শীত মানে একদিকে যেমন পিকনিক, মিঠে রোদ্দুর, কমলালেবু আর চিড়িয়াখানা, তেমনই আর এক দিকে কিন্তু খসখসে ত্বক, পা ফাটা, ঠোঁট ফাঁটা, চুলকুনি এমন নানাবিধ সমস্যা। কাজেই শীতের কালে ত্বকের তোয়াজ না-করলে শীতের আমেজ নির্বিঘ্নে উপভোগ করাতে সে রীতিমতো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বইকি! এদিকে নেমন্তন্নবাড়িরও কামাই নেই। আজ বিয়ে তো কাল জন্মদিন! ফলে ত্বকের যত্ন নেওয়ার কথা মাথায় রাখতেই হবে।
তবে শীতে ত্বকের ধরন অনুযায়ী চাহিদার যোগান দেওয়া কিন্তু বেশ কষ্টসাধ্য। বাড়ি থেকে বেরনোর সময় অয়েল বেসড ময়শ্চারাইজার মেখে বেরলেন যাতে মুখের চামড়া নরম থাকে। কিন্তু একটু পরেই দেখলেন রোদে ঘুরে মুখটা কেমন তেলতেল হয়ে গেল। তৈলাক্ত ত্বকে ধুলোবালি বসে গিয়ে আপনাকে নির্জীব দেখাতে লাগল। কিম্বা চপচপে করে ময়শ্চারাইজার মেখে এসি সিনেমা হলে ঢুকলেন। তার খানিক বাদেই এসির টানে ত্বক শুকিয়ে কাঠ! ফলে শীতের সময় চাই বিশেষ যত্ন।
অনেকের ধারণা, শীতে স্ক্রাবার ব্যবহার করলে বোধহয় ত্বক আরও শুকিয়ে যায়। এ ধারণা কিন্তু একদম ভিত্তিহীন। বরং শীতে নিয়ম করে ত্বকে স্ক্রাবিং করা উচিত কারণ এই সময় ত্বকে খুব তাড়াতাড়ি মৃত কোষ তৈরি হয়, যার জেরে মুখ কালো দেখায়। কাজেই নিজের ত্বকের ধরণ অনুযায়ী বেছে নিন স্ক্রাব। খুব জোরে মুখের চামড়ায় ঘষাঘষি করবেন না। হাল্কা হাতে ম্যাসাদের মতো আঙুল চালান আউটওয়র্ড স্ট্রোকে। ওটস, চালের গুঁড়ো, কফি এগুলো ঘরোয়া স্ক্রাব হিসেবে দারুণ অপশন! এর সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী কখনও গ্লিসারিন, কখনও ওয়াইন, কখনও গোলাপজল, কখনও টোমাটোর রস, কখনও অ্যাপল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে নিতে পারেন। দোকানের কেনা স্ক্রাবের চেয়ে ফল কোনও অংশে কম পাবেন না!
শীতের রোদ পোহানোর পক্ষে মিষ্টি হতে পারে, কিন্তু তার আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি এ সময়েও একই রকম ক্ষতি করে ত্বকের। ফলে রোদে বেরোনোর সময় অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। ছাতা নিতে ভুলবেন না। বাড়িতে থাকলে ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ ময়শ্চারাইজার লাগাতে পারেন। যাঁদের ত্বক শুষ্ক তারা কোন ভালো কোম্পানির ডে ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। তার সঙ্গে কখনও কখনও জোজোবা অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বক হাইড্রেটেড থাকবে।
তবে বাড়ির বাইরে বেরনোর ক্ষেত্রে ডে ক্রিম কিন্তু একদমই চলবে না। তখন চাই সানস্ক্রিন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন বেছে নিন। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সানস্ক্রিন পাওয়া যায় – যেমন জেল-বেস, অয়েল-বেস, ওয়াটার-বেস। আপনার স্কিনটাইপ জেনে নিয়ে যে কোনও এক রকম ব্যবহার করুন। রাত্রিবেলা হাল্কা গরম জলে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন, যতই আলস্য লাগুক। নিজের একটু কুঁড়েমির জন্য ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধোবেন না। ঠাণ্ডা জল ত্বকের ছিদ্রগুলির ক্ষতি করে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টা ত্বক পরিচর্যা ও ফেশিয়ালের খুব দরকার। সপ্তাহে এক/দু’দিন ঘরোয়া প্যাক লাগান। সম্ভব হলে মাসে একবার পার্লারে গিয়ে ফেশিয়াল করান। শীতকালের অনেক প্যাকই বাড়িতে থাকা জিনিসপত্র দিয়েই বানানো যায়। যেমন, কমলালেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে রেখে দিন। তাতে অল্প দুধ মিশিয়ে নিলেই প্যাক তৈরি। মিনিট দশেক লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। পরিবর্তনটা খুব তাড়াতাড়ি চোখে পড়বে!
শীতকালে খাওয়াদাওয়া একটু বেশিমাত্রায় বে-নিয়মে চলে! কারণ, একে তো বাজার ভরা লোভনীয় শাক সবজি, ছোট মাছ। তার ওপর নিত্যনতুন নিমন্ত্রণ। গরমে খিদে কমে যাওয়ার সমস্যাও নেই। ফলে খাবার পরিমাণও বাড়ে। হরেকরকম মেনুতে ভর্তি থাকে আপনার চারপাশ। এসবই নিশ্চয়ই খাবেন, তবে মাত্রা রেখে। ভাজাভুজির পরিমাণ যথাসম্ভব কম রাখার চেষ্টা করবেন। শীতকালে আমাদের জল খাওয়া কমে যায়। সেদিকে খেয়াল রাখবেন, জল বেশী করে খাবেন। জল আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে। আর মরসুমি ফল অবশ্যই খাবেন। ফল তৈলাক্ত খাবারকে অনেকটাই ব্যালেন্স করে।
কস্তুরী ইতিহাসে এমএ পাশ দিয়েছেন। চাকরিও করেছেন বেশ কিছু কাল। এখন ফ্রিলান্স লেখালিখি করেন বিভিন্ন পত্রিকায়। বেশ কিছু বছর আনন্দবাজার পত্রিকার "উৎসব" পত্রিকায় নিয়মিত লিখেছেন। গান শুনতে আর সিনেমা দেখতে ভারী ভালবাসেন।