মাত্র এক লিটার জলে কি বেড়ে উঠতে পারে একটা গোটা গাছ? তা-ও আবার কোনও রুক্ষ শুষ্ক মরু অঞ্চলে? ৬৮ বছরের প্রবীণ কৃষক সুন্দরম ভার্মা এমনই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। প্রায়  ৫০,০০০ গাছ লাগিয়ে বড় করেছেন তাদের। গাছ পিছু বরাদ্দ মাত্র এক লিটার জল। রাজস্থানের সিকার জেলার দান্তা তেহশিল অঞ্চলে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। আবস্তব রকম কম পরিমাণ জলে পুষ্ট হয়ে বেড়ে উঠছে প্রায় পঞ্চাশ হাজার গাছ। এই প্রযুক্তিটি শ্রী ভার্মার মস্তিস্কপ্রসূত। 

১৯৮৫ সালে প্রথম এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে  ‘ড্রাইল্যান্ড আর্গোফরেস্ট্রি’ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করার প্রয়াসে এগিয়ে এসেছেন পরিবেশ বান্ধব এই প্রবীণ। এই বিস্ময়কর উদ্ভাবনের কিছু আগেই বর্ষা ঢোকার মুখে তিনি প্রায় ১৭ একর পারিবারিক জমির ধার বরাবর অনেক গুলি গাছের চারা লাগান। নিয়মিত জল দিলেও পরের গ্রীষ্মতেই গাছ গুলো মরে যায়। কিন্তু আর কোনও উপায়ান্তর না দেখে তিনি আবার পরের বর্ষায়  মাটি খুঁড়ে নিম, লঙ্কা আর ধনেপাতা গাছ লাগান। কিন্তু এ বারে তিনি সুবিধার জন্য তার বাড়ি লাগোয়া ধান খেত, গম খেত ও অন্যান্য আবাদের জমির কাছাকাছি এই গাছগুলিকে লাগান। এ ছাড়াও ভাল ফলনের জন্য তাঁর কৃষি জমিতে তিনি জমি সমতলকরণের প্রক্রিয়াটিও চালু করেন। কিন্তু ফসল তোলার ঋতু এলে প্রধান শস্য ক্ষেতের ফসল সংগ্রহে তিনি এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে ওই নতুন লাগানো চারাগুলিকে জল  দেওয়ার কথা একেবারেই ভুলে বসেন। কিন্তু দেখা যায় সেই গাছ গুলো এক ফোঁটা জল ছাড়াই দিব্যি বেঁচে বর্তে আছে বহাল তবিয়তে । প্রচণ্ড অবাক হন এই প্রবীণ চাষি। ‘তার পর বহু দিন যাবৎ আমি বোঝার চেষ্টা করে গেছি, কী এমন ঘটল যার জন্য জল ছাড়াই বেঁচে গেল গাছগুলি। তার পর বুঝলাম, জমি সমতলকরণের প্রক্রিয়া জলের কৈশিক চলাচলকে ভেঙে ফেলেছে’ জানিয়েছেন প্রবীণ এই কৃষক। এর পর প্রায় দু’মাস ধরে তিনি মাটি খোঁড়া, গাছ লাগানো এবং জমি সমতলকরণ  নিয়ে নানান পরীক্ষানিরীক্ষা চালান। এসব পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে বেরিয়ে এল যে মাটির নীচে জমা বর্ষার জল আগাছার মাধ্যমে আর জলের উৎস্রোতের কারণে বাষ্পীভূত হয়ে যায় কিন্তু মাটির উপর পৃষ্ঠটি শুষ্কই থাকে। এ ভাবেই, ভার্মা একটি নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে চাষবাস শুরু করলেন, যাতে মাটির স্তরের মধ্যে জল আটকে রাখা যায়। এতে রুক্ষ শুষ্ক অঞ্চল গুলির গাছপালা নিজে থেকেই জল পাবে বেড়ে ওঠার জন্য। 

এ সবের মধ্যেই শ্রী ভার্মা কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের সহায়তায়  শুষ্ক অঞ্চলের কৃষি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেলেন দিল্লীর ভারতীয়  কৃষি গবেষণা সংস্থায়। ‘আমি অনেক দিন ধরেই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সঙ্গে কাজ করছিলাম, নিজের জমিতে উন্নত মানের ফলনের জন্য এই যোগাযোগ খুব কাজে লাগছিল। এর সূত্র ধরেই শুকনো জমিতে চাষাবাদ করার কৌশল ও পদ্ধতি নিয়ে পঠনপাঠনের সুযোগ মিলল। দু’ মাসের এই কোর্সে আমি শিখলাম কী ভাবে মাত্র এক লিটার জল দিয়ে একটা গাছকে বড় করে তোলা যায়’ বলেন ভার্মা। দশ বছর ধরে নিরন্তর চেষ্টার পর এই ফর্মুলায় নানা  ধরনের গাছ এমনকি ফলের গাছও ফলালেন এই উদ্যমী কৃষক। 

এ বার নিশ্চয়ই সকলেরই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে কী সেই অভিনব প্রক্রিয়া যার দ্বারা মাত্র এক লিটার জল দিয়েই আস্ত একটা চারাগাছকে করে তোলা সম্ভব একটি পরিণত ও পুর্ণাঙ্গ বৃক্ষ? প্রথমত, কৃষি জমিটিকে একেবারে সমতল করে নিতে হবে যাতে মাটি  বৃষ্টির জল ধরে রাখতে পারে। প্রথম বর্ষার ৫-৬ দিনের মধ্যে এক ফুট গভীর করে মাটি খুঁড়তে হয় যাতে আগাছা আর কৈশিক নাড়ী গুলি পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যায় আর বৃষ্টির জল মাটির গভীরে প্রবেশ করে এবং উপরি ভাগে না উঠে আসে যাতে। বর্ষা কালের শেষের দিকে দ্বিতীয় বারের জন্য খুব ভাল করে মাটি কর্ষণ করতে হবে যাতে মাটির  উপরিভাগের অন্তত ১০ ফুট গভীরতায় প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টির জল আটকে রাখা যায়। এর পর চারা রোপণ, সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে যাতে অন্তত পক্ষে মাটির ২০ সেমি নীচ অবধি চারাগুলির শেকড় পৌঁছয়। ভেজা মাটি দিয়ে গাছগুলিকে ঢেকে দিতে হবে আর গর্ত করে এক লিটার জল গোড়ায় ঢেলে দিয়ে বড় হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মাধ্যমে চাষাবাদ করার এটি একটি উৎকৃষ্ট উপায়। ভার্মা প্রতি তিন মাসে অন্তত এক বার জমিতে আগাছা নিড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কারণ এতে মাটির তলার জলের বাষ্পীভূত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাঁর এই বিশেষ প্রযুক্তিটি প্রয়োগ করে উপকৃত হচ্ছেন অন্যান্য কৃষকরাও। রুক্ষ শুষ্ক মাটিও হয়ে উঠছে শস্যশ্যামল।    

banglalive logo

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *