পতির ধনেই সতীর সুখ

সুজাতাই আজ শুধু সবচেয়ে সুখে আছে/ শুনেছি তো লাখপতি স্বামী তার/ হিরে আর জহরতে আগাগোড়া মোড়া সে/ গাড়িবাড়ি সব কিছু দামি তার।… মান্না দে-র কফিহাউস গানের আড্ডাধারীদের মধ্যে সুজাতাই একমাত্র মেয়ে, সে-ই বোধ হয় সবচেয়ে সুখে আছে। কিন্তু তার সুখের উৎস হচ্ছে স্বামীর পকেটের পৃথিবী। গানের পুরুষেরা অনেকটা ‘স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়’ অবস্থায় (নিখিলেশ ও মইদুলের অবশ্য কোনও খবর নেই)।

‘পতির ধনেই সতীর সুখ’, এই নামে একটা যাত্রা এসেছিল একবার আমাদের তল্লাটে। সপরিবার সেই যাত্রা আমরা দেখতেও গিয়েছিলাম, ফিরে এসে বাবা দিদিকে ঘণ্টা তিনেক ধরে বুঝিয়েছিল, কেন নির্ধন প্রেমিকটিকে তার ছেড়ে দেওয়া উচিত। দিদি পাল্টায় যা বলেছিল, তার সারসংক্ষেপ হল, প্রেমিকটি এখন শিশু হাঁস, যথা সময়ে সে যে-ডিম পাড়বে, তা সোনার। বাবা হুঁহুঁ করে লোহার হাতুড়ি সরিয়ে নিয়েছিল।

হাঁসটা দিদির জীবনে যথাসময়ে বেড়ে সোনার ডিম পেড়েছে, মাসে এক-দু’ তারিখে সেই ডিম দেয়। দিদির মাথায় এই সোনার ডিমের চিন্তাটা ঘুরিয়ে তোলা হয়েছে, বহু যুগের কালচারের ময়লা এটা। ঘুরছেই। বাবার সঙ্গে দিদির চিন্তার ফারাক কী তা হলে? সামান্য‌ই। বাবা চেয়েছিল বড় পকেটেই মেয়ে দিতে। দিদির আত্মবিশ্বাস ছিল, তার প্রেমিকের ছোট পকেট খুব শিগগিরই বড় হবে।

সংসারে উঁকি

অফিস থেকে ফিরে এসেই ‘সখা’ বা ‘হাবি’-টি বলতে শুরু করে, কী কর সারা দিন? কিছুই তো কর না। এই দেখ, আমি হরিণ মেরে ফিরে এসেছি, স্কন্ধে তীরধনুক! কী, দেখতে পাচ্ছ তো, নাকি চোখে চালসে? মেয়েরা এর পাল্টায় একটু গালাগাল দেয়। তারপর ভাবে, বাবা রে এ যদি বেগড়বাঁই করে, সোনার ডিম যদি না পাড়ে, তাহলেই তো আমার মাদার গাছের তলায় শুধুই অন্ধকার। ফেবু বন্ধ হয়ে যাবে, বানাতে হবে বাজারের ব্যাগ কেটে ব্লাউজ।

মান্না দে-র কফিহাউস গানের আড্ডাধারীদের মধ্যে সুজাতাই একমাত্র মেয়ে, সে-ই বোধ হয় সবচেয়ে সুখে আছে। কিন্তু তার সুখের উৎস হচ্ছে স্বামীর পকেটের পৃথিবী।

তবে, এখানে বলে নিতে হবে, বউয়ের বাবাও যদি মোটা পকেটের হন, তা হলে একটু অন্য ঘটনা ঘটবে। বধূটির গালাগালি আটপৌরে থাকবে না, বর্জ্রনির্ঘোষ হয়ে যাবে। তখন ছেলেটি তিরতির করে কাঁপতে কাঁপতে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেবে,পটেকমারি না হয়ে থাকলে বউয়ের কোলে ফেলে দেবে সদ্য-পাড়া ও গোপন করে রাখা সোনার ডিমটা। কখনও স্বামী, কখনও বাবা, এই দুই বলই তা হলে সংসারের চালিকাশক্তি? কিন্তু মেয়েদের বাচ্চা মানুষ করা, রান্নাবান্না করা, এক বিশাল কাজ। হেভি লোড তার। কেন তারা সে জন্য মজুরি পাবে না? এই প্রশ্ন… এ কী সর্বনাশের মাথায় পা!

ঘরের মজদুর

ঘরের কাজে মজুরি বা মাইনের দাবি কিন্তু অনেক পুরনো। এবং এ দেশে নির্বাচনেও তা ইস্যু এখন। তামিলনাড়ুর ভোটে কমল হাসানের দল ‘মাক্কাল নিধি মনরমে’র প্রতিশ্রুতির তালিকায় ঘরের কাজের জন্য মেয়েদের বেতন বেশ উজ্জ্বল। এই বিতর্কমহান দেশে এতে বিতর্কও ভীষণ। অভিনেত্রী কঙ্গনা রানৌত এই বেতনের বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, ‘উই ডু নট নিড স্যালারি ফর বিইং দ্য কুইন ইন আওয়ার ওন লিটল কিংডম।’

কংগ্রেসের শশী তারুর আবার বেতনের পক্ষে চন্দ্রালোক ফেলেছেন। অক্সফামের ‘টাইম ইজ আপ’ রিপোর্ট বলছে, ভারতে বিনা বেতনে গৃহসেবায় মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ন’গুণ বেশি সময় খরচ করে। অক্সফামের হিসেবে, মেয়েরা এ জন্য খরচ করে একদিনে ২৯৭ মিনিট, ছেলেরা মাত্র ৩১ মিনিট। এটা মোটামুটি গড় হিসেব, গ্রামীণ এলাকার চেয়ে শহরাঞ্চলে দুইয়ের মধ্যে ফারাক অনেকটাই বেশি।

 সুইট সুইডেন

শুধু ভারতে নয়, সারা পৃথিবীতেই আনপেইড কেয়ার ওয়ার্কে মেয়েরা অনেক অনেক এগিয়ে। তবে এই বিচারে সুইডেনের মতো কয়েকটি দেশ কিন্তু ব্যতিক্রম । জেন্ডার ইকুয়ালিটি বা লিঙ্গসাম্যে সুইডেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে এক নম্বরে। বেতনহীন গৃহকাজে সেখানে এখন‌ও মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও ফারাক কিন্তু অনেক কমেছে। আসলে গৃহকাজে বেতন দেওয়ার দায়িত্ব কে নেবে? স্বামী না সরকার, নাকি অন্য কোনও উৎস থেকে এই অন্ধকার মোচন হবে? সে দেশের সরকার এর দায়িত্ব খানিক নিয়ে, এই প্রশ্নের একটা উত্তর দিতে পেরেছে। ২০০৭ সালে বাড়ির কয়েকটি কাজ, যেমন ঝাড়পোঁছ, কাচাধোয়া এবং ইস্তিরিতে যে বিল হয়, তা অর্ধেকটা দিতে শুরু করে তারা।

কখনও স্বামী, কখনও বাবা, এই দুই বলই তা হলে সংসারের চালিকাশক্তি? কিন্তু মেয়েদের বাচ্চা মানুষ করা, রান্নাবান্না করা, এক বিশাল কাজ। হেভি লোড তার। কেন তারা সে জন্য মজুরি পাবে না?

মানে গৃহস্থালীর ওই সব কাজের জন্য যদি কাউকে নিযুক্ত করা হয়, তার বেতনের অর্ধেকটা দিয়ে দেবে সরকার। ফলে, ওই বাড়ির মেয়েটির কাজ কমে যাবে, অর্থনৈতিক ভারও পরিবারে চাপবে না। সুইডেনের এই পদক্ষেপ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। অনেকেই বলছেন, এ হল ধনীর সাম্যবাদ। যাঁদের বিরাট বাড়িঘর, তারাই তো কাজের লোক রাখবেন। গরিব ঘরের মেয়েদের কী হবে? তাঁরা কি গৃহকাজের জন্য সরকারি সুবিধে পাবেন না?

দাবির দুনিয়া

ঘরের কাজের জন্য বেতনের প্রথম দাবি ওঠে ১৯৭২ সালে। সে বছর ম্যানচেস্টারে ‘ন্যাশনাল উইমেন্স লিবারেশন  কনফারেন্সে’ এই দাবিপত্র পড়েন এক আমেরিকান, সেলমা জেমস। আর একজনও লেখিকা ছিলেন এর, তিনি ইতালীয়। নাম মারিয়া রোসা ডালা কোস্টা। এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল ওয়েজেস ফর হাউসওয়ার্ক’ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। লন্ডন, কেমব্রিজ, ম্যানচেস্টারে ছড়িয়েও পড়ে এই আন্দোলন। কিন্তু শঙ্খ এখনও ধূলায় পড়ে আছে, অপরিসীম অবহেলায়। দাবি আদায় এখনও সারা পৃথিবীতেই সুদূরপরাহত।

দরজায় টোকা

লেখাটার এই অবস্থায়, আমার পড়ার ঘরের দরজায় নক।
— কে…?
কেউ সাড়া দিল না। দরজা ঠেলে এক কমবয়সী তরুণী ঢুকল। কাঁধে ক্যামেরা।
— কে আপনি? কী করেই বা সদর দিয়ে ঢুকলেন?
— দরজা তো খোলা ছিল, সোজা ঢুকে এলাম। দেখলাম এই ঘরে আলো জ্বলছে। আপনার খোঁজেই এসেছি। শুনেছি আপনি নাকি মেয়েদের পেশা নিয়ে কী একটা লেখা লিখছেন। তাই…
— কী করে জানলেন?
— খবর হয়ে যায় দাদা, আমরা খবরের লোক, দেখছেন না ক্যামেরা…
— ও… মানে প্রেস?

গৃহস্থালীর ওই সব কাজের জন্য যদি কাউকে নিযুক্ত করা হয়, তার বেতনের অর্ধেকটা দিয়ে দেবে সরকার। ফলে, ওই বাড়ির মেয়েটির কাজ কমে যাবে, অর্থনৈতিক ভারও পরিবারে চাপবে না।

মেয়েটা একটা স্ট্যান্ডের উপর ক্যামেরাটা আমার দিকে তাক করে রাখল। তারপর সেটা চালিয়ে আমার পাশে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে এসে বসল।
— ঘরের কাজে মেয়েদের বেতনের পক্ষে লিখলেন তো, তাই না?
— যাব্বাবা পুরো কনটেন্ট জেনে গেছেন দেখছি, এই তো লিখলাম, কাউকে বলিইনি…
— খবর হয়ে যায় দাদা, আমরা তো খবরের লোক।… সে কথা যাক, শুনুন আপনাকে কয়েকটা কথা বলতে এসেছি। লেখায় ইনক্লুড করতে পারেন।
— কী কথা ?
— এই মিডিয়ার মেয়েদের সম্পর্কে।
— হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন। আমি আগ্রহী।
— দেখুন মিডিয়াকর্মীদের মধ্যে একমাত্র রিপোর্টিং, ডেস্ক কিংবা অ্যাঙ্কারিংয়েই যা মেয়েরা আছে। কিন্তু ক্যামেরা, এডিটিংয়ে কোথায় মেয়ে। তা-ও এডিটিংয়ে দু’ একজন পাবেন, কিন্তু ক্যামেরায় মেয়েরা প্রায় নেই-ই। এই যে দেখছেন আমি আছি, এটা অতি বিরল ঘটনা একটা।
— হ্যাঁ… ঠিকই… কিন্তু কেন? হয়তো ক্যামেরার ওয়েট।
— না, দাদা, ভুল বললেন, সমস্যাটা অন্য। আসলে ক্যামেরাম্যানকে ক’জন চেনে বলুন? তারা অন্ধকারে একজন হয়ে থাকে। মনে হয় বেশির ভাগ মেয়ে গ্ল্যামার একটু বেশিই চায়। চায় তাদের নিয়ে নাচানাচি হোক। দেখেছেন তো শ্রাদ্ধবাড়িতে যেতে গেলেও আমরা মেকআপ করি। তাই ক্যামেরার পিছনে তারা কেন থাকবে? থাকবে চড়া আলোয়। নিউজ়ে অ্যাঙ্কর বা রিপোর্টার হতে চাই আমরা, ফিল্মে নায়িকা বা খলনায়িকা হতে চাই। বুঝলেন কিনা?
— হ্যাঁ…

আমরা যেখানে বসেছিলাম, তার পাশেই জানালা। খোলা। এখন সন্ধ্যা। হঠাৎ মেয়েটা জানালার দিকে ঘুরে বলে উঠল, ‘আরে ওটা কী?’ আমি এক ঝটকায় ওই দিকে তাকালাম, না কিছু তো নেই। লাইটপোস্টের আলোয় চোখটা ধাক্কা খেল। চোখ ফেরাতে দেখলাম পাশে কেউ বসে নেই। ক্যামেরাটা শুধু চলছে।

দেখুন মিডিয়াকর্মীদের মধ্যে একমাত্র রিপোর্টিং, ডেস্ক কিংবা অ্যাঙ্কারিংয়েই যা মেয়েরা আছে। কিন্তু ক্যামেরা, এডিটিংয়ে কোথায় মেয়ে। তা-ও এডিটিংয়ে দু’ একজন পাবেন, কিন্তু ক্যামেরায় মেয়েরা প্রায় নেই-ই। এই যে দেখছেন আমি আছি, এটা অতি বিরল ঘটনা একটা।

মেক্সিকান শিল্পী ফ্রিডা কাহলোর একটা ছবি আছে, ‘টু ফ্রিডাস।’ এক ভয়ঙ্কর ছবি। সেলফ পোট্রেট। দুই ফ্রিডা পাশাপাশি, হাত ধরে বসে। দুইয়ের হৃদয় ধমনীতে যুক্ত, ছেঁড়া ধমনী দিয়ে রক্ত ঝরছে। ছবির প্রেক্ষাপটে আকাশ, আশ্চর্য কালো মেঘে ঢাকা। ফ্রিডা ছবিটা এঁকেছিলেন ১৯৩৯-এ। সেই বছরই তাঁর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় শিল্পী দিয়েগো রিভেরার। সম্পর্কের রক্তপাতই ছবিতে এসেছে। রিভেরার সঙ্গে বিচ্ছেদ বলতে গিয়ে ছবিতে নিজের সঙ্গে নিজের বিচ্ছেদ দেখিয়েছেন কাহলো। এই যে মেয়েটি আমার পাশ থেকে চলে গেল, ফ্রিডার সেই ছবিটাই মনে ভিড় করছে এখন। মেয়েটা কি আমারই ভিতর থেকে এসে পাশে বসেছিল…?

নারীবাদের নিজের বাড়ি ও মেধা

নারীবাদের জন্ম দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের মেরি ওলস্টোনক্রাফট। তিনি ‘দ্য ভিন্ডিকেশন অফ দ্য রাইটস অফ ওম্যান’ বইটি লেখেন যা প্রকাশিত হয় ১৭ ৯২ সালে। এর ১৫৭ বছর পর ১৯৪৯ সালে লেখা হল ‘ল্য দ্যজিয়েম’। মানে, সেকেন্ড সেক্স। দ্বিতীয় লিঙ্গ। কে না জানে সিমোন দ্য বোভোয়া-র এই বই নারীবাদের ‘ই ইজ ইক্যুয়াল টু এমসি স্কোয়্যার।’ অনেকে ওলস্টোনক্রাফটকে নারীবাদের জোয়ান অফ আর্ক বলেন। দ্বিতীয় সন্তান (কন্যা) জন্ম দিতে গিয়ে তিনি মারা যান। সিমোন দ্য বোভোয়াকে আবার বলা হয় নারীবাদের আইনস্টাইন।

মেক্সিকান শিল্পী ফ্রিডা কাহলোর একটা ছবি আছে, ‘টু ফ্রিডাস।’ এক ভয়ঙ্কর ছবি। সেলফ পোট্রেট। দুই ফ্রিডা পাশাপাশি, হাত ধরে বসে। দুইয়ের হৃদয় ধমনীতে যুক্ত, ছেঁড়া ধমনী দিয়ে রক্ত ঝরছে। ছবির প্রেক্ষাপটে আকাশ, আশ্চর্য কালো মেঘে ঢাকা।

কিন্তু বোভোয়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উপর বোফর্স দাগলেও, বোঝাই যাচ্ছে তা এখনও জনযুদ্ধে পৌঁছয়নি। না হলে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার গতি এত ধীর হবে কেন? দেখা যাচ্ছে, মেধার তীব্র উৎকর্ষ যে সব পেশায় প্রয়োজন হয়, সেখানে মেয়েরা এখনও ব্যাকফুটে। সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাথামেটিকস, অর্থাৎ কিনা স্টেম ফিল্ড, মেয়েরা এই ক্ষেত্রে এখনও হাঁটি হাঁটি পা পা। ১৯৯৬ সালে একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, আমেরিকায় মাত্র চার শতাংশ মেয়ে কমপিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চায়, ছেলেদের সংখ্যাটা যেখানে ২০ শতাংশ।

একই ছবি দেখা যায় বায়োলজি এবং ফিজিকাল সায়েন্সে। এর কারণ হিসেবে ওই সমীক্ষায় দেখানো হয়, স্কুলের মধ্যবর্তী স্তর থেকেই মেয়েরা বিশ্বাস করতে শুরু করে, এ সব ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তায় তারা ছেলেদের থেকে পিছিয়ে। দেখা যাচ্ছে, এই জন্যই ৩৫ শতাংশ মেয়ে ক্যালকুলাস করাই ছেড়ে দেয়, ছেলেদের ক্ষেত্রে যা মাত্র ১৪ শতাংশ। সমীক্ষা বলছে, গবেষণাকাজে মেয়েরা অনেক পিছিয়ে। পৃথিবীতে মোট গবেষণাকারীর ৩০ শতাংশ মহিলা, আর দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ায় এই সংখ্যাটা মাত্র ২০ শতাংশ।

ভাবাচ্ছেন ভাবনারা

ভাবনা কান্ত যখন প্রজাতন্ত্র দিবসে রাফাল ওড়ালেন, বিরাট খবর হল। উফ্ ভাবা যায় না! একজন মহিলা ফাইটার জেট চালাচ্ছেন! খুব হইচই চলল কয়েকদিন, যেন উদযাপন। সেনা অফিসার সীমা সিংহরা দশ বছর লড়াইয়ের পর যখন সেনায় পার্মানেন্ট কমিশনে মেয়েদের নিয়োগে সুপ্রিম কোর্টের সিলমোহর পেলেন, তখনও নারীশক্তির জয়, হাঁকিয়ে ছয়, এই সব বলা হল। কিন্তু এটা কেউ বললেন না, স্বাভাবিক একটা ঘটনাকে অস্বাভাবিক ও খবর করে তোলার পিছনে যারা আছে, তাদের শাস্তি কী হবে? যদিও এই প্রশ্নটা শুনে অনেকে ক্ষেপে উঠতে পারেন। এ তো পুরো অলীক জিজ্ঞাসা। সুপ্রিম কোর্টই কি পুরুষতন্ত্রকে ফাঁসিকাঠে ঝোলাবে?

সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাথামেটিকস, অর্থাৎ কিনা স্টেম ফিল্ড, মেয়েরা এই ক্ষেত্রে এখনও হাঁটি হাঁটি পা পা। ১৯৯৬ সালে একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, আমেরিকায় মাত্র চার শতাংশ মেয়ে কমপিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চায়, ছেলেদের সংখ্যাটা যেখানে ২০ শতাংশ।

এবং, অনেকে প্রশ্ন তুলবেন, শীর্ষ আদালতেই বা মহিলা বিচারপতির সংখ্যার এই হাল কেন? সুপ্রিম কোর্টে ৩০ জন বিচারপতির মধ্যে মাত্র দু’জন মহিলা। ইন্দু মালহোত্রা ও ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এ পর্যন্ত মাত্র আট জন মহিলা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হয়েছেন।

সিমোনেই শেষ

সিমোন দ্য বোভোয়া দ্বিতীয় লিঙ্গ বইয়ের শুরুতে কী বললেন? বললেন এক তীব্র কথা: ‘সে একটি জরায়ু, সে একটি ডিম্বাশয়, সে একটি মেয়ে। পুরুষ তার পাশবিক স্বভাবে লজ্জিত হয় না। সে পুরুষ এই তার গর্ব, কিন্তু স্ত্রীলিঙ্গ শব্দটি অমর্যাদার।… নারীকে বন্দি করে রাখা হয় তার স্ত্রীলিঙ্গে।’

আজ, এই ২০২১-এর নারী দিবসে এসেও নারীর জরায়ু ও স্ত্রীলিঙ্গ থেকে মুক্তি পুরোপুরি কবে ঘটবে, সেই আশা কেন করতে হবে? 

রাত কত হল, সেই উত্তর কেন মিলবে না আজও?

Nilarnab Chakraborty Author

পেশায় সাংবাদিক নীলার্ণব বিভিন্ন বাংলা সংবাদপত্র ও পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। গল্প কবিতা ও ফিচার লেখায় সমান আগ্রহ ও দক্ষতা রয়েছে। প্রকাশিত বই রাতের কাহিনী, অসংলগ্ন রিপোর্টাজ, হাওয়ার আওয়াজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *