মুন্সিয়ারিতে জমিয়ে তেরাত্তির কাটিয়ে চতুর্থ দিন সকাল নটার মধ্যে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। এবার ধাপে ধাপে ফেরার পালা। প্রথমে থামব চৌখোরি-তে, মেরেকেটে ঘণ্টা তিনেকের পথ। কিন্তু লেগে গেল আরও অনেক বেশি। কারণ মেঘ, কুয়াশা,আর হালকা বৃষ্টি মিলিয়ে ওয়েদার বাবাজি ভীষণ দুর্ব্যবহার শুরু করলেন। আমাদের মুড অফ, গিন্নি অবশ্য তারই মধ্যে থেকে থেকে পাহাড়ের গায়ে রডোডেন্ড্রনের ঠাসা জঙ্গলগুলো দেখে উল্লসিত হয়ে উঠছিলেন।
— আপকো ফুল চাহিয়ে ?
শেষে ড্রাইভার রাকেশ গাড়ি থামাল। যদিও দেখলাম ফুলের নাগাল পাওয়া শক্ত। হয় অনেক উঁচুতে নয়তো খাদের দিকে ঝুলে রয়েছে।ট্র্যাপিজের খেলা জানা থাকলে তবু কথা ছিল। ওদিকে রাকেশকে তখন শিভালরি দেখাতেই হবে। পাহাড়ের গা বেয়ে স্পাইডারম্যানের মতো সড় সড় করে উঠে গিয়ে ফুলে উপচে পড়া তাগড়াই একটা ডাল ভেঙ্গে এনে ম্যাডামকে ভক্তিভরে নিবেদন করে ছাড়ল।

Choukhori
হোটেলের বারান্দা থেকে আঁকা চৌখোরির দৃশ্য। লেখকের তুলিতে।

চৌখোরি পৌঁছলাম বেলা দুটো নাগাদ। বেশ ছড়ানো খোলামেলা জায়গায় কেএমভিএন-এর ঝকঝকে দোতলা লজ, ফুলের কেয়ারি করা ঘাসজমি, সামনে ঢালুতে ছোট ছোট কটেজ। কিন্তু কপাল মন্দ। আপাতত সিমেন্ট ,বালি, মিস্ত্রি, মজুর মিলে তেড়ে সারাইয়ের কাজ চলছে আগাপাশতলা। একেবারে গায়েই রয়েছে সদ্ভাবনা রিসর্ট, একেবারে মাছি মারছে। দোতলায় বড়সড় ঘর দিয়ে দিল প্রায় জলের দরে। লাগোয়া বারান্দায় পা ছড়িয়ে বসলাম। ম্যানেজার জানাল সামনেই রয়েছে নন্দাদেবী, নন্দাকোট, পঞ্চচুল্লি রেঞ্জ। হয়তো ছিল, কিন্তু এখানে বসে দুদিনের মধ্যে তাদের টিকিও দেখা গেল না। চারদিকে ভয়ঙ্কর কুয়াশা, মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি।

কিছুটা আন্দাজে আন্দাজে বিকেলটা এদিক ওদিক ঘুরলাম। নতুন জায়গায় এসে এমন হলে মেজাজ বিগড়ে যায়। সন্ধ্যেবেলা রাকেশ এসে জানাল কাল ‘হিরণ’ দেখাতে নিয়ে যাবে। হিরণ মানে সেই কস্তুরি মৃগ। এখানে এদের নিয়ে একটা রিসার্চ সেন্টার আছে মাইল পাঁচেক দূরে। আমরা একবাক্যে রাজি। হোটেল থেকে বেরিয়ে সামনেই রাস্তার ওপর ন্যাড়া গোছের একটা ছোট ধাবা দেখেছিলাম। টুকটাক রান্নার সরঞ্জামও ছিল। সকালে নাস্তার খোঁজে একবার ঢুঁ মারলাম। কাউন্টি ক্যাপ পরা মালিক আর তার বৌ বসেছিল খদ্দেরের আশায়। আলু পরোটার অর্ডার পেয়ে মহা উৎসাহে লেগে পড়ল। একজন আটা বেলে তো অন্যজন পেঁয়াজ কাটে। সামনের দাওয়ায় সস্তা প্লাস্টিকের টেবিল আর গুটিকতক চেয়ার পাতা। তবে পরিষ্কার,পরিচ্ছন্ন। হিমসাগর রেস্তোরাঁ বলতে আপাতত এই। ঝোল ঝোল আলুরদম আর পরোটা এনে হাজির মালিক দারবান সিং ধামি। ধবধবে ফর্সা, সৌম্যদর্শন, সঙ্গে রাজ কাপুর মার্কা গোঁফ। বললাম চলো তোমার একটা স্কেচ হয়ে যাক।

Choukhori
ধাবা মালিক দারবান সিং ধামি আর তার বৌ। স্কেচ – লেখক।

কস্তুরি মৃগের আস্তানাটি পাহাড়ের একেবারে টঙে। গাড়ি রেখে পাক খাওয়া পাথুরে রাস্তা ধরে উঠতে হয়। চারদিকে লাল হয়ে রয়েছে রডোডেনড্রনের জঙ্গল। এবার একটা ঘেরা জায়গা, গেট দেওয়া আর সামনে গাছের গায়ে লটকানো রয়েছে কী কী মানা হ্যায় তার লম্বা একটা ফর্দ। এর প্রথমটাই অবশ্য আমরা ঝোঁকের মাথায় অমান্য করে ফেললাম। যে লোকটি গাইড হয়ে সঙ্গে এসেছিল, দূর থেকে সেই নিচে জালের ওপাশে থাকা হরিণটিকে দেখাল এবং উস্কানি দিল… ‘ফোটু লেনা হ্যায় তো ফটসে লে লিজিয়ে।’ ওর সাগরেদ তখন একটা হরিণকে তাড়িয়ে অনেকটা সামনে এনে ফেলেছে। বুঝলাম এদের সব ছক করা আছে। নেহাত বিরল প্রজাতির তাই ছবি তুলে রাখা। নইলে জন্তুটিকে দেখতে মামুলি হরিণের মতোই। আহামরি কিছু নয়। তার ওপর মুখের দু’পাশ দিয়ে শিঙের মত লম্বা দাঁত বেরিয়ে দেখতে একটু কিম্ভুত করে তুলেছে। আসার আগে লোকটার হাতে গোটা কুড়ি টাকা গুঁজে দিলাম।

চৌখোরির ঘোলাটে অবস্থা শেষ অবধি আর কাটল না। দূরের দৃশ্য সবই আবছা। তাও পাহাড়ের ঢালু বেয়ে ওঠানামা করে গাছপালার মধ্যে বেশ নির্জন পরিবেশ খুঁজে নিলাম। সময়টা বেশ কাটল, ছবিও আঁকা হল কিছু। ছুটি একেবারে শেষের দিকে… হাতে মাত্র একটা দিন। সেটা কাটাব সাততালে। যাবার পথে শুধু পাতাল ভুবনেশ্বর ঘুরে নেব। ভেবেছিলাম আর একটা গতানুগতিক মন্দির টন্দিরওলা ধর্মস্থান হবে বোধহয়। কিন্তু দেবদর্শন করতে গিয়ে শেষে কতখানি শরীরের কসরত (ক্লস্ট্রোফোবিয়ার সমস্যা আছে তাই মানসিকও) দেখাতে হবে কল্পনাও করিনি। উঁচু পাহাড়ের ধার ঘেঁষে রেলিং ঘেরা রাস্তা এঁকেবেঁকে পৌঁছেছে একটা কোটরের মুখ পর্যন্ত। কোল্যাপসিবল গেটের ওপাশে সরু সুড়ঙ্গ, যেটা সটান নেমে গিয়েছে অনেক নিচে। ওইখানেই কোথাও দেবতারা ভক্তদের পথ চেয়ে বসে আছেন।

একপাশে খাঁচার মতো একটা অফিসঘর। টিকিট কেটে ব্যাগ, ফোন, ক্যামেরা ইত্যাদি জমা দিয়ে তারপর পাতালপ্রবেশের পালা। সঙ্গে গাইড থাকলে ভালো, কিন্তু অত সকালে তেমন কারও পাত্তা পাওয়া গেল না। কিছুক্ষণ পর হেলতে দুলতে এলেন এক পুরুতমশাই। নিচে গুহায় নেমে রোজকার মতো পুজোআচ্চা করবেন। আমাদের উনি সঙ্গে যাবার জন্য ডেকে নিলেন। কিন্তু সুড়ঙ্গের সামনে গিয়ে এক ঝলক উঁকি মেরে আমার তো হাত পা ঠান্ডা হবার যোগাড়। প্রায় আড়াইশো ফুট গভীর এই পথ ধরে একজন মাঝারি সাইজের লোক কোনওক্রমে নামা ওঠা করতে পারবে, তাও এলোমেলো পাথরের খাঁজে পা রেখে আর দুহাতে লোহার শিকল আঁকড়ে রীতিমতো হাঁচোড় পাঁচোড় করে। দেখলাম ওই নাদুসনুদুস বয়স্ক পুরুতটি কিন্তু দিব্যি সড়সড়িয়ে নেমে গেলেন এবং তাঁর পিছনে আমার গিন্নিও। কী আর করি, বুকে যাবতীয় সাহস জড়ো করে জয় মা বলে ঝাঁপ দিলাম এবং ফিটনেস-এর পরীক্ষায় শেষমেষ উৎরেও গেলাম।

সুড়ঙ্গের শেষে একটা হলঘরের মতো বড় গুহা, হালকা আলোরও ব্যবস্থা আছে। পুরুতমশাই কাজ শুরুর আগে আমাদের ঘুরিয়ে দেখালেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের পাথর, যার কোনওটা গণেশের, কোনওটা হনুমানের মতো আকৃতি। একটা আবার শিবলিঙ্গ, যার ঠিক মাথার ওপর থেকে টুপ্টুপ করে জলও পড়ে চলেছে। ইনিই তাহলে পাতাল ভুবনেশ্বর! মনে হল প্রকৃতি এখানে সব দেবদেবীকে যেন নিজের হাতেই যত্ন করে গড়ে রেখেছে। বেশ একখানা তাজ্জব বনে যাবার মতো ব্যাপার বটে।

Patal Bhubaneshwar
পাতাল ভুবনেশ্বরের টুরিস্ট লজ। স্কেচ – লেখক।

আমরা মিনিট পনেরো-কুড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। আর দ্বিতীয় কোনও দর্শনার্থী চোখে পড়ল না। ফাঁকায় দাঁড়িয়ে উল্টো দিকের পাহাড়ের গায়ে দেওদার বনের ধারে সরকারি টুরিস্ট লজের একটা স্কেচ করলাম। এক আধ দিন থাকার জন্য এই জায়গাটি মন্দ নয়। লোকে আসেও নিশ্চয়ই। এখানকার এই ছোট্ট অ্যাডভেঞ্চার আমাদের বেশ চনমনে করে তুলেছিল। সেইসঙ্গে খিদেও পেয়েছিল জোর। রাকেশের ঠিক করাই ছিল, ঘণ্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে ধাউলচিনা বলে একটা জায়গায় এসে থামল। ভিড়ভাট্টা ছাড়িয়ে বেশ ফাঁকায় একটা বড় দোতলা বাড়ির নিচে একটা রেস্তোরাঁ। এ পথে বিস্তর লোকের গাড়িতে যাতায়াত, দোকানটিও সবার মনপসন্দ। ফলে জায়গা পেতে দেরি হল। সেই ফাঁকে পিছনের একটা গ্রামের স্কেচ করে নিলাম।

ভোজন পর্ব সেরে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করলাম ভীমতাল হয়ে সাততালের উদ্দেশ্যে। ভীমতালকে পাশ কাটানোর সময় ওপর থেকে দেখলাম জায়গাটা বেশ জমজমাট। ফিরতি পথে এখানে একটু  ঘুরে নেবার কথা হল। বিকেল পড়ে আসছে এদিকে। তখনও সাততালের দেখা নেই। রাকেশ খালি অভয় দিচ্ছে ‘অওর থোড়া আগে’ বলে। গাড়ি খাড়াই পাহাড়ে চড়তে লাগল। চারদিকে ঘন জঙ্গল। একটা বাঁকের মুখে এসে রাকেশ গাড়ি থামাল। গাছ পালার ফাঁক দিয়ে অনেক নিচে চোখে পড়ল জল চিকচিক করছে। এখানে জলাশয় আসবে কোত্থেকে? পাহাড় টপকে যখন সাততাল পৌঁছলাম প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে। ঝিরঝিরে বৃষ্টিও পড়ে চলেছে সমানে। লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন একফালি ছোট্ট জায়গা। মাঝখানে ছড়িয়ে আছে বিশাল লেক বা তালাও। দেখলাম হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় সব সুনসান, রীতিমতো গা ছমছমে পরিবেশ। জলের ধার বরাবর রাস্তা গেছে আর তার ওপরেই কেএমভিএন-এর একতলা বাংলো। টানা বারান্দার কোলে গোটা দশেক ঘর। কেয়ারটেকার নন্দকুমার চটপটে লোক। আমাদের একেবারে শেষে তিনদিকে জানলাওলা ঘরটা দিল। পিছনেই পাহাড়ের গা বেয়ে পাইনের জঙ্গল ঘুটঘুটে অন্ধকারে মিশে রয়েছে, বেশ থ্রিলিং পরিবেশ যাকে বলে।

Sattal
সাততালের সেই দ্বীপ। লেখকের করা স্কেচ।

গরম জলে আরাম করে চান সেরে গিন্নি আর আমি দু’জনে বারান্দায় গুছিয়ে বসলাম কফি নিয়ে। ওদিকে রাতে চাপাটি আর মুর্গির কারি বলা হয়েছে। খেয়ে দেয়ে সোজা ডবল কম্বলের নিচে। পরদিনই ফেরা, তাই যতটা পারি ঘুরে নিই ভেবে বেশ ভোরেই উঠে বেরিয়ে পড়লাম। জলের ধার দিয়ে ঘুরে বেড়ালাম। ছোট সাঁকো পেরিয়ে চলে গেলাম একটা দ্বীপে। রাতে খেয়াল করিনি, এখন চোখে পড়ল রেলিং ঘেরা লেকের যে খোলা অংশ দিয়ে ঢুকে জলের ধার পর্যন্ত যাওয়া যায়, তার দু’পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রচুর অস্থায়ী চা, শরবত, পুরি তরকারি আর চাটের দোকান। আজ শনিবার, তাই চারদিকে সাজো সাজো রব। ময়ূরপঙ্খি ডিজাইনের সব শিকারা প্রস্তুত জলবিহার করানোর জন্য। মাঝিরা ঝুলোঝুলি শুরু করল, সাতখানা তালাও-ই ঘুরিয়ে দেখাবে,যার থেকে এর নাম। এ যাত্রায় হবে না, হাতে গোনা সময়। আমার ইচ্ছে ঘুরে ঘুরে কিছু স্কেচ করার।

প্রথমে ওই দ্বীপটায় গিয়ে সাজিয়ে  বসেছিলাম। কিন্তু ওখানে যে একপাল বাঁদরের বাস এবং তারা যে আমায় আঁকতে দেখে রীতিমতো কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড বাধিয়ে দেবে কে জানত। পারলে আমার রঙের বাক্স আর খাতা পর্যন্ত এরা খামচে নিয়ে পালায় আর কি। গিন্নি পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দেবার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বটে, কিন্তু শেষে ওঁর সাধের সানগ্লাসকে টার্গেট হতে দেখে আমরা মানে মানে কেটে পড়লাম। মনে হল এবার দোকানের লোকগুলোর সঙ্গে একটু ভাব জমানো যাক। সুরিয়া টি স্টল চালায় গোবিন্দ সিং। জলের ধারে লাল প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল সাজিয়ে রাখছিল। শান্ত হাবভাব, তবে চোখের চাউনি বেশ ধারালো আর নাকের নিচে মস্তানমার্কা গোঁফ। এখানে সবার গোঁফ বেশ কায়দা করা এটা খেয়াল করেছি। গোবিন্দর একটা পোর্ট্রেট আঁকলাম ওরই চেয়ারে বসিয়ে। সঙ্গে টুকটাক কথাও হল। এটা ওদের দু’পুরুষের ব্যবসা। তাছাড়া চাষবাষও করে। তবে নিজের ছেলেকে অবশ্য দিল্লিতে আলাদা দোকান করে দিয়েছে।

Rajendra Singh
বাহারি চুলের রাজেন্দ্র সিং। লেখকের করা স্কেচ।

পাশে সরবতের স্টল রাজেন্দ্র সিংয়ের। এর আবার গোঁফের পাশাপাশি চুলের বাহারটিও দেখার মতো। লোকটি হুঁশিয়ারও বটে। আমরা সরকারি লজে উঠেছি, বাঙ্গালী আদমি সব কিছু লক্ষ্য করেছে। দুপুর বারোটা নাগাদ সাততাল ছেড়ে বেরিয়ে পড়া গেল। ততক্ষণে জলের ধারটা প্রায় রথের মেলার চেহারা নিয়েছে। গাড়ি আর বাস বোঝাই পিকনিকের দল একের পর এক এসেই চলেছে। তুমুল হইহট্টগোল চারদিকে। কালকের সেই নিঝুম পরিবেশটা একেবারে উধাও। আরও হাজারটা জায়গার মতো এখানেও শনি-রবিবারগুলো এরকমই হয়।রামপুর কিংবা হলদোয়ানির মতো আশপাশের সমতল থেকে অনেকেই পাহাড়ে উঠে আসে বেড়াতে।

Noukuchiatal
নৌকুচিয়াতালের দৃশ্য। লেখকের তুলিতে।

আমাদের ফেরার ট্রেন সেই সন্ধ্যেবেলা। তাই পথে নৌকুচিয়াতাল আর ভীমতালে কিছুক্ষণ কাটাব। নটা কোণ আছে বলে নৌকুচিয়া, তালটিও অনেক ছড়ানো। একপাশে সরকারি লজটিও বেশ বড়সড় আর কেতাদুরস্ত। আমাদের গোড়ায় এখানেই থাকার কথা ছিল। আমাদের নির্জনতা পছন্দ বুঝে রাকেশই বুদ্ধি করে সাততাল নিয়ে গেল। এই জায়গাটা বাড়িঘর দোকানপাট মিলিয়ে বেশ ঘিঞ্জি। তালাওয়ের ধার ঘেঁষে অবশ্য পুরোটা চক্কর লাগানো যায়। একটু ফাঁকা দেখে ছবি আঁকতে বসে গেলাম। জোরে জোরে ঘণ্টার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। কাছেই একটা মন্দির। লোকে যাতায়াতের পথে ভিড় জমিয়ে ফেলল আমার চারপাশে। তবে কেউ রং, তুলি নিয়ে টানাটানি  শুরু করল না এই যা রক্ষে। রাকেশকে বলেছিলাম দুপুরে খেয়ে নিতে। আমরা ভারি ব্রেকফাস্ট সেরে এসেছি। তাই আজ লাঞ্চ বাতিল।

Noukuchiatal
নৌকুচিয়াতালের নৌকোর ঘাট। স্কেচ লেখকের করা।

একদম শেষে ভীমতালে হাজির হলাম। পাহাড় ঘেরা মহাব্যস্ত একটা শহর। অনেকটা হাতের কাছে নৈনিতালের মতোই। চারদিকে শুধু হোটেল, রেস্তোরাঁ আর বাজারে ছয়লাপ। লোকের ভিড় দেখে মনে হল ঠিক যেন গড়িয়াহাটে চৈত্র সেল চলছে। এদিকে বিকেল চারটে বাজতেই না বাজতেই রাকেশ উশখুশ শুরু করল। আমাদের লালকুঁয়া ছেড়ে ওকে আবার আলমোড়া ফিরতে হবে। তাছাড়া মনে হল  ওখান থেকে কোনও পার্টিকে বোধহয় তুলে আনার রফা হয়েছে। ওর কাঁধে হাত রেখে একটা ছবি তুলে নিয়ে বললাম, ‘বেশ, চল তাহলে আর মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই। স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসে ট্রেনের অপেক্ষা করতে করতে না হয় কুমায়ুঁর ডায়েরির বাকি থেকে যাওয়া কথাগুলো লিখে ফেলা যাবে।’

Debashis Dev

স্বনামধন্য এই অঙ্কনশিল্পী নিজেই এক সম্পূর্ন প্রতিষ্ঠান | তাঁর হাত ধরে নতুন করে প্রাণ পেয়েছে বাংলার কার্টুন শিল্প | সিগনেচার বেড়াল আর স্ব-নেচারটি কোমল, আত্মবিশ্বাসী, রসিক | বেড়ানো তাঁর নেশা | তাই ঝুলিতে রয়েছে বহু গল্প, সঙ্গে অসাধারণ সব স্কেচ | সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নিরলস সাধনার অমর ফসল ‘রঙ তুলির সত্যজিৎ’ |

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *