সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ (১৯৭৭) নিঃসন্দেহে তাঁর অন্যতম সেরা সৃষ্টিগুলির মধ্যে একটি। বহু অবিস্মরণীয় দৃশ্যের সাক্ষী মুন্সি প্রেমচন্দ রচিত এই আখ্যান, যার অন্যতম হলো জেনারেল উট্রাম এবং ক্যাপ্টেন ওয়েস্টনের মধ্যে হওয়া ‘এপিক’ কথোপকথন। সেই বহুচর্চিত দৃশ্যটি আজও ভারতের চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষ ভোলেননি।

সেই দৃশ্য, যার সম্পর্কে নোবেলজয়ী সাহিত্যিক ভি এস নইপল বলেছিলেন, “শতরঞ্জ কী খিলাড়ি বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে এক মাইলস্টোন। তবে ওই একটি দৃশ্য, যার গভীরতা এতটাই, তা নিয়ে আমি একটা গোটা উপন্যাস লিখতে পারি।” ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুই ব্রিটিশ অফিসারের মধ্যে সত্যজিৎ রচিত সেই ঐতিহাসিক কথোপকথন আজও সমান আকর্ষণীয়। যার বিষয়, লখনউয়ের শেষ নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের কাব্যপ্রতিভা।

কেমন ছিল সেই কথোপকথন?

General Outram: Tell me, Weston, you know the language, you know the people here – I mean, what kind of a poet is the King? Is he any good, or is it simply because he’s the king they say he’s good?

Captain Weston: I think he’s rather good, Sir.

Outram: You do, eh?

Weston: Yes, Sir.

Outram: Do you know any of his stuff?

Weston: I know some, Sir.

Outram: Well, can you recite it? Do you know it by heart?

Weston: (taken aback): Recite it, Sir?

Outram: Yes, I’m not a poetry man. Many soldiers are. But I’m curious to know what it sounds like. I rather like the sound of Hindustani.

(Weston remains silent, slightly ill at ease.)

Outram: Are they long, these poems?

Weston: Not the ones I know, Sir.

Outram: Well, go on man, out with it!

Weston (coughing lightly):

“Sadma na pahunche koi mere jism-ezar par,
ahista dalna phool mere mazar par
Har chand khaak mein tha magar ta falak gaya
Dhoka hai asmaan ka mere ghubar par”

Outram: Is that all?

Weston: That’s all, Sir.

Outram: Well, it certainly has the virtue of brevity. What the hell does it mean, if anything?

Weston: He’s speaking about himself, Sir.

Outram: Well what’s he saying? It’s nothing obscene, I hope?

Weston: No, Sir.

Outram: Well, what’s he saying?

Weston (coughing lightly again):

“Wound not my bleeding body.
Throw flowers gently on my grave.
Though mingled with the earth, I rose up to the skies.
People mistook my rising dust for the heavens.”

That’s all, Sir.

Outram: H’mm. Doesn’t strike me as a great flight of fancy, I’m afraid.

(Outram rises from his chair slowly.)

Weston: It doesn’t translate very well, Sir.

Outram: And what about his songs? He’s something of a composer, I understand? Are they any good, these songs?

Weston: They keep running in your head, Sir. I find them quite attractive. Some of them.

Outram: I see.*

Tom Alter
‘ক্যাপ্টেন ওয়েস্টন’ চিরকাল ভারতকেই তাঁর দেশ মেনেছেন। যদিও জন্মসূত্রে ছিলেন আমেরিকান। ছবি সৌজন্য – dnaindia.com

২৫ জানুয়ারি, সন ১৮৫৬।

ঠিক এক বছর পর দেশজুড়ে ছড়াবে সিপাহি বিদ্রোহের আগুন। তার ঠিক আগে…

আউধের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কম্যান্ডিং অফিসার, রেসিডেন্ট জেনারেল উট্রামের হাভেলি। জেনারেল উট্রাম তলব করেছেন তার ‘aide de camp’ ক্যাপ্টেন ওয়েস্টন-কে। সেই ওয়েস্টন যিনি ব্রিটিশ হয়েও ভারতপ্রেমী, উর্দু বা স্থানীয় ভাষা যাঁর করায়ত্ত। কোম্পানির প্রয়োজনে তিনি কখনও অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন, আবার কখনো দোভাষীর ভূমিকাও নেন। তিনি ‘মহারানি’র অনুগত আবার শের-ও-শায়েরি, গজলের অন্ধভক্ত, ভারতীয় সাহিত্য সংস্কৃতি ঐতিহ্যের প্রতি যিনি পরম শ্রদ্ধাশীল। ওয়েস্টন ভালোবাসেন এই দেশকে। তিনি একদিকে কোম্পানির প্রতি তাঁর কর্তব্যে অনড়, অন্যদিকে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের মেধা, মনন, শৈল্পিক ও সাহিত্যমনস্কতার গুণগ্রাহী।

কিন্তু সময়টা তো বড়ো ভালো নয়। কলকাতা থেকে এসেছে লর্ড ডালহৌসির ফরমান। ঢের হয়েছে, ‘পাগল রাজা’ ওয়াজিদ আলি শাহের হাতে আর ছাড়া যাবে না লখনউয়ের ‘বাগডোর’। জবরদখলের সময় হয়েছে। হয় ‘তখ্ত’ ছেড়ে কোম্পানি বাহাদুরের দাক্ষিণ্যে পেনশনভোগী হও, না হয় যুদ্ধ কর। ‘নবাবে’র বিরুদ্ধে এহেন কামান দাগার আগে তাই একটু ‘হোমওয়র্ক’ করে নিচ্ছেন উট্রাম। পরখ করে নিতে চাইছেন তাঁকে। ভরসা একমাত্র ‘ওয়েস্টন’। জেনারেল উট্রাম এবং ওয়েস্টনের উপরোক্ত  কথোপকথনে আমরা চিনে নিতে পারি কতটা উন্মাদ আর কতটাই বা ‘দিব্যোন্মাদ’ ছিলেন ওয়াজিদ আলি। নিঃসন্দেহে বিষয়টা ঐতিহাসিক। জেনারেল উট্রামের ভূমিকায় স্যার রিচার্ড অ্যাটেনবরো ও ক্যাপ্টেন ওয়েস্টনের চরিত্রে টম অল্টার আজও অবিস্মরণীয়। যদিও ‘ওভার অল পারফরম্যান্স’র নিরিখে ক্যাপ্টেন ওয়েস্টন’কেই হয়তো এগিয়ে রাখব আমি।

Tom Alter
পরিবারের সঙ্গে টম। ছবি সৌজন্য – starsunfolded.com

সন ১৯৭৪।

পুনে এফটিআই। মাত্র কয়েক বছর আগেই ডিরেক্টরের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন আর এক কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিককুমার ঘটক। ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র নির্দেশককে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন কিনা জানা নেই, তবে সে বছর এফটিআই থেকে অভিনয়ে সোনার মেডেল-সহ ডিপ্লোমা পান ২৪ বছরের তরুণ অভিনেতা-ছাত্র টম অল্টার। পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন সত্যজিৎ। মঞ্চ থেকে পুরস্কার নিয়ে ফেরার সময় সত্যজিৎ তাঁকে ডেকে বলেছিলেন, শিগগিরই একসঙ্গে কাজ করব। বিশ্ববন্দিত পরিচালকের কথা শুনে আনন্দে আত্মহারা হন টম।

এরপর কেটেছে কয়েক বছর। টমের পুত্র জেমি অল্টার স্মৃতিচারণায় বলেছেন, টম তখন বম্বেতে স্ট্রাগল করছেন। একদিন চিঠি এল কলকাতা থেকে। পাঠিয়েছেন সত্যজিৎ স্বয়ং। টম-কে জানিয়েছেন, ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’-র কথা। জানিয়েছেন, ক্যাপ্টেন ওয়েস্টনের চরিত্রে টমকেই ভেবে রেখেছেন তিনি। পাশাপাশি, পাঠিয়েছেন এক অদ্ভুত নির্দেশ। জন্মসূত্রে মার্কিন টমের সুন্দর, সোনালি চুলের কিছুটা কেটে পাঠাতে বলেছেন সত্যজিৎ। ক্যাপ্টেন ওয়েস্টনের লম্বা জুলপির রং যাতে টমের চুলের সঙ্গে মেলে, তার জন্য। সত্যজিতের এই প্রস্তাবে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন টম। কিন্তু অক্ষরে অক্ষরে পালনও করেছিলেন সেই নির্দেশ। সত্যিই চুলের কিছুটা অংশ কেটে, স্যাম্পেল হিসেবে খামে পুরে সত্যজিৎ রায়ের কলকাতার ঠিকানায় চালান করেছিলেন টম।

Tom Alter
নাট্যমঞ্চেও তাঁর অভিনয় ছিল মনোমুগ্ধকর। ছবি সৌজন্য – indialegal.com

এর ছ’মাস পর যখন কলকাতায় শুটিং করতে আসেন টম অল্টার, হুবহু তাঁর চুলের আদলে নকল জুলপি বসান সত্যজিৎ। এ রকম ছোট ছোট বিষয়ে ‘ডিটেলিং’র প্রতি সত্যজিতের অতি সজাগ পর্যবেক্ষণ শেষ সময় পর্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতেন টম। বলতেন, শুটিংয়ের পর কী ভাবে সত্যজিৎ তাঁর পিঠ চাপড়ে বলতেন – ‘গুড জব টম! কিপ ইট আপ!’ সত্যজিতের নির্দেশনায় ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’তে ক্যাপ্টেন ওয়েস্টনের চরিত্র জীবন্ত করে তুলেছিলেন টম অল্টার। শুটিংয়ের স্মৃতিচারণায় তিনি বলেছেন, গোটা প্রোডাকশনের উপর কী অসাধারণ দখল ছিল সত্যজিতের। তাঁরই কথায় জানা যায় সেই বিখ্যাত ঘটনা, যখন কলকাতার গরমে শুটিং করতে এসে নাজেহাল হয়েছিলেন রিচার্ড অ্যাটেনবরো। সেই সময় কলকাতায় একমাত্র এসি ভ্যান ছিল মহানায়ক উত্তম কুমারের। অ্যাটেনবরো গরমে কষ্ট পাচ্ছেন দেখে সত্যজিৎ উত্তমকে ফোন করে বলেন, যদি তাঁর এসি ভ্যানে অ্যাটেনবরোকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম করতে দেন। শুনেই পত্রপাঠ এসি ভ্যানটি স্টুডিওতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন উত্তম। এরপর নির্বিঘ্নে শুটিং শেষ হয়। বাকিটা ইতিহাস।

“শতরঞ্জ কে খিলাড়ি”র তিরিশ বছর পর আবারও সত্যজিতের কাহিনি-নির্ভর সিনেমায় অভিনয় করতে কলকাতা এসেছিলেন টম। এবার পরিচালক সন্দীপ রায়। সিনেমাটি সত্যজিতের লেখা ফেলুদা সিরিজের ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’। টম পেলেন মার্কিন ধনকুবের সল সিলভারস্টাইনের চরিত্র। খুবই ছোট চরিত্র, সামান্য স্ক্রিন টাইম। তাই অসামান্য ফুটিয়ে তুলেছিলেন টম।

সন্দীপ রায় জানিয়েছিলেন, সত্যজিতের বিষয়ে কী ভীষণ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন টম অল্টার। সত্যজিতের কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়তেন। সন্দীপ বলেন, সত্যজিৎ অত্যন্ত স্নেহ করতেন টম অল্টারকে। তাঁকে নিয়ে একাধিক প্রজেক্টের কথাও ভেবেছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল – প্রফেসর শঙ্কু নিয়ে কাজ করতে চাওয়া। তাঁর জীবদ্দশায় শঙ্কু’কে নিয়ে যদি কোনও কাজ করতেন সত্যজিৎ, অবশ্যই তাতে ঠাঁই হতো টমের। কারণ, প্রফেসর শঙ্কুর বিদেশি বন্ধু ভূতত্ত্ববিদ জেরেমি সন্ডার্সের চরিত্রের জন্য টমকেই ‘পারফেক্ট’ মনে করেছিলেন সত্যজিৎ। দুর্ভাগ্য সেই প্রজেক্ট আর বাস্তবায়িত হয়নি। হলে, সত্যজিৎ – টম অল্টার জুটির আরও একটি মাইলস্টোন স্পর্শ করার সুযোগ পেতাম আমরা।

Tom Alter
বলিউড তাঁকে সবচেয়ে বেশি দিয়েছে খলনায়কের চরিত্র। ছবি সৌজন্য – wefornews.com

‘ক্যাপ্টেন’কে এরপর বহু চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছি আমরা। অধিকাংশই খলনায়কের চরিত্রে। কখনও প্রবল অত্যাচারী ব্রিটিশ অফিসার, কখনও নিষ্ঠুর প্রেমিক, কখনও নায়িকার দজ্জাল ভাই আবার কখনও বা বিদেশি ড্রাগ মাফিয়া। তবে মাঝেমধ্যেই থাকত জাত চেনানোর ছবিও। রিচার্ড অ্যাটেনবরোর ‘গান্ধী’র চিকিৎসক বা শ্যাম বেনেগলের ‘জুনুন’-এর পাদ্রি, ‘পরিন্দা’-র মুসা বা ‘সর্দার’-এ লর্ড মাউন্টব্যাটেনের মত অবিশ্বাস্য সব চরিত্রে তার মুনশিয়ানা দেখিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন। পরবর্তী কালে ‘মির্জা গালিব’ ও ‘মৌলানা আজাদে’র চরিত্রে তাঁর একক মঞ্চাভিনয় দর্শকদের মনে ছাপ রেখে যায়।

ম্যায় শায়র বদনাম।

তবে টমাস ব্রেইচ অল্টার (১৯৫০-২০১৭) ওরফে ‘ক্যাপ্টেন ওয়েস্টন’ ওরফে টম অল্টারকে আমি অন্য একটি ভূমিকাতেও চিনি। সেটি হল উর্দু ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবে। মুসৌরিতে জন্ম হওয়া এই মার্কিন বংশোদ্ভূত ভারতীয়টির হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উপর যে কী প্রগাঢ় দখল ছিল, তা বছর পাঁচেক আগে দিল্লিতে উর্দু সাহিত্য উৎসব ‘জশন-ই-রেখতা’-র মঞ্চে দেখেছিলাম। উর্দু ‘অদব’ ও ‘তহজিব’ নিয়ে সেই আলোচনাচক্রে তাঁর পাণ্ডিত্যের সাক্ষী হয়েছিলাম। মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলাম গালিব, জৌঁক, ওয়াজিদ আলি, বাহাদুর শাহ জাফর, ফয়েজ আহমেদ, মির তাকি মির, বদাউনি বা লুধিয়ানভি-তে কী অনায়াস তার যাতায়াত।

বাহাদুর শাহ জাফর ছিলেন তাঁর অন্তরাত্মার স্বর। কি অনায়াসে উদ্ধৃত করেছেন –
রোজ় মামুর-এ-দুনিয়া মে খরাবি হ্যায়, জ়াফর
অ্যায়সি বস্তি কো তো ভিরানা বনায়া হোতা!
(এ দুনিয়ায় বুঝি ভাল বলে কিছু নেই, জাফর
এমন জনপদের চেয়ে ঊষর হওয়াও শ্রেয়)

গালিবেও ছিল তার প্রভূত আস্থা। যেন নিজের হতাশার উচ্চারণ তিনি শুনতে পেতেন গালিবের গজ়লে। অসামান্য দক্ষতায় তাঁর কন্ঠে  উচ্চারিত হয়েছে –
ইয়ুহি গর রোতা রাহা গালিব তো অ্যায় আহলে জাহান
দেখনা ইন বস্তিয়োঁ কো তুম কি ভিরান হো গ্যয়ে

(এভাবেই যদি কাঁদতে থাকে গালিব, ওহে দুনিয়া
দেখবে এই জনপদ কবেই নাবাল হয়ে গেছে)

Tom Alter
২০১৭-তে রাস্কিন বন্ডের গল্প অবলম্বনে শর্ট ফিল্ম ‘দ্য ব্ল্যাক ক্যাট’-এ অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন। ছবি সৌজন্য – firstpost.com

অথচ ভাগ্যের এমনই পরিহাস, এদেশেই জন্ম হওয়া সত্তেও সারাজীবন টমকে শুনে যেতে হয়েছে যে তিনি ‘বিদেশি’। বহু মানুষ তাঁর উর্দু অথবা চোস্ত হিন্দি শুনে আপ্লুত হয়ে প্রশ্ন করেছে – ‘আপনি সাহেব হয়ে এত ভাল হিন্দি বলেন কী করে?’ বিরক্ত হতেন টম। আক্ষেপ করে বলতেন – ‘সাদা চামড়া, নীল চোখ বলে কি বিদেশির তকমা আমার কোনওদিন ঘুচবে না?’ তাঁর নিজের দেশের মানুষ তাকে স্বদেশী মনে করে না, এ ছিল তাঁর সারা জীবনের মনস্তাপ। অভিনয়ের পাশাপাশি অল্পকাল ক্রীড়া সাংবাদিকতাও করেছেন। ১৯৮৯ সালে মুম্বইতে ষোলো বছর বয়সের উঠতি ক্রিকেটার সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের প্রথম সাক্ষাৎকার নেওয়ার কৃতিত্ব টমেরই। নিজেও ভালবাসতেন ক্রিকেট, খেলতেন টেনিস, ব্যাডমিন্টন। এমনই বর্ণময় চরিত্র তাঁর। ২০১৭ সালে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যখন ৬৭ বছর বয়সে দুনিয়া থেকে ‘রুখসত’ নিচ্ছেন টম, তখন কোথাও না কোথাও অনুচ্চারে ধ্বনিত হয়েছে ওয়াজিদ আলির সেই অবিস্মরণীয় ‘গজল’ –

সদমা না পহুঁচে কই মেরে জিসম-এ-জ়ার পর
আহিস্তা ফুল ডালনা মেরে মাজ়ার পর..

(এই ক্ষতবিক্ষত দেহে আর দিও না আঘাত
আলতো হাতে ফুল ছড়িও কবরে আমার)

Tom Alter
সব ভূমিকায় ছিলেন সমান স্বচ্ছন্দ, অনায়াস। ছবি সৌজন্য – pune365.com

ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি টম অল্টারের মত এমন ক্ষণজন্মা অভিনেতা তথা ব্যক্তিত্ব অনেক ভারতীয়ের চাইতে ঢের বেশি ‘ভারতীয়’। তিনি প্রকৃতই ক্যাপ্টেন ওয়েস্টন, যিনি মনেপ্রাণে অনেক বেশি ভারতীয় হয়েও এই দেশের মানুষদের কাছে ‘আংরেজ কি ঔলাদ’ই রয়ে গিয়েছেন। এ আমাদের চরম ব্যর্থতা। সত্যজিৎ, অ্যাটেনবরো তাঁকে ঠিকই চিনেছিলেন। আমরা ‘ক্যাপ্টেন ওয়েস্টন’ ওরফে টম অল্টার-কে কতটা চিনতে পেরেছি বা পারব, সেটা সময়ের উপরেই ছেড়ে দেওয়া যাক।

* ঋণঃ সত্যজিৎরায়.কম

Prasenjit Dasgupta

পেশায় সাংবাদিক প্রসেনজিতের জন্ম ১৯৮১-তে। লেখালেখির শুরু কবিতা দিয়েই। ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের ফেলো, প্রসেনজিতের গবেষণার বিষয় রাজনীতি, ধর্মতত্ত্ব ও সঙ্গীততত্ত্ব। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে লেখা। অবসরে ভালোবাসেন সরোদ বাজাতে, পুরনো চিঠি ও বই পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *