তুমি কি করতে পারো? 
মোমবাতি মিছিলে থাকতে পারো,
সরব থাকতে পারো দূর থেকে,
বড়জোর সই করতে পারো শান্তি প্রস্তাবে!
যে আগুনের মধ্যে ফেলে এলে তাকে,
যে পোড়া ছাই সে দেখেনি কখনও,
ফুটন্ত গোলাপ আর ছুটে চলা জীবন মুছে,
একরাশ জ্বলন্ত কয়লার ওপর,
ছেড়ে দিয়ে এলে তাঁকে নিঃসঙ্কোচে।
হাসছে, খেলছে, দুলছে ভোরের দোলনা,
কেউ দেখেও দেখছে না, যেন ছিল না কেউ!
শিশির ঝরার মতো নিঃশব্দ তার পতন,
বধির কান বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে চরাচরে।

 

এ পোশাক আমার নয়,
ওই কালো ছাতার মতো অন্ধকার আমার নয়,
এই গৌরবভূমি রঙের বাহার ঢেলেছে দেখ,
পেস্তা সবুজ, জাফরান উজ্জ্বল, আফিম ফুলের মতো
গোটা শরীর জুড়ে রঙের ঢেউ আমি রাখি কোথায়?
এত অলঙ্কারে ল্যাপিসের নীল ঠিকরানো আমি,
খোলা চুল থেকে পায়ের পাতা অবধি সজ্জায়,
এই আলো আর  সোনালী ঈগলের দেশে,
বরফ চিতা আর টিউলিপের গল্পগাছায়,
মৃতের কফিন ঘেরা মমি হব না আর!
দরজা জানলা খিড়কি বন্ধ ও পোশাক,
বেহেস্ত নয়, নরকের দরজা খুলে রাখে শুধু!
দেখ ঠিক, আমার ঘৃণার নীচে ফের
দিগন্তজোড়া টিউলিপ ফুটে উঠবেই কোনওদিন।

dying Tulip
বাগান ভরা ফুল, কুঁকড়ে দলা পাকিয়ে আছে

নেই কোনও ঈশ্বরী নেই!
বাগান ভরা ফুল, কুঁকড়ে দলা পাকিয়ে আছে,
ফলের ট্রাকে যত পোকাখাওয়া বাদাম,
থুতু মাখানো বাগ-বাগিচা নর্দমা,
স্কুল বেঞ্চে ফালা করে দেওয়া মেয়েদের নাম আর
ট্রেনে ঝুলে থাকা কাটা মুন্ডু যেন শতাব্দী ষোড়শের-
স্তম্ভিত আমি, স্কুবা ডাইভরত মেয়েকে শোনাই,
এ সব সময় ভুলিয়ে দেওয়া কথা,
বিশ্বাস কোরও না যেন,
তোমার বয়সী কেউ দেখেনি কখনও!
ছেলেকে মনে মনে বলি, 
সহপাঠিনীর অধিকার রক্ষায়,
কেউ এখনও গুলি পেতে নেয় বুকে!
না কোনও ঈশ্বর নেই!
যারা ‘স্বর্গীয় কমেডির’-র বদলে
‘নরকে এক ঋতু’-র বলতে পারে একে!

 

*ছবি সৌজন্য: Amazon, Singulart

সেবন্তী ঘোষের জন্ম শিলিগুড়িতে, উচ্চশিক্ষা বিশ্বভারতী বিদ্যালয়ে। নব্বই দশকের গুরুত্বপূর্ণ বাংলা কবি ও লেখকদের মধ্যে সেবন্তী নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। পেয়েছেন কৃত্তিবাস পুরষ্কার ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি পুরস্কার। সেবন্তীর পেশা শিক্ষকতা। নিয়মিত লেখালেখি করেন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এবং পোর্টালে। ওঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে 'আমাদের কথা', 'যে থাকে অন্ধকারে', 'ফুর্তি ও বিষাদ কাব্য', 'ফুল ও সুগন্ধ', 'দিল-দরিয়া' উল্লেখযোগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *