গত বছর সরকারি চাকরিতে অনাথ শিশুদের জন্য আসন সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করে মহারাষ্ট্র সরকার | মহারাষ্ট্র সরকারের ঘোষণা অনুয়াযী‚ সরকারি চাকরিতে ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে অনাথ শিশুদের জন্য| এই খবর সেই সময় মোটামুটি সব খবরের কাগজেই প্রকাশিত হয়েছিল | কিন্তু এর পিছনে যিনি ছিলেন তাঁর কথা খুব কম লোকেই জানেন |
অমৃতা খারবান্দে নিজেও এক জন অনাথ| ২ বছর বয়সে গোয়ার মাতৃছায়া অনাথ আশ্রমে আনা হয়েছিল তাঁকে| মা বাবার পরিচয় বহু বার জানতে চেয়েছেন অমৃতা| কিন্তু কোথায় তাঁদের পরিচয় খুঁজবেন তা জানতেন না তিনি|
অনাথ আশ্রমের স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন অমৃতা | কিন্তু যখন ওঁর আঠারো বছর বয়স অনাথ আশ্রমের কর্তৃপক্ষ ওঁকে জানিয়ে দেন ওঁর বিয়ে দেওয়া হবে | বিয়েতে রাজি ছিলেন না অমৃতা| তাই ওই অনাথ আশ্রম ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন| যেমন ভাবা তেমন কাজ| গোয়া থেকে পুণে চলে আসেন অমৃতা| প্রথম রাতটা পুণের রেল স্টেশনে কাটিয়েছিলেন|
লোকের বাড়িতে কাজ করে কোনও ক্রমে দু’বেলা সংস্থান করতেন অমৃতা | কিন্তু মাঝে মধ্যেই প্রচণ্ড একাকীত্বে ভুগতেন উনি | এক বার আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছিলেন | কিন্তু আত্মহত্যা করতে গিয়ে ওঁর চোখে পড়ে এক প্রবীণ অন্ধ-দম্পতির ওপর | তাঁরা কারওর সাহায্যের অপেক্ষা না করে খেলনা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছিলেন| ওঁদের দেখে অমৃতা আত্মহত্যার কথা মাথা থেকে সড়িয়ে ফেলে ভাল ভাবে বাঁচার সিদ্ধান্ত নেন|
বন্ধুর পরামর্শে পুণের মর্ডান কলেজে ভর্তি হন উনি‚ কলেজের হস্টেলেও থাকার জায়গা পান অমৃতা| তার পর আর কোনওদিন ফিরে তাকাতে হয়নি ওঁকে| স্নাতক হওয়ার পর ২০১৭ সালে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেন অমৃতা| ওপেন ক্যাটাগরিতে পরীক্ষা দিয়ে পাশ ও করেন উনি| কিন্তু শেষ অবধি চাকরি দেওয়া হয় না ওঁকে কারণ মা-বাবার কাস্ট সার্টিফিকেট জমা দিতে অক্ষম হন অমৃতা|
‘সারা জীবন আমি ওপেন ক্যাটাগরিতে পড়াশোনা করেছি| আমি কোথা থেকে এসেছি আমি জানতাম না | এমনকি আমি হিন্দু না মুসলিম তাও জানতাম না | তাই আমার পক্ষে সার্টিফিকেট জোগাড় করা অসম্ভব ব্যাপার ছিল| কিন্তু আমি সহজে হেরে যেতেও রাজি ছিলাম না| আমি তখনই বদ্ধপরিকর হই আমার মতো অনাথদের জন্য সরকারি চাকরিতে আসন সংরক্ষণ করতেই হবে| আমি তহশিলদার থেকে ডেপুটি কালেক্টর সবার সঙ্গে দেখা করেছি | কিন্তু তাঁরা সবাই আমাকে ফিরিয়ে দেন|’ জানিয়েছেন অমৃতা|

ভেঙে না পড়ে অমৃতা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সঙ্গে দেখা করেন| আর এর এক বছর বাদে মহারাষ্ট্র সরকার অনাথ শিশুদের জন্য আসন সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করে|
আগেই হাল ছেড়ে দিতে পারতেন অমৃতা| কিন্তু তা না করে লক্ষ্যের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে এগিয়ে যান উনি| অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আজ সফল অমৃতা| ওঁর কল্যাণে মহারাষ্ট্রে অনেক অনাথ শিশুর মঙ্গল হয়েছে|