ক্যাথেরিন ম্যান্সফিল্ড, মৃত্যুর ঠিক আগের বচ্ছর, একখানা গল্প লিখে গেসলেন। তাতে, এক্কেবারে শেষের বেলায়, একটা মাছি, হঠাৎ দোয়াতের মধ্যে পড়ে গেসলো। তো, যাঁর কালি, তিনি তাঁর কলমের ডগা দিয়ে মাছিটাকে তুলে, এক টুকরো ব্লটিং পেপারের ওপর রাখলেন, সন্তর্পণে। মাছিটা প্রথমে খানিক থমকে থেকে, তারপর খানিক ধাতস্থ হয়ে উঠে, গা ঝাড়া দিয়ে-দিয়ে নিজেকে ফের সুগনো করে তুলল, হয়তো ফের উড়বে বলে রেডি হয়ে গেল যেই, ওমনি লোকটি, গল্পে যাকে ‘বস্‌’ বলা হয়েছে, কী মন হল তাঁর, দিলেন এক ফোঁটা কালি ফেলে মাছিটার ’পরে। সে বেচারা আবার কেমনি যেন হয়ে গেল খানিক, নড়েও না, চড়েও না, জুবুথুবু, থ। বস্‌ খুব মন দিয়ে দেখতে লাগলেন। মাছিটা বহু কষ্ট করে, আবার একটু একটু করে, এ ডানা, ও ডানা, ঠ্যাঙ-টেংরি নেড়েচেড়ে, আস্তে আস্তে কালি সমস্ত ঝেড়েঝুড়ে, থিতু হল খানিক, এই উড়বে, এই উড়বে, বস্‌ ফের এক ফোঁটা ফেলে দিলেন। আবার আরও ভাল করে দেখতে লাগলেন। এই ওঠে, এই ওঠে। বেশ খানিকক্ষণ। যদি ওঠে, যদি ওঠে। আরও অনেক অনেকক্ষণ। নাহ্‌, সে আর উঠল না। মরে গ্যাছে।

একঘর স্টোরি, না? লিখতে বসলেই তো রোজ রোজ বিবিধ  ফান্ডা দিই। তাপ্পর আমারও মাথা ভার হয়, আপনারও একঘেয়ে লাগে। আজ নয় একটা গল্পই বললুম শুরুতে। এমনিই। কোনও কারণ নেই। বেফালতু সিরিয়াস নেবেন না। ভয় লাগে, বস্‌, আপনাদের সালা গল্প বলাও পাপ, কী দিয়ে কী একটা মানে করে বোস্‌ থাকবেন তারপর! আঁতেল বাঙালি!



শুনুন, আসলে ভয় কাটাতে ভাট বকছি, বুঝলেন? না, কোভিড না। সে ভয় আমার কেটে গ্যাছে। শুরুতেই। লাখো লাখো শ্রমিক যে দিন হাজার হাজার মাইল পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরেছেন, ব্যাগ বস্তা বাচ্চা কাঁধে, খাবার জল ওষুধ আশ্রয় ছাড়া, মাস্ক আর স্যানিটাইজ়ার তো বিলাসদ্রব্য, কী? তাঁরা যখন মরেননি, তখন এ দেশের অধিকাংশ মানুষের যে কিছুই হবে না, ঠাকুর স্বয়ং আমায় স্বপ্নে এসে বলে দিয়ে গেসলেন।

 শুনুন, এ দেশে অতিমারী তো বহু দূর, মহামারীও নয় এটা। প্রথম সারির মাখম ম্যাগাজিন পড়ে, তেলমশলা ত্যাগ করে ট্যালট্যালে স্যুপ খেতে শেখা মিহি মেডিটেরিনিয়ানমুখো এয়ারপিউরিফায়ার-স্যাঁকা বেকড-বিনস্‌ মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের এ রোগ হচ্ছে বলে, এত্ত প্যানিক। রোজ রোজ টিবিতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান এত বাহার করে কে কবে ছেপেছে, বলুন তো! 

শুনুন, ভিকিরি তো রোজ মরেন, তবু রোগের ভয় পান না। এইডস্‌, টিবি, কোভিড, কোনও কিছুরই না। রোগ তাঁদের চিরসঙ্গী ভবিতব্য। যে দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রকাশ্য বিবৃতি দেন এই বলে যে, অনাহারে মরেনি লোকে, মরেছে অপুষ্টিতে, কারণ তাঁদের সরকারের আমলে কেউ অনাহারে মরতে পারে না, আরে, গেল বচ্ছরও যক্ষ্মায় যে দেশে সরকারি হিসেবেই প্রায় আশি হাজার লোক মরে গ্যাছে, অসংগঠিত শ্রমিকের কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকা একটা অর্থনৈতিক পরিবেশে, সিলিকোসিস জাতীয় রোগের নাম পর্যন্ত যেখানে আলোচিত হয় না, সে দেশে রোগের ভয় মানুষ পায় না। চাপিয়ে দেওয়া হলেও, সে ভয় বেশি দিন টেঁকে না।

Covid Lay-offs
বেকারত্ত্বের ভয়, করেছে নিদ্রাহীন সবাইকে। ছবি সৌজন্য – deccanherald.com

এ দেশের মানুষের ভয় অন্যখানে। কাজ হারাবার ভয়। এর চেয়ে বড় ভয় এ দেশে আর নেই। কারণ, এই একটি মাত্র জিনিসই তাকে খেতে দিতে পারে, বাঁচিয়ে রাখতে পারে। এখন, মজা হল, নিম্নবর্গের মানুষ তো কাজ হারাতে অভ্যস্ত চিরকালই। কলকারখানা দিয়ে যখনতখন বের করে দেওয়া হয় তাঁদের। কাজ পাওয়ার এবং পেলেও কাজ থাকবার যে কোনও নিশ্চয়তা নেই, এ দেশের মধ্যবিত্ত সেটা উদার অর্থনীতির যুগে এসে, সবে এই দু-আড়াই দশক হল জেনেছেনীচতলার মানুষের কাছে চিরকালই ওটা সাধারণ ব্যাপার ছিল ভারতের এই নীচতলার ভিত এতটাই পোক্ত যে, সে আমফানেও ঝরে না, মন্দাতেও মরে না, মরলেও তাই নিয়ে মূলস্রোতের কিছু এসে যায় না।

এ ব্যবস্থায় মূলস্রোত হল মধ্যবিত্ত। এই আমরা। মিম-হাস্য বা সিরিয়াস পলিটিকাল ভাষ্য, আমরাই তৈরি করি এখানে। শিল্প সাহিত্য সভ্যতা শিক্ষা রুচি। সমাজে একমাত্র আমাদের মতেরই দাম আছে আমরা দামি। কারণ, ভারতের মধ্যবিত্তই বিশ্বের সবচাইতে বড় বাজার, এই নতুন বিশ্বব্যবস্থায় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণতম স্তম্ভ। ক্রেতা। আমরা কিনলে, তবেই অর্থনীতি বাঁচবে। আর, উল্টোদিকে, একমাত্র এই অর্থনীতি বাঁচলেই আমরা বাঁচব।  ভাল মন্দ জানি না। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বাঁচাতে, দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাচ্ছি।

যে দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রকাশ্য বিবৃতি দেন এই বলে যে, অনাহারে মরেনি লোকে, মরেছে অপুষ্টিতে, কারণ তাঁদের সরকারের আমলে কেউ অনাহারে মরতে পারে না, আরে, গেল বচ্ছরও যক্ষ্মায় যে দেশে সরকারি হিসেবেই প্রায় আশি হাজার লোক মরে গ্যাছে, অসংগঠিত শ্রমিকের কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকা একটা অর্থনৈতিক পরিবেশে, সিলিকোসিস জাতীয় রোগের নাম পর্যন্ত যেখানে আলোচিত হয় না, সে দেশে রোগের ভয় মানুষ পায় না।

কিন্তু, কেমন সে লড়াই? বিশ্বের বৃহত্তম বাজার হলেও, এ দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের কারণে, এ লড়াই অসম। এখানে মধ্যবিত্ত হয়ে উঠবার যোগ্য শিক্ষিত একটি বিরাট জনসংখ্যা সব সময়েই বর্তমান মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর আয়তনের তুলনায় বহুগুণ বড়। আমার চাকরি গেলে, এই কাজটির জন্যে আমার সমান বা আমার চেয়েও বেশি যোগ্য অগুন্তি মানুষ এই মুহূর্তে আমার চেয়ারটির পিছনে লাইন দিয়ে আছেন। তো, এই পরিস্থিতিতে, আমায় চাকরিতে না-রাখলে যেহেতু কোম্পানির তিলমাত্র ক্ষতি হবে না, তাই আমার চাকরি বাঁচাবার দায় শুধুমাত্র আমারইআমি জীবিকা হারিয়ে, মধ্যবিত্তশ্রেণিচ্যুত হলেও, বিশ্বের বৃহত্তম বাজার হিসেবে ভারতের মধ্যবিত্তের আয়তন একই থাকবে, কারণ আমার জায়গায় নতুন একজন মুহূর্তে এই শ্রেণিভুক্ত হয়ে যাবেন। বরং নতুন মধ্যবিত্ত আমার তুলনায় অনেক কম দাবিদার হবেন, তাতেও অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, আবার হঠাৎ-পয়সায় তিনি অনেক বেশি খরুচেও হবেন সম্ভবত, তাতেও অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, ডবল ধামাকা।



তাহলে আমি কী করে বাঁচব? অপরিহার্য নয়, এমন দুর্বলতম দালাল শ্রেণির এক ভিতু ব্যক্তিমানুষ, আমার বাঁচবার রাস্তাটা তবে কী? রাস্তা একটাই। আপস। জোড়হাত। শিরদাঁড়া তো শুরু থেকেই নেই, এখন সঙ্কটকালে মস্তকবিক্রয়। এ ছাড়া আর উপায় নেই। বারবার, মন্দা চলছে বলে, ব্যবসা হচ্ছে না বলে, কিম্বা কোনও কারণ ছাড়াই, বহমান নীরবতায়, আমার মাইনে বহু যুগ ধরে বাড়েনি। হয়তো কোনও এক ব্যতিক্রমী বচ্ছরে মাইক্রোস্কোপিক বৃদ্ধি হয়েছে খানিক, এখন এই কোভিড-কালে, লকডাউন বলে, সে মাইনেও হাফ হয়ে গ্যাছে। আরে, দিচ্ছে, এই অনেক। কত জনের যে চাকরি চলে গ্যাছে, আমার তো অন্তত তার চেয়ে ভাল। বলাই বাহুল্য, সামনের কয়েক বচ্ছর, ‘অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন’-এর প্রয়োজনে ‘স্বাভাবিক ভাবেই’ মাইনে বাড়াবার কথা তোলাই যাবে না। এই যে অর্ধেক বেতন, এই পরিমাণ অর্থটিই এই কাজের জন্যে, এই পদের জন্যে, যাকে বলে ‘স্ট্যান্ডার্ড’ হয়ে গেল এখন থেকে। আর, সেই যে লাইন, সে যে আরও দীর্ঘ হয়েছে এই লকডাউনের ধাক্কায়। এর চেয়েও কম মাইনেতে, এমনকী স্থায়ী চাকরিও না, লিখিতপড়িত ব্যবস্থাপনা ছাড়াই কাজ করবার জন্যে, আরও আরও লোকে লাইন দিচ্ছে আমার চেয়ারটার পেছনে। আসন্ন বেশ কিছু কাল এ লাইন দীর্ঘতরই হতে থাকবে শুধু, আমি জানি, আমরা প্রত্যেকে জানি, চাপ আরও বাড়বে, বেড়েই চলবে ক্রমশ। তাই আরও ত্যাগ করতে হবে, আরও সইয়ে নিতে হবে, দ্বিগুণ কাজ করতে হবে পারলে, কোনও প্রশ্ন করা চলবে না। রোগের প্রাথমিক ভয়ে, সেই যে অফিস বন্ধ হয়েছে, ঘরে বসে অফিসের কাজ করা শুরু হয়েছে, লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে, বাস চলেছে, ট্রেন চলেছে, মিছিল চলেছে রাস্তা দিয়ে, রেস্তরাঁ বার সিনেমাহল মল খুলেছে, শুধু অফিস আর খোলেনি। অফিস চালাতে কোম্পানির অনেক খরচা। ভাড়া, ইলেকট্রিকের বিল, আসবাব, আলো, এসি, চা-জল আর চা-জল দেওয়ার লোক, পাহারাদার তারচে’ কোম্পানি আমার বাড়ির একখানা ঘর দখল করে নিয়েছে, মিটে গ্যাছে। আর, একবার দখল করে নিতে পারলে, কেউ কি আর ছাড়ে! 

Loneliness
সবটাই অফিসটাইম, আর মোবাইল থাবা ব্যক্তিগত সময়ের সবটা। ছবি সৌজন্য – thewashingtonpost.com

শুরুতে সক্কলে বলেছে, ভালই তো, দিব্যি পরিবারের সঙ্গে সারা দিন। আস্তে আস্তে বোঝা গ্যাছে, আসলে এ কত বিষ। অফিস থাকলে, আট ঘণ্টার জায়গায় দশ ঘণ্টা অফিস, যাতায়াত মিলিয়ে বারো-তেরো, আর সাত-আট ঘণ্টা ঘুম, খুব বেশি হলে চার ঘণ্টা স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের মুখ দেখতে হত। আর এখন, সারাক্ষণ দেখতে হয়। এ যে কী ভয়ঙ্কর জিনিস, বিয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি পাশ-করা প্রতিটি মানুষ তা জানে। রিপোর্ট বলছে, লকডাউন পর্বে গার্হস্থ্য হিংসা বেড়েছে। বাড়বেই। কাম একা আসে না, সঙ্গে করে নিয়ে আসে সন্দেহ অতৃপ্তি বিদ্বেষ বিরক্তি বিক্ষোভ ঈর্ষা হিংসা ভয়। সম্পর্কের সঙ্গে আসে বিবিধ হিসেবনিকেশ কুটিলতা কুচুটেপনা আর ক্ষমতার টানাপোড়েন। সন্তানকে ভালবাসাও যতটা স্বাভাবিক, সারাক্ষণ ঘাড়ের ওপর ঘ্যানঘ্যান করতে থাকলে, সেই সন্তানের ওপরেই তুঙ্গ রাগ আছড়ে পড়াও ততটাই সত্যি, রোজকার নিয়মিত সাংসারিকআর, আপনি বাড়িতে আছেন বলেই সন্তান আপনাকে খুব একেবারে কাছে পাচ্ছে, তা তো নয়। আপনি তো ঘর বন্ধ করে বসে কাজ করছেন, অফিসটাইম বলে তো আর কিছু নেই, মোবাইল এসে ব্যক্তিগত সময় বলে আর কিছু বাকি রাখেনি, যখন খুশি আপনাকে ফোনে ধরা গ্যাছে, এখন ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম হয়ে আরও এক কাঠি বেড়ে, যখন খুশি আপনাকে কাজ করিয়েও নেওয়া যায়। কর্মী-প্রতি ‘প্রোডাক্টিভিটি’ এতে অনেক অনেকখানি বেড়েছে, দু’জনের কাজ এখন একজনই করে দিচ্ছে, মানে প্রতি দু’জনের একজনের চেয়ার টলমল করছে, যে কোনও সময় উল্টে যাবে, গিয়ে দাঁড়াতে হবে লাইনে, যার চেয়ারটা টিঁকে গেল, তার পিছনের লাইনে, তাতে সে লাইন আরও এক ধাপ বাড়বে, চাপও এক ধাপ বাড়বে, টিঁকে-যাওয়া চেয়ারটার ঘাড়ে। হাফ মাইনেতে চলতে হলে, কম ঘরের ফ্ল্যাট নিতে হবে। তার মধ্যেও একটা ঘর থাকবে কোম্পানির দখলে। পরিবারের আর সব তাহলে থাকবে কোথায় সারাদিন? আরও কম পরিসরে, বাসনকোসনে আরও বেশি ঠোকাঠুকি লাগবে না? আরও হিংস্র হয়ে যাবে না মানুষ? পাগল হয়ে যাবে না? ওভাবে কাজ করতে পারবে? কাজ হারালে খাবে কী? আর, পিছনে ওই লম্বা লাইন, তারা কী খাচ্ছে এখন? তাদের মাথার ঠিক আছে? থাকবে? কত দিন?



ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের কারবারিরা বলছেন, এই সব ভাইরাস-টাইরাস আসলে এক বৃহৎ পরিকল্পনার একটি অঙ্ক মাত্র। যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দুনিয়া চলছে, তাকে তার নিজের অন্তর্নিহিত সত্যকার সঙ্কট কাটিয়ে কাটিয়ে, আরও অধিক মুনাফার দিকে এগোতে গেলে, মাঝে মাঝেই চিনির বস্তাটা ঝাঁকিয়ে নিতে হয়, তার অজুহাত হিসেবে কখনও সখনও মিথ্যে সঙ্কট তৈরিও করতে হয়। এই ভাইরাস নাকি তেমনই এক সাজানো সন্ত্রাস।

আপনি বাড়িতে আছেন বলেই সন্তান আপনাকে খুব একেবারে কাছে পাচ্ছে, তা তো নয়। আপনি তো ঘর বন্ধ করে বসে কাজ করছেন, অফিসটাইম বলে তো আর কিছু নেই, মোবাইল এসে ব্যক্তিগত সময় বলে আর কিছু বাকি রাখেনি, যখন খুশি আপনাকে ফোনে ধরা গ্যাছে, এখন ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম হয়ে আরও এক কাঠি বেড়ে, যখন খুশি আপনাকে কাজ করিয়েও নেওয়া যায়। কর্মী-প্রতি ‘প্রোডাক্টিভিটি’ এতে অনেক অনেকখানি বেড়েছে, দু’জনের কাজ এখন একজনই করে দিচ্ছে।

কী জানি! বুঝতে পারি না কিছু। আমি খালি ওপরের পানে চেয়ে থাকি। ফোঁটা পড়ছে। ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ছে কালিকলুষকালিমায়, গাঢ় গরলে ডুবে যাচ্ছি। দম আটকে আসছেবুকের ভেতর পিণ্ডখানির ধুকপুকুনিও কি থমকে যাচ্ছে প্রতিবার? প্রায়-মৃত্যুতে পৌঁছে যাচ্ছি? প্রত্যেকটি নতুন আক্রমণের প্রাথমিক অভিঘাতে, এই যে, একটা দীর্ঘ সময় কোনও সাড় থাকছে না, কোথা দিয়ে কতখানি সময় পার হয়ে যাচ্ছে, দিনের পর দিন, মাস বচ্ছর যুগ, জানতে পারছি না, বুঝতে পারছি না কিছু। অন্ধ এক বেঘোরের মধ্যে যেন নির্জীব এক অস্তিত্ব, তারও অবশিষ্টটুকুন ফুরিয়ে আসছে দ্রুত, ক্ষীণ হয়ে আসছে আশা, তবু আবার সবটা সইয়ে নিয়ে, ধীরে ধীরে যে পুনরায় “বলো বীর” বলে মাথা তুলছি, যেই একটু কোমর সোজা করে দাঁড়াব ভাবছি, ওমনি আর একটা ফোঁটা আবার। এ এক অনন্ত চক্কর, ক্যাথেরিন, আপনার লেখা ওই বসের কলমের ডগা থেকে, ওই কালির ফোঁটা-পড়াটা কবে শেষ হবে, ক্যাথেরিন, আপনি তো মাত্র চৌতিরিশে মুক্তি পেয়ে গেসলেন, আমার শেষ ফোঁটাটা কবে?

জন্ম কলকাতায়। কর্মও মোটের ওপর এখানেই। কারণ, সম্ভবত এ শহরের প্রতি মাত্রারিক্ত মায়া। যৌবনে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথাগত পড়াশুনোর প্রতি দায়বদ্ধতা ক্রমক্ষীয়মান, উল্টে সিলেবাস-বহির্ভূত নানা বিষয়ে আগ্রহ, বিশেষ করে রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্ম, মনস্তত্ত্ব, সাহিত‍্য, সঙ্গীত ও সিনেমা। কর্মজীবনে শুরুর দিকে, বিভিন্ন বিনোদনমূলক বাংলা টেলিভিশন চ‍্যানেলে বেশ কিছু জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের পরিচালক। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সিনেমার দুনিয়ায় সম্মানিত কয়েকটি ফিল্মের সম্পাদক। এরই মধ‍্যে, প্রথম সারির কয়েকটি টেলিভিশন চ‍্যানেলে চাকরি। বর্তমানে স্বাধীন ভাবে তথ‍্যচিত্র ও প্রচারমূলক ছবি নির্মাণ, বিভিন্ন অডিও-ভিস‍্যুয়াল মাধ‍্যমে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত। আর, ব‍্যবসা সংক্রান্ত পরামর্শদাতা একটি সংস্থার অংশীদার। প্রথম প্রকাশিত গদ‍্য ২০০৬, ঋতুপর্ণ ঘোষ সম্পাদিত ‘রোববার’ পত্রিকায় (সংবাদ প্রতিদিন)। পরে, আনন্দবাজার পত্রিকা, এই সময় ও অন‍্যত্র। প্রবন্ধ বা ফিচারধর্মী লেখার পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি ছোটগল্পও।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *