সে রান্নাই হোক বা অন্য কাজ, রান্নাঘরের বৃত্তান্ত কিন্তু শেষই হবে না,আসবাবপত্রের উল্লেখ না করে। গিন্নির মনমর্জি, হাবভাব সবটুকু চেনা যায় আসবাবপত্রের গোছানগাছান দেখে। আজ অবধি ধরলে তিন ধরনের আসবাব সাজানো রান্নাঘর দেখলাম। সোজা কথায় বললে চালু, এথনিক আর গ্রাম্য। 

চালু হল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা পাল্টাচ্ছে। অর্থাৎ তোমার আমার রান্নাঘর। ছোটবেলায় দেখা সব রান্নাঘরই প্রায় একরকম ছিল। উঁচু কিছু ধাপ, জালি লাগানো মিটসেফ, খাবার জলের জালা আর দেওয়াল জোড়া হুক। কোনওটা থেকে ঝুলছে কাগজের বিল, তো অন্যটা থেকে চটের থলি। খুব সামান্য আয়োজন, রাতে চল্লিশ পাওয়ারের টিমটিমে আলো, তবু কিন্তু একেবারে ভরভরাট ভাব। এই ধরনটা একটু একটু করে বদলাতে লাগল, যখন ঘরবাড়ি ভাগ হওয়া শুরু হল। পরিসর ছোট হতে চল্লিশ পাওয়ারকেই ঝলমলে লাগল। দু’একটা পাকা তাক হল সিমেন্টের। আমার বাবা তো ঠাকুমাকে বাড়িতে জমে থাকা কাঠ দিয়ে এমন একটা উঁচু টুল বানিয়ে দিলেন, যে রান্নার উনুন উঁচুতে রাখার কথায় তিনি আর আপত্তি করলেন না। হাওয়াই চটি পায়ে গলিয়ে, টুলের মাঝের ধাপে পা দু’খানি রেখে, আয়েস করে বসে খুন্তি নাড়তেন। 

রান্নাঘরের আসবাব বদলে গেল ঘরে ঘরে গ্যাস এসে যাওয়ায়। আর প্রায় একই সঙ্গে শুরু হল ফ্ল্যাটবাড়ির রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে রান্না। আর মিটসেফ বদলে হৈ হৈ করে এসে গেল ফ্রিজ এবং কুঁজো কলসির বদলে, ওয়াটার ফিল্টার। সিঙ্ক বলে একটি জিনিস হল, কলের জলে বাসন ধোয়ার জন্যে। আর তার  ঠিক নীচটিতেই পাঁজা করা এঁটো বাসন, বাসন মাজার লিকুইড বা ভিমবার সমেত। সুদৃশ্য সব পাত্রে রাখা স্কচ ব্রাইট, স্পঞ্জ এবং হ্যান্ড ব্রাশ। 

এই রকম একটা টালমাটাল সময়ে হু হু করে ঢুকে এল প্লাস্টিক–নাইলনের নানা ব্যবহার্য আর কাঠের আসবাবে সানমাইকা ফিনিশ। জল পড়লেও কিছু হবে না। সস্তা এবং আটপৌরে কোথায় যেন মিলেজুলে বেশ একরকম হয়ে গেল। প্লাস্টিকের ডাইনিং টেবিল ও চেয়ার দূর দূর করে তাড়াল কাঠের পিঁড়ে, হাতে বোনা আসন, চ্যাটাই মাদুরকে “যত্তসব” বলে। দেওয়ালগুলো ঝকঝক করতে লাগল তেল রং আর নকশাদার টাইলসে। জীবন হয়ে গেল সহজ এবং স্বচ্ছন্দ। তবে এই চালু আটপৌরে ভাবের মধ্যে সম্পন্নতার বিভাজন এল। যারা পারল, ঝপাঝপ কিনে ফেলতে লাগল নানা গ্যাজেট; শুরু হল মডিউলার কিচেনের নানা বাহার। উনুনের সাত সতেরো তো বাসনের উলুকসুলুক।

পরিসর ছোট হতে চল্লিশ পাওয়ারকেই ঝলমলে লাগল। দু’একটা পাকা তাক হল সিমেন্টের। আমার বাবা তো ঠাকুমাকে বাড়িতে জমে থাকা কাঠ দিয়ে এমন একটা উঁচু টুল বানিয়ে দিলেন, যে রান্নার উনুন উঁচুতে রাখার কথায় তিনি আর আপত্তি করলেন না। হাওয়াই চটি পায়ে গলিয়ে, টুলের মাঝের ধাপে পা দু’খানি রেখে, আয়েস করে বসে খুন্তি নাড়তেন। 

কতরকম আলোর আয়োজন আর বিচিত্র সব ব্যবহার্য। আমার দেখা প্রথম মডিউলার কিচেন হল আমার মেয়ের নতুন সংসারে। সে যে কী অপূর্ব সব ব্যবস্থা, মনে হয় যেন সব রান্নাই একশোয় একশো পাবেই। নতুন একটা শব্দ শিখলাম, ‘অ্যাটাচমেন্ট’– অনলাইনে আনিয়ে নিয়ে আরও আরও সুবিধের ব্যবস্থা করা। সে আবার নানা আধুনিক গ্যাজেটের সঙ্গেই সংগ্রহ করেছে পাথর এবং কাঠের নানা টুকিটাকি – এটাসেটাও। তেমন মানানসই আলোর মজা। সবচেয়ে মজার হল টি পার্লারখানি। কর্তা-গিন্নির চা বিলাসের সেরা আয়োজন। ওই দেওয়ালটার দিকে চোখ পড়লেই মনে হয়  ঠিক যেন কোনও ইন্সটলেশন আর্ট।

প্রায় বছর পঁয়ত্রিশ আগে এই রকম এক চালু কিচেনকেও আর্টিস্টিক করে সাজিয়ে রাখতে দেখেছিলাম আমার সহকর্মী মহাশ্বেতাদিকে। ধপধপে সাদা কাটওয়ার্কের নকশা করা প্লাস্টিকের টেবিলক্লথ পাতা লম্বা একটা হাই বেঞ্চে, পরপর রাখা থাকত তাঁর বঁটি, নারকেল কুরুনি, সুপারি কাটার জাঁতি, হামানদিস্তা এবং ছোট্ট শিল-নোড়াখানি। ঠিক যেন কামারের ছেনি হাতুড়ি রাখার কোণটি। কবেই তো সে চলে গেছে, তার ফুল সাজানো রান্নাঘরখানি ফেলে রেখে। তবু আজও আমার চোখে তা যেন ঠিক তেমনটাই সাজানো। আর ভুলতে পারি না, চিত্রী অধ্যাপিকা সোহিনী ধরের রান্নাঘরখানি। তার বর রামলাল ধরও ছিলেন চিত্রী অধ্যাপক। নতুন ফ্ল্যাটে দু’জনে সংসার পাতলে, রান্নাঘরের একটা দেওয়ালে রামলালদা ফ্রেস্কো করেছিলেন, সেরামিক টাইলস দিয়ে। প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে সোহিনীকে তাঁর উপহার। সোহিনীর পছন্দের হাঁড়ি, কড়া, খুন্তি এবং প্রিয় সব সবজি ও মাছের নকশা আর রং দিয়ে বানানো সে এক অনবদ্য কাজ। রামলালদাও চলে গেছেন অকালে, কিন্তু সোহিনী আজও সুবিধেমতো ওই রান্নাঘরেই রান্না করে। 

আর একখানি ভিন্নধরনের রান্নাঘর দেখেছিলাম, পার্ক সার্কাসের বাঁদর গলিতে, চিত্রী খালেদদার আস্তানায়। অকৃতদার এই মানুষটি একেবারে একা থাকলেও জমিয়ে সংসার করতেন। নানারকম টুকরো টাকরা দিয়ে সাজানো একখানি রান্নাঘর – সাবেক ভাড়া ঘরেই। সবচেয়ে মজা ছিল এ দেওয়াল থেকে ও দেওয়াল জুড়ে লাগানো একখানি মোটা রড। আর তা থেকে লোহার অজস্র ‘এস’ লাগানো। ঝুলছে আলু, ডিম আর পেঁয়াজের ঝুড়ি। না পোকা না বেড়াল – কেউই হানা দিতে পারবে না। টুকিটাকি জিনিসগুলো এমনভাবে দেওয়ালে ধরানো, যে দেখে মনে হবেই এ যেন দেওয়াল জুড়ে এক অনবদ্য কারুকাজ। শিল্পী মানুষ তো, তাই রান্নাঘরেও শিল্পের চাষ এবং বাস। এছাড়াও চোখে পড়ত, আলোর আবেশ। একটিমাত্র পুরনো জানলা। তাই এমনভাবে মিটসেফ ও খাবার রাখার কাঠের বাক্সগুলি সাজানো, যাতে আলো কখনওই আড়াল না হয় এবং বৃষ্টির ছাট এসে সব ভিজিয়ে না দেয়। জানলা দিয়ে ওই সকালের আলো ঠিকরে এসে পড়ত উল্টোদিকের মেঝেতে; বিকেল হবার সময় তা আবার ওই পথেই ফিরে যেত জানলার রেলিং পার হয়ে, পাশের অন্ধকার গলিটায়। আলোর ওই যাতায়াতে মেঝেটাকেই মনে হত এক বিশিষ্ট আসবাব। এর সঙ্গেই চোখে পড়ত নানা মাপের ঝুড়িতে কাঁচা বাজার রাখার পদ্ধতিও। প্লাস্টিকের বা ঝাঁ চকচকে কিছু দেখেছি বলেও মনে পড়ে না। অথচ এই রান্না ঘরেই চাইনিজ পদ, কষা, বাটা, ভাপা, মাখা এমনকী মুইঠ্যাও রান্না করতেন খালেদদা। বন্ধুদের পাত পড়ত নানা সময়েই।

বড়মামা যখন দাদামশাইয়ের কাছ থেকে পৈতৃক জমি পেয়ে, বসতবাড়ির পাশেই, নিজের একখানি বাড়ি করলেন, তখন সেই সুদৃশ্য বাংলো বাড়িটিতে দেখার মতো হল রান্নাঘরখানি। মস্ত একখানি ওপেন কিচেন সমেত ডাইনিং হল এবং দু’দিকে দু’টি দরজা। বড়মামা তো কবেই চলে গেছেন। গত বছর মামিও। এ বছর লক্ষ্মীপুজোর দিন মামির বাৎসরিক কাজে গিয়ে ওই রান্নাঘরে সবাই যখন একসঙ্গে খেতে বসেছি, মনে যে কী আনন্দ বলার নয়! রান্নাঘর এবং তার আসবাব সমেত, এই বাড়িটা প্রায় একইরকম আছে। একটু যা রঙের বদল আর মেরামতির তারতম্য। চোখ বুজলেই যেন বড়মামার সঙ্গে সবাই খেতে বসেছি; আর বড়মামি, পাশের টেবিলে রাখা পানের বাটা থেকে এক খিলি করে পান মুখে দিচ্ছেন, পরিবেশনের ফাঁকে ফাঁকে। 

এই সব শহুরে হেঁশেল ও মডিউলার কিচেনের বাইরে আজও আছে গ্রামের হেঁশেল। কাঠের জ্বালে রান্না। গোবর লেপা উনোন–উঠোন। আর যাবতীয় যা দরকারি জিনিস সব দেওয়ালে ঝোলানো। এই সব গ্রামের বাড়ি যখন আপনজনদের হয়, তখন তার হালচাল আরও নিখুঁত হয়ে নজরে আসে। ছোটবেলায় যখন চাকদায় চণ্ডী জেঠুর গ্রামের বাড়িতে যেতাম, সে সব ভাল করে দেখে মনে রাখার বয়স সেটা ছিল না। তবু মনে আছে, রান্না ঘরে উনোনপাড়ে বসে ঝাল ঝাল এবং গরম গরম পায়রার মাংসের ঝোল আর রুটি খাওয়া। এর আগে ঘোর অন্ধকারে, এমন টিমটিমে আলো জ্বলা রান্নাঘরই দেখিনি। অনেক বড় হয়ে যখন গিরিডির কাছে ফুলিয়াটাঁড় বলে একটি জায়গায় খুঁজতে খুঁজতে এলাম, সে এক অপূর্ব বন বসত। আমার ঠাকুরদার মাসির বাড়ি। ২০০২ সাল, তখনও ইলেকট্রিক আসেনি। ঘরের সামনে মাটির দাওয়ার পুরোটাই রান্নাঘর। প্রধান আসবাব বলতে খান তিনেক পাতা উনোন আর কিছু বসবার চ্যাটাই। দেওয়ালে ঠেস দেওয়া কাঠের একটা লম্বা বেঞ্চিতে, মাটির পাত্রে রাখা নুন আর কিছু মশলা, দু’ তিনটে বঁটি এবং একটা কাটারি। পাশের ঘরে কিছু বাসন আর চাল, আলুর বস্তা রাখা। আর রান্নার দাওয়ার ঠিক নীচে বেশ কিছু দরকারি জিনিস; যেমন মস্ত কাঠের গামলায় ভাত ঝাড়ানো ফ্যান এবং সবজির খোলা – গোরু মহিষ খাবে। আর টিউবওয়েলের একপাশে গুছিয়ে রাখা রান্না ও খাওয়ার জল তোলার জন্য খান দু’য়েক মাটির ঘড়া। আর এক পাশে রাখা বাসন মাজার নুড়ো ও সোডা মেশানো উনোনের ছাই। এই সব রান্নাঘরে জমা রসদের ব্যাপারটাই হাস্যকর। টাটকা টাটকা রান্না এবং তক্ষুনি খাওয়া। ঝরঝরে বৃষ্টি, ঝনঝনে রোদ বা কনকনে শীত– যেমন পরিস্থিতি তেমন খাওয়াদাওয়া। সবচেয়ে বড় আসবাব হল খানকয়েক রাতের লম্প আর হ্যাজাক। দিনের বেলার রান্নাঘরটা পুরো রূপকথার চরিত্র হয়ে যায় রাতের দেওয়ালে লম্পের আলোর কাঁপা কাঁপা ছায়াখানি পড়ে।

ভিন্নধরনের রান্নাঘর দেখেছিলাম, পার্ক সার্কাসের বাঁদর গলিতে, চিত্রী খালেদদার আস্তানায়। অকৃতদার এই মানুষটি একেবারে একা থাকলেও জমিয়ে সংসার করতেন। নানারকম টুকরো টাকরা দিয়ে সাজানো একখানি রান্নাঘর – সাবেক ভাড়া ঘরেই। সবচেয়ে মজা ছিল এ দেওয়াল থেকে ও দেওয়াল জুড়ে লাগানো একখানি মোটা রড। আর তা থেকে লোহার অজস্র ‘এস’ লাগানো। ঝুলছে আলু, ডিম আর পেঁয়াজের ঝুড়ি। না পোকা না বেড়াল – কেউই হানা দিতে পারবে না।

এই গ্রাম্যতাকে সচেতনভাবে যাপন করতে দেখেছি, সারা দুনিয়া চষে আসা, অঙ্গুলের সফিস্টিকেটেড তিনুমাসিকে। উড়িষ্যার গ্রামীণ কাঠামো এবং চড়া হলুদ ও খয়েরি রঙে সাজানো তাঁর বসতখানি। তার মধ্যে সবচেয়ে মজার ওই রান্নাঘর। ডাইনিং টেবিল, চেয়ার সবকিছুতেই একটা আটপৌরে ভাব। সিমেন্টের ওপর দরমার বেড়ার তৈরি জাফরি জানলা;  শাড়ি কাটা পর্দা, রানার ও টেবিল ম্যাট। আর দেওয়াল থেকে ঝুলছে বিনুনি বাঁধা পেঁয়াজ ও  রসুনের লম্বা মালা। বৈঠকখানা আছে, কিন্তু ঘরে বাইরে সব লোকের আড্ডা এই রান্না-খাবার ঘরটিতেই। তাই ফ্রিজ, আভেন, মিক্সি, ওয়াটার পিউরিফায়ার  — এগুলো যেন আসলে অন্য কিছু। এমন সব ঢাকাঢুকি দেওয়া যে মনে হবে কোনও গ্রাম্য বালিকার সরল অনাড়ম্বর হেঁশেল। রাঁধুনির আতিথ্য আর ভালবাসা পার করে তা কখনওই চোখ ধাঁধাবে না। ডালমা, সন্তুলা এবং বাঁশের কোঁড়ার আচারের সঙ্গে যেন অনায়াসে বসে খাওয়া যায় ডাক রোস্ট এবং কর্ন স্যুপ।

আমার রান্নাঘর অবশ্য একবারেই আয়োজনহীন। খুব সাদামাটা বেসিক বলতে যা বোঝায়, ঠিক তাই। তা ছাড়া এতবার আস্তানা বদলেছি এবং প্রোমোটারের হাতে পড়েছি, যে নিজের ইচ্ছের জলাঞ্জলি। আর্থিক দিক থেকেও এতটা সঙ্কুলান হয়নি যে বেশ একখানা গুছিয়ে নামালাম। আবার মিস্ত্রি যাদের পেয়েছি, তাদের মনোমতো নির্দেশও দিতে পারিনি। তবে, দু’ একটি জিনিসে আমি একেবারে অনড়; এক হল, সমস্ত ব্যবহার্য মানে মেঝের টাইলস সমেত সব সাদা। দ্বিতীয়ত, বাঁ দিকের দেওয়ালে একটি ছোট্ট পাখা, আর ভীষণ জরুরি হল একটি বড় মাপের আয়না – জানলার ঠিক উল্টোদিকের দেওয়ালে। ওই আয়নায় আকাশের ছায়া এবং মেঘের ভেসে চলা না দেখলে, রান্নাঘরে মন টিঁকবে কী করে! ডাইনে বাঁয়ে প্রকৃতির ইশারাই আমার রান্নাঘরের সবচেয়ে প্রিয় আসবাব। আরও একটা কারণে এখন রান্নাঘর নিয়ে আর মাথা ঘামাই না, কারণ বয়স এবং অন্যান্য কাজের চাপে আমি নিজেই সেখানে অনুপ্রবেশকারী। আমার আকাশ ভাসা আয়না, জানলা বুকে করে, উদাস তাকিয়ে থাকে — ছাদ পেরিয়ে, লেক পেরিয়ে ওই দূরের দিগন্তে।   

Mandar Mukhopadhyay

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

5 Responses

  1. রান্না ঘর গুলো সত্যিই স্মৃতির টুকরো/ আমি ছোটো বেলা থেকেই মায়ের বাপের বাড়িতে বড়ো হয়েছি, দিদুম বাল্য বিধবা না হলেও অনেক কম বয়েসে বিধবা তায় ডাক্তার এবং ভয়ানক রাগী/

    তাই দিদার ওপর ও কেউ কথা বলতে পারতো না আর রান্না ঘরে কারুর জর ও খাটতো না/ অসুস্থ হলেও দিদুম রান্না করতেন আর শেষের দিকে মা সকালের দিকের কাজে সাহায্য করতেন আর রান্না দিদা দিদুমের পাশে পাশে থাকতেন, পুরোনো আমলের সাধারণ রান্না ঘর ,মামাদের স্বচ্ছলতা সত্বেও কোনো পরিবর্তন হয়নি , বিশেষত পুবের জানলায় দাদামশায়ের ভাঙ্গা আরমকেদারার অংশ বিশেষ/ আর দশ হাত দূরের গঙ্গা…

    সে দিন আজ গেছে/ দিদুম ও নেই ,বাড়ির মানুষ জন কমেছে, সেই পূবের আলো মাখা সকাল ও নেই,রান্না ঘর আজ গোডাউন আর গ্যারাজ এ পরিনত হয়েছে কবে ,সে দিন গেছে…

    তবে আগেকার রান্নাঘর গুলোই বোধ হয় এরকম বড়ো হতো/
    আর ঠাকুমার রান্নাঘর ও প্রায় এক, দেশের বাড়ি রুপনারানের ধরে হলেও একদম কোলে নয়,তবে দেশের বাড়ির গায়ে বিশাল পুকুর ,রান্নাঘরের দরজা থেকেই ঘাটে নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল,
    আর ছিল শিকে/ তাতে দুধ অথবা মাছ তোলা থাকতো, সে এক্ষণ কাকিমা দের দৌলতে আধুনিক হয়ে গেছে, ঝাঁ চকচকে…

    ,
    আর একটা রান্না ঘরের কথা বলি,বর্ণনায় লাভ নেই। বন্ধুর শ্বশুরবাড়ির রান্না ঘর ,সেও আগের দুটির মতই, পুরোনো রীতির, গ্যাস টেবিল আর মশলার তাক,দেওয়াল জুড়ে ,সিমেন্ট এর, এখানেও শিকে, তবে এখানে রান্না করতে করতে ট্রেন দেখা যায়, সে এক অদ্ভুত, জায়গার নাম যেমন পরিবেশ ও তেমন, বহু অনাবাদী জলা জমির মাঝে বাড়ি,অদ্ভুত কুয়াশা মাখা, জলার কুয়াশারা অদ্ভুত হয়, আর ভোরের কুয়াশায় অধ অন্ধকারে যখন বন্ধু বরের জন্যে রান্না করে অফিসের, কতবার দেখেছি
    দিনের প্রথম ট্রেন, নিস্তব্ধতা ভেদ করে বাড়ি কাঁপিয়ে ঝকমক করে চলে যাচ্ছে আবাদার জলা কাঁপিয়ে…।।

  2. তোমার লেখার গুনে, প্রতিটি রান্নাঘর কেমন স্বাদে গন্ধে প্রান পেল। তবে তোমার কাছে আবদার রইল, তিনুমাসির রান্নাঘর স্বচক্ষে দেখানোর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *