অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে হা-ক্লান্ত। মনে হয় কতক্ষণে খেয়েদেয়ে আরামে ঘুম দেবেন। কিন্তু বিছানায় শুতেই ঘুম যেন পুরো মরীচিকা। কিছুতেই আর আসতে চায় না। এ-পাশ ও-পাশ করতে করতেই এক-দেড় ঘণ্টা চলে যায়। তারপরও যে ভাল ঘুম হয়, তা কিন্তু নয়। ফলে সকালে ওঠার পরও ক্লান্ত, বিধ্বস্ত লাগে। তা হলে কী করা যায়? গবেষকরা বলছেন, ঘুমনোর দু’ ঘণ্টা আগে যদি উষ্ণ গরম জলে স্নান করতে পারেন, তা হলে নাকি ঘুমের সমস্যায় আর জেরবার হতে হবে না।

ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের গবেষকরা প্রায় ৫০০০ স্টাডি ঘেঁটে দেখেছেন যে সর্বাপেক্ষা অনুকূল তাপমাত্রার সঙ্গে ঘুমের একটা সরাসরি সম্পর্ক আছে। ৪০-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঘুমের জন্য সবচেয়ে ভাল।

দেখা গেছে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে যে সিরকাডিয়ান ক্লক থাকে, তা শরীরের বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ বায়োলজিকাল প্রক্রিয়া যেমন কখন আপনি ঘুমোবেন, কখন আপনি জাগবেন, তা নিয়ন্ত্রণ করে। এ বার স্লিপ-ওয়েক সাইকেলের সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রার একটা সম্পর্ক আছে। সারা দিনে, ২৪ ঘণ্টায় আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ওঠা নামা করে। দুপুর এবং বিকেলের তুলনায় ঘুমের সময় তাপমাত্রা দু’-তিন ডিগ্রি ফ্যারেনহাইট কমে যায়।

সাধারণত, ঘুমনোর এক ঘণ্টা আগে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা .৫-১ ফ্যাহরেনহাইট কমে যায়। মাঝ রাতে তাপমাত্রা আরও কমে। রাত যত গভীর হয়, শরীর ততই ঠান্ডা হতে শুরু করে। তারপর সকালের দিকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। আমাদের ঘুম পাতলা করার জন্য এই প্রক্রিয়া এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যালার্ম ক্লক হিসেবে কাজ করে। ফলে বুঝতেই পারছেন তাপমাত্রার ওঠা নামাই কিন্তু আমাদের ঘুমকে চালনা করে। সুতরাং ঘুমের আগেই যদি আমরা শরীরের তাপমাত্রাকে আমরা কমিয়ে দিতে পারি, তা হলে ঘুম ভাল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

গবেষণা করে দেখা গেছে যে, গরম জলে স্নানের পর শরীর ঠান্ডা হয়ে ঘুমের জন্য অনুকূল তাপমাত্রায় আসতে মোটামুটি ৯০ মিনিট লাগে। উষ্ণ গরম জলে স্নান করলে শরীরের থার্মোরেগুলেটরি সিস্টেম উত্তেজিত হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় হাত-পায়ের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। এর ফলে শরীরের বাকি অংশ থেকে তাপ ক্রমশ হাত-পায়ে চলে আসে এবং ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই তখন শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। সুতরাং যদি সঠিক সময়ে স্নান করেন-অর্থাৎ ঘুমনোর এক-দু’ ঘণ্টা আগে, তা হলে শরীরের তাপমাত্রা কমে একেবারে আদর্শ জায়গায় চলে আসে এবং ভাল ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *