এই পঞ্চাশ পেরনো দেহে সব সহ্য হয়, অমিতাভের অপমান সহ্য হয় না।
বসের ও সহকর্মীদের গালাগাল, আত্মীয়-পরিজনের চাল, সব সহ্য করে নিতে পারি। কিন্তু অমিতাভের অপমান?
এখনও শিরদাঁড়া দিয়ে গরম স্রোত বয়ে যায়!
‘পিকু’ ছবিতে গাড়ির ওপর কমোড আর ইরফান খানের তাকে সিংহাসন বলে সম্বোধন করা দেখে যারা খিক্‌খিক্‌ করে হেসেছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি, পারবেন তো ওই সিংহাসন ছাড়া সাম্রাজ্য সামলাতে?
ইরফান সাংঘাতিক বড় অভিনেতা। শুধু অভিনেতা কেন, তাঁর শেষের দিকে এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে যে রেলযাত্রার কথা বলেছিলেন, তা থেকেই বোঝা যায় কতটা গভীর চিন্তার মানুষ ছিলেন তিনি।

আপনাদের কি মনে হয় উনি শুধু সংলাপ বলেছিলেন? যদি গভীর এক উপলব্ধি না থাকত ওই কমোডকে সিংহাসন বলার সময়, দর্শকদের কি ওই সংলাপ এতটা নাড়া দিত?
ভুলে গেলে চলবে না যে জয়পুরে বড় হওয়া, প্রথম জীবনে সকালে উবু হয়ে বসা ইরফান ধাপে ধাপে ওপরে উঠে একসময় নিজেও সেই সিংহাসনে বসেছেন এবং তার অপরিহার্যতার কথা জেনেছেন, বুঝেছেন, উপলব্ধি করেছেন। তাই এত প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেছেন।
কারণ এই উপলব্ধি শুধু তাঁর নয়, আমাদের সব্বার। 

Toilet
পিকু ছবিতে ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়রূপী অমিতাভ বচ্চনের সেই ‘সিংহাসন’। ছবি – dailymail.com

আমার মাতৃদেবীর ছিল দু’টি ব্যাপারে প্রবল অনীহা। ভুল উচ্চারণের প্রতি তাঁর অনীহার কথা তাঁর ছাত্রীরা জানে। যেটা জানে না, সেটা হচ্ছে আমার কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রতি মায়ের অ্যালার্জির কথা, যেটা হাড়েহাড়ে আমি জানি। শুনেছি তিন-চার বছর বয়েসে আমি কাকুর বর্ধমানের বাড়িতে মায়ের হাতে পানের বোঁটা দেখে সভয়ে চিৎকার জুড়েছিলাম “হে মা কালী, এখানে তুই পানের বোঁটা কোথায় পেলি!” শুনে সাহিত্যের দিদিমণি মায়ের আরাধ্য গুরুদেবের ‘ছেলেবেলা’তে উল্লিখিত “জল পড়ে পাতা নড়ে”র কথা মনে পড়েছিল, আর আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। সেই স্বপ্ন পরবর্তীকালে যদিও মাকে ছেড়ে চলে যায়, কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য আর যেখানে সেখানে ছড়ানোর অভ্যেস আমায় কোনওদিন ছেড়ে যায়নি। মায়ের গুরুদেব না হোক, আমি আমার গুরুদেবের অভিনীত চরিত্রের মধ্যে ঠিক নিজেকে খুঁজে নিয়েছিলাম। 

বড় হয়ে বুঝি, পেট পরিষ্কার রাখা নিয়ে মায়ের মনোযোগের কারণ হয়তো আমার মাতুলালয়ের সেই ঘর, যার এক প্রশস্ত উঠোনকে ঘিরে তিনদিকে দোতলায় ঘরের সারি, আর একদিকে শুধু একটা ঘর। তা-ও অন্য ঘরগুলোর লেভেলে নয়, বেশ কয়েকটা সিঁড়ি চড়ে সেই ঘরে পৌঁছনো যায়।
বাড়ির সবচেয়ে উচ্চমার্গের ঘর সেটা।
সেখানে প্রবেশের ড্রেস কোড গামছা। সিঁড়ির তলা থেকে গাড়ুতে জল ভরে হাতে নিয়ে সেই ঘরে প্রবেশ করতে হত যে গাড়ুর সঙ্গে সরস্বতী প্রেসের ‘ছবিতে রামায়ন’ আর ‘ছবিতে মহাভারত’-এ ঋষিদের কমণ্ডুলুর অদ্ভুত সাদৃশ্য। শান্তিনিকেতনের পরিবেশে বড় হওয়া ছোটমামির ক্ষেত্রেও এ নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি।
তাই সে ঘরের যাত্রাপথে মনের ব্যাক‌গ্রাউন্ডে (অন্তত আমার!) শঙ্করাচার্যের মোহমুদ্গর ধ্বনিত হওয়াটা মোটেই অতিনাটকীয় ছিল না। সেই উচ্চমার্গ থেকে নিক্ষেপিত বর্জ্য গিয়ে পড়ত একতলায় পাতা এক ডাবায়, যেটা পরিষ্কার করার জন্যে নির্দিষ্ট মানুষের আলাদা প্রবেশপথ ছিল। এই বাড়িতে বড় হয়ে ওঠা মাতৃদেবী প্রাতঃকৃত্যকে লঘু করে দেখলে বিরূপ হবেন, এটাই স্বাভাবিক! 

তিনদিকে দোতলায় ঘরের সারি, আর একদিকে শুধু একটা ঘর। তা-ও অন্য ঘরগুলোর লেভেলে নয়, বেশ কয়েকটা সিঁড়ি চড়ে সেই ঘরে পৌঁছনো যায়। বাড়ির সবচেয়ে উচ্চমার্গের ঘর সেটা।

দীপের বাড়ি আমার বাড়ি থেকে একশো গজ দূরে।
তাই রাতে ওদের বাড়িতে থাকলেও সকালে বাড়ি চলে আসতাম পেটের তাগিদে।
এক সকালে বাড়ি পর্যন্ত আসার অবস্থায় ছিলাম না বলে দীপদের সনাতনী ভারতীয় মন্দিরেই আগের দিনের মায়া ত্যাগ করতে দৌড়লাম।
দীপদের বাড়ির প্রাতঃকৃত্যের মন্দিরের প্রবেশপথ ছিল সিঁড়ি দিয়ে নেমে একটা সরু গলির শেষ মাথায়। দরজা বন্ধ করে দেখি বিপরীত দিকেও আর এক দরজা। পাত্তা না দিয়ে সাধনায় মনোনিবেশ করলাম। আমি সবে মাঝপথে, হঠাৎ দড়াম করে ওপাশের বন্ধ দরজাটা খুলে গেল!
দেখি এক মহিলা ভেতরে ঢুকছেন।
আমায় দেখে থমকে গিয়ে বেরিয়ে গিয়ে দরজা টেনে দিয়ে গর্জন “অসভ্য ছোটলোক! দরজা বন্ধ করতে পারে না!”
আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পাশের বন্ধ দরজা আর সামনের দরজা দেখতে দেখতে কোনওমতে মন্দির থেকে বেড়িয়ে হাঁকপাঁক করতে করতে দীপের ঘরে পৌঁছে ঘটনার বর্ণনা দিলাম।
দীপ নির্বিকারচিত্তে বলল, “ওঃ! তোকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। ও পাশের দরজাটাতে বাইরে থেকে হুড়কো দিয়ে বসতে হয়। পাশের বাড়ির আর আমাদের কমন টয়লেট! হুড়কোর পজ়িশন থেকে ওরা বুঝে যায় এ পাশের লোক আছে ভেতরে।”
বিলুর হ্যাহ্যা হাসি দেখে বুঝেছিলাম বিলু কেন দীপের বাড়ি থেকে সক্কাল বেলা আমার সঙ্গে আমার বাড়ি চলে আসত! 

প্রবীর আরজি করের যে মেসে থাকত, সেটা আমাদের সপ্তাহান্তের আড্ডা হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ ছিল মেসের রাঁধুনি মুকুন্দর ফাটাফাটি ডিম ভুজিয়া।
ওকে দু’পেগ দিয়ে দিলেই অফুরন্ত যোগান। কোনও বিরক্তি নেই।
রাতের জল-স্থলের কাজিয়ায় একদিন ভোরে পেটের মধ্যে সুনামি শুরু হল।
প্রবীর বলল “গামছা পরে যা। তোর যা অবস্থা, জামাকাপড় খোলার তো সময় পাবি না।”
ঝট করে গামছা পরে গন্তব্যের জন্যে পা বাড়িয়ে থমকে গেলাম। মূল বাড়ির সঙ্গে গন্তব্যের মাঝে একটা কাঠের পাটাতন পাতা।
একটু এদিক ওদিক হলেই সটান তিনতলা থেকে একতলায় দড়াম। বাঁচার কোনও চান্সই নেই। ঝোড়ো হাওয়ায় গামছা সামলে যখন পা টিপে টিপে গন্তব্যে পৌঁছেছিলাম, কেন সেখানে এসেছি সেটা প্রায় ভুলতে বসেছি।
কোষ্ঠকাঠিন্য স্বমহিমায় হাজির। আবার পা টিপে টিপে ফেরার পথে মনে পড়লো অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ শৈলেন ভট্‌চাজের স্মৃতিরোমন্থন এক আড্ডায়। ১৯৫২ সালে তিনি যখন কলেজ থেকে পাশ করেন, তখনই এই বাড়িটা পরিত্যক্ত ছিল! 

আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পাশের বন্ধ দরজা আর সামনের দরজা দেখতে দেখতে কোনওমতে মন্দির থেকে বেড়িয়ে হাঁকপাঁক করতে করতে দীপের ঘরে পৌঁছে ঘটনার বর্ণনা দিলাম। দীপ নির্বিকারচিত্তে বলল, “ওঃ! তোকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। ও পাশের দরজাটাতে বাইরে থেকে হুড়কো দিয়ে বসতে হয়। পাশের বাড়ির আর আমাদের কমন টয়লেট! হুড়কোর পজ়িশন থেকে ওরা বুঝে যায় এ পাশের লোক আছে ভেতরে।”

ধর্মতলা, হাওড়া বা শিয়ালদার রাজা-রানি ছাপ দেওয়া ঘরে চাপ কমানোর সৌভাগ্য ক’জনের হয়েছে জানি না, কিন্তু সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
কলেজের রাজা ঘোষের খুড়তুতো বোনের বিয়ের মেন্যু শুনে লোভে পড়ে এক গ্রীষ্মের দুপুরে তার গ্রামের বাড়ি গিয়ে গাণ্ডেপিণ্ডে খেয়ে মাঝরাত অবধি হুল্লোড় করে মনে পড়ল পরের দিন দেশের বাড়ি পৌঁছনোর কথা, আর একটা নেমন্তন্ন খেতে।
ভোর হতেই বেরিয়ে পড়লাম শিয়ালদার উদ্দেশে।
সেই জমানার ঢেউ খেলানো ডায়মন্ড হারবার রোডে বাসের পেছনের সিটে বসে পেটের মধ্যে আগের দিনের পাঁঠার মাংস আর বরযাত্রীর জন্যে বানানো টিউবওয়েলের জলে গোলা রস্‌না কলরব করে সূর্যের আলো দেখার বায়না জুড়ল।
শিয়ালদা পৌঁছে পড়িমরি করে দৌড়লাম রাজা-রানি ছাপ ঘরের দিকে। কোনওমতে পেট চেপে পৌঁছে দেখি এক গেরো।

সব দরজাই বন্ধ। এক একটা দরজা খুলছে, আর একজন করে ঢুকে পড়ছে।
আমার পরে এসে পৌঁছনো লোকও ঢুকে গেল কিন্তু আমি সেই দেওয়ালে পশ্চাদ্দেশ চেপে দাঁড়িয়ে হতভম্ব হয়ে।
বুঝতেও পারছি না কী অভিশাপে আমি ভেতরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না।
এক নিত্য-ব্যবহারকারীর বোধহয় আমার মুখচোখ দেখে মায়া হল। তিনি রহস্য সমাধান করে দিলেন।
যে ভেতরে যাচ্ছে, সে ভেতরের খালি মগ (ডালডার টিন) বাইরে বার করে দিচ্ছে। সেই মগ যে দখল করছে, সে সুযোগ পাবে এর পরে ভেতরে ঢোকার।
ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করতে এক মিনিটও লাগল না… প্রায় লেভ ইয়াসিনের মতো ঝাঁপিয়ে পরের খালি মগ দখল করেছিলাম।
রাজা ছাপ ঘর থেকে বেরিয়ে এতো স্ফূর্তি হয়েছিল যে পেটের অবস্থা ভুলে ইলেকট্রিক ট্রেন ধরেছিলাম দেশের বাড়ি যাওয়ার জন্যে। ভাগ্যিস সিঙ্গল লাইন ছিল তখন, আর চার স্টেশন অন্তর ক্রসিংয়ে ট্রেন দশ মিনিট দাঁড়াত স্টেশনে। তাই বেঁচে পৌঁছেছিলাম দেশের বাড়ি। সেটা আর এক গল্প। 

Toilet
ছবি সৌজন্য – indiatimes.com

কর্মজীবনে প্রবেশ করে যেখানে সেখানে যখন তখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার দিনগুলো হারিয়ে গেল।
অফিস এক নতুন জগৎ! আবেগ আর বেগ দু’টোই সেখানে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উবু হয়ে বসে কানের পাশ থেকে বিড়ি বার করে ফস করে জ্বালিয়ে বেগের গিয়ার চেঞ্জ করার সুযোগ নেই।
এখানে সিংহাসনে বসে কাজ কারবার।
প্রথম প্রথম সিংহাসনেও উবু হয়ে বসতাম। তারপর পড়ে গিয়ে মাখামাখি হওয়ার ভয়ে সিংহাসনে বসতে শিখলাম। অভ্যেস হল। সেটাই আদত হয়ে গেল।
পকেটের জোর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনের জোর আর হাঁটুর জোর কমল।
তাই হয়তো সরকারি দফতরে তিনটে টয়লেট হত। লেডিস,জেণ্টস আর অফিসার।
বাড়িতেও সনাতনী ব্যবস্থা বিদায় নিয়ে ওয়েস্টার্ন ব্যবস্থা শুরু হল। যেন চেয়ারে বসে আছি।
আরামে বসে বই পড়া যায়, আগের মতো জলে ভিজে যাওয়ার ভয় থাকে না।
অনেক বন্ধু সেই সিংহাসনের ওপরে ফ্যান লাগিয়ে নিল, পাশে একটা তাক বানিয়ে নিল বই, সিগারেটের প্যাকেট রাখার জন্যে।
জয়ের মতো কেউকেউ কফির মগ পর্যন্ত নিয়ে সিংহাসনে বসত!

মানুষ অভ্যেসের দাস। কোথাও গেলে টয়লেটে সিংহাসন না দেখলে কোনও না কোনও ছুতো দিয়ে রাত্রিবাস থেকে বিরত থাকতাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব বাড়ল। ট্যুরে যাওয়া শুরু হল।
প্রত্যেক সপ্তাহে পটনা যেতে হচ্ছে। মানে যাতায়াত মিলিয়ে দু’রাত ট্রেনে।
মাঝেমাঝে রায়পুর আর শিলিগুড়ি। মাসে প্রায় দশ রাত্তির ট্রেনে।
মনে-পেটে সর্বত্র চাপ। ট্রেনের ওয়েস্টার্ন টয়লেট এক ভয়াবহ জায়গা। তার ওপর মগটা চেন দিয়ে বাঁধা থাকে।
বিলুর শরণাপন্ন হয়ে অবশেষে চাপমুক্ত হলাম।
নিয়মিত ট্যুরে যাওয়া বিলু বলল “ট্রেনে ওঠার আগে তিনটে জিনিস সবসময় কিনে নিবি। খবরের কাগজ, সোপ পেপার আর মিনারেল ওয়াটারের বোতল। এই তিনটে নিয়ে টয়লেটে ঢুকবি। খবরের কাগজে বড় ফুটো করে সেটা কমোডের ওপর পেতে বসবি। ইনফেকশনের ভয় থাকবে না। খালি বোতলটা মগ হিসেবে ব্যবহার করবি আর সোপ পেপারটা হাত ধোয়ার জন্যে। টয়লেটের সাবানদানির সাবানের ওপর কখনও ভরসা করিস না।”
এইসব বলে আমায় ভালোভাবে মেপে বলেছিল “শালা নর্থ কলকাতার ছেলে হয়ে উবু হয়ে বসতে কষ্ট হয়? সিংহাসনে না বসলে চলে না? বলতে লজ্জা করে না!”
ওর দেওয়া আওয়াজ গায়ে মাখলাম না। এরকম বন্ধু মারধোর করলেও বিনাবাক্যব্যায়ে খেয়ে নিতে হয়।
সবচেয়ে বড় সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।
অভ্যেসের দাস থেকে দাসানুদাস হয়ে গিয়েছি ততদিনে। মফস্সল পোস্টিংয়ে গিয়েও খুঁজে খুঁজে সিংহাসন বার করে আনি।  

সময় বেশ তরতর করে গড়িয়ে যেতে থাকল।
সরকার বলল প্রকৃতি উপভোগ কর, কিন্তু যেখানে সেখানে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিও না।
সচেতনতা বাড়াতে টয়লেট কেন্দ্র করে প্রেমকাহিনি নিয়ে সিনেমা হল। কিন্তু তাতেও সিংহাসন!

নিয়মিত ট্যুরে যাওয়া বিলু বলল “ট্রেনে ওঠার আগে তিনটে জিনিস সবসময় কিনে নিবি। খবরের কাগজ, সোপ পেপার আর মিনারেল ওয়াটারের বোতল। এই তিনটে নিয়ে টয়লেটে ঢুকবি। খবরের কাগজে বড় ফুটো করে সেটা কমোডের ওপর পেতে বসবি। ইনফেকশনের ভয় থাকবে না। খালি বোতলটা মগ হিসেবে ব্যবহার করবি আর সোপ পেপারটা হাত ধোয়ার জন্যে। টয়লেটের সাবানদানির সাবানের ওপর কখনও ভরসা করিস না।”

সবই ভালো চলছিল, বাদ সাধল করোনা। সব কিছু থমকে গেল।
সোশ্যাল মিডিয়াই একমাত্র সঙ্গী। অলসভাবে বোতাম টিপি আর ছোটবেলার পরিচিত দুনিয়ার রোমন্থনের মধ্যে আশ্রয় খুঁজি।
ফেরত যাওয়ার কথা মনেও আনি না। হাঁটুর জোর নেই।
বিলুর জন্মদিনে ফোন করে উইশ করে বললাম, “চল ভাই, অনেক সংসার হল, অনেক কিছু দেখে ফেললাম। মেয়েরা দাঁড়িয়ে গেলে দু’জনা মিলে হিমালয়ে কিছুদিন থেকে আসি।”
বিলু করুণ সুরে বলল, “আমার মনের কথা বললি ভাই। কিন্তু পারব কি! ওখানে তো ওয়েস্টার্ন টয়লেট নেই!” 

পেশার তাগিদে সার্ভিস সেক্টর বিশেষজ্ঞ, নেশা আর বাঁচার তাগিদে বই পড়া আর আড্ডা দেওয়া। পত্রপত্রিকায় রম্যরচনা থেকে রুপোলি পর্দায় অভিনয়, ধর্মেও আছেন জিরাফেও আছেন তিনি। খেতে ভালোবাসেন বলে কি খাবারের ইতিহাস খুঁড়ে চলেন? পিনাকী ভট্টাচার্য কিন্তু সবচেয়ে ভালোবাসেন ঘুমোতে।

11 Responses

  1. টেলিপ্যাথি শব্দটা প্রথম জেনে ছিলাম “সোনার কেল্লা ” দেখে আর আজ সমাপতন বা কাকতালীয় শব্দের হৃদয়ঙ্গম করলাম এই লেখাটা বাথরুমে বসে পড়তে গিয়ে। সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে এ লেখা পড়ার যে কি আমেজ তা আমিই জানি। এ আমাদের সবার জীবনের বাস্তব কথা। পরা-বাস্তব তো নয়ই বরং কড়া-বাস্তবই বলবো। যতক্ষণ না করছি অন্য কাজ করার জো নেই। এই লেখার ছত্রে ছত্রে আমরা অনেকেই নিজের জীবনের ফেলে আসা ঘটনা মেলাতে শুরু করেছি।
    ড্রেস কোড গামছা, গাড়ুর সাথে মনে পরলো এক এক বাড়ির আলাদা আলাদা পোস্ট-অপরেটিভ কেয়ার এর মত আচার বিচার। অফিসে লেডিস জেন্টস টয়লেটের এর সাথে অফিসার’স টয়লেটে কি হয় চাকুরী জীবনের শুরুতে খুব জানার ইচ্ছে ছিল। অনেক অফিসারকেই ফালতু তর্জন গর্জন করতে শুনেছি কিন্তু তাঁরা কি তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট শৌচাগারে ওই রকমই ফলস তর্জন গর্জন করে? কে জানে?
    পিনাকীর লেখায় যে সুক্ষ্ম রসবোধ আছে আমি তাঁর ভক্ত। তাই আমার অনুরোধ আরো কয়েক কিস্তিতে তা প্রকাশ হোক। এখানে তো আম জনতার কথা হলো। সমাজের উচ্চস্তরের বাসিন্দাদের কথাও জানতে ইচ্ছে করে।
    সবশেষে বলি বাঙ্গালি অনেক কিছুই ভুলতে বসেছে……. উবু দশ, কুড়ি থেকে শুরু করে উবু হয়ে বসা। যদিও আজকাল ওটাই আবার ঠিক ভঙ্গি বলে কেউ কেউ দাবী করেন। পিনাকী কি বলেন?

  2. দুর্দান্ত, ফাটাফাটি। আদ্যন্ত বর্জনীয় একটি বিষয় এমন পরম রমণীয় করে তুলতে পারেন যিনি, অকল্পনীয় রসবোধের অধিকারী তিনি। অরুন্ধতী রায়ের “God of small things ” বইটিতে জীবনে প্রথম এই বিষয়টি কেন্দ্র করে অসামান্য একটি উপদেশ পেয়েছিলাম। সেই স্মৃতিটি ছাপার অক্ষরে ভেসে উঠলো পড়তে পড়তে। সাথে নিয়ে এলো রাস্তাঘাট, বাজার, স্টেশন চত্বর, বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গিয়ে চূড়ান্ত বিড়ম্বনা, বিপর্জয়ের সব ধরণী দ্বিধা হও মুহূর্ত। দিনকাল কতো পাল্টেছে। এখন কতো সুলভে ” সুলভ ” সেই একরাশ বিপত্তির স্মৃতিগুলো দুর্লভ করে দিল…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *