আজ, ২২ এপ্রিল, স্বনামধন্যা সঙ্গীত শিল্পী শ্রীমতি সুপ্রীতি ঘোষের একাদশতম প্রয়াণ দিবস। আজকের প্রজন্ম কতটুকু জানে এই কিংবদন্তী শিল্পী সম্পর্কে? কেউ কেউ হয়তো নামটুকু জানেন, তা-ও মহালয়ার দিনে বেতারে সম্প্রচারিত ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’ গানের কল্যাণে! ওই একটি গানই কি তবে তাঁর পরিচায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে একুশ শতকে? সুপ্রীতির দীর্ঘ সঙ্গীতজীবন, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তাঁর অতুল খ্যাতি, ছায়াছবির জগতে তাঁর প্লেব্যাক — এসবই কি হারিয়ে যাবে পরবর্তী প্রজন্মের প্লেলিস্টের ভিড়ে? বাংলালাইভ খুঁজে ফেরে সেই সব হারিয়ে যাওয়া দিনের গল্প, ফেলে আসা গানের সুর, প্রবাদপ্রতিম শিল্পীদের পায়ের চিহ্ন। সুপ্রীতি ঘোষের প্রয়াণ দিবসে বাংলালাইভের তরফে বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করলেন শৌণক গুপ্ত। তুলে আনলেন হারিয়ে যাওয়া সুরেলা অতীতের মণিমানিক।
১৯৪৬ সাল। ভয়াবহ দাঙ্গায় তখন রক্তাক্ত কলকাতার বুক। মহালয়ার ভোরে, শ্রোতাদের অধীর অপেক্ষার অবসানে, ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হবে কী ভাবে? তখন সরাসরি সম্প্রচারের যুগ। চিন্তার ভাঁজ কলকাতা বেতার-কর্তাদের কপালে। মধ্যরাত্রে অতজন শিল্পীকে বেতারকেন্দ্রে নির্বিঘ্নে নিয়ে আসার গুরুদায়িত্ব নিতে পারলেন না কর্তৃপক্ষ। উপায়? ঠিক হল, রেকর্ড করে রাখা হবে সমগ্র অনুষ্ঠানটি, এবং নির্দিষ্ট দিনে নির্ধারিত সময়ে মহিষাসুরমর্দিনী সম্প্রচারিত হবে স্টুডিও রেকর্ডিং থেকেই। ইতিমধ্যে প্রয়াত হয়েছেন অনুষ্ঠানের অন্যতম জনপ্রিয় গানের শিল্পী মধুকন্ঠী শৈল দেবী। সে গান কে গাইবেন? সঙ্গীত পরিচালক পঙ্কজকুমার মল্লিককে বেতার কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করলেন সুপ্রীতি ঘোষের নাম। মেনেও নিলেন পঙ্কজকুমার। শিল্পীর জীবনে ও মহিষাসুরমর্দিনীর ইতিহাসে সমাগত হল এক মাহেন্দ্রক্ষণ। দুর্দিনের ঘোর অমানিশা ভেদ করে, ১৯৪৬ সালের মহালয়ার প্রত্যুষে, আলোর বেণুর স্বরে, প্রথমবার, পরম মঙ্গলময়ীর আবাহন করলেন সুপ্রীতি ঘোষ।
পঙ্কজকুমার মল্লিকের চোখ জহুরির। ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’-র মত গানের জন্য কন্ঠনির্বাচনে ভুল করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। রবীন্দ্রগানের একনিষ্ঠ সাধক পঙ্কজকুমার পরিচিত ছিলেন সুপ্রীতির গানের সঙ্গে। চল্লিশের দশকের গোড়ার কথা। রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে তখন উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত বিরাজ করছেন রবীন্দ্র-আশিসধন্য পঙ্কজকুমার মল্লিক। রেকর্ডে, চলচ্চিত্রে, বেতারে কবিগুরুর গান তাঁর কন্ঠবাহিত হয়ে নিয়ত পৌঁছচ্ছে শ্রোতাদের অন্তরে, অন্দরে। এমন সময়, পাইওনিয়র কোম্পানি থেকে নবাগতা সুপ্রীতি ঘোষ রেকর্ড করলেন ‘কে বলে ‘যাও যাও আমার যাওয়া তো নয় যাওয়া।’ তখন তিনি সুপ্রীতি মজুমদার। যথারীতি টেস্ট রেকর্ড পৌঁছল শান্তিনিকেতন। সেখান থেকে ছাড়পত্র এলেই কোম্পানি রেকর্ড পৌঁছে দেবেন শ্রোতাদের হাতে। নবাগতা শিল্পীর গান শুনে রবীন্দ্রনাথ অনুমোদনই শুধু করলেন না, লিখে পাঠালেন আশীর্বাণী। প্রকাশিত হল রেকর্ড। তখন ১৯৪১ সাল। সে বছরই দেহ রাখলেন কবি। অবশ্য কিশোরী সুপ্রীতির কন্ঠে তিনি আগেই বলে গেছেন – আমার যাওয়া তো নয় যাওয়া!
রবীন্দ্রনাথ মজুমদার ও কমলা দেবীর কন্যা সুপ্রীতি মজুমদারের জন্ম ১৯২২ সালের ২৮ আগস্ট, উত্তর কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রিটে। সুরে তাঁর দীক্ষা হয়েছিল জন্মলগ্নেই। জ্যাঠামশাই নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার শুধু বিখ্যাত ক্ল্যারিয়োনেট বাদকই ছিলেন না, ছিলেন বেতারের অন্যতম অনুষ্ঠান পরিচালক। সেই সূত্রে বাড়িতে যাওয়া-আসা ছিল হীরেন বসু, পঙ্কজকুমার মল্লিক, রাইচাঁদ বড়াল, প্রমুখ সে যুগের বিখ্যাত সুরসাধকদের। তখন বাড়ির এ ঘর সে ঘর থেকে ভেসে আসত দুই বোন ভারতী আর সুপ্রীতির গানের আওয়াজ। সে গান এড়িয়ে যেতে পারেনি রবীন্দ্রসঙ্গীতাচার্য অনাদিকুমার দস্তিদারের কান। তাঁরই ঐকান্তিক আগ্রহে, মনোরঞ্জন সেন প্রতিষ্ঠিত বাসন্তী বিদ্যাবীথিতে প্রথাগত সঙ্গীতশিক্ষা শুরু করেন দুই বোন। ১৯৩৩ সালে এগারো বছর বয়সে কলকাতা বেতারে প্রথমবার সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুপ্রীতি। রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েই বেতারের যাত্রা শুরু। টুলের ওপর দাঁড়িয়ে ছোট্ট সুপ্রীতি গেয়েছিলেন, ‘সন্ধ্যা হলো গো ও মা।’ এরপর, ১৯৩৬ সালে সেনোলা রেকর্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, সেই কোম্পানি থেকেই প্রকাশিত হয় ওঁর প্রথম রেকর্ড। একপিঠে কাব্যসঙ্গীত – ‘আবার আমি আসব গো এই পথে’, অন্যপিঠে কীর্তন ‘আজও কি যমুনাতীরে।’ প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন সুরকার শৈলেশ দত্তগুপ্ত। বাসন্তী বিদ্যাবীথিতে শিক্ষাগ্রহণের সময়ই সুপ্রীতি শৈলেশ দত্তগুপ্তের সংস্পর্শে এসেছিলেন। সেই শিক্ষায়তনে শৈলেশ দত্তগুপ্ত ছাড়াও তিনি গান শিখেছিলেন অনাদি দস্তিদার, অনিল বাগচি, হিমাংশু দত্ত (সুরসাগর), জগৎ ঘটক, নিতাই ঘটক, উমাপদ ভট্টাচার্য, রামকিষণ মিশ্র, রত্নেশ্বর মুখোপাধ্যায়, হরিদাস কর, ভূপেন বসু, প্রকাশকালী ঘোষাল, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, প্রমুখ সে যুগের শ্রেষ্ঠ গুণীদের কাছে।
ত্রিশের দশকের শেষ দিকে পাইওনিয়র কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন সুপ্রীতি মজুমদার। এই কোম্পানিতেই, সঙ্গীতজীবনের প্রথম পর্বে, সুপ্রীতি রেকর্ড করেন শৈলেশ দত্তগুপ্ত, হিমাংশু দত্ত (সুরসাগর), সুধীরলাল চক্রবর্তী, নীহারবিন্দু সেনের মতো স্বনামধন্য সুরস্রষ্টাদের গান। ‘তোমার আকাশে চাঁদ ছিল, আর আমার ভুবনে ছিল গান’, ‘যদি আবার দু’জনে দেখা হয়’, ‘রতনপুরের মেলাতে চাঁদনিরাতের বেলাতে’, প্রভৃতি গান তাঁর কন্ঠে লাভ করেছিল যথেষ্ট জনপ্রিয়তা। যথাযথ আধারকেই চয়ন করেছিলেন দিকপাল সুরকারেরা, তাঁদের অনন্য কিছু সৃষ্টি কন্ঠে ধারণ করে শ্রোতাদের হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। লোকসুর, কীর্তনের সুর, এমনকি পাশ্চাত্যসুরেরও অনন্য কিছু গান, এঁরা সার্থকভাবেই তুলে দিয়েছিলেন সুপ্রীতির কন্ঠে। পাইওনিয়র কোম্পানির রেকর্ডেই প্রকাশিত হয় পরবর্তীকালের দিকপাল শিল্পী মান্না দে’র (তখন তিনি প্রবোধ দে) সুরারোপিত প্রথম গান, ‘বালুকাবেলায় অলস খেলায় যায় বেলা’ – সুপ্রীতির কণ্ঠে। তিনি তখন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী। প্রথমে রাজিই হননি নবাগত প্রবোধ দে-র সুরে গান করতে। পরে যখন জানতে পারেন, এই তরুণ সুরকার কৃষ্ণচন্দ্র দে-র ভ্রাতুষ্পুত্র, তখন আর ভরসা না রেখে পারেননি। কৃষ্ণচন্দ্র দে-র স্নেহও লাভ করেছিলেন সুপ্রীতি। তাঁর পরিচালনায় গেয়েছিলেন গানও – ‘মন পবনের নাও আমার।’
১৯৪২-এর কোনও এক সময়ের কথা। ততদিনে অরবিন্দ ঘোষের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে সুপ্রীতি মজুমদার হয়েছেন সুপ্রীতি ঘোষ। একদিন রবীন চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে গিয়েছেন শচীন দেববর্মনের কাছে। ডেকে পাঠিয়েছেন শচীনকর্তাই। ভয়ে ভয়ে গিয়েছেন, অত বড় মানুষটাকে গান শোনাতে হবে যে! গান গাইলেন। পছন্দ হল শচীনকর্তার। সঙ্গে সঙ্গে এসে গেল ‘অভয়ের বিয়ে’ ছবিতে গান করার সুযোগ। সেই প্রথম প্লেব্যাক। এদিকে রেকর্ডিংয়ের দিন বিপত্তি! প্রচণ্ড কাশি। গান গাওয়া অসম্ভব! কোনও ওষুধেই কাজ হচ্ছে না। শচীনকর্তা দুটো ডাব কিনে আনালেন। ‘ডাব খাইয়া লও। পেট গরম হইসে।’ ডাবের জল খেয়েই কাশি উধাও! রেকর্ডিং-ও হল যথাসময়ে – ‘মন বলে যে মেল মেল, নয়ন বলে না’, ‘এ কেমন দোলা কে জানে’, ‘কুড়িয়ে মালা গাঁথবে কি না, নাই ভাবনা’। ‘অভয়ের বিয়ে’-র পরে ‘স্বামীর ঘর’ (১৯৪৩), ‘শেষরক্ষা’ (১৯৪৪), ‘নিবেদিতা’ (১৯৪৬), ‘অলকানন্দা’ (১৯৪৭), ‘ঝড়ের পর’ (১৯৪৭), ‘মহাকাল’ (১৯৪৮), ‘কৃষ্ণা কাবেরী’ (১৯৪৯), ‘কঙ্কাল’ (১৯৫০), ‘রত্নদীপ’ (১৯৫১), ‘কপালকুণ্ডলা’ (১৯৫২), ‘কেরানির জীবন’ (১৯৫৩), ‘সাহেব বিবি গোলাম’ (১৯৫৬), প্রভৃতি বহু চলচ্চিত্রের নেপথ্যে, শতাধিক প্লেব্যাক করেছেন সুপ্রীতি ঘোষ।
সে যুগের বহু সুকন্ঠী, বিবাহের পর বাধ্য হতেন রেকর্ড-বেতার-ছায়াছবির জগৎ থেকে অবসর নিতে। কিন্তু সুপ্রীতি বিবাহিত জীবনেও তাঁর উজ্জ্বল সঙ্গীতজীবন সমান তালে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। স্বামী অরবিন্দ ঘোষের সহায়তা তো ছিলই, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকেও অবাঞ্ছিত কোনও প্রশ্নের মুখে তাঁকে পড়তে হয়নি। একবার শুধু চিন্তায় পড়েছিলেন শ্বশুরমশাই মণিমোহন ঘোষ। সেটা ছিল এক রবিবার। সদ্যবিবাহিতা শিল্পী গেছেন রেকর্ডিং করতে। এদিকে শ্বশুরমশাই ভাবছেন, ছুটির দিনেও বৌমা যায় কোথায়! এই ভেবে তিনি সোজা চলে গেলেন স্টুডিওতে। সেখানে যেতেই সাড়া পড়ে গেল! সুপ্রীতি ঘোষের শ্বশুরমশাই এসেছেন। সুপ্রীতি তক্ষুনি মাথায় কাপড় টেনে এক দৌড়ে বাইরে। ততক্ষণে মণিমোহনবাবু সব বুঝতে পেরে ফিরে গিয়েছেন। আসলে তিনিও যে অনুরাগী ছিলেন বৌমার গানের! কখনও কখনও সস্নেহে বলতেন, ‘বৌমা, ‘ছোট্টবেলার স্বপন-ঘেরা’ গানটা শোনাও।’ মাঝে মাঝেই এ গান ওঁকে গেয়ে শোনাতে হত সুপ্রীতির।
পাইওনিয়র কোম্পানিতে বছর পাঁচেক রেকর্ড করার পর, বিশ্ববিখ্যাত হিজ মাস্টার্স ভয়েস (এইচএমভি)-এর চুক্তিবদ্ধ শিল্পী হন সুপ্রীতি ঘোষ। বিশেষত রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে তাঁর নাম ততদিনে শীর্ষস্থানে। পঙ্কজকুমার মল্লিক, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুধা মুখোপাধ্যায় ও সুপ্রীতি ঘোষই সে যুগে ছিলেন রবীন্দ্রগানের শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। অবশ্য এঁরা প্রত্যেকেই রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়াও অন্যান্য নানা ধারার গান গাইতেন। গীতিকবি পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ানে, “আমাদের ছেলেবেলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী হিট ছবি বিমল রায়ের ‘উদয়ের পথে।’ এই ছবিতে ‘চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে’ এই রবীন্দ্রসঙ্গীতটি গেয়েছিলেন চিত্রনায়িকা বিনতা রায় স্বয়ং। তার কিছুদিন আগেই পরিবেশিত হয় সুপ্রীতি মজুমদারের গাওয়া ‘চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে’… পাইওনিয়র রেকর্ডে গানটি প্রকাশ পাওয়ামাত্র সুপারহিট হয়। সে সময় এই রেকর্ডটি, রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড বিক্রির সেরা তালিকায় ছিল।”
এইচএমভি-তে আসার পরে, সুপ্রীতি ঘোষের কন্ঠে একে একে প্রকাশিত হয় ‘ও আমার চাঁদের আলো’, ‘দখিন হাওয়া জাগো জাগো’, ‘কুসুমে কুসুমে চরণচিহ্ন’, ‘গোধূলিগগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা’, ‘দুখের বেশে এসেছ বলে তোমারে নাহি ডরিব হে’, ‘কূল থেকে মোর গানের তরী’, প্রভৃতি রবীন্দ্রগান। আবদুল আহাদের প্রশিক্ষণে ‘দুঃখে যাদের জীবন গড়া’ (১৯৪৬), অনাদিকুমার দস্তিদারের প্রশিক্ষণে ‘ঘরোয়া’ (১৯৪৭), ‘দৃষ্টিদান’ (১৯৪৮), দ্বিজেন চৌধুরীর প্রশিক্ষণে ‘দত্তা’ (১৯৫১) ছবিতে সুপ্রীতির কন্ঠে জনপ্রিয় হয় ‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে’ (সহকন্ঠে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়), ‘তোমায় নতুন করে পাব বলে’, ‘জীবনে পরম লগন’, ‘সে কোন বনের হরিণ’ (সহকন্ঠে অসিতবরণ), ‘দীপ নিবে গেছে মম নিশীথসমীরে’, প্রভৃতি গান। নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’ ও ‘চিত্রাঙ্গদা’ যখন গীতিনাট্যের আকারে এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয়, তাতে যথাক্রমে মা ও চিত্রাঙ্গদার ভূমিকায় সুপ্রীতি ঘোষের গান উচ্চপ্রশংসিত হয়। অনাদিকুমার দস্তিদার, নীহারবিন্দু সেন, কনক বিশ্বাস, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, শান্তিদেব ঘোষ, প্রমুখ রবীন্দ্রসঙ্গীতের বরেণ্য আচার্যদের কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তা সুপ্রীতি, চারের দশকে, কলকাতার বিখ্যাত সঙ্গীতশিক্ষায়তন গীতবিতানে কিছুকাল রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষিকা হিসেবেও যুক্ত ছিলেন।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট লালকেল্লার উন্নত শির শোভিত করে ত্রিবর্ণ জাতীয় পতাকা। শেষ হয় ইংরেজ অধীনতা। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রভাতে আকাশবাণীর বিশেষ অনুষ্ঠানে সম্প্রচারিত হয় সুপ্রীতি ঘোষের গান। সে অনুষ্ঠানে সুপ্রীতি ছাড়াও গেয়েছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক, জগন্ময় মিত্র ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এই সময় দু’টি আলাদা রেকর্ডে ‘বন্দেমাতরম্’ গানটি শোনা যায় সুপ্রীতি ঘোষ ও অন্যান্য শিল্পীদের সমবেত নিবেদনে – একটিতে রবীন্দ্রনাথকৃত সুরে ও অন্যটিতে তিমিরবরণের সুরে। ১৯৪৮ সালে রবীন্দ্রনাথের ‘জনগনমন-অধিনায়ক’ গানটি রেকর্ড করেন সুপ্রীতি, কনক বিশ্বাস, গীতা সেন, সুচিত্রা মিত্র, জগন্ময় মিত্র, দ্বিজেন চৌধুরী, দেবব্রত বিশ্বাস ও নীহারবিন্দু সেনের সঙ্গে। তখনও এ গানের প্রথম স্তবকটি ভারতের জাতীয়সঙ্গীতরূপে চূড়ান্তভাবে বিবেচিত হয়নি।
চারের দশক জুড়ে নানা ধরনের গান গাইলেও, সুপ্রীতি ঘোষের খ্যাতি ছিল মূলত ওঁর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের জন্যই। আধুনিক গানে সুপ্রীতির অনন্য সাফল্যের যে ইতিহাস, তার সূচনা পাঁচের দশকের গোড়ায়। কাহিনিমূলক গানের প্রচলন তখন সবে শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে জগন্ময় মিত্রের ‘চিঠি’, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘গাঁয়ের বধূ।’ ১৯৫০ সালে শৈলেশ দত্তগুপ্তের সুরে, শ্যামল গুপ্তের কথায় সুপ্রীতি ঘোষ গাইলেন একটি মেয়ের জীবনের ছোট্ট গল্প – ‘বিয়ের আগে ও পরে।’ একপিঠে বিয়ের আগে, ষোলো বছরের মেয়ের বধূবেশে সেজে ওঠার কালে নিজের বাড়ি, গ্রামকে ঘিরে শৈশব স্মৃতিরোমন্থন, আবেগের প্রকাশ। অন্য পিঠে বিয়ের পরে আনন্দের সংসারে তিনমাস কাটিয়ে স্বামীর সঙ্গে বাপের বাড়ির গ্রামে আসার পথে সেই মেয়েরই অনুভূতি। অত্যন্ত জনপ্রিয় এ গানটিই শুনতে ভালোবাসতেন সুপ্রীতির শ্বশুরমশাই। দেশভাগের স্মৃতি তখনও উজ্জ্বল, নিদারুণ অভিঘাতে বাংলার বহু বাস্তুহারা মানুষ তখন জর্জরিত। ১৯৫০ সালেই সুপ্রীতি ঘোষ ও তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠে শোনা যায় এই বাস্তুহারার দলেরই কোনও এক দম্পতির করুণ গল্প – ‘ছেড়ে এলাম সেই খেলাঘর কাজলানদীর তীরে৷’ এরপর, পাঁচের দশক জুড়ে বহু আধুনিক গানে সুপ্রীতি সাজিয়ে তোলেন তাঁর গানের ডালি।
তিন, চারের দশকে যে সুপ্রীতির গানের তরী ভরে উঠেছিল কৃষ্ণচন্দ্র দে, হিমাংশু দত্ত (সুরসাগর), শৈলেশ দত্তগুপ্ত, শচীনদেব বর্মন, সুধীরলাল চক্রবর্তী প্রমুখ দিকপাল সুরকারদের সৃষ্টিতে, পাঁচের দশকে সে তরী ভেসে চলল সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষ, দিলীপ সরকার, সুধীন দাশগুপ্ত, অনল চট্টোপাধ্যায়, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীর মজুমদার, প্রমুখ নবীনদের সুরস্রোতে। একে একে প্রকাশিত হল ‘যেথায় গেলে হারায় সবাই ফেরার ঠিকানা গো’ (১৯৫২), ‘আকাশে লক্ষ তারার দেয়ালি’ (১৯৫৪), ‘কৃষ্ণচূড়ার স্বপ্নঝরা’ (১৯৫৫), ‘নির্ঝরিণী ঝিরঝিরিয়ে’ (১৯৫৫), ‘পদ্মকলি সকাল খোঁজে’ (১৯৫৬), ‘এই ফুলের দেশে কোন ভ্রমর এসে’ (১৯৫৭), ‘রাতের শিশির ব্যথা লয়ে ওগো’ (১৯৫৮), ‘আমার গান ওই সাত রঙেরঙে’ (১৯৫৯), প্রভৃতি গান – যা আজও রেকর্ড, ক্যাসেট, সিডি, আন্তর্জাল, প্রভৃতি মাধ্যমে আগ্রহের সঙ্গে শোনেন শ্রোতারা।

নিখুঁত উচ্চারণ সুপ্রীতি ঘোষের গায়নের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। গানের প্রতিটি শব্দকেই তিনি সমান গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারণ করতেন। এক রকম বাণীপ্রাধান্য থাকা সত্ত্বেও, ওঁর গানে সুরের রেশ কিন্তু কখনও কাটে না। সুর যেন বাণীকেই মধুরতর করে তোলে ওঁর উচ্চারণে, তৈরি করে দেয় ব্যঞ্জনা সৃষ্টির মসৃণ পথ। তাই সুপ্রীতির গানে কখনও কোনও ‘জার্ক’ থাকেনা, থাকে এক অপূর্ব ‘এলিগেন্স’। আবেগের বহির্মুখী প্রকাশে শিল্পী ততটা স্বতস্ফুর্ত নন। আবেগকে সুরের স্রোতে বিলীন করে তিনি যেন এক অনন্য বৈরাগ্যের রাগিণী বাজাতে থাকেন গানে গানে।তাই ১৯৫২ সালের পুজোর রেকর্ডে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে যখন সুপ্রীতি গেয়ে ওঠেন, ‘যেথায় গেলে হারায় সবাই ফেরার ঠিকানা গো’ (গীতিকার – শ্যামল গুপ্ত), সে উচ্চারণে নিরাশার লেশমাত্র থাকে না। অব্যক্ত বেদনার সুরটি থেকে গেলেও, তার পাশাপাশি যেন অদ্ভুত তৃপ্তিবোধও প্রকাশ পায়। প্রকাশিত হয় এক অপূর্ব প্রশান্তি, যার সঙ্গে কোথাও যেন এসে মেশে ঔদাস্য। অথচ এই বেদনা, তৃপ্তি, প্রশান্তি, ঔদাস্য, কোনওটিরই স্বতন্ত্র প্রকাশ নেই – সুপ্রীতি ঘোষের গায়নের সঙ্গে এর নির্যাসটি শুধু মিলেমিশে আছে অধিধ্বনির মত।
আবার ১৯৫৫-র পুজোর রেকর্ডে নচিকেতা ঘোষের সুরে ‘কৃষ্ণচুড়ার স্বপ্নঝরা গন্ধরাজের গন্ধে ভরা’ (গীতিকার – শ্যামল গুপ্ত) গানে ‘তুমিই শুধু নেই’-এর হাহাকার কী অক্লেশে ফুটিয়ে তোলেন শিল্পী! সে আর্তির প্রকাশ অন্তর্মুখী। এ হাহাকার গগনবিদারী হলেও অন্তরগগনের অসীমই এর সীমা। অন্তর্মুখী গায়নই এ আর্তির প্রকৃত রূপটিকে ফুটিয়ে তোলে, কাব্যিক দ্যোতনায়, সুরকে বাহন করে। সুপ্রীতি ঘোষের গানের উপস্থাপনা কাব্যময়। এই কাব্যময়তার সঙ্গে মেশে সুরের অখণ্ড রেশটি। দিলীপ সরকারের সুরে, ১৯৫৬ সালের পুজোর রেকর্ডে ‘পদ্মকলি সকাল খোঁজে, রাতের আকাশ তারা’ (গীতিকার – শ্যামল ঘোষ) গানটিতেও অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় নিহিত রয়েছে। গায়নের স্বভাবসিদ্ধ সৌষাম্য অক্ষুন্ন রেখেই, প্রতিটি স্তবকের শেষে আ-কারে স্বরবিস্তারের মত অংশগুলি কী অপূর্ব ভঙ্গিতে পরিবেশন করেন! স্তবকশেষের ওই বিস্তারগুলি তিনটি করে ভাগে বিভক্ত, এবং প্রথম ভাগটির থেকে দ্বিতীয়টি ও দ্বিতীয়টির থেকে তৃতীয়টি নীচু স্বরে এসে বিরাম পায়। এর মধ্যে আত্মহারা হয়ে খুঁজে চলা রয়েছে, আবার স্বরের এই নেমে আসায় যেন দিনের শেষে, ফিরে আসাও রয়েছে। ফিরে আসার পরেই যে নতুন করে খোঁজার সূচনা! কী সাবলীলভাবে সে ইঙ্গিত বয়ে আনেন সুপ্রীতি, ওঁর অনুচ্চকিত মগ্ন গায়নে। সুরের ওই ‘প্যাসেজ’-গুলিই হয়ে ওঠে ‘নয়ন দিশাহারা’-র সাঙ্গীতিক রূপক।
১৯৫৭ সালের পুজোর রেকর্ডে, ‘এই ফুলের দেশে কোন ভ্রমর এসে’ (গীতিকার – শ্যামল গুপ্ত) নিয়ে আসে বসন্ত। নিয়ে আসে বসন্তদূতের আগমনের রঙিন বার্তা, ব্যাকুল বাঁশরীর সুরে সুরে, দখিনবায়ের পুলকদোলায়। দ্রুতলয়ের গানেও সুপ্রীতি ঘোষের সাবলীলতা প্রমাণিত হয় এ গানে। লয় এ গানে প্রধান হলেও, কখনই প্রখরভাবে প্রকট হয়ে উঠে, গানের মসৃণ গতিকে নষ্ট করেনা। গানটির কাব্যগুণ তাই ক্ষুন্ন হয়না। লয়ের প্রাকট্যে গানের বাণীর গুরুত্বটি কিছুমাত্র লঘু হয়ে যায়না। এ গানে ভাবপ্রকাশের সহায়ক হিসাবেই কার্যকর হয় লয়। শিল্পীও দক্ষতার সঙ্গে, দ্রুতলয়কে সঙ্গী করেন মাত্র – নিয়ন্ত্রক করেন না।
নবীনকে বরণ করতে কুন্ঠা করেননি সুপ্রীতি ঘোষ। সুদূর অতীতে কৃষ্ণচন্দ্র দে বা শচীনদেব বর্মণের সুরে যে সুপ্রীতি গেয়েছিলেন অনায়াসে, পাঁচের দশকের নতুন প্রজন্মের সুরকারদের নতুন ধারার সুরে তিনি গেয়েছেন অশেষ আগ্রহে ও নিপুণ দক্ষতায়। ১৯৫৯ সালের নভেম্বর মাসে শেষবারের মত যখন আধুনিক গান গাইতে এইচএমভির রেকর্ডিং স্টুডিওতে ঢোকেন সুপ্রীতি, অভিজ্ঞতায় তিনি গানের জগতে মাতৃসমা। সেবার অনল চট্টোপাধ্যায়ের কথায় ও সুরে গেয়েছিলেন তিনি –
আমার এ গান ওই সাত রঙে রঙে
সাজালো আকাশের আঙিনা।
তোমার মনে তার ছন্দ ঝরাবার
লগ্ন এল কিনা জানিনা।
এই তো সেই আমি শিউলি ঝরায়ে,
তোমারই আশাপথ দিত যে ভরায়ে।
রাতের স্বপনে যে ছিল নয়নে,
আজও কি মনে আছে জানিনা।
সুরের আকাশ সাত রঙে সাজাতে সাজাতে যখন এ গানটি রাঙিয়ে তুলছেন সুপ্রীতি ঘোষ, তখন কি তিনি বুঝেছিলেন, শিউলি ঝরানোর পালায় তাঁর ইতি টানার লগ্ন এসেছে? ছয়ের দশকের গোড়া থেকে রেকর্ড, ছায়াছবির জগতে অনিয়মিত হয়ে পড়লেও, সুপ্রীতি ঘোষ নতুন করে পথচলা শুরু করেন অতুলপ্রসাদী গানের হাত ধরে। এই দশকেরই উত্তরার্ধে, অভিজ্ঞতায় পুষ্ট, পরিণততর বোধে উজ্জ্বল সুপ্রীতি ঘোষের কন্ঠে শোনা যায় ‘তোমার ভাবনা ভাবলে আমার ভাবনা রবে না’, ‘মনরে আমার তুই শুধু বেয়ে যা দাঁড়’, ‘ওগো সাথী মম সাথী’, প্রভৃতি গান। ১৯৭২ সালে হিন্দুস্থান কোম্পানির রেকর্ডে শোনা যায় ‘মোর আঙিনায় আজি পাখি গাহিল একী গান’, ‘মনোপথে এলো বনহরিণী।’ এরপর কোনও রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গেই আর চুক্তিবদ্ধ হননি শিল্পী। প্রকাশিত হয়নি তাঁর আর কোনও রেকর্ড। এ দুর্ভাগ্যের ভাগী তাঁর একনিষ্ঠ শ্রোতারাই। রেকর্ডসঙ্গীতের জগত থেকে সরে যাওয়ার আগে, হিন্দুস্থান কোম্পানিতেই ‘শ্রীশ্রী দেবী চণ্ডিকা’ সঙ্গীতবীথিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন সুপ্রীতি ঘোষ, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায়। তাঁর মধুকন্ঠের গানটিই ছিল বীথির শেষ গান – ‘মোর সকল সত্তা বিলিয়ে দিলাম, লুটিয়ে দিলাম ওই চরণে।’ সুদূর ১৯৪৬ সালে আলোর বেণু বাজিয়ে বিশ্বমাতৃকাকে বরণ করে নিয়েছিলেন যে শিল্পী, শেষের লগ্নে, তাঁরই চরণে নিজের সবটুকু যেন উজাড় করে দিলেন এ গানে।
শ্রোতাদের বঞ্চিত করেননি সুপ্রীতি ঘোষ। রেকর্ড, ছায়াছবির উজ্জ্বল জগত থেকে বিদায় নিলেও, মাঝেমধ্যে তিনি গেয়েছেন দূরদর্শনের স্টুডিওতে, গেয়েছেন আকাশবাণীতে। কখনও ভাগ করে নিয়েছেন জীবনের নানা গল্প। দেশে, বিদেশে নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন, নতুন যুগের ছাত্রছাত্রীদের গান শিখিয়েছেন পরম আগ্রহে। আটের দশকে আমেরিকার নানা শহরে আমন্ত্রিত হয়ে যান সুপ্রীতি। বোস্টনের অনুষ্ঠানে ষাটোর্ধ্ব শিল্পী শ্রোতাদের অনুরোধে ‘আকাশে লক্ষ তারার দেয়ালি’ গাইতে শুরু করেন বটে, কিন্তু ত্রিশ বছর আগেকার গানটি গাইতে গাইতে, কথাগুলি ভুলে যান। শ্রোতার আসন থেকেই সেই ভুলে যাওয়া কথা মনে করিয়ে দেন কেউ। প্রবীণা সুপ্রীতি মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলেন ত্রিশ বছরের কালব্যবধান, ভারত-আমেরিকার ভৌগোলিক ব্যবধানকে অতিক্রম করেছে তাঁর গান।
২০০৯ সালের ২২শে এপ্রিল প্রয়াত হন সুপ্রীতি ঘোষ৷ তার আগেই প্রকাশিত হয় চার, পাঁচের দশকে গাওয়া তাঁর আধুনিক গান ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি – ‘বাজলো তোমার আলোর বেণু’ ও ‘নতুন ক’রে পাব বলে’। সুপ্রীতি ঘোষের গানের সাক্ষী আজ বহন করে চলেছে সিডি, ক্যাসেট, আর অসংখ্য গ্রামোফোন রেকর্ড। তার মধ্য দিয়ে কৃষ্ণচূড়ার স্বপ্নঝরা চৈত্রমাসের সন্ধ্যাবেলায় আজও আকাশে লক্ষ তারার দেয়ালি জ্বালিয়ে, পাহাড়ি ঝর্ণাধারার সুরে গেয়ে চলেন তিনি। গেয়ে চলেন অবিরাম। তাঁর গানে গানেই বলি – দিও গান, দিও প্রাণ, দিও সুর… তিনিও চলেন শিউলি ঝরিয়ে। ফুলের দেশের ভ্রমরের সে কানাকানি যে শেষ হওয়ার নয়! তাঁর যাওয়া তো নয় যাওয়া!
জীবনে সবেমাত্র পেরিয়েছেন ছাব্বিশটি বসন্ত! বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং সঙ্গীতসাধনায় রত। নেশা গ্রামোফোন রেকর্ড সংগ্রহ। পত্রপত্রিকায় সঙ্গীতবিষয়ক বেশ কিছু নিবন্ধ লিখেছেন বাংলা ও ইংরাজিতে৷
Asadharon lekha. Mon Chuye galo…aabar notun korey pelam ‘Bajlo tomar alor benu’ Supriti Ghosh key
গুলু গুলু গুলু ???????কিছু বলার ভাষা নেই। !!!!!!!!!!
চমৎকার লেখা। শেষ জীবনে সুপ্রীতি ঘোষ বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর বিখ্যাত ছবি “লাল দরজা”তে একটা ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। একটু গানও গেয়েছিলেন সেই ছবিতে।
দারুণ লেখা, আজকের প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে l হারিয়ে যাওয়া শিল্পীদের জীবনী তুলে ধরার এই প্রয়াস সফল হোক এই কামনা রইল ll
কি অসাধারণ এক প্রতিবেদন! শ্রদ্ধেয়া শিল্পী সুপ্রীতি ঘোষ সম্পর্কে সত্যই কত অল্পই জানতাম। লেখক সৌণক গুপ্ত কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এই প্রবন্ধটির জন্য। এত অল্প বয়সেই সঙ্গীত শিল্পীদের জীবন ও তাঁদের কাজ সম্পর্কিত অসাধারণ কাজ তিনি করে চলেছেন। এই তথ্যসমৃদ্ধ মননশীল লেখা গুলো বইয়ের আকারে প্রকাশিত হলে বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র ছাত্রীরা এবং স্রোতারা অত্যন্ত উপকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস। লেখকের এই কাজ ভারতীয় সঙ্গীতের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ এবং মননের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত।আগামী দিনে এমন আরো অনেক গুণী শিল্পী দের কথা পড়বার অপেক্ষায় থাকবো।লেখকের প্রতি
আমার শ্রদ্ধা এবং অনেক শুভকামনা রইলো ।
অসাধারণ তথ্যসমৃদ্ধ এই গবেষণামূলক প্রবন্ধে প্রিয় শিল্পী সুপ্রীতি ঘোষকে নতুন করে চেনানোর জন্য শৌণক গুপ্তকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আরও এরকম লেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
অসাধারণ প্রতিবেদন!.. ভুলে যাওয়া দিনের সুর মনে করায়… শ্রদ্ধা জানাই মধুকন্ঠী এই শিল্পীকে
যেথায় গেলে হারায় সবাই, ফেরার ঠিকানাতো,আজ ডাক এসেছে আমার সে দেশ থেকে,বিদায় নেবো একটি বার ,শুধু তোমায় দেখে……..ছোটবেলাকার একটি প্রতিদিন শোনা গান।আজ ৭৩ এ পা দিয়েও সুর ও কথা মনে আছে।
লেখাটি খুব জমাট এবং সহজ।
অনবদ্য এক প্রতিবেদন ৷ আমরা অনেক সময় গান শুনি, শিল্পীকে চিনি না ৷ পড়তে পড়তে যখনই কোন প্রশ্ন মনের কোনে উঁকি দিয়েছে , পরের ছত্রেই সেই কৌতুহল নিরসণ করেছেন প্রতিবেদক ৷
এক কথায় অসাধারণ! তথ্যে ঠাসা, অনবদ্য বুননে, সাবলীল শব্দ চয়নে সুপ্রীতি ঘোষের জীবন মূল্যায়ন , কাহিনীকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা। সাধুবাদ জানাই।
শৌণক, তোমাকে আমাদের অনেক অনেক আশীর্বাদ আর ভালোবাসা। জীবনে অনেক বড় হও, এই কামনা করি।
Asadharon, koto kichu jana chilo na,