলকাতায় থাকেন গড়িয়ায়। সঞ্জয়ের চেহারা আর ব্যবহার দুটোই খুব সুন্দর। এখানে সবার সঙ্গে বেশ মিলেমিশে গেছেন। ওঁর হোটেল ‘গ্রিন ভিউ লজ’ একটু নীচের দিকে। আমরা গিয়ে দেখে এলাম। ভিউ টিউ ভাল, তবে ঘরগুলো বড্ড চাপা। মুখে অবশ্য বলে এলাম, পরের বার এলে এখানেই থাকব। সঞ্জয় মুচকি হাসলেন। কথাটা বিশ্বাস করলেন কিনা কে জানে।
আগে থেকে বলা ছিল না। তাই দুপুরের খাবারে ডিমের কারির বেশি কিছু এরা বানাতে পারল না। সঙ্গে আলু ফুলকপির তরকারি। তবে ভাত থেকে শুরু করে সবই ছিল একেবারে ধোঁয়া-ওঠা। সেই সঙ্গে দুই পরিচালিকার উষ্ণ আপ্যায়ণেও কোনও ঘাটতি হল না। ওরই মধ্যে সঞ্জয় একটা খুদে ছেলের হাত ধরে নিয়ে এসে হাজির। ‘একঠো পোয়েম সুনা দো’ বলতেই হাসিখুশি বাচ্চাটি শরীর দুলিয়ে আমাদের ‘টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার…’ শুনিয়ে সবার হাততালি কুড়িয়ে নিল। এবার লাভা ফেরার পালা। নামার সময় গাড়ির রাস্তাটাই নেওয়া হল। কিন্তু ঘন কুয়াশার চোটে কে যে কোথায় রয়েছে সেটা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। লাভা পৌঁছতে তিনটে বাজল। ছাড়াছাড়ি হবার সময় গুরুং যথানিয়মে বলল ‘আগলে বার আইয়েগা তো ফির মুলাকাত হোগা।’ সবাই জানে এসব নেহাতই সৌজন্যের খাতিরে বলা। নাহলে ওদের মতো খেটে খাওয়া মানুষ পেটের ধান্দায় কোথায় ছিটকে যায়, কে বলতে পারে।

পরের দিন সকালে উঠে এখানকার গুম্ফাটা দেখতে গেলাম একাই। সামনের জঙ্গল আর বাড়িঘরগুলোর একটা স্কেচ হল। বাকিরা গোছগাছে ব্যস্ত। একটু পরেই রওনা দেব রাবাংলার উদ্দেশে। বছরের শেষ ক’টা দিন ওখানেই কাটবে। গুম্ফা থেকে ফেরার পথে দূর থেকে গুরুংকে দেখে হাত নাড়লাম। কুয়াশার মধ্যে আমাকে দেখতে পেয়েছিল কিনা বুঝতে পারলাম না। ছেলেটাকে একদিনেই বেশ ভাল লেগে গিয়েছিল। আবার কবে এদিকে আসব, এলেও ওর সঙ্গে দেখা হবে কিনা, চিন্তা করতে করতে হোটেলে ফিরলাম। গুরুংয়ের সঙ্গে কিন্তু বছর তিনেক বাদে আশ্চর্যভাবে দেখা হয়ে গিয়েছিল। সিকিমের ‘উত্তরে’ বলে একটা গ্রামে, একেবারে ওর বাড়ির সামনে, যখন ওদের সব থেকে বড় পরব ‘লোসার’ চলছে, ঠিক সেই সময়। সেদিন ও-ই চিনতে পেরে নিজে থেকে আমায় হাত নেড়ে ডেকেছিল, ওদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। সে গল্প আবার পরের কোনও পর্বে শোনানো যাবে।
*লেখার সঙ্গে ব্যবহৃত সব স্কেচ লেখকের করা।
স্বনামধন্য এই অঙ্কনশিল্পী নিজেই এক সম্পূর্ন প্রতিষ্ঠান | তাঁর হাত ধরে নতুন করে প্রাণ পেয়েছে বাংলার কার্টুন শিল্প | সিগনেচার বেড়াল আর স্ব-নেচারটি কোমল, আত্মবিশ্বাসী, রসিক | বেড়ানো তাঁর নেশা | তাই ঝুলিতে রয়েছে বহু গল্প, সঙ্গে অসাধারণ সব স্কেচ | সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নিরলস সাধনার অমর ফসল ‘রঙ তুলির সত্যজিৎ’ |
Excellent
live like script
Just fabulous,
Just fabulous