দুর্গামূর্তি ভাবলে চোখে ভেসে ওঠে চিন্ময়ী রূপ। দেবীর মুখে স্মিত হাসি। বাঙালির ভাবনায় জগজ্জননী। তিনি মহিষাসুর বধ করেন, অথচ মুখে থাকে প্রশান্তির ছাপ।
কিন্তু দেবী দুর্গারও যে আছে ভয়াল, ভয়ঙ্কর চেহারা, সে কথা কি জানা আছে? এই রূপে তিনি পূজিতাও হন! শুধু ভীষণদর্শণা নন, রক্তবর্ণা। সেই করাল রূপের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। তবু বছরের পর তিনি ভক্তিভরে, নানা উপচারে পূজিত হচ্ছেন এই বাংলাতেই। ইতিমধ্যেই তাঁর আরাধনার প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
এই দুর্গাপ্রতিমার কাঠামো কিন্তু যে কোনও কাঠে হবে না। চাই ময়না গাছের কাঠ। প্রথা অনুযায়ী, প্রতি বছর ময়না গাছের ডাল কেটে প্রথমে একমাস তারই পুজো চলে। চলতি বছরে কাঠের পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। একমাস পর সেই কাঠেই তৈরি হবে প্রতিমার কাঠামো। একবার দেখবেন নাকি এই পুজো? সামনে দাঁড়িয়ে দর্শন করবেন দেবীর ভয়াবহ রূপ? তাহলে যেতে হবে পুরনো দিনের রাজনগর কোচবিহার। হ্যাঁ, পুজোটা রাজনগরেরই। আদতে রাজাদের পুজো। নাম কিন্তু দুর্গাপুজো নয়, বড়দেবীর পুজো। দেবীর একেবারে ভিন্ন রূপ।

পুজো এলেই তো মন উড়ুউড়ু করে বাঙালির! কোথায় যাই, কোথায় যাই! কোনও বছর দূরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ না হলে, বা ট্যাঁকে না কুলোলে ঘরের কাছে উত্তরবঙ্গ তো আছেই। তবে যাঁরা বেড়াতে আসেন, তাঁদের অধিকাংশের কাছে উত্তরবঙ্গে বেড়ানো মানে দার্জিলিংয়ের পাহাড় বা ডুয়ার্সের জঙ্গল। এর বাইরে কখনও কখনও কেউ একবেলার জন্য কোচবিহার রাজবাড়ি ঘুরে যান বটে, কিন্তু প্রাচীন এই রাজবংশের সঙ্গে জড়িয়ে নানা আচার, প্রথা, ধর্ম, প্রজাবৎসলতা ইত্যাদি কাহিনি অজানাই থেকে যায়। অথচ কোচবিহারের পরতে পরতে কত না আকর্ষণ, কত না-জানা তথ্য, চমক! পুজোয় একবার ডেস্টিনেশন কোচবিহার করলেই হয়। পুজো দেখাও হবে, বিচিত্র আচারবিচারও জেনে যেতে পারবেন।
হ্যাঁ, বড়দেবীর পুজোর প্রতি মুহূর্তে বিচিত্র আচারবিচার, দেবীর বিচিত্র রূপ। ভয়াল দর্শনা, রক্তবসনা আগেই বলেছি। কিন্তু এই দেবীর সঙ্গে দুর্গার বহিরঙ্গের কোনও মিলই নেই। মূর্তি একেবারে অন্যরকম। বাহন শুধু সিংহ নয়, বাঘও আছে। ব্যাঘ্রবাহিনি দুর্গা উত্তরবঙ্গের বৈশিষ্ট্যই বলতে পারেন। অন্য এক দুর্গার কাহিনি বললেই সে কথা স্পষ্ট হবে।
উত্তরবঙ্গের আদি বাসিন্দাদের মধ্যে অন্যতম রাজবংশী সম্প্রদায়। সুন্দরবনে যেমন দক্ষিণ রায়ের উপাসনা হয়, উত্তরবঙ্গে রাজবংশীদের কাছে বাঘ তেমনই অনেকটা পরিত্রাতার মতো। এ প্রসঙ্গে একটি তথ্য জানাই। একসময় উত্তরবঙ্গে, বিশেষ করে কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লক দল অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। বাম আমলে তো বটেই, কংগ্রেস রাজত্বেও। তখন সিপিএম নয়, ফরওয়ার্ড ব্লক ছিল কোচবিহারে বামফ্রন্টের বড় শরিক। রাজনীতির সে কথা থাক। বাঘের কথায় আসি। ফরওয়ার্ড ব্লকের নির্বাচনী প্রতীক সিংহ। বিশালাকার। কোচবিহারে কিন্তু কেউ সিংহ চিহ্নে ভোট দিতে বলেন না। বলেন বাঘ ছাপে ভোট দিতে। এমনকি ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা-কর্মীরাও। রাজবংশী লবজে বলেন, ‘বাঘত ছাপ দেও।’ বাঘ এখানকার সংস্কৃতিতে, মননে জড়িয়ে আছে। একসময় জলজঙ্গলের দেশ উত্তরবঙ্গ। এখানে সিংহ কখনও আবাসিক ছিল না। ছিল বাঘ। কোচবিহার রাজবাড়ির অদূরে পাতলাখাওয়া জঙ্গলেও বাঘ ছিল বলে শোনা যায়।

বাঘের প্রাচুর্য থাকলেও উত্তরবঙ্গে কিন্তু বাঘ-মানুষের সংঘাতের তেমন কোনও ঘটনা কখনও জানা যায়নি। মোটামুটি সহাবস্থানই ছিল। রাজবংশী জনজীবনে বাঘ অনেকটা শ্রদ্ধার আসনেই। সেই বাঘ-সংস্কৃতির ছোঁয়া বড়দেবীর মূর্তি ভাবনাতেও। ভাবনা বলার কারণ আছে। এই মূর্তির রূপ নাকি স্বপ্নে দেখা। প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, কোচবিহারের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজা নরনারায়ণ স্বপ্নে বড়দেবীর যে মূর্তি দেখেছিলেন, সেই রূপই পূজিত হয়ে আসছে। প্রথমে রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই পুজো হত। কোচবিহারের ভারতভুক্তির পর চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রাজাদের সমস্ত দেবত্র সম্পত্তির অধিকারী হয় রাজ্য সরকার। তৈরি হয় কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড। পদাধিকার বলে কোচবিহারের জেলাশাসক এই বোর্ডের সভাপতি। এই ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় বড়দেবীর পুজো তো হয়ই, এমনকি, রাজাদের প্রতিষ্ঠিত সমস্ত মন্দিরে উৎসব, পার্বণ, নিত্যপুজো চলে ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে। এই ট্রাস্টের দায়িত্বে মসজিদও আছে। এই মসজিদেও একসময় রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল।
এই পুজো, পার্বণ, উৎসবের জন্য রাজ্য প্রশাসনের বাজেট বরাদ্দ হয় প্রতি বছর। বর্তমানে দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড পর্যটন দপ্তরের অধীন। যদিও এই দেবত্র সম্পদকে কেন্দ্র করে পর্যটন বিকাশের তেমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। ধর্মে অবিশ্বাসী বামফ্রন্ট রাজত্বেও সরকারের ব্যবস্থাপনায় পুজো, উৎসব, আয়োজনে ছেদ পড়েনি। সে অবশ্য অন্য প্রসঙ্গে। বড়দেবীর পুজোর প্রস্তুতি এখন জোরকদমে চলছে। ময়না গাছের কাঠ কাটা হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক পুজো হয়েছে ‘ডাঙর আই’ মন্দিরে। ‘আই’ শব্দের অর্থ দিদি। ‘ডাঙর’ মানে বড়। তবে স্বাস্থ্যবিধির দৌলতে এবার আর শোভাযাত্রা করে, ঢাকঢোল বাজিয়ে সেই কাঠ মদনমোহন মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়নি। রাজপুরোহিত বংশের বর্তমান প্রজন্ম নিষ্ঠাভরে সেই কাঠ গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছেন কোচবিহার রাজাদের ইষ্টদেবতা মদনমোহনের মন্দিরে। একমাস পুজোর পর আবার মহাসমারোহে নিয়ে যাওয়া হবে বড়দেবীর মন্দিরে। সেখানে শুরু হবে ময়না কাঠের কাঠামো বানিয়ে মূর্তি তৈরি। বড়দেবীর পৃথক মন্দিরের নাম দেবীবাড়ি।

কোচবিহার তো বটেই, লাগোয়া অসমের মানুষের কাছেও পূণ্যতীর্থ এই দেবীবাড়ি। সারা বছর কিন্তু মন্দির তালা দেওয়াই থাকে। ময়না কাঠ পৌঁছনোর পর শুরু হয় তৎপরতা। চিত্রকর বংশের বর্তমান প্রতিনিধির হাতে ধীরে ধীরে অবয়ব পায় বড়দেবীর প্রতিমা। চিত্রকর বংশটি এই কাজ করছে রাজ আমল থেকে। রাজাদের কাছে বংশটির কদর কিন্তু শুধু পুজোর সময় ছিল না। সারা বছরই সেই পরিবারের ভরণপোষণের জন্য জমি দিয়েছিলেন রাজারা। এমন নানা কাজের জন্য জমির বন্দোবস্তের বিভিন্ন নজির আছে কোচবিহার রাজবংশে। বড়দেবীর পুজোয় একসময় নরবলি হতো। দেবীবাড়ির আলাদা কক্ষে নরবলি হতো গুপ্ত পুজোর সময়। সেই পুজোয় প্রবেশাধিকার ছিল শুধু পুরোহিত এবং রাজাদের ধর্মীয় প্রতিনিধি দুয়ারবক্সির। মানুষকে হাড়িকাঠে ফেলে বলির সেই প্রথা বন্ধ হলেও প্রতীকী নরবলি আজও চালু আছে। গুপ্ত পুজোয় এখন আঙুল চিরে রক্ত দেওয়া হয়। এই আঙুল চিরে রক্ত দেয় বংশপরম্পরায় একটি পরিবারের প্রতিনিধিরা। তাঁদের পূর্বপুরুষদের জমির বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন রাজারা।
শুধু নরবলি নয়, বড়দেবী বড় রক্তের ভক্ত।
ময়না গাছের কাঠপুজো থেকে শুরু করে বিসর্জনের ঘাট পর্যন্ত প্রতিদিন, প্রায় প্রতি আচারে বলিপ্রথা আছে বড়দেবীর পুজোয়। অন্য কিছু না হলে পায়রা বলি তো আছেই। শুয়োর বলি হয় নিয়মিত। অষ্টমীর দিন এখনও মোষ উৎসর্গ করা হয়। এজন্য স্থায়ী হাড়িকাঠ আছে দেবীবাড়িতে। স্থায়ী হাড়িকাঠ আছে মদনমোহন মন্দির চত্বরেও। বড়দেবীর পুজোয় একসময় কচ্ছপও বলি হত। বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় নাম ওঠার পর কচ্ছপ বলি বন্ধ হলেও চালু আছে শোলমাছ বলি। আবার কুমড়ো বলিও হয়। বড়দেবীর বিসর্জন ঘাটে পুজো হয় শুয়োর বলি দিয়ে। আসলে বলির এই প্রথায় জড়িয়ে আছে কিরাত সংস্কৃতি। বড়দেবীর মূর্তিতেও সেই ছাপ স্পষ্ট। বাঘ বাহনের কথা আগেই বলেছি। মূর্তির পাশে এখানে লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশের দেখা মিলবে না। বদলে দেবীর পাশে দণ্ডায়মানা দুই সখি জয়া, বিজয়া। লোককথায় প্রচলিত যে, এই অবয়বেই স্বপ্নে দেবী দর্শন করেছিলেন রাজা নরনারায়ণ।
বড়দেবীর আরাধনা চলে আর পাঁচটা দুর্গাপুজোর মতো চারদিন সপ্তমী থেকে দশমী। বিসর্জনের রীতিও অভিনব। সন্ধ্যায় নয়, দশমীর সকালেই বড়দেবীর ভাসান হয়। ঘাটে আর একপ্রস্ত পুজোর পর দাঁত, কুড়ুল দিয়ে প্রতিমা কেটে, ছিঁড়ে ভাসিয়ে দেওয়া হয় জলে। তবে বড়দেবীর বিসর্জনেই কিন্তু উত্তরবঙ্গের দুর্গাপুজো শেষ হয়ে যায় না। দশমীর পরদিন থেকে আবার দূর্গাপুজোর প্রচলন আছে উত্তরবঙ্গে, বিশেষ করে রাজবংশী অধ্যুষিত অঞ্চলে।
উল্লেখ করার মতো বড়ো মাপে পুজো হয় জলপাইগুড়ি শহরের কাছে তিস্তা নদীর অদূরে বার্নিশ গ্রামে। এছাড়া কোচবিহার জেলায় তিস্তা নদী তীরবর্তী মেখলিগঞ্জ মহকুমার কোথাও কোথাও এই পুজোর প্রচলন আছে। আলিপুরদুয়ার শহরের অদূরে বাইরাগুড়িতেও এই পুজো হয়। তবে বার্নিশের পুজোর আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। এই দেবী ভান্ডানি নামে পরিচিত। ভাণ্ডারের দেবী ভান্ডানি। শস্যের দেবী। তাঁর আরাধনায় শস্য উপচে পড়বে জমিতে, এমন বিশ্বাস আছে। মূলত কৃষিসমাজেরই দেবী ভান্ডানি। কৃষি সংস্কৃতির পুজো। এই পুজোর লোককথাতেও আছে কিরাত সংস্কৃতির ছোঁয়া।
তবে ওই লোককথায় স্পষ্ট শ্রেণি বিভাজন। প্রচলিত বিশ্বাসে দেবী দুর্গার আরাধনার অধিকার শুধু উচ্চবর্ণের। সেখানে নিম্নবর্গীয় মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। এই বৈষম্যে অসন্তোষ স্পষ্ট রাজবংশী লোককথায়। ওই কাহিনি অনুযায়ী, দুর্গাপুজো হয় শুধু জমিদার বাড়ি কিংবা রাজপরিবারে। এরকমই পুজো নিয়ে দশমীর পর কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরছিলেন দুর্গা। সঙ্গে চার সন্তান লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ। তাঁরা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে বনপথে। কিছুটা পিছিয়ে হাঁটছেন দুর্গা। হঠাৎ বনপথে তাঁর গতিরোধ করে দাঁড়ালেন নিম্নবর্গীয় একদল দরিদ্র মানুষ। কোনও অসৎ উদ্দেশে নয়। তাঁরা চান দুর্গার পুজো করতে। সেজন্য দুর্গার কাছে সময় ও সুযোগ চান এই মানুষগুলি। দুর্গা অবাক। এই তো তিনি পৃথিবী থেকে পুজো নিয়ে ফিরছেন। আবার পুজো নেবেন কী করে। তাঁর তো তখন সময়ও নেই। তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে কৈলাসে। পথ চেয়ে আছেন শিব। কিন্তু নিম্নবর্গীয়রা নাছোড়। তাঁদের বক্তব্য, দেবী কি শুধু জমিদার, রাজা, সচ্ছল উচ্চবর্ণের লোকের? তাঁরা কি দেবী আরাধনার সুযোগ পাবেন না? হক কথা। দুর্গা পড়লেন মহা বিপাকে। তিনি তো আর বলতে পারেন না যে, নিম্নবর্গীয়দের পুজো নেবেন না। দেবতা যে ধনী, গরিব, উচ্চবর্ণ, নিম্নবর্গীয় সকলের।

অগত্যা দেবী উপায় বের করলেন। তিনি বললেন, ‘আমার তো এখন সময় নেই রে। তোরা তাড়াতাড়ি এখানেই আমার পুজোর ব্যবস্থা কর।’ সেই শুরু হল নিম্নবর্গীয়দের দুর্গাপুজো। লোককথা অনুযায়ী এই পুজোয় আরাধ্যা দুর্গা পরিচিত হলেন ভান্ডানি নামে। ভান্ডানি মূর্তিতেও লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ নেই। রাজবংশী সমাজের লোককথায় বলা হয়ে থাকে, বনপথে লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ এগিয়ে গিয়েছিলেন বলে ভান্ডানি আরাধনার সময় তাঁরা অনুপস্থিত ছিলেন। তাই তাঁদের মূর্তি থাকে না ভান্ডানির পাশে। ভান্ডানির বাহনও বাঘ। বনপথে উত্তরবঙ্গে সিংহবাহিনী হওয়া কষ্টকল্পনা। কিরাত বিশ্বাসে তাই দেবীর বাহন সবসময় বাঘ। কিন্তু বাঙালি সংস্কৃতির প্রভাবে আজকাল কোথাও কোথাও বাহন হিসেবে সিংহ দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ধারা সম্পর্কে বিশদে অনেকদিন আগেই লিখেছেন আমার বন্ধু, সমাজ গবেষক কৃষ্ণপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ভিন্ন সংস্কৃতির চাপে ভান্ডানি আরাধনায় আরও অনেক পরিবর্তনের ছাপ পড়েছে। একসময় ভান্ডানি পুজো হত দুর্গাপুজোর মতো চারদিন। দশমীর পরদিন থেকে চারদিন। এখন কোথাও দু’দিন, কোথাও একদিনে এসে ঠেকেছে পুজোর সময়। এই পুজোয় পায়রা উৎসর্গ করার প্রথা আছে। তবে সবক্ষেত্রে বলি নয়, উড়িয়ে দেওয়া হয়।
পুজোয় বেড়ানোর প্যাকেজটা কি তাহলে একবার অন্যরকম করা যায়? প্রথম চারদিন বড়দেবী, পরের চারদিন ভান্ডানি! মাঝে ডুয়ার্সের জঙ্গল ঘুরে দেখা, কোচবিহারের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থানগুলি ছুঁয়ে যাওয়া! ভিন্ন বিশ্বাস, না-জানা ইতিহাস, লোককথা, বিশ্বাস, অচেনা পুজো। সব মিলিয়ে আলাদা প্যাকেজ। মন্দ লাগবে না কিন্তু! ঘোরাফেরা সঙ্গে জানা-চেনা। বলা যায় না, আরও অনেক কিছুর দরজা খুলে যেতে পারে পুজো পর্যটনে!
কর্মসূত্রে কলকাতায় দীর্ঘদিন বসবাসের পর থিতু শিলিগুড়ি শহরে। নিজেকে ডুয়ার্সের সন্তান বলতে ভালোবাসেন। গ্রামের আদি বাড়ির একপাশে বোড়ো আদিবাসী বসত, অন্যপাশে সাঁওতাল মহল্লা। বক্সার রায়ডাক জঙ্গল গ্রামের কাছেই। শৈশব, কৈশোরে বাড়ির উঠোনে চলে আসতে দেখেছেন হাতি, চিতাবাঘ, হরিণ। জঙ্গলে কুল কুড়োতে কুড়োতে আর নদীতে ঝাঁপিয়ে বড় হওয়া। প্রকৃতি আর উপজাতিরাই প্রতিবেশী। যৌবনে এই পরিবেশে কিছুকাল বাউন্ডুলে জীবনের পর সিদ্ধান্ত, সাংবাদিকতা ছাড়া আর কোন কাজ নয়।
“আই” শব্দ বোঝাতে ‘দিদি’ বলা হয়েছে। বড় আই = বড় দিদি বলা হয়েছে। রাজবংশী ভাষায় ‘আই’ অর্থ তো ‘মা’ জানি । আর ‘দিদি’ কে তো ‘বাই’ বলে জানতাম।