আগের পর্বের লিংক: [১] [] [] [] [] [] [] [] [] [১০] [১১] [১২] [১৩] [১৪] [১৫] [১৬] [১৭] [১৮] [১৯] [২০] [২১] [২২]

ছেলেবেলার বেলাশেষ…

দাদু-দিদিমার ঘর নামক খোঁয়াড়ের সামনে থকথকে কাদায় বর্ষার বিকেলে পড়ে আছে কয়েকটা থুলথুলে পাকা কাশীর পেয়ারা৷ সরাবার কেউ নেই৷ উলটোদিকের ঘরের রানি বউদি দ্বিতীয় বাচ্চা হতে গিয়ে হাসপাতাল থেকে এখনও ফেরেননি, ব্লাড চলছে, বাচ্চা বাঁচেনি, গুরুদাসদা মেয়ে নিয়ে উঠেছেন শ্যালকের বাড়ি৷ মাস্টারমশাই মেয়ে-বউ নিয়ে আসাম, না কোথায় গেছেন! সাধুবাবা এসময় শিষ্যদের বাড়ি বাড়ি ঘোরেন৷ পরিবার যায় করিমপুরে শ্বশুরবাড়িতে৷ ভাড়া না দিতে পেরে উচ্ছেদ হয়েছে লোকনাথরা৷ বাড়িওলা দারোগা মারা গেছেন৷ তাঁর বিরাট আরামকেদারার পাশে বসে ছোট বউ রসকলি কেটে সারাদিন মালা জপেন৷

পরিত্যক্ত বস্তির মতো এই শুনশান ঘর দাওয়া উঠোনের দীর্ঘশ্বাসে দাদু আর দিদিমা— দুটি মানুষ ফুরিয়ে যাওয়ার আগে জেগে আাছেন৷ দিদিমার অবস্থা সঙ্গিন৷ সারাদিন বিছানায় বুক চেপে শ্বাস টানা৷ দুপুরে কোনওক্রমে ভাতে ভাত ফুটিয়ে দুবেলা খাওয়া৷ দাদুর হেঁচকি ওঠে যখন-তখন৷ গোলমরিচ পুড়িয়ে নাকে-মুখে ধোঁয়া টেনে দম সামলান৷ বেরোনোর ভরসা পান না৷ যদি পথে হেঁচকি ওঠে৷ গড়িয়ার আত্মীয়রা মাসে মাসে কিছু সাহায্য দেন৷ কিন্তু আনতে যাবে কে? কবিরাজি বন্ধ হয়েছে অনেককাল৷ আলমারিতে কয়েকটা ফাঁকা শিশি-বোতল৷ ডালা খুললে স্বর্ণসিন্দুর, মধুপর্পটি, দশমূলারিষ্ট, সারিবাদিসালসা ইত্যাদি… আরোগ্যের গন্ধও এখন মুমূর্ষু৷

দিদিমার অবস্থা সঙ্গিন৷ সারাদিন বিছানায় বুক চেপে শ্বাস টানা৷ দুপুরে কোনওক্রমে ভাতে ভাত ফুটিয়ে দুবেলা খাওয়া৷ দাদুর হেঁচকি ওঠে যখন-তখন৷ গোলমরিচ পুড়িয়ে নাকে-মুখে ধোঁয়া টেনে দম সামলান৷ বেরোনোর ভরসা পান না৷ যদি পথে হেঁচকি ওঠে৷ গড়িয়ার আত্মীয়রা মাসে মাসে কিছু সাহায্য দেন৷ কিন্তু আনতে যাবে কে?

দেশভাগ ১৯৫২-য় তাঁদের ভিখিরি করেছে৷ পরের ১৫ বছরে, মরণের মানানসই বয়সের ঢের আগে, অর্ধাহারে দুর্ভাবনায় মৃত্যুর দুয়ারে হাজির তাঁরা৷ কেরোসিন যেটুকু আছে স্টোভে৷ মোম জ্বেলে রাতের ভাতটুকু গেলা৷ ভোরের আলো থেকে রাতের অন্ধকার জুড়ে দুটো ছোট্ট তক্তপোশে শুয়ে মাঝে মাঝে কথা বলেন তাঁরা৷ হয়তো একজন জেনে নিতে চান অন্যজন বেঁচে আছেন কিনা! দাদুর দিক থেকেই কথা হয়৷ দিদিমার জবাব দিতেও কষ্ট৷ তিনি শোনেন, কিরণ, আমরা য্যান্ একলগে মরতে পারি৷ তোমার ঠাকুররে কও দুইজনেরে একলগে নিতে৷ সারাজীবন অনেক দয়া করছেন৷ শেষ দয়াটা য্যান্ পাই৷ আমার তো ঠাকুর নাই৷ জিন্নাসাহেব আর পণ্ডিতজি থাকলে কইতাম৷ ভাগাভাগি কইরা তোমরা কী মজা যে পাইলা! আমাগো কথা ভাবো নাই৷ এইবার কৃপা কইরা আমাগো একলগে মরণের ব্যবস্থা কর৷ কিন্তু কমু কারে? দুইজনেই তো মইরা সারছে৷ তোমার ঠাকুররে কও, কিরণ!

অন্ধকার আরও গাঢ় হলে দিদিমার হাঁপের টান আর দাদুর গলায় কফের ঘড়ঘড় এ খবর জানাতে থাকে যে মানুষ দুটো বেঁচে আছেন৷

Refugee camp
পরিত্যক্ত বস্তির মতো এই শুনশান ঘর দাওয়া উঠোনের দীর্ঘশ্বাসে দাদু আর দিদিমা— দুটি মানুষ ফুরিয়ে যাওয়ার আগে জেগে আাছেন

সেই বর্ষার বিকেলে, কাদায় পা দিয়ে কয়েকটা পেয়ারা সরিয়ে দিতেই রাশি রাশি পোকা উড়েছিল, কাঁচা পেচ্ছাপখানার গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল৷ পা ধুয়ে প্রায়ান্ধকার খোঁয়াড়ে ঢুকি৷ হাড্ডিসার হাত তুলে দিদিমা ডাকেন৷ বসতে বলেন৷ ছোট্ট তক্তপোশে তাঁর গা ঘেঁষে বসি৷ কিছু বলতে চান৷ তাঁর মুখের কাছে কান নামিয়ে শুনি৷ বলছেন, “কাজ-কামের খবর পাইলা? কাউরে কইছো? রোজ খিদা পায়৷ মরণের নিকটে খাড়াইয়াও খিদা পায়৷ খাইতে হয়৷ আমি ত কোনো কাম আর পারি না৷ কালিদাস আমাগো ঘরে টাকা দিয়া খাইত৷ অখন আমি রানতে পারি না৷ সে হোটেলে খায়৷ কালিদাসের কাছে টাকা চাই কোন মুখে? তবু দেয় দুই-চাইর টাকা মাঝে মাঝে৷ গ্যারেজে নাকি কাম হইব তর? কী কইল? কত দিব? চাইরটা আলু আইনা দে৷ কাইল আলুসিদ্ধ ভাত৷ কেরাসিনও শ্যাষ৷ খাওয়া বন্ধ হইব৷ তার ভাইস্তারা টাকা দিত৷ সে বাইরইতে সাহস পায় না৷ টাকা আনব কে? তুই যাবি? আমি বাঁচুম না, কৃষ্ণদাস৷ দাদুরে দেখিস৷ তর লেইগা আমরা দেশ ছাড়ছি৷ তরে ফালাইয়া সে আর ফিরতে চায় নাই৷ তারে দেখিস, কৃষ্ণদাস!”

কীভাবে আমি দেখি! দিদিমাকে এখনই ডাক্তার দেখানো দরকার৷ ওষুধ দরকার৷ মা-র কাছে দু-চার টাকা থাকে৷ কিন্তু তাতে কী হয়? বাবার সব সময়ই ‘টাকা নাই, টাকা নাই’৷ টুটুর মোটর মেরামতির কাজে হেল্পার হিসেবে দশ টাকা পাওনা আছে৷ চোলাই মদ এনে ব্লাডার পিছু এক টাকা পাওয়া যেত৷ সে কাজ ছেড়ে দিয়েছি৷ সেন্টু নতুন ছেলে নিয়েছে৷ বামপন্থী রাজনীতির লোকজন সেন্টুর সঙ্গে আমার মেলামেশা পছন্দ করে না৷

Refugees of Partition
তর লেইগা আমরা দেশ ছাড়ছি

দু-চারদিনের খাবারের ব্যবস্থা করা গিয়েছিল, আর কিছু নয়৷ দিদিমা মারা গেলেন চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে৷ বিনা চিকিৎসায়, সারাদিন বারান্দায় পড়ে থেকে৷ ডাক্তারেরা পাশ দিয়ে গটগট করে হেঁটে গেলেন ক্রুশিয়াল কনফারেন্সের হাবভাবে৷ খটখটিয়ে নার্সরা হেঁটে গেল উড়ন্ত ব্যস্ততায়৷ দিদিমা পাঁজর ভেঙে ভেঙে বাতাস টেনে টেনে একসময় স্থির হয়ে গেলেন৷ নিজের দেশ থেকে, ভিটেমাটি থেকে দূরে অনাহার অবহেলা অসম্মানের অকুস্থলে তাঁর দেহ ছাই হল৷ চিতার খরচ মেটানো হল চাঁদা তুলে৷

দাদু মারা গেলেন তার মাসখানেকের মধ্যে৷ এক সন্ধেয় হেঁচকি উঠল৷ গোলমরিচের ঝাঁঝালো ধোঁয়াও আর কাজ করল না৷ খবর দেওয়া সত্ত্বেও ডাক্তার এল না৷ কেঁপে কেঁপে গোঙাতে গোঙাতে মারা গেলেন তিনি৷ দাদুর কষ্টের দিকে তাকাতে পারিনি৷ পাঁচিলে মুখ গুঁজে বসেছিলাম৷ দেশভাগের দুই কারিগর জিন্নাসাহেব আর পণ্ডিতজির আত্মা বোধহয় দাদুর শেষ আবেদন শুনেছিল! একলগে না হোক, প্রায় একলগে দিদিমা আর দাদুকে তুলে নিল৷ স্বর্গাদপি গরীয়সী জননী জন্মভূমি থেকে এবার যথার্থেই ছিন্ন হল মা৷ নিক্ষিপ্ত হল অনাত্মীয়লোকে, ধূসর স্মৃতির প্রান্তে৷ ছিন্ন হলাম আমিও, শিকড়ের মাটি থেকে, ভুলে যেতে শুরু করলাম আমার জন্মচিহ্নের বর্ণমালা।

Refugee house Haren Mukherjee road

দিদিমা আর দাদুর মৃত্যুর কয়েক মাস আগেকার ঘটনা৷ তখন আমি বুঝ-না-বুঝ রাজনীতিতে লেগে গেছি৷ শেক্সপিয়রের ঘর, মানে বিমলাংশু বিশ্বাসের ঘরে সিপিএম-এর মিটিং বসল৷ সবচেয়ে ছোট আমাকে কেন জানি ডাকা হল! তরতরিয়ে মই বেয়ে চটপট পোস্টার লাগাতে পারবে ভেবে হয়তো৷ সামনে ১৯৬৯-এর ভোট৷ আমাদের এন্টালি বিধানসভা কেন্দ্রের জনপ্রিয় ও জয়ী প্রার্থী ডা. গনি৷ ফুলবাগান এলাকায় চেম্বার৷ গরিবের ডাক্তার৷ সামান্য দক্ষিণা৷ অনেকে পয়সা দিতে পারে না, মিক্সচার নিয়ে যায় পরে দাম দেবে বলে৷ আর দিতে পারে না৷ ডাক্তারবাবুর মনেও থাকে না৷ ডাক এলে রোগীর বাড়ি যেতে সমস্যা নেই৷ ডাক্তার গনি সিপিআই৷ কেন মনে নেই, সিপিএম বিকল্প প্রার্থী হিসেবে একজনের নামে প্রস্তাব গ্রহণ করে৷ নামটা মনে নেই৷ এটুকু মনে পড়ে, তিনিও মুসলিম৷ মিটিংয়ের সবাই নামে সহমত জানালেন৷ এই নির্বাচনী কেন্দ্রের ভোটারদের বড় একটা অংশ মুসলমান৷ আমার বেকুব রাজনৈতিক বুদ্ধি হঠাৎ প্রশ্ন করে বসে, মুসলিম-প্রধান এলাকায় মুসলিম প্রার্থীই কেন দিতে হবে? আমরা কমিউনিস্টরা তো ধর্মকে আফিম বলি৷ কিন্তু ধর্মের বাইরে আসতে পারি না৷ কেন? কথা শেষ হয়েছে কী হয়নি, বিরাশি সিক্কার চড় আছড়ে পড়ল আমার গালে৷ মেরেছে মুশকো দামড়া খোদার খাসি দীপক কাহালি৷ চিৎকার করে উঠেছিলাম৷ বস্তির ছেলের মুখ সব সময় শালীন থাকে না৷ বিমলদা আমার পাশে দাঁড়ালেন৷ মিটিং ভেঙে কাহালিদের ঘর থেকে বের করে দিলেন৷

কীভাবে যেন খবরটা পেয়ে যান ৩৭ নম্বর বস্তির মানিকদা৷ পাড়ার তরুণদের প্রিয় মানুষ৷ সকালে সাইকেলে চেপে দুধ দেন৷ দুপুরে বড়বাজারে ওষুধের ডিলারের অফিসে চাকরি করেন৷ আমাকে চিনতেন৷ একবার কাজের খোঁজে গিয়েছি তাঁর কাছে৷ তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন বড়বাজারে৷ কাজটা হয়নি৷ কাহালির কাণ্ড শুনে মানিকদা বললেন, ওরা সংশোধনবাদী৷ প্রতিবিপ্লবী৷ সামন্তবাদ পুঁজিবাদের দালাল৷ কৃষিবিপ্লবই একমাত্র পথ৷ সশস্ত্র লড়াই শুরু হয়ে গেছে সারা দেশে৷ বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস৷ ভাবলাম, একটা বন্দুক পাওয়া যাবে৷ তাহলে দীপককে দেখে নেব৷ তিনদিনের মাথায় ঠান্ডাদার ডাক৷ মানিক তোকে কিছু বলেছে নাকি? ওরা বিপজ্জনক৷ হঠকারী৷ রাষ্ট্রশক্তির দালাল৷ ভুল লাইন নিয়ে মেহনতি মানুষের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছে৷ জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবই পথ৷ নির্বাচন বিপ্লবের একটা স্তর৷ মাওবাদ বলে কিছু হয় না৷ মাতৃ ভাণ্ডারের রোয়াকে সেদিন রাত তিনটে বেজে গিয়েছিল ঠান্ডাদা ওরফে প্রদ্যোৎদার ক্লাস শুনতে শুনতে৷

old political Poster

মনে হয়, একটা বন্দুকের খুব দরকার ছিল আমার সেসময়৷ মানিকদার সঙ্গে পার্কসার্কাস, বেগবাগান, তিলজলা, বন্ডেল গেট ইত্যাদি জায়গায় ঘুরতে লাগলামবিপ্লবী সংগঠন গড়ার কাজে৷ রোজই প্রায় এক কথা৷ আধাসামন্ততান্ত্রিক আধাপুঁজিবাদী কাঠামো, মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া, কৃষক জনগণের সঙ্গে মিশে থেকে লড়াই, গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরা ইত্যাদি… মানিকদা গুছিয়ে বললেও যারা শুনত তারা কতটা কীভাবে নিত সন্দেহ আছে৷ হেটলি গ্রেশামের মঞ্চে বড় সভা হল৷ ভাষণ দিলেন প্রমোদ সেনগুপ্ত, অমিয়ভূষণ চক্রবর্তী৷ নকশালবাড়িতে কী হচ্ছে অনেকটা যেন স্পষ্ট হল৷ বিপ্লবী কৃষকরা শাসকশ্রেণির ভয়ংকর নির্যাতনের মধ্যে আছেন জানা গেল৷ শুরু হল দেওয়াল লেখা৷ মধ্যরাত থেকে ভোরের আলো ফোটার আগে পর্যন্ত অলি-গলি, বড় রাস্তা, হাটবাজারের দেওয়ালে দেওয়ালে লাল সেলাম জানাই নকশালবাড়ির বীর কৃষকদের, লিখি ‘শ্রীকাকুলাম কি ভারতের ইয়েনান হতে চলেছে?’ দিকে দিকে কৃষিবিপ্লবের আগুন ছড়িয়ে পড়ার খবর লিখি, রেডিও পিকিং শুনতে বলি, টেনসিল দিয়ে মাও সে-তুংয়ের ছবি আঁকি৷ আরও লিখি ‘পার্লামেন্ট শুয়োরের খোঁয়াড়, নির্বাচন বয়কট করুন৷’ হয়ে গেলাম ‘নকশাল’ এবং ‘সিআইএর দালাল’৷ 

এসময় একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়৷ যশোর বা রাজশাহির ছেলে৷ লেখাপড়া করতে কলকাতায় এসেছে৷ বাবা-মা পাঠিয়েছে৷ গোবরায় ছোট্ট একটা ঘরে থাকে৷ দমদম মতিঝিল কলেজে ভরতি হয়েছে৷ ভরতিই সার! কলেজে যায় ক্বচিৎ৷ ওর ঘর হয়ে উঠল বিপ্লবের ঘাঁটি৷ খবরের কাগজ কেটে লাল-নীল কালি দিয়ে পোস্টার লেখা হয়,‘দেশব্রতী’ পত্রিকা ও দেশব্রতী প্রকাশনীর চটি চটি বই পড়া হয় দুপু্র সন্ধেয়৷ ছিপছিপে ছেলেটির নাম ছিল খোকা।

Busy Traffic Scene
মানিকদার সঙ্গে পার্কসার্কাস, বেগবাগান, তিলজলা, বন্ডেল গেট ইত্যাদি জায়গায় ঘুরতে লাগলাম

১৯৭০ সাল। নির্বাচন বয়কটের ডাক নস্যাৎ করে মানুষ ক্ষমতায় এনেছে দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারকে৷ বিপুল ভোটে ঐতিহাসিক জয়৷ তবু দেওয়ালে নতুন স্লোগান এসেছে: ‘সত্তর দশককে মুক্তির দশকে পরিণত করুন।’ পুলিশি ধরপাকড় বাড়ছে৷ দুষ্কৃতীরা রং বদলে কাজ করছে৷ একদিন খোকা নিখোঁজ হয়ে গেল৷ সবসময় হাসিখুশি, বাঙাল টানে কথা বলা, নিষ্পাপ মুখের কিশোর হারিয়ে গেল৷ কেউ বলে, পুলিশ ধরে নিয়ে লোপাট করে দিয়েছে৷ কেউ বলে, গুন্ডারা৷ সব বড় বড় কথা খানখান হয়ে গেল আমার কাছে৷ এর পরই, ‘সিআইএ-র দালাল’ আমি চোখের সামনে দেখলাম আমার দাদু ও দিদিমাকে দেশভাগের মরণখাদে বিলীন হতে৷ শোককে আগুনে পরিণত করতে পারিনি৷ 

 

 

ছবি সৌজন্য: লেখক

*পরবর্তী তথা অন্তিম পর্ব প্রকাশিত হবে ২৪ এপ্রিল, ২০২৩
Madhumoy Paul

মধুময়ের জন্ম ১৯৫২ সালে পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহে, কিশোরগঞ্জে। লেখাপড়া কলকাতায়। শৈশব-যৌবন কেটেছে স্টেশনে, ক‍্যাম্পে, বস্তিতে। গল্প লিখে লেখালেখি শুরু। পরে উপন‍্যাস। বই আখ‍্যান পঞ্চাশ, আলিঙ্গন দাও রানি, রূপকাঠের নৌকা। অনুসন্ধানমূলক কাজে আগ্রহী। পঞ্চাশের মন্বন্তর, দাঙ্গা-দেশভাগ, নকশালবাড়ি আন্দোলন নিয়ে কাজ করেছেন। কেয়া চক্রবর্তী, গণেশ পাইন তাঁর প্রিয় সম্পাদনা। প্রতিমা বড়ুয়াকে নিয়ে গ্রন্থের কাজ করছেন চার বছর। মূলত পাঠক ও শ্রোতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *